“দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা” কর্মসূচিতে নবম দিনে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন স্থানে পদযাত্রা ও পথসভা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
গতকাল বুধবার মেহেরপুরের গাংনী থেকে বেলা একটায় হাটবোয়ালিয়া বাজারে পৌঁছালে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজেই এনসিপির নেতাদের স্বাগত জানান এরপর দুপুর দুইটায় চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার হাসান চত্ত্বরে এনসিপি নেতৃবৃন্দ পথসভা করেন। মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে পথসভায় উপস্থিত হাজারো মানুষের প্রতি এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ সময় চুয়াডাঙ্গার সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কৃষকের নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তে গত ৫৪ বছরে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গাতেই হত্যা করা হয়েছে দুই শতাধিক। এখন থেকে বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশের সীমান্ত, মানচিত্র ও মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করবে। সীমান্তে হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন ‘গত ৫৪ বছর ধরে ভারতীয় আধিপত্যবাদ বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। আর কোনও ধরনের আধিপত্য মেনে নেবে না বাংলাদেশের তরুণরা। এ দায়িত্ব নিয়েই কাজ করবে এনসিপি। এ সময় শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘গুলির নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা, আর খুনিকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। ভারত যদি বাংলাদেশের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক চায়, সমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে হতে হবে। কেবল বাংলাদেশই ভারতের ওপর নির্ভরশীল নয়, ভারতও বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। এটা যেন ভারত কোনোভাবেই ভুলে না যায়। বাংলাদেশের মাটি ও মানচিত্র রক্ষা করা বাংলাদেশের ছাত্র ও যুবাদের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই লক্ষ্যে কাজ করবে।’
পথসভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘নতুন সংবিধান প্রণয়ন ছাড়া গণপরিষদ নির্বাচন সম্ভব নয়। এই অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ দেশকে নতুন জায়গায় নিতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত সরকারকে বলতে চাই, বাংলাদেশের জনগণের কাছে আপনাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে। মোদি সরকারকে বলছি, শেখ হাসিনাকে ফেরত দিন।’
শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচারী হিসেবে কাউকে আর গড়ে উঠতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন আখতার হোসেন। সব রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশপন্থি রাজনীতির পথে হাঁটার আহ্বান জানান তিনি।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া বাজার থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে পদযাত্রা শুরু করেন। এরপর বেলা দেড়টায় আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের আল তায়েবা মোড়ে পৌঁছালে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে তাঁদের বরণ করে নেওয়া হয়। আলমডাঙ্গায় পদযাত্রা শেষে এসসিপির নেতারা চুয়াডাঙ্গা শহরের পথে রওনা দেন।
চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্ত্বরে এই পথসভায় দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের শহীদ ভাইয়েরা যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আত্মত্যাগ করেছেন, তা পূরণ হয়নি। সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
পথসভায় অন্যদের মধ্যে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান বক্তব্য দেন। এ সময় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাসহ দলটির চুয়াডাঙ্গার নেতৃবৃন্দ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।