সোনালী ধান ঘরে তুলতে ব্যাস্ত কুষ্টিয়ার কৃষকরা

নবান্নের আনন্দে আমন ধান কাটার ধুম লেগেছে কুষ্টিয়া জেলার প্রতিটা এলাকায়। জেলায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা মাড়াই চলছে পুরোদমে। মাঠের সোনালী ধান এখন ঘরে তুলতে ব্যস্ত এ অঞ্চলের কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, চলতি বছর আমন চাষে প্রতিকুল আবহাওয়া মোকাবিলা করতে হয়েছে ছয় উপজেলার কৃষকদের। কিন্ত বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘ্নে ধান কাটা মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে পারছেন কৃষান-কৃষানিরা।

মাঠ জুড়ে সোনালী ধানের মৌ মৌ গন্ধে মনের আনন্দে কাজ করছেন তারা। কথা বলার মতো ফুরসত নেই তাদের।

ধান কেটে অনেক কৃষকই আঁটি বেঁধে কাঁধে করে, আবার অনেকেই বিভিন্ন যানবহনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। বাসা-বাড়ির উঠানে চলছে আগাম জাতের ধান মাড়াইয়ের কাজ। এসব ধান নিয়ে কৃষকের যেমন ব্যস্ততা তেমনি আনন্দও প্রচুর। অনেকের বাড়িতে চলছে শীতের সকালে ভাঁপা পুলি, তেল পিঠা, নতুন চালের পায়েস ও নাড়ু মুড়ির মুখরোচক খাবার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সুত্রে জানা যায়, জেলার ছয় উপজেলায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই মৌসুমে জেলায় বেশিরভাগ জমিতে রোপা আমনের চাষ করা হয়েছে। মোট আবাদের মধ্যে রয়েছে সুগন্ধি ব্রি-ধান।

অপরদিকে, কয়েক দফার বন্যা এবং অতি বৃষ্টির কারণে নিম্মাঞ্চলের অনেক জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বালিয়াপাড়া গ্রামের কৃষকরা জানান, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও ধানের বাম্পার ফলন ভালো হয়েছে এবার। অগ্রহায়ণ মাসে পুরো ধান কাটা শুরু হলেও আগাম জাতের বিভিন্ন ধান কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে কাটা শুরু করেছি।

কুষ্টিয়া মিরপুর থানার মশান এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, কয়েক দফা বন্যা আর অতিবৃষ্টির কারণে আমন ধান চাষে ব্যাঘাত ঘটলেও এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আগাম জাতের ধানের বাম্পার ফলনে কৃষক বেজায় খুশি। এছাড়াও ওই জমিতে কীটনাশক ছাড়া শীতের সবজির প্রচুর আবাদ হয়। এতে দুই দিক থেকে কৃষকের লাভ।

ইতোমধ্যে কৃষক ধান কাটতে শুরু করেছেন। তবে বাজারে ভালো দাম পেলে কৃষক এবার লাভবান হবে। পাশাপাশি কৃষকের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব। এ যেন বাঙালি সংস্কৃতির চিত্র ফুটে উঠেছে কুষ্টিয়ার প্রতিটা গ্রামগঞ্জে।

ধানের ন্যায্য মূল্য পেলে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কৃষকদের দ্বিগুনেরও বেশী লাভ হবে বলে জানিয়েছেন দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়নের ঝাউদিয়া গ্রামের কৃষক নজিবুল ইসলাম। একই কথা জানিয়েছেন উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের গোয়ালগ্রামের কৃষক এমদদুল হক।

তিনি জানিয়েছেন, এবছর ৫বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলনও ভাল হয়েছে। ধান কাটা শুরু হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে ধান চাষে এবার লাভ হবে জানান তিনি। তবে তিনি ধানের ন্যায্যমূল্য দাবি করেছেন সরকারের কাছে।

কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবছর ধানের ফলন ভাল হয়েছে। কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করবে সেক্ষেত্রে তারা ধানের ন্যায্য মূল্যও পাবে এমন আশা ব্যক্ত করেছেন দৌলতপুর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সজিব আল মারুফ।

কৃষকরা এদেশের প্রাণ। তাই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাদের পরিশ্রমের উৎপাদিত ফসল সোনালী ধান যেন মধ্যস্বত্বভোগীরা সব সুবিধা ভোগ না করতে পারে সেদিক খেয়াল রাখার দাবি কৃষকদের।