
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঢেপা-পাঙ্গাসিপাড়ায় গভীর রাতে গোয়ালঘরের তালা ভেঙে দুটি গরু চুরির ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর এক গভীর উদ্বেগের ছায়া ফেলেছে। মেহেরপুর প্রতিদিনসহ কয়েকটি সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারা যায়, মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে এমনকি শহরেও চুরির উপদ্রব বেড়েছে।
এ চুরির ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও শঙ্কায় পড়েছেন। ফলে কেবল শহরাঞ্চলই নয়, অপেক্ষাকৃত শান্ত গ্রামীণ জনপদও এখন সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সহজ লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছে।
একটি কৃষিপ্রধান দেশে, একটি গরু কোনো সাধারণ সম্পত্তি নয়। এটি কৃষকের বছরের পর বছর ধরে সঞ্চিত মূলধন, জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন এবং বহু পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তি। ঢেপা-পাঙ্গাসিপাড়ের মতো একটি গ্রামে যখন একটি এইড়ে (ষাঁড়) ও একটি গাভিন জাতের গরু চুরি হয়ে যায়, তখন কেবল দুটি প্রাণী হারায় না, বরং একটি বা দুটি পরিবার আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।
এই কৃষকেরা প্রায়শই কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বা ঋণ করে গরু কেনেন। গভীর রাতে সংঘটিত এই চুরির ঘটনা সেই কৃষকদের কেবল নিঃস্বই করে না, তাদের মনে এক ধরনের অসহায়তা ও নিরাপত্তাহীনতার জন্ম দেয়। এই নিরাপত্তাহীনতা তাদের কৃষিকাজ থেকে শুরু করে সামগ্রিক জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। গভীর রাতে যখন সংঘবদ্ধ চোরের দল একটি গোয়ালঘরের তালা ভেঙে চুরি করে, তখন বুঝতে হবে যে এলাকায় টহল ব্যবস্থা দুর্বল এবং চোরদের মনে আইনের ভয় কমে আসছে। অপরাধীরা যখন দ্রুত ধরা পড়ে না বা চুরি যাওয়া সম্পদ উদ্ধার হয় না, তখন তা অন্য অপরাধীদের উৎসাহিত করে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করে।
স্থানীয় প্রশাসনের উচিত, এই ধরনের স্পর্শকাতর অপরাধের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া এবং এগুলোর পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
নিরাপত্তার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুধুমাত্র পুলিশি তৎপরতা যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ এবং গণ-সহযোগিতা। চুরি ডাকাতি রোধে প্রতিটি গ্রামে এখন সম্মিলিত উদ্যোগে রাত পাহারার (কমিউনিটি ওয়াচ) ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উচিত এই ধরনের উদ্যোগের নেতৃত্ব দেওয়া এবং প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সহযোগীতা প্রদান করা। এর পাশাপাশি, প্রশাসনকে চোর চক্রের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। চুরি যাওয়া গরু উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কিছুটা হলেও স্বস্তি পায় এবং জনমনে আস্থা ফিরে আসে।
গ্রামীণ অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে হলে কৃষকের সম্পদ সুরক্ষিত রাখা অপরিহার্য। গরু চুরির ঘটনাটি সমগ্র গ্রামীণ জনপদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
এই শঙ্কা ও উদ্বেগ দূর করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সাধারণ নাগরিক—সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে গ্রামীণ জনপদে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে। কৃষকের চোখে শঙ্কা নয়, বরং তার পরিশ্রমে গড়া সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হোক রাষ্ট্রের মূল অঙ্গীকার।