রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে এগিয়ে যেতে চান সীমান্ত

তার নাম সীমান্ত। পুরো নাম হুসাইন আব্দুল্লাহ সালেহ সীমান্ত। রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়েই এগিয়ে যেতে চান সামনের দিকে। কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে যে ক’জন শিল্পী রয়েছে এই অল্প বয়সে তার মধ্যে অন্যতম এই সীমান্ত।

মায়ের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে ২০০৫ সালের দিকে প্লে গ্রুপে অধ্যায়নকালীন সময়ে কুষ্টিয়া জেলা শিশু একাডেমি থেকে পথচলা শুরু। এরপর সীমান্তর গানের হাতেখড়ি হয় ওস্তাদ খন্দকার মিজানুর রহমান বাবলুর মাধ্যমে। পরবর্তীতে কোহিনূর খানমের হাত ধরে আজ এই সঙ্গীত চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সীমান্ত।

তার বাবা গোলাম হোসেন, অগ্রণী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কবি জেসমিন হোসেন মিনির তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট এই সীমান্ত। বর্তমানে পড়াশোনা করছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)’তে ইলেকট্রনিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইন্জিনিয়ারিং এ তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত।

সম্প্রতি, সীমান্তর শিল্পী হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে তুলে ধরেছেন এসএম জামাল।

কুষ্টিয়া জেলা শিশু একাডেমি থেকে পথচলা শুরু হলেও নিয়মিত সঙ্গীত চর্চা করতো তিনি। ধীরে ধীরে রবীন্দ্র সঙ্গীতের উপর চর্চা বেশি থাকায় তার উপর ঝুঁকে পড়ে। অবশ্য অস্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় ব্যান্ডের গান শোনার মধ্য দিয়ে অর্থহীন ব্যান্ডের জনপ্রিয় গান ‘অদ্ভুত সেই ছেলেটি আবার শুরু করলো হাটা, কালো লম্বা এলোমেলো চুলে চোখ দুটো তার ঢাকা, এই গানটির কারনেই গিটারের প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়। গিটারিস্ট হিসেবে শুরু করেন তিনি। এখন গিটার এবং হারমোনিয়াম তার প্রিয়। শখের বশে গান করলেও প্রফেশনাল শিল্পী হওয়া তার মূল উদ্দেশ্য ছিলো না, ইচ্ছেটাকে বাস্তব রূপ দেওয়া এবং মনের খোরাক মেটানো-ই ছিলো মূখ্য বিষয়।

তার সেই ইচ্ছেটা নিজের অজান্তেই প্রফেশনাল শিল্পী হওয়ার দিকে ধাবিত করেছে। পাশাপাশি শিল্পী হিসেবে যুক্ত আছে শিল্পকলা একাডেমীতে। বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কেন্দ্রে রবীন্দ্র সঙ্গীত ও আধুনিক গানের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

শুরু থেকেই সুরে সে খুঁজে ফিরেছে নিজ মাটির গন্ধ। পরবর্তীতে তার মায়ের সেই ইচ্ছেকে নিজের স্বপ্নে রুপান্তরিত করেছে, রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রতি ভালোলাগা ধীরে ধীরে পরিনত হয়েছে ভালোবাসায়। মা-বাবার গর্বিত সন্তান হয়ে যথাযথ সম্মান উপহার দিতে পারা এবং ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাঝেই সার্থকতা।

জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েছেন সীমান্ত। ২০০ জন প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে তার গানের এলবাম এর মোড়কও উম্মোচন হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন পরিচালিত সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বিভাগীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র সংগীতে ২য় মানের শিল্পীতে তালিকাভুক্ত হয়।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে দেশব্যাপি সংগীত প্রতিযোগিতা ২০১০-২০১১ কুষ্টিয়া, খুলনা, ঢাকা গ্রুপ-ক স্থান- ১ম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রতিযোগিতা-২০১৩ কিশোর বিভাগে ২য় মানে, জাতীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে গোল্ড মেডেল ২০১৩

জাতীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় রবীন্দ্র সংগীত এ গোল্ড মেডেল -২০১৬ শিশু একাডেমি, স্কুল, কলেজ, পর্যায়ে বিভিন্ন সনদপত্র প্রাপ্ত। এছাড়াও শিশু একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমিতে তার অনেক সাফল্য রয়েছে।

কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক সংগীত প্রতিযোগিতা কুষ্টিয়ার কন্ঠ তে সেরা পাঁচের মধ্যে অবস্থান করছে সীমান্ত।

প্রতিযোগিতায় কুষ্টিয়ার দুইশ শিল্পী অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে টপটেন ছাড়িয়ে ৫ জনের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ ঘোষণা করা হবে। আমি ভীষন আশাবাদী। আল্লাহ চাইলেই আমি ভালো কিছু করবো। তবে বিচারকরা ভালো বলতে পারেন।

শিল্পী হয়ে ওঠার পথচলায় কাদের অবদান সবচেয়ে বেশি এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “এই পর্যায়ে আসার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মা এবং আমার শিক্ষকদের। মা এই ইচ্ছেটা প্রকাশ না করলে হয়তো আমার শিল্পী হওয়া হতো না।

স্যারও এতটা উৎসাহ এবং ভালোবাসা দিয়ে শিখিয়েছেন যে শিল্পীর প্রতি আলাদা ভালোলাগা তৈরি হয়েছে। স্যাররা অনুপ্রেরণা না দিলে কখনই শিখতে পারতাম না। কোহিনূর খানমকে অনেক কৃতজ্ঞতা।

বন্ধুমহল থেকেও বেশ সাপোর্ট পেয়েছি। আমি অনেক বেশি সাপোর্ট পেয়েছি ওর থেকে। একটা প্রতিযোগিতায়। অনেকটা চিন্তিত ছিলাম এটা ভেবে যে লোকে কি বলবে! কে কি ধরনের মন্তব্য করবে, ভালো হবে কী হবে না। অর্থাৎ মনোবল একদম শূন্য ছিল। ওই সময়ে বন্ধুরা আমাকে বোঝায় এবং চেষ্টা করে দেখতে বলে। বন্ধুরা বলল, ” সবার চিন্তা ভাবনা এক রকম নয়, যেকোনো কাজে ভালো এবং খারাপ দুটো দিকই থাকে তাই বলে নিজেকে থামিয়ে রাখা যাবে না।

সীমান্তর পছন্দের তালিকায় রয়েছেন শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সাগর সেন, মাহমুদ নবী ও সায়ান চৌধুরী অর্ণবের সবগৃলো গানই ভালো লাগে তার।
বাঙালিয়ানা সব খাবারই তার পছন্দের। তার প্রিয় রং কালো ও নীল, পছন্দের পোশাক ঢোলাঢালা শার্ট ও জিন্স প্যান্ট।

সীমান্তর ভবিষ্যতে নিজেকে ভালো একটি পর্যায়ে দেখতে চায় তার পরিবার।