
ঝিনাইদহে গরিবের বন্ধু, মানবিক চিকিৎসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন কার্ডিওলজি স্পেশালিষ্ট ডাঃ প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থ। প্রাইভেট চেম্বারেও বিনামূল্যে অসহায় দরিদ্র রোগী দেখে শুধু জেলা সদরে নয় পুরো জেলার মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদন্নোতি পেয়েছেন। অহংকারের লেশ মাত্র নেই এ চিকিৎসকের মনে। সদালাপী সাদা মনের মানুষ হয়ে তিনি সব সময় নিজেকে আড়াল রাখতেই পছন্দ করেন। ব্যতিক্রমী এ মানুষটি ঝিনাইদহে দীর্ঘদিন চিকিৎসা সেবা দিয়ে সহকর্মী, রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজন ও সুশীল সমাজের প্রশংসা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী আব্দুল আজিজ বলেন,বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসক প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের চেম্বারে এসেছিলাম। তার রোগী দেখার ফিস দেওয়ার মত টাকা আমার কাছে ছিলো না। পরে ডাঃ বিষয়টি জানতে পেরে আমাকে চেম্বারে ডেকে বিনা টাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। এমনকি শারীরিক যত্নে নানা পরামর্শ দেন।
সেই সাথে আমাকে আশ্বস্ত করেন তার চেম্বারে টাকার অভাবে কোন রোগী চিকিৎসা সেবা না নিয়ে ফিরে যাবে না। তার এমন মহতি উদ্যোগে আমরা ঝিনাইদহবাসী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। এমন চিকিৎসক যেন প্রতিটি জেলায় জেলায় তৈরি হয় সেই কামনা করি। তাহলে কোন অসহায় দ্ররিদ্র মানুষ আর বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না।
এ বিষয়ে ডাঃ প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থ বলেন, বাবার ইচ্ছে ছিলো আমাকে ডাক্তারি পড়ানো। ছোট বেলা থেকেই সেভাবে লেখাপড়ার সহযোগীতা করেছেন আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা। আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই মনে হয়েছে আমি দেশ ও সমাজের মানুষের সেবা করবো। সেই থেকে বাবার ইচ্ছে আর আমার স্বপ্ন নিয়ে ডাক্তার হবার প্রাণপন চেষ্টা করি। প্রথমে আমি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাশ করে ৩২ তম বিসিএস এ সুপরিশ প্রাপ্ত হই। পরে ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য বিভাগে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করে দীর্ঘ ৫ বছর দায়িত্ব পালন করি।
এরপর উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি-কার্ড কোর্সে ভর্তি হয়ে পাস করি। পরে কার্ডিওলজি তে এফসিপিএস পার্ট-১ পাস করে বাংলাদেশ জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এ্যাসিস্টেন্ট রেজিস্টার হিসেবে ৩ বছর চাকুরি করি। কিন্তু নিজের এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবার কথা চিন্তা করে ঢাকার লোভনীয় পদ ও উন্নত সুযোগ সুবিধা থাকা স্বত্বেও আমি ঝিনাইদহে ফিরে এসেছি।
বর্তমানে আমি এখন ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে কার্ডিওলজি কনসালটেন্ট ও সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছি। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে জাতীর শ্রেষ্ঠসন্তান তথা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমার কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে কোন টাকা লাগবেনা।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসক এমন একটা পেশা যা সহজেই মানুষের কাছাকাছি এসে প্রত্যক্ষভাবে সেবা করা যায়। তাই জীবনে যতদিন বেচে থাকবো মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করে যাবো। চিকিৎসক ঠিকই আমি হয়েছি কিন্তু কতটুকু মানুষ হতে পেরেছি সেটা আপনারাই মূল্যায়ন করবেন।