স্থানীয় আধিপাত্য ও বিল নিয়ে বিরোধ হত্যাকান্ডের কারণ

স্থানীয় আধিপাত্য ও বিল নিয়ে বিরোধের কারণেই মেহেরপুর সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামে দুই চাচাত ভাই যুবলীগ নেতা রোকন বিশ্বাস ও হাসান বিশ্বাসকে খুন করা হয়েছে। আর এ খুনের সাথে প্রত্যক্ষ ও নেপথ্যেভাবে ১৫ থেকে ১৬ জন জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। আটক ৮ জনের মধ্যে ৩ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছে।

বুধবার সকাল ১১ টার সময় পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী তাঁর সম্মেলন কক্ষে জোড়া খুন নিয়ে প্রথমবারের মত প্রেস ব্রিফিংকালে এ তথ্য দেন।
পুলিশ সুপার মুরাদ আলী বলেন, ১১ সেপ্টেম্বর হত্যাকান্ডের পর নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে আব্দুল হাকিম, আব্দুস সালাম, তারাচাঁদ ফকির ও মামলত মন্ডল নামের চার আসামীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদের মধ্যে আব্দুল হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবাববন্দীতে স্বীকার করেন যে, তার আপন বড় ভাই আব্দুল হামিদের (যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামী) নির্দেশে হামিদের ছেলে মোক্তার হোসেন হত্যা ও শোলমারী বিলের অংশদারীত্ব হতে বাদ পড়া এবং স্থানীয় নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের প্রদিশোধ স্বরুপ হামিদ জেলখানা হতে রোকন ও হাসানকে হত্যার জন্য তার ভাই হাকিমকে নির্দেশ দেয়। পরবর্তিতে হাকিমের নির্দেশনা মোতাবেক ঘটনার পূর্বে তার আপন ভাগ্নে ইসমাইল হোসেন বাক্কাকে নগদ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে খুনি ভাড়া করে হত্যাকান্ডটি ঘটায়। ইসমাইল হোসেন বাক্কা এ হত্যাকান্ডের কিছুদিন পর একই গ্রামে বন্দুযুদ্ধে নিহত হয়।
পরবর্তিতে এই হত্যা মিশনে জড়িত সন্দিগ্ধ আসামী আবুল কালাম কালুকে ৮ অক্টোবর বারাদি বাজার থেকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসা বাদ করা হয়। এতে সে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

তার স্বীকারোক্তিতে গত ১২ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে গাংনী থানার হাটবোয়ালীয়া রোড থেকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে রনি আলম নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেয়। সে বলে, বাক্কা সহ অন্য আর একজন আসামী রোকনকে কোপাতে থাকে। পরবর্তিতে বাক্কা ও আর একজন আসামী রোকনের পা চেপে ধরে। রনির স্বীকারোক্তিতে গত ১৪ অক্টোবর মুজিবনগর কেদারগঞ্জ থেকে দুই জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ইসমাইল হোসেন বাক্কা গত ৪ অক্টোবর অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তার বিরুদ্ধে হত্যা একাধিক মামলা বিচারাধীন ছিল।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের জোর অভিযান চলছে। তদন্ত স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।

প্রেস ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম, সদর থানার ওসি শাহ দারা খান, তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আহসান হাবিব, মামলার বাদি আলেয়া খাতুন সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১১-১২টার দিকে মেহেরপুর সদরের দরবেশপুর গ্রামের শোলমারী বিলে রোকনুজ্জামান রোকন বিশ্বাস ও হাসানুজ্জামান হাসান কে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় রোকনের স্ত্রী আলেয়া খাতুন বাদি হয়ে মেহেরপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মেহেরপুর প্রতিনিধি