কন্যার পিতা, করেন ঠিকাদারী ব্যবসাও

ছাত্রলীগের সভাপতি বাঁধন, মানেন না সংগঠনের গঠনতন্ত্র

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠণতন্ত্র মোতাবেক ব্যবসায়ী ও বিবাহিত কোন ব্যক্তি ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকতে পারবেন না। কিন্তু এ দুটি অসঙ্গতি রয়েছে মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সালাম বাঁধনের।তিনি এক কন্যা সন্তানের পিতা, পেশায় ঠিকাদার ব্যবসায়ী। ছাত্রলীগের জেলা কমিটির মেয়াদ অনেক আগে শেষ হলেও এখন পদের লোভে নতুন কোন সম্মেলনও করেননি।

কিন্তু তিনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র তা কেউ জানেন না। ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে বিয়ে করেছেন। প্রায় বছর হতে চললো সন্তানের বাবাও হয়েছেন। কিন্তু তাতে কি? ছাত্র বা বিবাহিত যাই হোন না কেন তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির মত লাভজনক পদ এখনো ছাড়েননি। কেউ তাকে ছাড়াতে পারেনওনি।

ছাত্রলীগের সভাপতির পদ পাওয়ার পর থেকে ক্ষমতার শীর্ষে থেকে তিনি হয়েছেন কোটিপতি। ছাত্র না থাকলেও তিনি মায়ের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে বিভিন্ন দপ্তরের কাজ করছেন। অনলাইন জুয়ার সাথেও রয়েছে তার সখ্যতা। নিজেও অনলাইন জুয়ার পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজ এলাকায় কিনেছেন বেশ কিছু সম্পত্তি। একই দাগে কিনেছেন প্রায় ৫ বিঘা জমি। এছাড়া নামে বেনামেও রয়েছে বেশি কিছু সম্পত্তি। ছাত্র রাজনীতি করাকালীন সময়ে কিভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক তা নিয়ে সমালোচনা অনেক।

আব্দুস সালাম বাঁধন মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার যতারপুর গ্রামের মৃত আশরাফ হোসেন বাবলুর ছেলে এবং মহাজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলুর ভাতিজা। মূলত চাচা মিলুর উপর ভর করেই তার এ শক্তি। তারা চাচা আমাম হোসেন মিলু দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে ওই নির্বাচনে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সালাম বাঁধন সরাসরি নির্বাচনে প্রচারণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

তিনি মুজিবনগর উপজেলা শ্রী রতনপুর গ্রামের ওয়াকারুল হক পলাশের মেয়ে মাকুসরাত মোমেনিন সাথীর সাথে বিয়ে করে সংসার করেছেন। দাম্পত্য জীবনে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। এর আগে তার বিরুদ্ধে আরও একটি বিয়ের অভিযোগ উঠেছিলো। পরে সে বিয়ে টিকেনি বলে জানা গেছে।

২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তিতে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পুর্নাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা জানান, জেলা কমিটির সভাপতি বিবাহিত এবং ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে জেলা কমিটি ও অন্যান্য ইউনিটের কমিটিগুলো অনেক বিবাহিত নেতা দেখা যাচ্ছে।ফলে রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের যে অবদান রাখার কথা সেটা পারছে জেলা ছাত্রলীগ। জেলায় কয়েকটি ইউনিটের কোন কমিটি নেই। নতুন কোন নেতাকর্মীও তৈরি হচ্ছে না। যারা কমিটি আসতে চাচ্ছেন অর্থ এবং ক্ষমতার লোভে আসছেন। ছাত্র রাজনীতি থেকে নেতাদের পাওয়া যাচ্ছে না।

মেহেরপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠণতন্ত্র অনুযায়ী বিবাহিত, ব্যবসায়ীরা ছাত্রলীগের সংগঠণ করতে পারবে না। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিজেই বিবাহিত, এক কন্যা সন্তানের জনক এবং তিনি ঠিকাদারী ব্যবসা করেন।

তিনি আরো বলেন, এক বছরের জন্য কমিটি দেওয়া হলেও মেহেরপুরের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পূণাঙ্গ কমিটি হওয়ার চার বছর পার হলেও এখনো কোন সম্মেলন বা নতুন কমিটি দেওয়া হয়। আমরা কেন্দ্রের কাছে দাবী করেছি, কোন অছাত্র, ব্যবসায়ী এবং বিবাহিত ব্যক্তি ছাত্রলীগে না রেখে নেতাকর্মীদের মাঝে থেকে নেতৃত্ব তৈরি করা হোক।

মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ছাত্রলীগের কোন সদস্য বিবাহিত হলে অথবা ব্যবসার সাথে জড়িত হলে সেটা গঠণতন্ত্র বিরোধী এবং অনৈতিক। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

কয়েক মাস ধরে মোবাইল, হুয়াটসআপ, মেসেঞ্জার বিভিন্ন মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি এমনকি কোন রেসপন্স করেননি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনানের মোবাইলেও ফোন করা হলে ফোনটি রিসিভ হয়নি।