যাদের নামে ভিসানীতির অপপ্রচার, তারাই যুক্তরাষ্ট্রে

যাদের নামে ভিসানীতির অপপ্রচার, তারাই যুক্তরাষ্ট্রে

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কাদের ওপর ভিসানীতি আরোপ করা হয়েছে সেই নামগুলো দেশটির পক্ষ থেকে প্রকাশ না করা হলেও সামাজিক মাধ্যমে ঘুরপাক খায় বিভিন্ন ব্যক্তির নাম সম্বলিত তালিকা। অথচ তাদের অনেকেই অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করেছিলেন। গুজব রটানো হয়েছিল বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নানের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রত্যাখিত হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল – গত শনিবার (১৪ অক্টোবর) তিনি স্ত্রীসহ সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেছেন।

সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে দেখা যায়, ভিসা নীতিকে কেন্দ্র করে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। এর মধ্যে বিএনপি এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের নামে চালু থাকা পেজ এবং বিভিন্ন গ্রুপ থেকে এসব গুজব পোস্ট করা হচ্ছে। সেখান থেকে কপি করে সেগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের অনুসারীরা। দেশে এবং বিদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন ফেসবুক পেজ এবং আইডি থেকে ছড়ানো হচ্ছে অপপ্রচার।

ভিসা নীতি ঘোষণার পর অপপ্রচারকারিদের তৈরি তালিকায় নাম আসে সাবেক ও বর্তমানসহ কয়েকজন প্রধান বিচারপতির, বিচারপতির, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ বেশ কয়েক জন কমিশনার, ব্যবসায়ী মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নাম। তবে দেখা গেছে, তাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে এসেছেন।

অপপ্রচার থেকে মুক্তি পায়নি খোদ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নানের ছেলে শেখ লাবিব হান্নান। তাকে নিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর একটি অজ্ঞাত ওয়েব সাইটে নিবন্ধ লেখা হয় ভারতীয় সাংবাদিক চন্দন নন্দির নামে। সেখানে অজ্ঞাত সুত্রের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়- ‘যুক্তরাষ্ট্রে পড়ুয়া লাবিব হান্নানকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। হেডলাইনে বড় করে বলা হয়- ‘মার্কিন ভিসা নীতির প্রয়োগ শুরু, বিমানবাহিনী প্রধানের ছেলে দেশে ফেরত’। অথচ লাবিব হান্নান লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-তে। তিনি বর্তমানে একটি বহুজাতিক তামাক প্রস্তুতকারী কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। চন্দন নন্দির নামে ছাপানো ওই লেখার প্রতিবাদ শুরু হলে প্রকাশের কয়েকঘন্তা পর তা সরিয়ে ফেলা হয়। তবে সেটির স্ক্রিনশট নিয়েও অপপ্রচার চালান কয়েকদিন ধরে।

এরপর একই লেখক আরেকটি লেখার সূত্র ধরে চালান হয় আরেকটি অপপ্রচার। চন্দন নন্দির নামে আরেকটি লেখা একই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন – যুক্তরাষ্ট্র – কানাডা সম্প্রতি বিমান বাহিনী প্রধানের ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশের জন্য হেলিকপ্টার কেনার উদ্দেশ্যে সশরীরে পর্যবেক্ষণ করতে ভিসার আবেদন করেছিলেন তিনি।

অপপ্রচারকারিরা এর সঙ্গে যুক্ত করেছে – বিমান বাহিনী প্রধান চিঠি দিয়ে ভিসা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। যদিও এমন কিছুই ঘটেনি। বিএনপি’র বিভিন্ন নেতা এবং নেত্রী এই গুজব নিয়েও অপপ্রচার চালিয়েছেন সামাজিক মাধ্যম এবং ইউটিউবে। গত শনিবার বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। এক সফরসঙ্গী ও স্ত্রীসহ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি।
সফরের অংশ হিসেবে বিমান বাহিনীর দুটি সি-১৩০ পরিবহন বিমানের নিরীক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের (পিডিএম এবং ‘সি চেক’) কার্যক্রম পরিদর্শন করবেন বিমানবাহিনী প্রধান। সরকারি সফর শেষে ২১ অক্টোবর বাংলাদেশে ফিরবেন তিনি।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একজন ব্যক্তিকে নিয়ে এমন কুৎসা রটনার প্রেক্ষিতে কেউ কেউ ফেসবুকে লিখেছেন- বাংলাদেশ বিরোধী গুজবকারীদের মুখে ছাই দিয়ে বিমান বাহিনী প্রধান এখন নিউইয়র্কে! গত সেপ্টেম্বর মাসে ফেইসবুক, ইউটিউব এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দেশবিরোধীচক্র গুজব ছড়িয়েছিল বিমান বাহিনী প্রধানের আমেরিকা ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আবার কেউ কেউ লিখেছেন- বিএনপি জামায়াত পন্থী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা অখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক চন্দন নন্দীর রেফারেন্স দিয়ে বিমানবাহিনী প্রধানের মার্কিন ভিসা ব্যানের গল্প প্রচার করছিলো ।