
মেহেরপুরে ভাইরাসজনিত রোগে নষ্ট হচ্ছে শত শত বিঘা জমির শসাক্ষেত। দীর্ঘদিন পরিচর্যা করে শসা বাজারজাত করার মুহূর্তে ভাইরাসের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে, মাচাতেই শুকিয়ে যাচ্ছে গাছের ডগা ও শসার জালি। ক্ষেত রক্ষায় বিভিন্ন প্রকার ওষুধ স্প্রে করেও উপকার পাচ্ছেন না কৃষকরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলার হাজারো শসা চাষি। শেষ মুহূর্তে ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, জমিতে বোরনের ঘাটতির কারণে শসাক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। ক্ষেত রক্ষায় মাটি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।
মেহেরপুরের তিনটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২৬৫ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ ৭ হাজার মেট্রিক টন শসা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। মেহেরপুরের শসা জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য জেলাতেও সরবরাহ করা হয়। উৎপাদিত শসা সুস্বাদু ও আকর্ষণীয় হওয়ায় বাইরের জেলায় ব্যাপক চাহিদা থাকে। কিন্তু ভাইরাসজনিত রোগে গাছ শুকিয়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে, ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হচ্ছে।
চাষিরা বলছেন, জমি প্রস্তুত, মাচা তৈরি, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যার খরচ মিলিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এখন শসা বিক্রির সময়, অথচ ক্ষেতে ভাইরাসে গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, সতেজতা নষ্ট হচ্ছে এবং শসার জালি বেঁকে লালচে হয়ে ঝরে পড়ছে। প্রতিবছর যতটা শসা উৎপাদন হয়, এবছর তার অর্ধেকও হচ্ছে না। বাইরের জেলাগুলোতে মেহেরপুরের শসার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও পাইকারি ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া উৎপাদিত শসার রঙ হলুদ হওয়ায় বাজারে চাহিদা কম, ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।
মেহেরপুরের কালিগঞ্জ, গাড়াবাড়িয়া, সাহারবাটি ও ধলার মাঠে গিয়ে দেখা গেছে শসাক্ষেতের এমন চিত্র। মেহেরপুরের শসা প্রতি বছর ট্রাকভর্তি হয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবছর গুণগত মান খারাপ ও উৎপাদন কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী শসা পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকদের অভিযোগ, এমন পরিস্থিতিতে কৃষি বিভাগ পাশে নেই।
কালিগঞ্জ গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, “দুই বিঘা জমিতে শসা লাগিয়েছিলাম। জমি প্রস্তুত, মাচা তৈরি, সার, কীটনাশক মিলে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এখন বিক্রির উপযুক্ত সময়, অথচ গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে, শসার জালি শুকিয়ে বেঁকে লালচে হয়ে যাচ্ছে। নানা ওষুধ ব্যবহার করেও ফল পাচ্ছি না।
ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, প্রতিবছর এ সময় কয়েকশ টন শসা ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হতো। কিন্তু এবছর তার অর্ধেকও পাঠাতে পারছি না।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসেন বলেন, অতিরিক্ত রোদ, জমিতে বোরনের ঘাটতি ও একই জমিতে বারবার একই ফসল আবাদ করার কারণে এমনটা হয়েছে। মাটি পরীক্ষা করে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।