
মেহেরপুরে সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে ১২০ টাকা আবেদন ফি দিয়ে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৯ জন। ওয়েটিং লিস্টে রয়েছেন আরও দুইজন।
কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ এসব পুরুষদের নিয়ে শুক্রবার বিকেল ৫টায় মেহেরপুর পুলিশ লাইন্স ড্রিলশেডে মতবিনিময় সভা করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ সিদ্দিকী।
এ সময় কনস্টেবল পদে চাকরি চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ৯ জন প্রার্থীর অনেকে তাদের মতামত প্রকাশের সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
এসব প্রার্থীর মধ্যে অনেকেই ভ্যানচালক ও কৃষকের সন্তান, অনেকেই আবার অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তারা শতভাগ স্বচ্ছতা, মেধা ও নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়ে নিয়োগ-সংশ্লিষ্ট সবার ও বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চাকরি পাওয়া মো: অমিত হাসান বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক। আমি দীর্ঘ চারটা মাঠ করার পর তিনবার ভাইভা দিয়েছি। এবার আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমতে মা-বাবার দোয়ায় ১২০ টাকার বিনিময়ে আমি পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছি। আমি কোন দালাল চক্রের সাথে যোগ দিইনি, নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি।
অমিত হাসানের বাবা বলেন, আমি একজন কৃষক। পরিবারের চারজন সদস্য নিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমার বড় ছেলে অমিত চাকরি পেয়েছে এতে আমি ও আমার পরিবার খুব খুশি।
আমার ছেলে ১১টা মাঠ করেছে, শেষ পর্যন্ত নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছে। এটা বড় ব্যাপার, কোনরকম টাকা-পয়সার লেনদেন করা লাগেনি। সর্বপ্রথম আমি আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই। এরপর ধন্যবাদ জানাই এসপিকে, কারণ তিনি কোন রকম দুর্নীতি না করে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি দিয়েছেন।
মো: মাহফুজ আলী বলেন, আমার আব্বু একজন ভ্যান চালক। ভ্যান চালিয়ে আমাদের দুই ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। আমার আব্বু মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের মানুষ করেছেন। আমি নিজের যোগ্যতায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ হয়েছি। পরিবারের পাশে এবং একজন সৎ, যোগ্য পুলিশ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।
মাহফুজ আলীর ভ্যানচালক বাবা বলেন, আমি একজন ভ্যান চালক। ভ্যানের উপর বাদাম ভেজে বিক্রি করে দুই সন্তানকে পড়াশোনা করাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি খুবই আনন্দিত আমার ছেলেকে নিয়ে। আজ সে নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছে। আমার ছেলে বলেছে, তার প্রথম বেতন আমার হাতে তুলে দেবে। আমার ইচ্ছা, সেই প্রথম বেতনটা আমি মসজিদে দিব।
মো: রুমান ইসলাম বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক। আব্বু-আম্মুর যথেষ্ট বয়স হয়েছে। আমার চাকরিটা পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য খুব প্রয়োজনীয় ছিল। চাকরিটা পেয়ে আমি ও আমার পরিবার অনেক খুশি। চাকরিটা আমি নিজ যোগ্যতায় পেয়েছি, কোন টাকা-পয়সা বা লেনদেন ছাড়াই। চাকরিটা পেয়েছি শুনে সবার আগে বাবার কথা মনে পড়েছে, কারণ বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, আমরা বাংলাদেশ পুলিশ বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে পরিবর্তিত নিয়োগ পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে সুনামের সাথে সারা দেশব্যাপী স্বচ্ছতার সাথে ট্রেইনি রিক্রুমেন্ট কনস্টেবল (টিআরসি) সম্পন্ন করে এসেছি। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ এ এ পর্যায়ে টিআরসি রিক্রুমেন্ট কনস্টেবল সম্পূর্ণ হলো।
তারা নিয়োগ পেয়েছেন, তারা তাদের যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে কাজের মাধ্যমে তাদের দক্ষতার প্রমাণ আপনারা দেখতে পাবেন বলে আশা করি। মেহেরপুরবাসী, সাংবাদিকগণ ও সাধারণ জনগণ সর্বদা পুলিশকে সহযোগিতা করে এসেছেন। আপনাদের সহযোগিতার ফলে আজকে সুষ্ঠুভাবে সুন্দরভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আর কোন দালাল চক্রের টাকা-পয়সা লেনদেনের মতো কোন সংবাদ বা তথ্য আমরা পাইনি। যদি কখনও এরকম তথ্য পাওয়া যায় অবশ্যই আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।