
মেহেরপুরের মুজিবনগরের আনন্দবাস সীমান্তে পুশ ইন ভারতীয় অবাঙালি মুসলমান মুনতাজ আলী বর্তমানে মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামে একটি সরকারি যাত্রী ছাউনিতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রবল শীত ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
জানা যায়, মুনতাজ আলীর ভাই ইনসান আলী সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছেন। একমাত্র বোন আমেনা বেগম বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কারাগারে রয়েছেন। তবে মুনতাজ আলীর বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রী ছাউনিতে বসবাস করছেন মুনতাজ আলী। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচাতে স্থানীয়রা ছাউনির চারপাশে পলিথিন ও কাপড় দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন। পাশাপাশি কম্বল ও খাবার সরবরাহ করে যতটুকু সম্ভব মানবিক সহায়তা করছেন গ্রামবাসী।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, মুনতাজ আলী কখনো কখনো স্বাভাবিকভাবে কথা বললেও অনেক সময় তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মনে হয়। সীমান্ত এলাকায় তিন দিন না খেয়ে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে ঘোরাঘুরির কারণেই তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাতভর তাকে আল্লাহ-রাসূলের নাম ধরে ডাকা এবং বাবা-মাকে স্মরণ করে চিৎকার করতে শোনা যায়।
গ্রামবাসীদের দাবি, হয় তাকে তার নিজ দেশ ভারতে ফেরত পাঠানো হোক, নতুবা বাংলাদেশেই তার জন্য যথাযথ মানবিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের একটি কেন্দ্রীয় শহর থানার অধীনে তার বাড়ি। এ বিষয়ে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল হুদা জানান, বিষয়টি আন্তর্জাতিক ও সীমান্ত-সংক্রান্ত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে আনন্দবাস বিজিবি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার জানান, তিনি মুনতাজ আলীর বিষয়ে অবগত, তবে বর্তমানে তিনি স্থানীয় জনগণের আশ্রয়ে রয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ওমর আলী বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। একজন বৃদ্ধ মানুষকে এভাবে খোলা জায়গায় প্রচণ্ড ঠান্ডায় থাকতে দেওয়া দুঃখজনক। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
স্থানীয় মানবাধিকার ও উন্নয়ন কর্মী ওয়াজেদ আলী খান বলেন, “সীমান্তে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলছে। বোনকে কারাগারে পাঠিয়ে ভাইকে এভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে রাখাও সংশ্লিষ্ট বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন সৃষ্টি করছে।”
এ ঘটনায় দ্রুত মানবিক ও কূটনৈতিক সমাধানের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।