রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন দরকার

রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন দরকার

পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে বর্বর পাকিস্তানি হানাদাররা সুজলা-সুফলা-শ্যামল বাংলাকে আক্ষরিক অর্থেই শ্মশানে পরিণত করেছিল। ব্যাংকে টাকা নেই, ট্রেজারি খালি, সোনাদানা—সব কিছু লুট করে নিয়ে গেছে পাকিস্তানের লুটেরা বাহিনী। আত্মসমর্পণের আগে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত, দোকানপাট, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট। সমুদ্রবন্দর, নৌবন্দর, রেললাইন—সবই ধ্বংস করে দিয়েছে হানাদার ও তাদের দোসররা।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্দেশে আলবদরের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সব টাকা রাস্তায় এনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর মতো বন্ধুর বড়ই অভাব ছিল। সব মিলিয়ে দেশটির টিকে থাকা নিয়েই শঙ্কা ছিল। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো ও বড় পরাশক্তির ধারণা হয়েছিল যে সদ্যঃস্বাধীনতা পাওয়া বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক জনসন ও সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। ১৯৭২ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসে বাংলাদেশকে ‘ইন্টারন্যাশনাল বটমলেস বাস্কেট’ শিরোনামে অভিহিত করে সংবাদও ছাপা হয়ছিল। হেনরি কিসিঞ্জারের নেতৃত্বাধীন এক কমিটি মনে করেছিল, এটি হবে আন্তর্জাতিক এক তলাবিহীন ঝুড়ি। এখানে যতই সাহায্য ঢালা হোক না কেন, তা কোনো কাজেই লাগবে না।

দেশটিতে দ্রুতই দুর্ভিক্ষ ও মহামারি দেখা দেবে। ওই সময়ে সিআইএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এত অল্প জায়গায় এত মানুষের বাস এবং এত দারিদ্র্যের কারণে দেশটি তার প্রতিবেশী ও বিশ্বের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জারের কুখ্যাত উক্তি তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ রূপ-মাধুর্য-ঐশ্বর্যে এতটাই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে যে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের নিত্যনতুন প্রস্তাব আসছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা প্রতি মাসেই আসছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘুরে গেলেন কয়েক দিন আগে।

জাপান সরকারের আমন্ত্রণে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি জাপান সফর করেছেন। জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারি উন্নীত হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় সফর করে গেলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে এক পরিবারের সদস্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা বাংলাদেশ সফরে আসার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। জি২০ ও ব্রিকসের সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও উভয় সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের ফাঁকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। ধনী রাষ্ট্রগুলোর গ্রুপ জি৭-এর আউটরিচ সম্মেলনেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

বিশ্বব্যাংক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়েছেন বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শোনানোর জন্য। বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বসম্প্রদায়ের এই আকর্ষণের গোপন রহস্য বঙ্গজননীর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং বাংলাদেশের প্রতি আকর্ষণের মূল রহস্য হলো ঈর্ষণীয় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, অপার প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদের সম্ভাবনার হাতছানি, কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, বিরাট অভ্যন্তরীণ শ্রম ও বিপণন বাজার আর বিশাল কর্মক্ষম মানবসম্পদ। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল, স্যাটেলাইট, সাবমেরিন ও পরমাণু ক্লাবে যোগদান, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের মতো মেগাপ্রজেক্ট বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাফল্য এখন বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর কাছে রীতিমতো রহস্য। পুরো বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়তই মিলছে তার স্বীকৃতি। খোদ জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক এখন বিভিন্ন সদস্য দেশকে দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে বলছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সরল স্বীকারোক্তি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতো সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এর সব কিছুই সাক্ষ্য দিচ্ছে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে এক সমীহের নাম বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো, বহির্বিশ্বে রাষ্ট্রের অনন্য মর্যাদা—সব কিছুই বদলে গেছে। বদলায়নি আমাদের রাজনীতি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরো নষ্ট, নোংরা, অশোভন হয়েছে। সরকারের সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলের মতবিরোধ হয়। সরকারকে চাপে রাখতে, দাবি আদায় করতে আন্দোলন-সংগ্রাম হয়। তার পরও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্পর্কে কিছুটা টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু জি২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেলফি তুলেছেন এবং অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছেন। সেলফি ও অনানুষ্ঠানিক এই আলোচনার রাজনৈতিক তাৎপর্য কী? বাইডেনের স্বতঃস্ফূর্ততা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের কর্মক্ষেত্রের কথা জেনে তাঁর কাছ থেকে ভিজিটিং কার্ড চেয়ে নেওয়া, সর্বোপরি বাইডেনের শারীরিক ভাষা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের মেরামত কিংবা মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত কি না সে বিষয়ে বিশ্লেষণে না গিয়েও এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে এটি এক অনন্য রাজনৈতিক শিষ্টাচারের উদাহরণ। বাইডেনের সেলফিকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের কিছু নেতার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধীদের বক্তব্য কতটা শোভন? বঙ্গবন্ধুকন্যা বৈশ্বিক নেতৃত্বের এমন এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছেন যে তাঁর সঙ্গে বাইডেনের সেলফি তোলা খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা।

