মেহেরপুরে বিভক্ত যুবলীগের পৃথক প্রোগ্রাম, একে অপরের কাদা ছোড়াছুড়ি

মেহেরপুরে জেলা যুবলীগের ব্যানারে পৃথকভাবে পালন করা হয়েছে যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। প্রায় ৫ বছর ধরে আহবায়ক কমিটির আহবায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন এর নেতৃত্বে মেহেরপুর কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হয়।

এ উপলক্ষে মাহফুজুর রহমান রিটন এর সভাপতিত্বে বিশেষ আলোচনা সভা ও কেক কাটার আয়োজন করা হয়। অন্য দিকে জেলা যুবলীগের ব্যানারে একই কমিটির ২ নং যুগ্ম-আহবায়ক সরফরাজ হোসেন মৃদুলের নেতৃত্বে পালিত হয় যুবলীগের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও বিশেষ আলোচনা সভা।

সভায় ভার্চুয়াল কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

একই ব্যানারে পৃথক প্রোগ্রাম নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করেছেন নেতারা, দুষছেন একে অপরকে। জেলা যুবলীগের আহবায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন তার বক্তব্যে বলেন, এখন অনেকের যুবলীগ করতে শখ হয়েছে। যারা যুবলীগকে টেন্ডার বাজ বলতো, যারা এই যুবলীগকে সন্ত্রাসলীগ বলতো তারাই আজ যুবলীগ করতে চায়।

যারা মাদক নিয়ে পড়ে থাকতো , যারা মাদক সম্রাট নামে পরিচিত তারাই আজ যুবলীগকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। যাদের আমরা মাদকের জন্য যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করেছি তারাই আজ আরেক জায়গায় যুবলীগ নেতা সেজেছে। নির্বাচনের সময় যুবলীগকে প্রয়োজন হয়, নির্বাচন চলে গেলে প্রয়োজন হারিয়ে যায়।

মোনাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে আসার সময় অনেকেই মটরসাইকেলের সামনে হাত দিয়েছে। একটি কুচক্রী মহল যুবলীগকে নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন পায়তারা সৃষ্টি করছে। নদীর পানি বন্যার সময় বাড়ে, সময় হলে সব শুকিয়ে যাবে।

জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য সাজিদুর রহমান সাজু বলেন, একটি কুচক্রী মহল, নামধারী জেলা যুবলীগের ব্যানার ব্যবহার করে গাংনী উপজেলা যুবলীগের কিছু কুলাঙ্গার মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহবায়ক মাহফুজুর রহমান রিটনের কটুক্তি করেছেন। গাংনীর ঐ কুলাঙ্গারকে আমি স্পষ্ট বলতে চাই আপনি ভাষা ঠিক করুন।

আপনার মত স্কুল ব্যবসা করে, শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য করে বহিষ্কার হওয়া নেতা রিটন না। আপনাকে দুই দুইবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। মেহেরপুরের মাটিতে এই ধরনের কথা বললে ভবিষ্যতে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবো। তিনি ২ নং যুগ্ম-আহবায়ক সরফরাজ হোসেন মৃদুলের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি বলেছেন বর্তমান কমিটি অবৈধ কমিটি। আপনি এই কথা বলতে পারেন না। অনতিবিলম্বে এর শাস্তি দাবি করছি।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, মেহেরপুর জেলা যুবলীগের সদস্য ইউনুস আলী, মাহাবুব হাসান ডালিম, মেহেরপুর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মিজানুর রহমান অপু, শহর যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান সুইট, কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাইহান উদ্দিন, বাগোয়োন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বাবুল মল্লিক, সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মংলা, আমদহ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ, মোনাখালী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শান্তি রাজ, মহাজনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মফিজুর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক মিঠু, বুড়িপোতা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি উজ্জ্বল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রুমেল মোল্লা।

অন্যদিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে বিশেষ আলোচনা সভায় গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন জানান, মেহেরপুর জেলা যুবলীগের সফল কমিটি ভেঙ্গে যারা কালো পথে, বাকা পথে এই কমিটিতে এসেছেন তাদের আমরা ভালো করেই চিনি।

৬ থেকে ৭ বছর আগে মেহেরপুর জেলা যুবলীগের দায়িত্ব নিয়েছেন তারা কে ? খুলনা বিভাগের অস্ত্র ব্যবসায়ী । চালান হয়েছেন বারবার। তিনি মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহবায়ক হয়েছেন।

