শহীদ রেজাউল হকের পরিবার দেখা করতে চান প্রধানমন্ত্রীর সাথে

তখন ক্ষমতায় বিএনপি। চারদিকে বিএনপি আর জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের নিধন চিত্র নিত্য নৈমিত্তিক। এ সময় মেহেরপুর জেলাব্যাপী ছাত্রলীগ, বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে গড়ে তোলে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ। এতে শিবির আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

শিবিরের সেই তান্ডবে প্রাণ হারান তৎকালীন মেহেরপুর সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক রেজাউল হক। সেদিনও ছিল শোকার্ত আগস্ট মাস।

১৯৯২ সালের ১৯ আগস্ট। মেহেরপুর শহরের সরকারী কলেজ মোড় এলাকায় ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ। সংঘর্ষে উভয় পক্ষই অনেকে আহত হয়। ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল হকও মারাত্মক আহত হন। আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ও পরে সেখান থেকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে চিকিৎসক। পরে তার অবস্থা আরো অবনতি হওয়ায় ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ( তৎকালীন পিজি) হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সেই সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজাউল হকের সাথে দেখা করেন এবং তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পর ১৯৯৩ সালের ৭ নভেম্বর মারা যান তিনি।

এঘটনায় রেজাউল হকের পিতা আতর আলি বাদী হয়ে ৩৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন জেলা জামায়াতের আমীর হাজি ছমির উদ্দিন।

উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন শিবিরের মেহেরপুর জেলার সভাপতি চাপাইনবাবগঞ্জের হাসানুজ্জামান, গাংনীর চৌগাছা গ্রামের আব্দুল ওহাব, বেসরকারি কলেজের মুকুল হোসেন, গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের রেজাউন হোসেন।

মামলার বাদী রেজাউল হকের পিতা আতর আলী ২০০৭ সালে মারা যান। মারা যাওয়ার পর মামলাটি দেখা শোনা করেন তার বোন রিজিয়া খাতুন।

রেজাউল হকের বোন রিজিয়া খাতুন বলেন, আমার ভাই দলের জন্য রক্ত দিয়েছে। অথচ কয়েকজন স্থানীয় নেতা সেই রক্তের সাথে বেঈমানী করেছেন। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পরিবারকে এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সেটাও তৎকালীন একজন জনপ্রতিনিধি ও একজন ছাত্রনেতা আত্মসাৎ করেছিল। আমার বাবার বুকে অস্ত্র ধরে সেই চেকে সই করে নিয়েছিল তারা। বাবাকে মাত্র কুড়ি হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে ঢাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবারো অভিযোগ দেওয়ার পর ঢাকায় ওই দুই নেতাকে ডাকেন। তারা ওই সময় শেখ হাসিনার কাছে মাফ চান। মাত্র ৭০ হাজার টাকা প্রদান করেন।

তৎকালীন সময় জনৈক নেতা ১০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সে টাকা আজো আমাদের পরিবারকে দেননি। এখন মামলার কার্যক্রমও আমরা জানিনা। মামলার আসামিরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তিনি বলেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আমরা দেখা করতে চাই। আমাদের অসহায় পরিবারের সকল সদস্যই এখন প্রতিবন্ধী। এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা আমাদের জন্য আসেনি। গাংনীর সাবেক পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম প্রতিবন্ধী ভাই আনসার আলীকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিয়েছেন। এছাড়া মাঝে মাঝে পৌরসভা থেকে চাল প্রদান করেন।

রেজাউল হকের ভাগ্নে রোকনুজ্জামান জানান, আমাদের পরিবারের কোনো খোঁজ খবর রাখেনা কেউ। রেজাউল হকের বড় ভাই আজিজুল হক পাঁচ বছর পূর্বে স্ট্রোক করে এখন মানসিক প্রতিবন্ধী। তার স্ত্রী রাশেদা খাতুনও প্রতিবন্ধী।

অন্য ভাই আনসার আলী ও তার স্ত্রী সুবারন নেছাও দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ। টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। কোনো রকম অন্যের বাড়িতে কাজ করে এবং অন্যের দয়ায় কোনো রকম বেঁচে আছে।

স্বরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গাংনী উপজেলা শহরের বিশ্বাস পাড়া এলকায় রেজাউল হকের বাড়ির সামনে একটি সাইনবোর্ড দেয়া আছে। সেটিও অযত্ন আর অবহেলায় ভেঙ্গে গেছে। ইট আর টিনের ছাউনি দিয়ে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে সেখানই বসবাস করছেন শহীদ রেজাউল হকের দুই ভাইয়ের পরিবারের অসহায় প্রতিবন্ধী ভাই ও ভাবি।

রেজাউল হকের ভাবি রাশেদা খাতুন জানান, আমার স্বামী ও আমি দুজনেই এখন প্রতিবন্ধী হয়ে গেছি। আমাদের পরিবারের কোনো আয় নেই। আমার ননদের ছেলে রোকনুজ্জামান কিছু দেই, আর আমি কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে কাজ করেই জীবন ধারন করি।

বর্তমান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন এমপি সাম্প্রতিক সময়ে মেহেরপুর সরকারি কলেজ চত্বরকে শহীদ রেজাউল চত্বর হিসবে ঘোষণা দেন এবং সেখানে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন।

শহীদ রেজাউল হকের পরিবারের অসহায় সদস্যদের আকুল আবেদন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের গণভবনে ডাকবেন। শুনবেন দলের জন্য জীবন দেয়া একটি পরিবারের কথা।