সবুজ পাতার ফাঁকে চাইনা কমলা লেবু, চঞ্চলের স্বপ্নের বুনন

বাগানে সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা রসে ভরপুর চাইনা কমলা লেবু চঞ্চলের স্বপ্নের বুনন। রাস্তার ধারে চঞ্চল হোসেনের সারি সারি চায়না কমলার গাছে সবুজ পাতার মাঝে উঁকি দিচ্ছে হলুদের আভা। এখন এই হলুদ আঁভার মাঝেই চঞ্চল হোসেনের স্বপ্নের আভাস।

ফেইসবুক ও ইউটিউব দেখে তিন বছর আগে চায়না কমলা লেবুর চাষ শুরু করেন গাংনী উপজেলার গাঁড়াডোব কুঠিপাড়া এলাকার কলেজ ছাত্র চঞ্চল হোসেন। এলাকার অনেকেই চঞ্চল হোসেনের চাইনা কমলা লেবুর বাগান দেখে তারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন আধুনীক এই চাইনা কমলা লেবুর চাষ করার জন্য।

গাংনী উপজেলার গাঁড়াডোব গ্রামের রাইসমিলপাড়া-সাহারবাটি রাস্তার মাঠে গিয়ে চোখে পড়ে এ দৃশ্য। দৃষ্টি কাড়া এই হলুদ বর্ণের ফলের উঁকি এলাকার অনেক মানুষকেই আকৃষ্ট করছে।

গাংনী উপজেলার গাঁড়াডোব গ্রামের রাইসমিল ও সাহারবাটি মাঠে গেলে দেখা মিলবে এ দৃশ্যের। ফলের ভারে নুয়ে পড়ার মতো অবস্থা প্রতিটি গাছের। যা দেখতে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন উৎসুক মানুষ। বাগান দেখে মুগ্ধতার কথা জানান তারা।

৩ বছর আগে ফেইসবুকে কমলা লেবুর চাষ দেখে নিজের ১ বিঘা জমিতে এক শ চারা রোপন করেন চঞ্চল হোসেন।নিয়মিত, সঠিক পরিচর্যা ও পরিমিত সারের ব্যবহার করে প্রথম বছরেই গাছে গাছে আসে থোকায় থোকায় ফল। কি পরিমান ফল এসেছে এখনও আন্দাজ করতে পারেনি কৃষক চঞ্চল। চঞ্চল হোসেন বলেন, ফলন ভাল হয়েছে। তবে দামটা কি হবে এবং বাজার কোথায় পাবো সে চিন্তাও আসছে ঘুরে ফিরে।

সাহারবাটি থেকে কমলার বাগান দেখতে আসা রাসেল হোসেন বলেন, রাস্তার পাশে এই লেবুর বাগানে থোকা থোকায় লেবু সত্যিই ভাল লাগে। আমি এই বাগান দেখে নিজেও উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আমি নিজেও এক বিঘা জমিতে লেবুর চাষ করবো। তিনি বলেন, এই বাগানটা দেখতেও খুব সুন্দর।

চাইনা কমলা বাগান দেখতে এসেছেন আমঝুপি গ্রামের সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, এই বাগান দেখে মনে হচ্ছে আমরা বিদেশেই আছি।

চঞ্চল হোসেন জানান, আমি কলেজে লেখাপড়া করি। পাশাপাশি বিভিন্ন চাষ করে আসছি। আমি ফেইসবুক ও ইউটিউবে দেখে চাইনা কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হই। সেই লক্ষে গত তিন বছর আগে প্রথম চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থেকে কমলার চারা এনে রোপন করি। এখন আমাদের দেশেই চায়না কমলার চাষ হচ্ছে। তারপর থেকেই আমি অন্যান্য আবাদের পাশাপাশি শুরু করলাম চায়না কমলা চাষ। আড়াই বছর বয়সী গাছে আমার প্রথম কমলা এসেছে। প্রথম আসলেও গাছে কমলার ফলনও খুব ভালো পাচ্ছি।

একটা গাছে ৫০ থেকে ৬০ কেজি কমলার ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন চঞ্চল হোসেন। চারার জন্য খরচ হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। লাগানোর পর ফল ধরার আগ পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র ১২ হাজার টাকা।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সামছুল আলম বলেন, মেহেরপুরের মাটি চায়নিজ কমলা তৈরির তেমন উপযোগী নয়। তার পরেও কিছু মানুষ এটির চাষ করছেন। সেগুলোর স্বাদ,গন্ধও ভাল। তবে, জেলার চাইনা কমলা লেবুর চাষ হয়েছে ৩ হেক্টর জমিতে।পরীক্ষামুলকভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কৃষক এই ফসলের চাষটি বানিজ্যিকভাবে নিয়েছেন। যা আগামিতে নতুন সম্ভাবনার দার উন্মেচিত হবে বলে আশা করেন তিনি। ফলন ভালো পেতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও নানা পরামর্শ।