টাকা দিয়ে তিনি মেহেরপুরে নেতৃত্বে দিতে আসে নাই, ব্যবসা করতে এসেছেন। আর একজন যুগ্ম-আহবায়ক শহিদুল ইসলাম পেরেশান, উনি কে? উনি একজন আদম ব্যবসায়ী এবং তিনি একজন সাবেক সফল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিপুল হত্যার ১ নং আসামি। সেই বিচার এখনো চলমান আছে। তাই আজকের এই যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আমি তার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সরফরাজ হোসেন মৃদুল। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার আহবানে মেহেরপুর যুবলীগের হাজার হাজার কর্মী এখানে উপস্থিত হয়েছে। এতে বোঝা যায় মেহেরপুর যুবলীগ ঠিক নেতৃত্বহীনতায় ভুগছে। তাই আমাদের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মহদোয়ের কাছে একটাই দাবি, আগামী দিনে মেহেরপুর যুবলীগের সুষ্ঠু কমিটি গঠন করে দিবেন।

মেহেরপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান হিরণ এর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল হালিম, সহ-সভাপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক, যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাড. ইব্রাহীম শাহীন, পাবলিক প্রসিকিউটর ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পল্লব ভট্টাচার্য, গাংনী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল পলাশ, মুজিবনগর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুল হাসান চাঁদু, মেহেরপুর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম খোকন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু, শহর যুবলীগের সভাপতি শেখ কামাল, মেহেরপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আদীব হাসান আসিফ, সাধারণ সম্পাদক কুতুবউদ্দিন, মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি একে আজাদ সাগর।

জেলা যুবলীগের পৃথক প্রোগ্রামে কাদা ছোড়াছুড়ির বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমরা নেতাদের বলেছিলাম কোন আক্রমণাত্মক বক্তব্য যেন না দেওয়া হয়। আজকের প্রোগামে আমি কোন কাদা ছোড়াছুড়ি দেখিনি। তাছাড়া বরাবরই আমি দেখে আসছি সবাই একসাথে থাকতে চাইনা।

হাসাদাহ প্রতিনিধি জানান, জীবননগর উপজেলার হাসাদাহে যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকালে হাসাদাহ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জুম্মাত আলী মন্ডলের আয়োজনে কেক কেটে ৪৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাসাদাহ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি শুকুর মন্ডল, যুবলীগের সহ-সভাপতি মিন্টু আলী, লালন মন্ডল, আরিফ হোসেন, ইউনুচ মন্ডল, রহিম রহমান, টুটুল রহমান প্রমুখ।
চিৎলা প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে চিৎলা ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের পক্ষে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার বিকালে চিৎলা ইউনিয়নের কুলপালা গ্রামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চিৎলা ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক জনাবঃ শাহ্ আল ইমরান। এ সময় সভাপতির বক্তব্যে জনাব শাহ্ আল ইমরান বলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহবায়ক জনাব নঈম হাসান জোঃ এর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এই সময় উপস্থিত ছিলেন, সুরুজ মল্লিক, হিটলার, ইয়াসিন শাহ্, নাঈম শাহ, রোমিও শেখ, আসিফ ইকবাল, রিফাত, ইমেজ, শাকিল মন্ডল, তানভীর শাহ্, নাজমুল শাহ্, রাজিব শাহ, সাজু প্রমুখ।

কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বুধবার বিকালে পৌর যুবলীগের উদ্যোগে শহরের পায়রা চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের করা হয়। র‌্যালীটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মেইন বাজারে পৌর যুবলীগ কার্যালয়ে শেষ হয়। পরে পৌর যুবলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক শেখ সোহেল আরমানের উপস্থিতিতে পৌর যুবলীগ কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেক কাটা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আশফাক মাহমুদ জন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, যুগ্ম-আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শিমুল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাজান আলী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিয়াজ হোসেন ফারুক, পৌর আ.লীগের আহ্বায়ক ফারজেল হোসেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক শহীদুজ্জামান সেলিম, সাবেক যুবলীগ সভাপতি মীর কাশেম আলী, সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তাজুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনসহ স্থানীয় আ.লীগ, যুবলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন নেতা-কর্মীরা।
মেপ্র/এমএফআর