রাষ্ট্র কিভাবে চলবে তা পরিষ্কার করা আছে

আমার দেশ এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বসবাস। ইতিহাস বলে, এখানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পীর আওলিয়াগন দাওয়াতের মাধ্যমে এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন, কোন জোর জুলুম বা নিজ সংবিধানকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে নয়।

আমার প্রিয় নবীরাও দাওয়াতের ও নিজেদের চরিত্র, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আমরাও যদি নিজেদের উত্তমরুপে তুলে ধরতে পারি অবশ্যই ইসলাম দেশে ও বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে।

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হবে নাকি অন্যকিছু হবে এ নিয়ে পুনরায় আলোচনার ঝড় উঠেছে। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে রাখার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন ধরনের মতামত শোনা যাচ্ছে। রাষ্ট্র সবাইকে নিয়ে সবার জন্য সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের জন্য।

আমার ধর্ম আমি করবো। মুসলমান হিসেবে আমাদের বিয়ে হবে মুসলিম আইনে, সম্পত্তি বন্টন ইত্যাদি হবে মসলিম আইনে। অন্যরা করবে তাদের নিজ আইন বা রীতিতে। রাষ্ট্র দেখবে ব্যবস্থাপনা, প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অন্যের অনুভুতিতে আঘাত না আসে তার ব্যবস্থা করা।

মানবজাতিকে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে যুগে যুগে আল্লাহ নবী-রসুল পাঠিয়ে মানুষকে সত্য দ্বীন দান করেছেন। আল্লাহর সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হলে মানবজীবনে যে অনিবার্য শান্তি নেমে আসে ইসলাম হলো সেই শান্তির নাম। এ কারণে আক্ষরিকভাবেই ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি।

প্রত্যেক বস্তুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, গুণ বা ধর্ম আছে। রাষ্ট্রেরও ধর্ম আছে। রাষ্ট্র জনগণকে ন্যায়, শান্তি, সুবিচার ও নিরাপত্তার মধ্যে রাখবে- এটা রাষ্ট্রের প্রধান ধর্ম। এই ধর্মকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যেই রাষ্ট্র গঠিত হয়।

ইসলাম’ একটি পুর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এতে যেমন ব্যক্তিগত জীবনাচার আছে, আছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালাও। মুসলিমরা তাদের আইনে চলতে পারে ও অন্যরা তাদের রীতি-নীতিতে চলতে পারে সরকার তার দায়িত্ব নিবে। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু সবার জন্য রাষ্ট্রসংবিধান সমান।

মুসলিম হিসাবে আমার সংবিধান পবিত্র আল-কোরআন, হিন্দুদের বেদ, খৃস্টানের বাইবেল। আমি যেন কোরআন সুন্না অনুযায়ী চলতে পারি সেই গ্যারান্টি রাষ্ট্রকেই দিতেই হবে। অন্যদের বেলাও তাদেরটাও তাই। কিন্তু সরকারগুলো বিভিন্ন পন্থায় চেষ্টা চালায় জনগণের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে নিজের পক্ষে রাখতে।

ভোটের রাজনীতিতে ধর্ম যেহেতু বিরাট একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়, কাজেই রাজনীতির অন্য সব অঙ্গনের মত ধর্মকে কেন্দ্র করেও বিভিন্ন প্রতারণা মূলক পন্থা অবলম্বন করা হয়। রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের নাম ঘোষণা করা, এতে না ইসলামের কোনো লাভ হয়, আর না রাষ্ট্রের কোনো বুনিয়াদী পরিবর্তন ঘটে। বরং মুসলিমরা যদি সত্যিকার ইমানদার হয়, নিজেদের পরিপূর্ণভাবে ইসলামের রুজূকে ধারণ করে তাতেই সফলতা আসবে, বিশ্ব ইসলামের দিকে ধাবিত হবে।

আমাদের দেশে মুসলমানদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত, যা আলাপ আলোচনার সমাধান প্রয়োজন। যেমন, সুদ। সুদের সাথে বিন্দুমাত্র সম্পর্ক রাখাও ইসলামে হারাম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তিই দাঁড়িয়ে আছে সুদের উপর। আবার কোর’আনে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন সীসাঢালা প্রাচীরের মত ঐক্যবদ্ধ থাকতে। হাদীসে জাতির ঐক্যকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে রসুল এ পর্যন্ত বলেছেন যে, কোর’আনের আয়াতের অর্থ নিয়ে মতবিরোধ করা কুফর।

বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছেন- আমার পর তোমরা একে অপরকে হত্যা করে কুফরি কর না। অর্থাৎ ইসলামের হুকুম হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থাকা। কিন্তু বাস্তবে আমরা পাশ্চাত্যের তন্ত্র-মন্ত্র, মতবাদকে ভিত্তি করে বহুবিধ দল-উপদলে বিভক্ত এবং ধর্মীয়ভাবে শত শত ফেরকা-মাজহাবে বিভক্ত হয়ে আছি।

এক দলের মানুষের হাতে অহরহ প্রাণ হারাচ্ছে আরেক দলের মানুষ। তাহলে ইসলাম রইল কোথায়? আল্লাহ বলেছেন দান কর, ব্যয় কর, আমরা যক্ষের ধনের মত সম্পদ আঁকড়ে থাকি, আল্লাহ বলেছেন এতিমের প্রাপ্য সম্পদ বুঝিয়ে দাও, আমরা এতিমের সম্পদ ভোগ করার জন্য প্রয়োজনে তাকে হত্যা করি, আল্লাহ বলছেন আল্লাহর রাস্তায় অর্থাৎ মানবতার কল্যাণে জীবন-সম্পদ ব্যয় করে শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কর, আমরা তা কি করছি?

আল্লাহ আমাদের শান্তিময় জীবন নিশ্চিত করার জন্য যে সত্য দ্বীন প্রেরণ করেছেন তাকে কাগজের পাতায় সীমাবদ্ধ করে রাখলেই শান্তি এসে যাবে না। তাকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।

সংখ্যাগুরুর দাপটে আমাদের মতামত যদি রাষ্ট্রের উপর চাপিয়ে দিই। ভারত, আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা যদি তাদের সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় মতামত রাষ্ট্রের উপর চাপায়, তাতে কি আমরা মেনে নিবো বা বিশ্বে শান্তি বিরাজ করবে?

বরং দাওয়াতের মাধ্যমেই ইসলাম বিস্তার সম্ভব বলে আমি মনে করি।
– প্রকাশক মেহেরপুর প্রতিদিন