স্মরণকালের রেকর্ড ভাংলো কম আখ মাড়াইয়ে ॥ লোকসান হতে পারে ৭০ কোটি টাকা
দর্শনা কেরুজ চিনিকলের আখেরী হুইসেল বাজিয়ে ২০২১-২০২২ আখ মাড়াই মৌসুম শেষ করল ঐত্যিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কেরুজ চিনিকল।
কেরু সুত্রে জানা যায় দিনগত রাত আড়াইটার দিকে এ ২০২১-২০২২ আখ মাড়াই মৌসুম শেষ করে। এবার স্মরণকালের রেকর্ড ভাংলো কম আখ মাড়াইয়ে। শুধু আখ মাড়াইয়ের ক্ষেত্রেই নয়, মাড়াই দিবস থেকে শুরু করে চিনি আহরণের হার ও উৎপাদন কমের ক্ষেত্রেও এবার রেকর্ড ভেঙ্গেছে।
গত মরসুমে ৭৬ কোটি টাকা লোকসান গুনলেও এবারের লোকসানের বোঝা ৭০ কোটিও পেরুতে পারে। চলতি আখ মাড়াই মরসুম আজ শেষ হচ্ছে। আখ মাড়াইয়ের ক্ষেত্রে লক্ষমাত্রা অতিক্রম করলেও চিনি আহরণের হার নিন্মমুখি হওয়ায় উৎপাদনে থাকছে বিশাল ঘাটতি।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিকালে ৭৬ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ২০২১-২২ আখ মাড়াই মরসুমের শুভ উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রী নুুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন, বানিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অপু।
কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি এ মরসুমে সর্বমোট ৪ হাজার ৬২৭ একর জমির আখ মাড়াই করা হয়। যার মধ্যে কেরুজ নিজস্ব জমির পরিমান ছিলো মাত্র ৯৮৯ একর ও কৃষকের জমিতে আখ ছিলো ৩ হাজার ৬৩৮ একর। লক্ষমাত্রা অনুযায়ি মাত্র ৪৪ দিনে ৫০ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন নির্ধারন করা হয় সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিকটন। চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা ছিলো ৭ দশমিক শূন্য।
গত শনিবার পর্যন্ত ৫০ মাড়াই দিবস পর্যন্ত আখ মাড়াই করা হয়েছে ৫২ হাজার ৮৫০ মেট্রিকটন। গতকাল রবিবার সকাল পর্যন্ত মাড়াই পরিমান সর্বমোট দাড়াতে পারে ৫৪ হাজার মেট্রিকটনে। গড় মাড়াই ১ হাজার ৬৪ মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত চিনি উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৮৮৪ মেট্রিক টন।
সবশেষ চিনি উৎপাদনের পরিমান দাড়াতে পারে ৩ হাজার মেট্রিকটন। চিনি আহরণের গড় হার ছিলো ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমেই শুরু হয় ইক্ষু রোপন মরসুমের কার্যক্রম। শুরুর দিকে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ১০ হাজার একর জমিতে আখ রোপনের।
যা পরে সংশোধন করে সাড়ে ৩ হাজার একর জমি বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে ৭ হাজার একর জমিতে আখ রোপন করতে হবে। এর মধ্যে কেরুজ চিনিকলের নিজস্ব জমির পরিমান মাত্র ১ হাজার ৩৫ একর এবং বাকী ৫ হাজার ৯৬৫ একর জমি কৃষকের। গতকাল ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সর্বমোট আখ রোপন করা হয়েছে ৩ হাজার ৭১৮ একর জমিতে।
এর মধ্যে কেরুজ চিনিকলের নিজস্ব জমি ৭৮৯ ও কৃষকের ২ হাজার ৯২৯ একর জমিতে। স্মরণকালের কম পরিমান আখ নিয়ে চলতি আখ মাড়াই মরসুমের আজ ৫১ মাড়াই দিবস। এবারো কোন প্রকার যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়তে হয়নি মিলটিকে। তবে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ৩০ ঘন্টা আখ মাড়াই বন্ধ রাখতে হয়েছে।
কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন জানান, আগামি মরসুমে চিনি কারখানাকে লাভজনক অবস্থায় নেয়া সম্ভব না হলেও বড়ধরণের লোকসান কমাতে প্রয়োজনীয় সবধরণের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে।
আখচাষে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকদের সকল ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। কৃষদের সাথে সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক চলমান রয়েছে।
তিনি এলাকার আখচাষিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বেশী বেশী আখচাষ করে অধিক মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি আপনাদের মূলবান সম্পদ কেরুজ চিনিকলটি রক্ষা করুন।
তিনি আরও বলেন কৃষি প্রধান বাংলাদেশ অর্থনীতির মৃল ভিত্তি হলো কৃষি। চিনি শিল্প ছিলো কৃষি ভিত্তিক শিল্প তাই এ মিলটির জন্য যা যা করার দরকার আমি সব রকব চেষ্টা করে যাচ্ছি। গত বছরের তুলনায় সব মিলিয়ে ১০ কোটি টাকা লাভ হবে বলে মনে করছি।