
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে। গতকাল শনিবার মণ্ডপে-মন্দিরে পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় বোধনের মাধ্যমেই দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনাপূজা করা হয়। আজ রবিবার মহাষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস অনুষ্ঠিত হবে। ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা ও পূজার আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে।
দেবী দুর্গার আগমনে উচ্ছ্বসিত ভক্তকুল। সারা দেশে চলছে উৎসবের আমেজ। এরই মধ্যে সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন।
বসন্তকালে তিনি এই পূজা আয়োজন করেছিলেন বলে এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাজা রাবনের হাত থেকে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এই পূজাকে অকালবোধনও বলা হয়। বোধন দুর্গাপূজার অন্যতম আচার।
বোধন শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্ত। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। শরৎকালের দুর্গাপূজায় এই বোধন করার বিধান রয়েছে। বাঙালির হৃদয়ে শরৎকালের দুর্গার অধিষ্ঠান কন্যারূপে। প্রতিবছর বিভিন্ন বাহনে সপরিবারে শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে দেবী মর্ত্যলোকে আসেন বাপের বাড়ি বেড়াতে।
তাই দেবীকে বরণে আয়োজনের কমতি থাকে না।
সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় পূজার মাধ্যমে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবীতে) আমন্ত্রণ জানানো হয়। এবার মা দুর্গা গজে (হাতি) চড়ে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে আসবেন (আগমন); যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় (গমন) নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে; যার ফল হচ্ছে মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে। এরই মধ্যে পাঁচ দিনব্যাপী পূজার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর কালের কণ্ঠকে জানান, গত ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগরে এবার ২৫৯টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর ঢাকা মহানগরে ২৫২টি পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। সে হিসাবে মহানগরে সাতটি পূজা বেড়েছে। সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর ৩১ হাজার ৪৬১টি পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন সেনাপ্রধান। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর মন্দিরে মন্দিরে এখন চলছে দেবী প্রতিমার রং করার কাজ। কাদামাটির প্রলেপের ওপর রংতুলির আঁচড়ে দশভুজা দেবী ষষ্ঠীর দিন পাবেন জীবন্ত রূপ। দেবী সেজে উঠবেন অপরূপ সাজে। শঙ্খ, উলুধ্বনি আর মঙ্গলসংগীতে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেবে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা। শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলো সাজাতে চলছে তোড়জোড়। রং-বেরঙের ফেস্টুন, ব্যানার আর বর্ণিল তোরণ নির্মাণে পূজা কমিটির সদস্যদের ব্যস্ততারও কমতি নেই। আলোকসজ্জা থেকে শুরু করে নানা আয়োজন সম্পন্নের কাজ চলছে। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ওপরই তৈরি করা হচ্ছে মণ্ডপ।
আগামীকাল সোমবার মহাসপ্তমী, মঙ্গলবার মহাষ্টমী, বুধবার মহানবমী ও বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী পূজা। দশমীর দিনে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।