মেহেরপুর শহর জুড়ে বিদ্যুতের মরণ ফাঁদ! বিদ্যুৎ বিভাগ উদাসীন

বিপদজনক উচ্ছতায় যত্রতত্র বিদ্যুতের খোলা তার যেনো মেহেরপুরে শহর জুড়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

বিদ্যুৎবাহি ওভারহেড তার একেবারেই খোলা। অত্যন্ত জনবহল এলাকায় বাড়ির ছাঁদ বা জানালায় বা বেলকুনির মাঝখান দিয়ে চলে গেছে খোলা তার।সেই তারের মাঝেই বিপদজনকভাবে বসবাস করার পাশাপাশি বাড়ি নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শহরবাসি।

তবে, শুধু ওভারহেড তারের ক্ষেত্রেই বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমনটি নয়, বিদ্যুৎ দপ্তরের উদাসীনতা চোখে পড়ছে শহরের প্রতিটি রাস্তাতে।

রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুটি, ট্রান্সমিটারসহ নানা বিষয়গুলি বিদ্যুৎ দপ্তরে জানিয়েও কোনো সুরাহা পাচ্ছেনা শহরবাসি।মেহেরপুর শহরের নতুনপাড়া এলাকার চুলকানির মোড় নামক স্থানে গিয়ে চোখে পড়বে বিদ্যুতের বিপদজনক অবস্থা।

ডিলারশীপ ব্যবসায়ী আলেয়া স্টোরের মালিক মহব্বত আলী বলেন, আমি চুলকানির মোড়ে বাড়ি নির্মাণ করছি। দোতালার বেলকুনির মাঝখান দিয়ে বিদ্যুতের ৩৩ হাজার ভোল্টেজের তার চলে গেছে। কয়েকদিন আগে আমি বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করি। কিন্তু কোনো ফয়সালা পাইনি।তারা তার সরানোর জন্য কিছু টাকাও দাবী করেছিল। আমি দিতেও চেয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে রাজু আহম্মেদ নামের একজন নির্মাণ শ্রমিককে বিদ্যুতে টেনে নেয়। পরে বাঁশ দিয়ে তাকে সেখান থেকে ছুড়ানো হয়। কোনো মতে প্রাণে বাচে ওই নির্মাণ শ্রমিক।তিনি বলেন আমি বিদ্যুতের তারের কারণে চরম আতংকের মধ্যে আছি। আমার বাড়ি নির্মাণ হলেও শুধুমাত্র বিদ্যুতের ঝুকির কারণে সেখানে বসবাস করা আমার জন্য কঠিণ হয়ে দাড়াবে।

একটু এগিয়ে গিয়েই চোখে পড়বে ডাক্তার আখতারুজ্জামানের দোতালা বাড়িটি। বাড়ির বেলকুনির সাথেই লেগে আছে বিদ্যুতের তার। এসএস পাইপের সাথে বিদ্যুতের তার লেগে থাকায় চরম আতংকে রয়েছে পরিবারটি। বাড়ির মালিক ডাক্তার আখতারুজ্জামান বলেন, আমি চরম ঝুঁকি নিয়ে এই বাড়িটিতে বসবাস করছি। বিদ্যুৎ অফিসের সাথে বারবার যোগাযোগ করার পরেও কোনো সূরাহা পাইনি। যখন বিদ্যুতের পোল স্থাপন করেন ও তার টানেন তখন বারবার বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কর্নপাত করেননি।

নতুনপাড়ার বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, আমার ভাই দুলাল হোসেনের বাড়ির ছাদের উপর বিদ্যুতের ১১ হাজার ভোল্টেজ লাইন চলে গেছে। ছাদের উপর আমাদের পরিবারের কোনো লোকজন উঠতে পারেন না। কখনো কখনো শিশুরা অসাবধনতা ছাদের উপর চলে যায়। এনিয়ে পরিবারের লোকজন চরম আতংকের মধ্যে থাকি আমার।

একই পাড়া বাসিন্দা ফয়জেল মিস্ত্রি বলেন, আমার বাড়ির ছাদের উপর বিদ্যুতের খোলা তার ঝুলছে দীর্ঘদিন। আমি বিদ্যুৎ অফিসের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেছেন ৪০ হাজার টাকা দিলে খুটি সরিয়ে নেবে বলেছেন বিদ্যুৎ অফিস। কিন্তু আমার তো টাকা নেই। তাই মৃত্যুর মত ঝুঁকি নিয়েই এই বাড়িতে বসবাস করছি।

শহরের বাসিন্দা রাকিব হোসেন ও আরিফুল ইসলাম বলেন, মেহেরপুর শহরে বিদ্যুতের লাইন যেন মৃত্যুফাঁদ। বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ লাইন মেরামত হচ্ছে না। দীর্ঘ দিনের পুরানো, জরাজীর্ণ। অপরিকল্পিত, অবৈধ অনিরাপদ তারে ভরা। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি আমাদের দোয়ারে এসে কড়া নাড়ছে মৃত্যুর। কিন্তু প্রতিকার পাচ্ছিনা।

সরকারি চাকুরিজীবী সুমন বলেন, যত্রতত্র বিদ্যুতের খোলা তার! নিরাপত্তা মানদণ্ড না মেনে বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণ ও সংযোগ দেয়ার কারণে শহরে বাড়ছে মৃত্যুর মত ঝুঁকি। বিদ্যুৎ লাইনের সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে বিতরণকারী সংস্থাগুলোর ভুল এবং অবহেলার কারণে দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির শিকার হচ্ছে জনগণ।

মেহেরপুর পিডিপির নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, শহরের বাসিন্দারা বিদ্যুতের তারের মধ্যে এসে বিল্ডীং নির্মাণ করছেন। মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হলে লাইন নির্মাণ করতে হবে। আমরা সব সময় জনগণকে বিদ্যুৎ লাইন থেকে একটু দুরে বিল্ডীং নির্মাণের পরামর্শ দিয়ে থাকি। তারা বিল্ডীয় কোড না মেনেই তাদের বাড়ি ঘর নির্মাণ করছেন। এই সমস্যার কারণে আমরা এখন বিদ্যুৎ লাইনের জন্য পোল পুঁততেও পারছিনা।

টাকা দিলে পোল সরিয়ে নিতে চান এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ লাইনে কারোর কোনো সমস্যা হলে তারা অফিসিয়াল ভাবে আবেদন করবেন। আমরা সেটা তদন্ত করে খুলনাতে পাঠায়। তারপর সেখান থেকে খরচ খরচা বা অন্যান্য বিষয়গুলো জানানো হয়। আনঅফিসিয়ালী কোনো টাকা পয়সার বিষয় কোনো ব্যক্তির কাছে আমরা বলিনা। কেউ বলে থাকলে সেটা তাদের বিষয়। এসব কথার কোনো বেইজ নেই।