লকডাউনে মানবেতর জীবন বাস শ্রমিকদের

সিরাজুদ্দোজা পাভেল

জাকির হোসেন। বয়স ৩৫। শ্যামলী পরিবহনের চালক। লকডাউনের কারণে গাড়ি বন্ধ থাকায় তার আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে জাকির হোসেন কে। করোনা পরিস্থিতি কবে থামবে, কবে আবার আয়ের পথে ফিরে আসবে জানেন না তিনি।এ অবস্থায় হতাশায় দিন কাটছে তাঁর।

মোঃ সবুজ। লোকাল গাড়ির চালক। লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে চরম অসুবিধার মধ্য জীবনযাপন করতে হচ্ছে। পরিবারে বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে ৬ সদস্যের সংসার তার। প্রতিদিন সর্বনিন্ম ৩শত টাকা পরিবারের খরচ। এর মধ্যে আবার আছে দুটি সন্তানের লেখাপড়া ও বাইরের খাবারের খরচ। পরিবারের মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে বাধ্য হয়ে রিক্সা চালাতে হচ্ছে সবুজকে।

সোহেল রানা। লোকাল গাড়ির সুপারভাইজার। সবুজের মত একই অবস্থা তারও। কর্মহীন হয়ে পড়ার কারণে তাকেও বেছে নিতে আয়ের ভিন্ন পথ। চালাতে হচ্ছে ভাড়ার রিক্সা। সংসারে প্রতিদিনের খরচ ২৫০ টাকা। বর্তমান অবস্থায় রিক্সার ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সোহেলকে।

জাকির হোসেন, সবুজ ও সোহেল রানার মত মেহেরপুর জেলায় দেড় হাজারের বেশি বাস শ্রমিক এখন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্বিতীয় ধাপে সরকারের বেধে দেওয়া সাত দিনের কঠোর লকডাউনে গাড়ির চাকা থেমে যাওয়ায় থেমে গেছে মেহেরপুরের গণপরিবহনের শ্রমিকদের জীবন জীবীকার চাকা।

করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে নিদারুণ কষ্টে জীবন যাপন করছে এমনই আক্ষেপছ মেহেরপুরের গণপরিবহন শ্রমিকদের। লকডাউনের বেড়াজালে আটকে কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবার নিয়ে চরম দুর্দশায় দিন পার করছেন এসব গণপরিবহনের শ্রমিকরা। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে খাবার ও সাহায্যের দাবি করেছেন অনেকেই। সাধারণ লকডাউন পেরিয়ে গত ১৪ এপ্রিল সরকার কর্তৃক সাত দিনের কঠোর লকডাউনে সব ধরণের গণপরিবহন চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে এসব গণপরিবহনে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করা শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। জীবিকার তাগিদে রিক্সা এবং ইজিবাইক চালাচ্ছেন অনেকেই। এব্যাপারে এমন পরিস্থিতিতে পরিবহন মালিকরাও কোন সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি।

সিনিয়র ড্রাইভার মিলন বলেন, করোনার কারণে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হলেও সাহায্যের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি শ্রমিকদের জন্য। কর্মহীন হয়ে চরম কষ্টে দিন যাপন করতে হচ্ছে আমাদের। ধারদেনা করে আর কত চলা যায়।

জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে সরকারের বেঁধে দেওয়া সাত দিনের কঠোর লকডাউনে সবচেয়ে অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছে গণপরিবহন শ্রমিকরা। অন্যদিকে অল্পপরিসরে হলেও রিক্সা, ইজিবাইক, পণ্যবাহী যানবহন, কমবেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা খোলা আছে। শুধুমাত্র এই গণপরিবহনের শ্রমিকরা লকডাউনে পড়েছে। লকডাউনের কারণে কর্মহীন অবস্থায় পরিবার নিয়ে তারা চরম উৎকণ্ঠা ও হতাশার মধ্য দিন পার করছে শ্রমিকরা। রমজান মাস চলছে। সামনে আসছে ঈদ। সবমিলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্পপরিসরে হলেও গণপরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করে মেহেরপুরসহ সারা দেশের শ্রমিকদের চলমান সংকট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের কাছে আমরা বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।

মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুদুল আলম বলেন, এবারের লকডাউনে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোন এ ধরনেল নির্দেশনা আসেনি। গতবার করোনার সময় আমাদের কাছে পরিবহন শ্রমিকদের যে সহযোগিতা এসেছিল আমরা তাদেরকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এবার এখনও কিন্তু আমাদের কাছে এই ধরনের কোন ত্রাণ কার্যক্রমের কোন কিছুই বরাদ্দ আসেনি। সে কারণে আমরা কোন কিছু নিশ্চিত বলতে পারছি না।