বিগত ১২ বছরে সারাদেশে ৬৭ হাজার ৮৯০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত ও ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটি বলেছে, দুর্নীতি, ভুলনীতি ও পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি সড়কে 'গণহত্যার' জন্য দায়ী।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৫ উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ নৌ ও রেলপথে চলাচল করত এবং মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ সড়কপথ ব্যবহার করত। ফলে সড়ক দুর্ঘটনাও সীমিত ছিল।
কিন্তু স্বাধীনতার পর দাতা সংস্থার প্রেসক্রিপশনে একের পর এক সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের নামে ব্যাপক লুটপাট এবং সড়কে একচেটিয়া চাপ বাড়ানোর কারণে এখন ৮০ শতাংশ মানুষ সড়কপথে চলাচল করছে, আর দুর্ঘটনাও ৮০ শতাংশ বেড়েছে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, 'বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পরিবহন খাতে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের চাঁদাবাজি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মাদকাসক্ত চালক, এবং লাইসেন্সহীন গাড়ি চলাচলের কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।'
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব করা হয়েছে, বাস্তব সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে সড়কে ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
সংগঠনটির ভাষায়, 'একই সময়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে গাজায় নিহত ৬৭ হাজার, আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ৪৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের সড়কে নিহতের সংখ্যা সেই যুদ্ধের চেয়েও বেশি।'
তারা বলেন, 'এ যেন দেশের সড়কে এক প্রকার গণহত্যা, যার দায় সরকারের ভুলনীতি ও দুর্নীতি।'
সংগঠনের মতে, দীর্ঘদিন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা ওবায়দুল কাদেরের সময়েও পরিবহনে বিশৃঙ্খলা রোধে কোনো কার্যকর পরিকল্পনা দেখা যায়নি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনের পরও নীতিমালায় দৃশ্যমান পরিবর্তন না আসায় দুর্ঘটনা ও যানজট বেড়েই চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে সড়কে শৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা কমাতে সংগঠনটি ১২ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করে। এর মধ্যে রয়েছে—নৌ ও রেলপথকে সড়কের সঙ্গে সমন্বয় করে একীভূত পরিবহন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।
# পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি, অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে কাঠামোগত সংস্কার।
# ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে পাতাল মেট্রোরেল চালু।
# প্রতিটি শহরে ডিজিটাল লেনদেনভিত্তিক অন্তত দুটি বাস র্যাপিড ট্রানজিট (BRT) লেন চালু।
# জেলা-উপজেলা পর্যন্ত শক্তিশালী বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।
# মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আমদানি ও বিপণন বন্ধ।
# প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ চালক তৈরিতে সরকারি উদ্যোগ।
# ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগ ও ট্রেনিং একাডেমি প্রতিষ্ঠা।
# সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় সরকারি উদ্যোগে ক্ষতিপূরণ প্রদান।
# যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করে সিদ্ধান্তগ্রহণে স্বচ্ছতা।
# সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ।
# সারাদেশে সাইক্লিস্ট ও পথচারীদের জন্য আলাদা লেন ও নিরাপদ ফুটপাত নির্মাণ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শরীফ রফিকুজ্জামান, বারভিটার সভাপতি আবদুল হক, ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বাদল আহমেদ প্রমুখ।
সূত্র: দ্য নিউজ ২৪ ।