
মেহেরপুরে লাইফ কেয়ার হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে রাশিয়া খাতুন (৪৫) নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহত রাশিয়া খাতুন মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি মীর পাড়ার কাবাদুল ইসলামের স্ত্রী।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকালে মেহেরপুর শহরে অবস্থিত লাইফ কেয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে, মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে ভিড় করেন এবং বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা হাসপাতাল বন্ধের দাবিতে হাসপাতালের সামনে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান নেন এবং হাসপাতালে কর্মী সুমন নামের একজনের উপর হামলা চালায়। পরে পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের আশ্বাসে বিক্ষোভকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে রাশিয়া খাতুনের এক হাত ভেঙে যায়। সে সময় অপারেশনের মাধ্যমে হাতে রড (ফরেন পার্টিকেল) সেট করা হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর হাতটি স্বাভাবিক হয়ে উঠলে চিকিৎসকের পরামর্শে রডটি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য রাশিয়া খাতুন শুক্রবার সকালে লাইফ কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসক মনজুর উল আলামের কাছে অপারেশনের জন্য যান। অপারেশনের জন্য প্রায় ৪০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়।
রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পর তাকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয় এবং অজ্ঞান করা হয় বলে অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনরা। এরপর রাশিয়া খাতুনের আর জ্ঞান ফিরে পাননি। অপারেশনের জন্য নির্ধারিত চিকিৎসক অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশের আগেই রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে তাকে কুষ্টিয়া রেফার্ড করা হয়েছে বলে একটি বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে।
রাশিয়া খাতুনের ছেলে রাসেল অভিযোগ করে বলেন, “আমার মাকে প্রথমে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়, পরে আবার অজ্ঞান করা হয়। এরপর তার জ্ঞান ফেরেনি। এক পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে বলে, কুষ্টিয়ায় নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমার মা তখনই মারা গিয়েছিলেন। আমি নিজ গাড়িতে অক্সিজেনসহ দ্রুত কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। শহরের ওয়াপদা মোড় পেরোনোর আগেই বুঝতে পারি মা আর নেই। পরে গাংনী উপজেলা হাসপাতালে ইসিজি করালে দেখা যায়, ঘণ্টাখানেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ মৃত অবস্থায়ই আমাদের মাকে হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছিল।
ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে লাইফ কেয়ার ডি ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতালটি বন্ধ রয়েছে। এদিকে, এ বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খালিদ সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, “রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনার সময় মৃতের স্বজনদের সঙ্গে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবিব সোনা, সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানসহ স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং পরিবারকে শান্ত করেন।