দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পৌরসভা মেহেরপুর পৌরসভা। ১৮৫৯ সালের ১৫ এপ্রিল পৌরসভা গঠিত হয় দেশের চতুর্থ পৌরসভা হিসেবে। ১৯৯১ সালে ২য় শ্রেণি এবং ২০০১ সালে এটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার মর্যাদা লাভ করে।
অথচ আজ এই শহরটা ডুবে আছে ময়লা-আবর্জনার পাহাড়ে। শহরের অলিগলি, বাজার, প্রধান সড়ক সবখানেই যেন বর্জ্যের দখলদারি। ডাস্টবিন নেই যথেষ্ট, যেটুকু আছে, সেগুলোরও পরিচর্যা নেই। প্রতিদিনের জমে থাকা ময়লা শহরের পরিবেশ দূষণ করছে, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বাড়াচ্ছে রোগজীবাণুর উপদ্রব।
শহরের চারপাশে শুধু ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধ, তবে প্রশ্ন হলো, এই অবস্থা কাদের জন্য? রাস্তার পাশে ময়লা ফেলে দেওয়া যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলার নিয়ম মানেন না অনেকেই।
অন্যদিকে, পৌরসভার চরম উদাসীনতা বছরের পর বছর ধরে অভিযোগ করার পরও নেই কোনো কার্যকরী উদ্যোগ। যেখানে ডাস্টবিন থাকার কথা, সেখানে শুধু ফাঁকা জায়গা। প্রতিদিন ময়লা না তোলা, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না দেওয়া সবই পৌরসভার গাফিলতির ফল।
গড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা আসিফ খন্দকার বলেন, আসলে ছোট্ট এই মেহেরপুর শহরটিকে ঠিকভাবে গুছিয়ে রাখা খুব কঠিন কিছু নয়। গড়পাড়ার মতো এলাকাতেও আগেও দেখেছি, এখনও দেখি ডাস্টবিন আছে, কিন্তু রাস্তার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে এখন ময়লা ও আবর্জনার স্তুপ। এটা শুধু পৌরসভার একার দোষ নয়। একটা বড় সমস্যা হচ্ছে রাস্তার গরুগুলো। দেখে মনে হয় এদের কোনো মালিকই নেই সারাদিনরাত রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, আর ডাস্টবিনগুলোতে হামলা চালায়। তারা ময়লা টেনে বাইরে ছড়িয়ে ফেলে। তখন মানুষজন আর ডাস্টবিনে না ফেলে, সেই ছড়িয়ে থাকা ময়লার মধ্যেই ময়লা ফেলে দেন। এতে করে চারপাশে দুর্গন্ধ আরও বেড়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, এলাকাভিত্তিকভাবে আমরা যদি সচেতন না হই, তাহলে এই শহরটাকে কখনোই গুছিয়ে রাখা সম্ভব না। পৌরসভার যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি আমাদের, সাধারণ নাগরিকদেরও দায়িত্ব আছে। নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলতে হবে, সচেতন হতে হবে।
পৌরসভারও গাফিলতি আছে তারা নিয়মিত ময়লা তোলে না। ময়লা তোলে বললেও, পুরোপুরি নেয় না। বিশেষ করে বড় বাজার আর কাঁচাবাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে ময়লা পড়ে থাকে। আমি কখনো দেখিনি মেইন রোডের বাইরে এগুলো পরিষ্কার করতে। এই টুকুই তাদের কাজ বলে মনে হয়।
বড় বাজারের বাসিন্দা দুদু মিয়া বলেন, সকালে নির্দিষ্ট সময়ে পৌরসভার গাড়ি আমাদের এলাকার ময়লা নিতে আসে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বিকাল হওয়ার পর থেকেই কিছু মানুষ আবার সেই একই জায়গায় ময়লা ফেলে দিয়ে চলে যায়। এতে করে জায়গাটা আবারও নোংরা হয়ে যায়, চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়ায়, পরিবেশ দূষিত হয়।
যতদিন না এলাকার মানুষ নিজেরা সচেতন হবে, ততদিন এই অবস্থা থেকে বের হওয়া সম্ভব না। শুধু পৌরসভার ওপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। আমাদের নিজেদেরও দায়িত্ব নিতে হবে, নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময় ও জায়গায় ময়লা ফেলতে হবে। নইলে পুরো শহরটাই নোংরা হয়ে থাকবে।
পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়ে মল্লিকপাড়ার বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক সময় নিয়মিত ময়লা অপসারণ হলেও বর্তমানে তা অনেকটা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
মল্লিকপাড়ার একজন বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে যা দেখছি, ৫ই আগস্টের আগে পৌরসভার গাড়ি একদিন পর পর ময়লা নিতে আসত। কিন্তু এখন চার-পাঁচ দিন পর পর এসে ওই নোংরা তুলে নিয়ে যায়। এতে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
রাস্তার গরুগুলোও বড় সমস্যা। যেখানেই ময়লা রাখা হয়, ওরা তা ছড়িয়ে ফেলে। আর মানুষজনও যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলে। বাধ্য হয়ে আমি আমার বাড়ির সামনে লিখে টাঙিয়েছি ‘আমার এখানে ময়লা ফেলবেন না।’ কিন্তু কেউ তো শুনে না। উল্টো আমাকে এই নিয়ে ঝগড়াঝাঁটিতেও জড়াতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মল্লিকপাড়া তো একটা ভিআইপি এলাকা। কিন্তু এর এখনকার অবস্থা দেখে তা বোঝার উপায় নেই। আগে যেভাবে পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকত, এখন তেমন নেই। পৌরসভার যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা কী করছেন, সেটাই আমি বুঝে উঠতে পারি না।
একই এলাকার আতিকুর রহমান বলেন,ময়লা-আবর্জনা ফেলার যেসব জায়গা আছে, সেগুলো বেশ ঢুককো। ফলে খুব সহজেই সেই ময়লাগুলো গরুর কবলে পড়ে যায়, ওরা তা টেনে বাইরে ছড়িয়ে ফেলে। এতে পরিবেশ আরও নোংরা হয়ে পড়ে।
তবে, এ সকল বিষয়ে পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।