
মেহেরপুরের দুই সংসদীয় আসন মেহেরপুর-১ ও মেহেরপুর-২ তে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন প্রকাশ্যে। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে দুই আসনেই বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে, যার প্রভাব এখন প্রান্তিক পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যেও পড়েছে।
মেহেরপুর-১ আসনে সাবেক সংসদ-সদস্য মাসুদ অরুণ এবং মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে সাবেক সংসদ-সদস্য আমজাদ হোসেনকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই দুই আসনে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বৈঠকে স্থানীয় নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন-যিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন, সবাই ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পরই সেই অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ নেয়নি।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয়ভাবে মেহেরপুর জেলা বিএনপিতে জাভেদ মাসুদ মিল্টনকে আহ্বায়ক ও অ্যাড. কামরুল হাসানকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠনের পর থেকে বিরোধ শুরু হয়। মেহেরপুর সদর আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কামরুল হাসান পক্ষ বুধবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করে এবং গত বৃহস্পতিবার রাতে মহিলা দলের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভে কামরুল হাসানসহ বক্তৃতা করেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফয়েজ মোহাম্মদ, পৌর বিএনপির সভাপতি লতিব বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক এহান উদ্দীন।
বিক্ষোভে দাবি করা হয়, মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা না করলে মেহেরপুর আসনে বিএনপির পরাজয় নিশ্চিত। তারা প্রকাশ্যে দলের মনোনীত প্রার্থী মাসুদ অরুণের বিরুদ্ধাচরণ করেন। মনোনয়ন পাওয়া মাসুদ অরুণ ইতোমধ্যেই ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ শুরু করেছেন। তার নেতৃত্বে কর্মীরা গ্রাম-গঞ্জে প্রচার চালাচ্ছেন। মাসুদ আরুণ বলেন, দলীয় মনোনয়ন না পাওয়াতে ক্ষোভ থাকতেই পারে। তবে ঠিক হয়ে যাবে। একই আসনে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা মুহা. তাজউদ্দিন নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় প্রতীকের পক্ষে আগে থেকেই সক্রিয়। শহর ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতীক সংবলিত তার পোস্টার ও ব্যানারে দেওয়ালজুড়ে ছড়িয়েছে নির্বাচনি আমেজ।
মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে মনোনয়ন পাওয়া সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন পক্ষের সঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসদ মিল্টন পক্ষের বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। মঙ্গলবার দুপক্ষের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটাধাওয়া, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এই দ্বন্দ্বে শুধু শীর্ষপর্যায় নয়, তৃণমূল নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে মাঠে কাজ বন্ধ রেখেছেন, কেউ কেউ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের গাংনী কার্যালয়ে এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
গাংনী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলফাজ উদ্দীন কালুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় বক্তৃতা করেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল হক, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আওয়াল, জেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক আখেরুজ্জামান, গাংনী উপজেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক আব্দাল হক, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কাওছার আলী, জেলা মহিলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লাইলা আরজুমান বানু প্রমুখ। সভায় আমজাদ হোসেনকে দেওয়া দলীয় মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আগামী ২০ দিন শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
গাংনী আসনে জামায়াতের প্রার্থী নাজমুল হুদাও প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে আসনটিতে বিএনপি ও জামায়াতের দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রচারণা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন মাত্রা যোগ করেছে।


