
লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং প্রবীণ রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর মারা গেছেন।
আজ রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা রাইজিংবিডিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘আজ অসুস্থ অবস্থায় বাসা থেকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে আনার পর সকালে তিনি মারা গেছেন। বিস্তারিত আমরা পরে জানাতে পারব।’’
বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালে ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবুল হাশিম ছিলেন বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক। পণ্ডিত পিতার সাহচর্য পেয়েছেন বদরুদ্দীন উমর। তার পরিবার ও বংশের সদস্যরা কমবেশি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।বিশেষত, কমিউনিস্ট পার্টিতে তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিলেন অনেকে। জ্ঞানেগুণে সুবিস্তৃত ছিল তার পরিবার। মেধা মনন প্রজ্ঞার সঙ্গে তৈরি হয় উন্নত রুচিবোধ।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করার আগেই ১৯৫৪ সালে দর্শন বিভাগে অস্থায়ীভাবে শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে এমএ পাস করার পরের বছর চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে এবং ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি এই তিন বিষয়ে অনার্স ডিগ্ৰী অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন তিনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগেরও তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা।
ষাটের দশকে প্রকাশিত তার তিনটি বই সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭) ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৯) তত্ত্বকালে বাঙালী জাতীয়তাবাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সময় পাকিস্তান সরকারের সাথে তার বিরোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং তিনি নিজেই ১৯৬৮ সালে অধ্যাপনার কাজে ইস্তফা দিয়ে সরাসরি রাজনীতি ও সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
এই বুদ্ধিজীবী জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন বাংলা ও বাঙালি সমাজ চিন্তা নিয়ে। সমৃদ্ধ পরিবারিক রাজনৈতিক আবহে এবং দীর্ঘ পঠন-পাঠন থেকে ধীরে ধীরে তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক, ইতিহাসবিদ, বুদ্ধিজীবী হিসেব আত্মপ্রকাশ করেন। এ ছাড়া বদরউদ্দিন উমর বাংলাদেশের একজন শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হয়ে ওঠেন।
বদরুদ্দীন উমর বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ইতিহাস কাউন্সিল ও ফিলিপ্স পুরস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।