সেই কালাম মাস্টার এবার বিভাগীয় রোষানলে

মেহেরপুর সদর উপজেলার বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবার উঠেছে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

ব্যবস্থাপনা পর্ষদ থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকও জানেন না বিদ্যালয়ের কোনো আর্থিক হিসেব নিকেশ। প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ সবকিছুই করে থাকেন স্বৈরাতান্ত্রিক উপায়ে।

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভাপতি এবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বরাবর আবেদন করেছেন আয় ব্যায়ের হিসাব নিকাশ ও অডিট করার জন্য।

আরও পড়ুন  কালামের বিরুদ্ধে এবার আদালতে মামলা

আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের আর্থিক অনিয়ম ও বিদ্যালয়টির ৮/৯ বছরের বিভাগীয় অডিটের জন্য গত ০৬/০৭/২০২২ তারিখে উমাশিঅ/মেহের/তদন্ত-৩১(৩)/২০২০/১৩৭ স্বারক নং এ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন মেহেরপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা আনোয়ার হোসেন।

আবেদনে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে ইতোপূর্বে পত্রপত্রিকায় একাধিকবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

অতি সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি একই ধরণের অভিযোগ এনে একটি আবেদন করেছেন। বর্ণিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অতি সত্তর তাঁর বিভাগ কর্তৃক উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যায়ের হিসাব নিরীক্ষণ অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করেন তিনি।

এব্যাপারে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ রয়েছে।

এর মধ্যে আর্থিক অনিয়ম ও বিদ্যালয়ের আয় ব্যায়ের হিসাব নিকাশ। বিদ্যালয়ের আর্থিকসহ সকল ধরনের অভ্যন্তরিন অডিট করার জন্য আমি ইতোমধ্যে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপপ্তরের পরিচালক বরাবর আবেদন করেছি।

আরও পড়ুন প্রধান শিক্ষক কালামের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন

এদিকে গত ০৫/০৭/২০২২ তারিখে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম মোস্তফা শান্তি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন করেছেন।

আবেদন তিনি জানান, বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের অসহযোগীতার কারণে বিদ্যালয়ের গতিশীলতা নষ্ট হয়েছে। বিদ্যালয়ের যাবতীয় অর্থ ভূঁয়া বীল ভাউচার করে আত্মসাৎ করছেন।

সকল শিক্ষকরা টিউশিন ফিস সকল শিক্ষক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এযাবৎ পর্যন্ত বরাদ্দকৃত টিউশিন ফিস শিক্ষকদেরকে না দিয়ে প্রধান শিক্ষক একাই আত্মসাৎ করেন।

বিদ্যালয়ের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ও আয় ব্যায় ঠিক রাখতে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থাকলেও সেই এ্যাকাউন্ট নম্বরটি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে জানান না। ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট সভাপতির যৌথস্বাক্ষরে পরিচালিত হলেও এখন পর্যন্ত আমার কোনো স্বাক্ষর নেন না প্রধান শিক্ষক।

তিনি আশংকা প্রকাশ করেছেন তার স্বাক্ষর জাল করেই সকল ধরনের লেন দেন ও অর্থ উত্তোলন করে থাকেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ হওয়া অর্থ ও ব্যাংক স্টেটম্যান্ট জানার জন্য বিদ্যালয়ের নামে খোলা ব্যাংক এ্যকাউন্টটি জানা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তার লিখিত আবেদনে।

আরও পড়ুন  প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদকে অবাঞ্চিত করলো গ্রামবাসী, বহিস্কারের দাবি

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা (শান্তি) মোবাইল ফোনে বলেন, মাঝে মধ্যে ব্যাংকের চেক সই করে নিয়ে চলে যায়। আমি আগে বিষয়টি খুব বেশী গুরুত্ব দিতাম না।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিকসহ নানা ধরণের অভিযোগ ওঠার পর বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব নম্বর জানতে চেয়েছি। বারবার ব্যাংক একাউন্ট নম্বর চাইলেও প্রধান শিক্ষক সেটি দেননি। পরে বাধ্য হয়েই বিদ্যালয়ের এ্যাকাউন্ট নম্বর জানতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

বিদ্যালয়ের একাধিক সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে ছাত্র ছাত্রীদের রেজিষ্ট্রেশন ফিস, অর্ধবার্ষিকীর পরীক্ষার ফিস ও বেতন বাবদ ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা আয় হলেও বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক বা কর্মচারীদের কোনো বেতন ভাতা দেওয়া হয়নি।

অথচ, প্রধান শিক্ষক ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫০ টাকা খরচের বিল ভাউচার দাখিল করেছেন। কোথায় কি খরচ করেছেন এই হিসাব দেননি তিনি। শুধু এই তিন মাস নয়, বিগত পাঁচ বছরে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে শিক্ষকদের একটি টাকাও বেতন ভাতা দেননি তিনি।

এসব বিষয়ে সহকারী শিক্ষকবৃন্দ কোনো প্রতিবাদ বা বেতন ভাতার দাবী করলে চাকুরীচ্যুত করা ছাড়াও কয়েকজনকে হত্যার হুমকী পর্যন্ত দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।

আরও পড়ুন কালাম মাস্টারের বিরুদ্ধে এবার নারী নির্যাতন মামলা

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, টিউশিন ফিসসহ অন্যান্য আয় আমি স্কুল পারপাসে খরচ করেছি। সব খরচের ভাউচার আছে। কিন্তু কোনো শিক্ষককে বেতন ভাতা দেননি বা বৈধ কোনো কাজের ভাউচার নেই এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি।

তবে সভাপতির বিরুদ্ধে তিনি বলেছেন, সভাপতির পুত্রবধুকে আমার স্কুলে চাকুরী দেওয়ার জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছেন। সভাপতি পারলে বৈধ উপায়ে তার পুত্রবধুকে স্কুলে নিয়োগ দিক। তবে, যেহেতু আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করানোর জন্য আবেদন করেছেন। শিক্ষা অধিদপ্তর আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করে দেখুক।