শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ীকে বেতনের টাকা তুলে দিলেন--এসিল্যান্ড

শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ীকে বেতনের টাকা তুলে দিলেন–এসিল্যান্ড

অসহায় প্রতিবন্ধী পেয়ারা ব্যবসায়ী পিন্টু মিয়া তার ব্যবসার মুলধন চুরি হওয়ায় যখন দিশেহারা, তখন নিজের বেতনের টাকা তুলে দিয়ে মানবিকতার এক বিশুদ্ধ উদাহরণ সৃষ্টি করলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম। শুধু এই অসহায় ব্যবসায়ীর পাশে দাঁড়ানোই নয়, চোরকে ধরতে সব ধরনের প্রচেষ্টা করারও আশ্বাস দেন তিনি।

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গোপালনগর গ্রামের রাস্তাপাড়া এলাকার তগাই মিয়ার ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী পিন্টু মিয়া। ভিক্ষার ঝুলি নয়, জীবিকা নির্বাহ করেন ছোট্ট ব্যবসা করে। গ্রাম এলাকা থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভ্যানযোগে বিক্রি করতে যান মেহেরপুর জেলা শহরে।

জেলা জজকোর্ট এলাকায় প্রতিদিন পেয়ারা বিক্রি করেই তার পাঁচ সদস্যের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।

গত শুক্রবার পিন্টু মিয়ার সারাদিনের পেয়ার বিক্রির পাঁচ হাজার টাকা কৌশলে চুরি করে নেই চোর। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েন পিন্টু মিয়া। প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ী পিন্টু মিয়ার টাকা চুরির ঘটনায় অনেকে আফসোস করলেও কেউ এগিয়ে আসেননি তার সহযোগিতায়।

আজ রবিবার বিকালে অফিস শেষে ফিরার সময় অফিসের এক সহকারীর মুখে ঘটনা শুনে ছুটে যান সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম।

ঘটনা শুনে নিজের বেতনের টাকা প্রতিবন্ধী পিন্টু মিয়ার হাতে তুলে দেন তিনি। পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে চোরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনারও আশ্বাস দেন সরকারের এই কর্মকর্তা।

অসহায় প্রতিবন্ধী পিন্টু মিয়া জানান, আমি আমার স্ত্রী এবং তিন ছেলে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার চলে এই ছোট্ট ব্যবসার উপর। এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পেয়ারা কিনে নিজেই ভ্যান চালিয়ে শহরে বিক্রি করতে আসি। গত শুক্রবার সারাদিনের বিক্রি করা ৫ হাজার টাকা চুরি করে নেই চোর। ব্যবসার মুলধন চুরি হওয়ায় আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। গত দুইদিন এলাকা থেকে পেয়ারা বাকিতে কিনে এনে বিক্রি করছিলাম। পেট তো থেমে থাকেনা। আমার আয়ের উপর পাঁচটি মুখ চেয়ে থাকে। এসিল্যান্ডের টাকা পেয়ে খুশি পিন্টু মিয়া। এই টাকা দিয়ে আবারও ভালো করে ব্যবসা করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমার অফিসের এক সহকারীর মুখে থেকে ঘটনা শুনে তার কাছে আসি। সব শুনে তার ব্যবসার জন্য বেতনের কিছু টাকা দিয়ে তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। তিনি আরও বলেন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সাথে কথা বলে চোর সনাক্ত ও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করবো।

মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ কনি মিয়া বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। চোরকে সনাক্ত করে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

উল্লেখ্য, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদানের পর সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে মেহেরপুর শহরের পৌরসভার সামনে ওভারলোডেট লাটাহাম্বার চাকায় স্পৃষ্ট হয়ে একজন নিহত হওয়ার পরপরই স্ব উদ্যোগে শহরে এসব অবৈধ গাড়ি নিয়ন্ত্রণে অভিযান ও রাস্তার পাশে অবৈধভাবে বালির স্তুপ রেখে জনভোগান্তি সৃষ্টির জন্য অভিযান শুরু করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই মেহেরপুর শহরের পরিস্কার করবেন বলে জানান তিনি।