সরকারি গাড়ি নিয়ে যান নিজের ও শ্বশুর বাড়ি

সরকারি গাড়ির অপব্যবহার করা ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার না করতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। অথচ মেহেরপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল কাদের তার ব্যক্তিগত কাজেই বেশিরভাগ সময় ব্যবহার করছেন সরকারি গাড়ি। এতে একদিকে যেমন জ্বালানি তেল বেশি যাচ্ছে সরকারি কোষাগার থেকে, তেমনি ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের।

অনুসন্ধান বলছে, চলতি বছরের ১২ মে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন আব্দুল কাদের । তার নিজ জেলা পাশের বিভাগ রাজশাহীর পাবনাতে হওয়ায় নিজ বাড়ি ও তার শ্বশুরবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান এই কর্মকর্তা। তবে সুকৌশলী এই উপ-পরিচালক সরকারি গাড়ী ব্যবহারে তার ব্যক্তিগত চালক দিয়ে জেলার বাইরে বের হন।

তিনি এর আগে পাবনা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মেহেরপুরে যোগদানকালে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য কালো রঙের উন্নতমানের একটি গাড়ি দেয়া হয়। নিয়ম রয়েছে সরকারি কাজ ছাড়া জেলার বাইরে গাড়ি নিয়ে যেতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও সংশ্লিষ্ট কারণ থাকতে হবে। অথচ উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের জেলা এমনকি তার বিভাগের বাইরে পাবনা জেলায় আসেন। মেহেরপুর জেলা থেকে পাবনার ঈশ্বরদী শহরের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। সেখানে তার নিজ বাড়ি । আবার সেখান থেকে মৌবাড়ী তার শ্বশুরবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান এই কর্মকর্তা।

সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরের পর মেহেরপুর অফিস থেকে বের হয়ে আবার ফেরেন রোববার দুপুরে। এসব কারণে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করায় জ্বালানি তেল লাগছে বেশি। অন্যদিকে ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহার করায় বদনাম ছড়াচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তর বিভাগের।

গাড়ির খণ্ডকালিন চালক মিলন বলেন, ‘স্যার আমাকে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা বেতন দেন। আমি মেহেরপুরে বাস চালায়। আমি বৃহস্পতিবার স্যারকে নিয়ে ঈশ্বরদী আসি, আবার রবিবার মেহেরপুর ফিরতে হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্যারকে প্রথমে তার বাসায় নামাই, পরে আবার তার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে হবে।

আপনার উপ-পরিচালক স্যার পাবনা শহরে গাড়ি নিয়ে কোথায় কোথায় যায় এমন প্রশ্ন করলে চালক মিলন আরো বলেন, স্যার তার নিজ ঈশ্বরদীর বটতলার বাসায় যান। এই এলাকা ও মৌবাড়ী স্যারের শ্বশুরবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে হয় এছাড়াও যেখানে যেতে বলে আমি যাই।

তিনি স্বীকার করেন, শান্ত নামের একজন সরকারি গাড়ী চালক আছেন। যিনি দাপ্তরিক কাজে স্যারকে নিয়ে মেহেরপুরের বিভিন্ন জায়গায় যান। কিন্তু জেলার বাইরে হলে কেবল আমাকেই নিয়ে যান স্যার।

ঈশ্বরদী এলাকার স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিয়মিত বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার ও সরকারি ছুটির দিনেও এই অফিসারের বাসার সামনে একটি কালো রঙের সরকারি গাড়ী দেখা যায়।

নিজ বাড়ী থেকে অন্যান্য এলাকায়ও যেতে দেখি। তবে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলেও জানান তারা (এ সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ মেহেরপুর প্রতিদিন অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে)।

জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল কাদের কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।