
মেহেরপুরে কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন, ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থ পাচার ও ফেসবুক-টেলিগ্রামভিত্তিক প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। সদ্য কার্যকর হওয়া “সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫” এর আওতায় জেলার প্রথম মামলা রুজু হয়েছে নামীয় ১৯ আসামি সহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে।
তবে নতুন অধ্যাদেশে জেলার প্রথম মামলাটি নিয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত তথ্য না জানালেও বিষয়টি সামনে আসে আসামিদের সূত্রে প্রতিবেদকের হাতে আসা মামলার নথি থেকে। মুজিবনগর থানায় দায়ের করা ওই মামলাটি (নম্বর ৩, তারিখ ৪ নভেম্বর) থেকে জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর এলাকায় অভিযান চালায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
অভিযানে অনলাইন জুয়া ও অর্থপাচার চক্রের তিন সদস্য দেলোয়ার হোসেন দিপু (৪০), সুমন আলী (৩৮) ও সাকিবুল ইসলাম (২৩) কে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন, জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক মুহাদ্দিদ মোর্শেদ চৌধুরী ও শিমুল কুমার দাস।
ডিবি পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও আশপাশের এলাকায় অনলাইন জুয়া ও অবৈধ ই-লেনদেনের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে আসছিল। মামলার এজাহারে গ্রেপ্তারকৃতদের সহযোগী হিসেবে আরও ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন, মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর গ্রামের মুকুল, শুভ (২২), প্রসেনজিৎ হালদার (২৫), আক্তারুজ্জামান ফিলসন ও শামীম (৩০), মহাজনপুর গ্রামের মিঠু (৪০) ও সোহাগ (৩৮), গোপালপুর গ্রামের বদরুদ্দৌজা রয়েল (৩৭), রসিকপুর গ্রামের সিরাজ (৩৬) এবং মোনাখালী গ্রামের মাহফুজুর রহমান (২১)। গাংনী উপজেলার উপজেলার গাড়াডো গ্রামের তুলিপ হোসেন (৩০), মেহেরপুর সদর উপজেলার বামন পাড়ার রঞ্জু ও রাজু, কোর্ট পাড়ার মোঃ সাজু, শেখ পাড়ার পনির (২৪) এবং স্টেডিয়াম পাড়ার বাপ্পি (৩০) সহ অজ্ঞতনাম আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।
মামলার নথি অনুযায়ী, চক্রটি Binance ও Stake.com নামের আন্তর্জাতিক অনলাইন ক্যাসিনো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দেশে-বিদেশে টাকা পাচার পাচার করত। দেশের ভেতরে বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটি টাকার লেনদেন চালাত তারা। ফেসবুক ও টেলিগ্রাম গ্রুপে দ্রুত আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলাই ছিল তাদের প্রধান কৌশল।
অভিযানস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় একটি টয়োটা প্রিমিও (ঢাকা মেট্রো গ-৪২-৮৩৬৫), চারটি স্মার্টফোন, একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং সিম, অনলাইন লেনদেনের তথ্যসম্বলিত নথি ও অন্যান্য ডিজিটাল প্রমাণ। পরে দিপুর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে জব্দ করা হয় স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ আল্ট্রা, ডাচ–বাংলা ব্যাংকের তিনটি কার্ড ও দুটি পেনড্রাইভ।
এই ঘটনায় মুজিবনগর থানায় সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ২০(২), ২৪(২) ও ২৭(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
উল্লেখ্য মামলাটির দুই আসামি পনির, তুলিপ হোসেনের অর্থ পাচার নিয়ে অতি সম্প্রতি ‘ফ্রিল্যান্সার সেজে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রথম সারির একটি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।