জি২০ সম্মেলনের আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, প্রভাবশালী রাষ্ট্রের নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে মাঝখানে রেখে ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়েছেন। এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর বাসগৃহে মাত্র দুজন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, আর অন্যজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জি২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, একটি সোফায় বসে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর পাশে খালি পায়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন ঋষি সুনাক। সেভাবেই তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে কথা বলছেন। এটি একদিকে যেমন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বিনয় ও সৌজন্যতার অপূর্ব নিদর্শন; অন্যদিকে বয়োজ্যেষ্ঠ ও যোগ্য নেতৃত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক অনবদ্য শোভন রাজনৈতিক শিষ্টাচার। সম্প্রতি সফর করে যাওয়া ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর বিনয় ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারও শিক্ষণীয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফরাসি ভাষায় বক্তব্য শুরু করার আগে ফরাসি ভাষার ট্রান্সলেটর ইনস্ট্রুমেন্টটি নিজ হাতে বয়ে এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিচ্ছেন। একটি উন্নত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের এই আন্তরিক আচরণ একটি স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হওয়ার অপেক্ষারত সরকারপ্রধানকে নয়, বরং একজন যোগ্য বৈশ্বিক নেতৃত্বকে সম্মান প্রদর্শনের এক শিষ্টাচারের উদাহরণ।

এর বিপরীতে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের নেতারা বঙ্গবন্ধুকন্যার সব অবদানকে শুধু অস্বীকারই করেন না, বরং বিএনপি মিছিল-মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যেসব অসম্মানজনক স্লোগান দেয় তা অশোভন-অশ্লীল। বিএনপির মিছিলে একজন কিশোর কিংবা যুবক যখন জাতির জনককে অসম্মান করে স্লোগান দেয়, তখন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নোংরামি কতটা নিচে নেমে গেছে তা বোধ করি বলার অপেক্ষা রাখে না।

দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আত্মত্যাগের এক মহৎ পারিবারিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ১৯৭৪ সালের ১৪ এপ্রিল ভাসানী পল্টনে হুকুমতে রব্বানী পার্টির উদ্যোগে এক মহাসমাবেশের ডাক দেন। একটি মিছিল নিয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ঘেরাওয়ের জন্য বঙ্গভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন ভাসানী। খবর শুনে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান রাস্তায় চলে আসেন। মিছিল কাছে আসতেই বঙ্গবন্ধু মওলানা ভাসানীর পা ছুঁয়ে সালাম করেন। এ দৃশ্য দেখে হাজার হাজার মিছিলকারী জনতা হতভম্ব। বঙ্গবন্ধু হুজুরসহ (ভাসানী) কয়েকজন নেতাকে সম্মান দেখিয়ে ভেতরে নিয়ে যান। বঙ্গবন্ধু নিজেই বয়োবৃদ্ধ হুজুর কে ধরে নিয়ে গেলেন। ভেতরে বসিয়ে মিষ্টিমুখ করালেন। সার্বিক পরিস্থিতি হুজুরের সামনে তুলে ধরলেন। হুজুর কিছু পরামর্শ দিয়ে বিদায় নিলেন। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আনিসুর রহমান তাঁর Through Moments in History : Memoris of Two Decades of Intellectual and Social Life (1970-1990) আকরগ্রন্থে লিখেছেন, ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে জাসদের সাধারণ সম্পাদক তাঁকে জাসদের এক জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করেন। অধ্যাপক রহমান বলেন, তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হওয়ায় সমাবেশে যোগদানের জন্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমোদন প্রয়োজন। অধ্যাপক রহমান লিখেছেন, জাসদের সমাবেশে যোগদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর অনুমতি চাইলে বঙ্গবন্ধু কিছুক্ষণ ভাবলেন। সামনের কাগজগুলোতে কিছু একটা আঁকাজোখা করলেন। তারপর বললেন, ‘You may…go. There are some good boys and girls in their party, no harm if they hear some good words from you on nation building.’

অধ্যাপক রহমান জাসদের সভায় যোগদান করেছিলেন। রাস্তায় যারা তাঁর রক্ত চাচ্ছে, তাদের সমাবেশে যোগদানের জন্য সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের একজন দায়িত্বশীল সদস্যকে অনুমতি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ত্যাগের দীক্ষায় মহিমান্বিত এবং প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির পূজনীয় এই রাজনীতি চর্চা করেছেন বঙ্গবন্ধু। সেই পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি বঙ্গবন্ধুকন্যার আচরণে তা পরিলক্ষিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। ফরাসি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের মধ্যে তাই মাইক্রোফোনের উচ্চতা ঠিক করে দিতে ছুটে যান আমাদের প্রধানমন্ত্রী। জঙ্গিদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে গ্রেনেড মেরে হত্যা করার চেষ্টার পরও খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর মৃত্যু সংবাদ শুনে তাঁকে সমবেদনা জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির সিনিয়র নেতারা সেই সময় খালেদা জিয়ার বাসায় উপস্থিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রীকে বাসায় ঢুকতে দেওয়ার সৌজন্য প্রদর্শনও করেননি। বরং বাসায় ঢোকার পকেট গেটটিও সেদিন প্রধানমন্ত্রীর মুখের ওপর বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেটের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসেন। এটি কোনো বিবেচনায়ই শিষ্টাচারের রাজনীতি নয়।

বঙ্গবন্ধুর মতো একটি দয়ার্দ্র হৃদয় পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে যে পরিবারের সম্পৃক্ততা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলে যে খালেদা জিয়া হরতাল করেছেন, ২০০১ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আটকে দিয়েছেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার-অপমান করেন, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত দিবসে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেছেন, সেই খালেদা জিয়াকে নির্বাহী বিবেচনায় জেল থেকে মুক্তি দিয়ে বাসায় বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এটি সহনশীল রাজনৈতিক শিষ্টাচারের নজির।

এক পক্ষের চেষ্টায় রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও শিষ্টাচারের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হয় না। এ জন্য সব পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। হতাশার কথা হলো, সব বদলায়; আমাদের নষ্ট-নোংরা-অশোভন রাজনীতি বদলায় না। আমাদের যে অভাবনীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে তা টেকসই করতে হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতেই হবে। রাজনীতিতে শিষ্টাচারের প্রচলন করতেই হবে।

লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।