মেয়ের বেপরোয়া জীবন মানতে না পারায় হত্যা করেন বাবা

মেহেরপুরের ভৈরব নদে বস্তা ভর্তি লাশ উদ্ধারের রহস্য উন্মোচন হয়েছে। বাবা মোঃ বজলুর রহমান (৫০) মেয়ে ববিতা ইয়সমিন (১৮) কে হত্যা করার পর লাশ গুম করতে নদিতে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় শনিবার ভোরে মেহেরপুর সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের বাজার থেকে বাবা বজলুর রহমানকে আটক করেছে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশ।

পরে দিন বিকালে মেহেরপুর আদালতে তোলা হলে ম্যাজিস্ট্রেট বেগম রাফিয়া সুলতানার কাছে মেয়ে ববিতা ইয়াসমিনকে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় বজলুর রহমান। বজলুর রহমান মেহেরপুর সদর উপজেলার নিশ্চিান্তপুর গ্রামের মৃত আওলাদ হোসেন এর ছেলে। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে,

নিজের মেয়ের বেপরোয়া ভাবে চলাফেরা মেনে নিতে পারেননি বাবা। সর্বশেষ মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বাবা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মেয়ের মাথায় আঘাত করে হত্যা শেষে বস্তাবন্দি করে ভৈরব নদীতে ফেলে দেন। দুই মাস আগে মেহেরপুর ভৈরব নদী থেকে বস্তাবন্দি নারীর লাশ উদ্ধারের পর এমন চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উন্মোচন করে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশ।

মেহেরপুর সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রাসুল সামদানি আজাদের দুই মাসের তদন্তে উঠে আসে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা। জবানবন্দিতে বজলুর রহমান জানান, মেয়ের অতিরিক্ত বেপরোয়ায় অতিষ্ঠ ছিল পুরো পরিবার। মেয়ের মা রেহেনা বেগম মমতাজ দির্ঘ ৫ ধরে থাকেন প্রবাসে (মরিশাস)।

সেই থেকে মেয়ে নিজের ইচ্ছামত বিচরণ করতো। ববিতা মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে হারিয়ে যেত আবার কিছুদিন পার ফিরে আসতো। গত দুই-তিন বছর এভাবেই নিজের ইচ্ছাকে প্রধান্য দিয়ে চলাচল করতো ববিতা। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও সে ঢাকায় একটি বাড়িতে বুয়ার কাজ করতো। গত ১৩ মার্চ সে ঢাকা থেকে মেহেরপুর এসে এক আত্মীয়র বাড়িতে ছিল।

ঘটনার দিন মেয়ে ববিতা কে নিয়ে একটি পিকআপ যোগে নিশ্চিন্তপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের নেমে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই। তার এক আত্মীয় বাড়িতে পথিমধ্যে কথার এক পর্যায়ে ববিতার গলা চেপে ধরে।

এসময় ববিতার মাথায় হাত সজোরে আঘাত করলে ববিতা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ববিতা মারা গেছে ভেবে পাশের একটি কলা বাগানে নিয়ে ফেলে রেখে বাড়িতে চলে যায়। ঐ রাতে সেই কলা বাগানে ফিরে দেখি মেয়ের দেহ শক্ত হয়ে গেছে। ভয়ে বাড়ি থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে এসে তাতে মেয়েকে ভরে পাশ^বর্তী ভৈরব নদে ফেলে দিই।

মেহেরপুর সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রাসুল সামদানি আজাদ জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের হাতে তেমন কোন ক্লু ছিলনা। শুধু মাত্র মেয়ের পরনে থাকা সালোয়ার কামিজের মাধ্যমে অপরাধীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি।

মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ দারা খান বলেন, কোন রকম ক্লু না থাকায় অপরাধিকে শনাক্ত করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। সদর থানার চৌকশ টিমের ব্যাপক অনুসন্ধানে অপরাধীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। আসামীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ মেহেরপুরের কুলবাড়িয়া গ্রামের হামেশতলা পাড়া সংলগ্ন ভৈরব নদ থেকে একটি বস্তা ভর্তি অর্ধগলিত অবস্থায় একটি মেয়ের লাশ উদ্ধার করে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশ। পরে ময়না তদন্ত শেষে মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে তাকে দাফন করা হয়।