হেফাজতের হরতালে ‘বিএনপি জামায়াত শিবির’, হামলা ভাংচুর

হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোড এলাকা থেকে শুরু করে ডেমরা-মাতুয়াইলের সাইনবোর্ড পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

রোববার সকাল থেকেই হেফাজতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে র‌্যাব-পুলিশ ও বিজিবির দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন কাঁদানে গ্যাস, টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।

এদিকে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ার এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ১০টায় হরতাল সমর্থকদের ওপর রাবার বুলেট ছুড়ে বিজিবি। এ সময় সাকিল নামে এক পথচারীসহ ৫জন হেফাজতকর্মী গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানা গেছে। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

এ ছাড়া সকাল থেকেই হেফাজত ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় অর্ধশতাধিক হেফাজতের নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১০ জন হরতাল সমর্থককে আটক করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রোববার ভোর থেকেই রাজধানীর অন্যতম প্রবেশদ্বার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাদানিনগর ও মৌচাক এলাকায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা সমবেত হয়ে রাজধানীতে প্রবেশের চেষ্টা চালান। এ সময় রাজধানীর ডেমরা, কদমতলী ও যাত্রাবাড়ী থানাধীন সাইনবোর্ড এলাকাসহ সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা এলাকায় অবস্থান নিতে থাকে হেফাজতের লোকজন। তাদের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোকজন ঢুকে হামলা ভাংচুর করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজত ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে থাকে। হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সব যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে হরতাল পালন করে। এ সময় দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন প্রকার পণ্যবাহী যানবাহন ভাংচুর করে হরতাল সমর্থকরা। এ ঘটনায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দিকে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা হেফাজতের নেতাকর্মীদের সরাতে ব্যর্থ হওয়ার এক পর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিজিবির সদস্যরা। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষে শফিকুল ইসলাম (৬৭) ও শাকিল (৩৫) নামে দুই জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং শাহাদাত (৩৫) নামে একজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শাকিলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে আর বাকি দুজনকে সিদ্ধিরগঞ্জের মা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় বিকাল ৩ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে মাদ্রাসাছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে উভয়পক্ষ সতর্ক অবস্থানে আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত আছেন।

এ বিষয়ে ওয়ারী জোনের উপপুলিশ কমিশনার শাহ ইফতেখার আহম্মেদ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে- হেফাজতের লোকজন ঢাকায় প্রবেশ করে অন্যান্য মাদ্রাসার সমন্বয়ে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। এ জন্য প্রশাসন অতিরিক্ত র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। হরতাল সমর্থকদের কোনোভাবেই রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তাই হরতাল প্রতিরোধে সাইনবোর্ড এলাকায় প্রশাসনিক বেষ্টনীতে রাখা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, হরতালের সমর্থনে সকাল থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করে। পুলিশের উপস্থিতিতে তারা শিমরাইল ইউটার্ন এলাকায় লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয়। তারা সড়কে টায়ার, বাঁশ, কাঠ, চৌকি, বেঞ্চসহ বিভিন্ন আসবাবে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। হরতাল সমর্থকরা মহাসড়কের যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালে হেফাজতের নেতাকর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের কয়েকটি স্থানে গাছের গুঁড়ি, বিদ্যুতের ঢালাই পোল (খুঁটি) সড়কে ফেলে ও টায়ার, কাঠ-বাঁশে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ রেখেছেন। এদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড় এলাকায় একটি ট্রাক ও একটি মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেয় হরতাল সমর্থকরা। এছাড়া সংবাদকর্মীদের মোটরসাইকেল, গাড়ি ভাংচুর করে হরতাল সমর্থকরা। তবে ওয়ারী জোনের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, কদমতলী থানা এলাকা, গেন্ডারিয়া ও শ্যামপুর থানা এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা গেছে।

এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে যানবাহন চলাচল করার চেষ্টা চালিয়েছে প্রশাসন।

এদিকে ডেমরার গলাকাটা, স্টাফ কোয়ার্টার এবং সাইনবোর্ড এলাকায় সকাল থেকে মোটরসাইকেলে মহড়া দেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লাপুত্র মশিউর রহমান মোল্লা সজল। এ সময় ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় ডিএসসিসির ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান ও ৬৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালাহ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সড়কে হরতালের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। রা হরতাল প্রতিরোধ করে সড়কে যানবাহন চলাচলের চেষ্টা চালান।

মাতুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শান্তনূর খান শান্ত নেতৃত্বে সাইনবোর্ড সড়কের বাদশা মিয়া রোডে হরতালবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। ধোলাইপাড় কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ৫৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিকের নেতৃত্বে হরতালবিরোধী লাঠি মিছিল হয়।

এ বিষয়ে ডেমরা থানা অওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল বলেন, হরতালের নামে নাশকতা সৃষ্টি করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে হেফাজতে ইসলাম। আর নেপথ্যে তাদেরকে মদদ দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। কিন্তু হরতাল সমর্থকদের প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।

উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদ ও হেফাজতের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে প্রাণহানির ঘটনায় হরতাল ডাকে হেফাজতে ইসলাম।