২০ মামলার আসামী হয়েও ধরাছোঁয়ার বাইরে বিজন

ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের অভিযোগে মূল হোতা মেহেদী হাসান বিজন গ্রুপের আর এক সদস্য শেখ আমিনুর রহমান হিমু (৫৫) নামের একজনকে আটক করেছে র‌্যাব। তবে ২০টি মামলার আসামী হলেও মেহেদী হাসান বিজন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। মূল হোতা মেহেদী হাসান বিজনের বাড়ি মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার যতারপুর গ্রামে।
গতকাল বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ প্রধান কার্যালয়ে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিবুল হাসান সাংবাদিকদের হিমুকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব-৩-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।

ব্রুনাইয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে ৪০০ লোকের কাছ থেকে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে শেখ আমিনুর রহমান হিমু (৫৫) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩। তাকে ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের অন্যতম মূলহোতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে র‌্যাব। সে সংসদ সদস্য হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে এই মানবপাচার অব্যাহত রেখেছিল। এবং মেহেদী হাসানের বিজন গ্রুপের সদস্য এই হিমু।

র‌্যাব জানায়, ২০১৯ সালে হিমু ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের মূলহোতা মেহেদী হাসান বিজনের কোম্পানির নামে ভুয়া ডিমান্ড লেটার সংগ্রহ করে ৬০ জনকে ব্রুনাইয়ে পাঠায়। ভুক্তভোগীরা ঋণ করে ও জমিজমা বিক্রি করে ব্রুনাইয়ে গিয়ে কোনও কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে নিজ খরচে দেশে ফিরে আসেন। হিমুর নিজের কোনও রিক্রুটিং লাইসেন্স নেই। সে নজরুল ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস ও হাইওয়ে ইন্টারন্যাশনাল আরএল ব্যবহার করে ব্রুনাইয়ে মানবপাচার করে।

এর আগে, বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাফরুল থেকে এনএসআই ও র‌্যাবের অভিযানে শেখ আমিনুর রহমান হিমু এবং তার সহযোগী আরও দুজন মো. নুর আলম (৩৬) ও বাবলুর রহমানকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় হিমুর দেহ তল্লাশি করে একটি বিদেশি পিস্তল ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন পাওয়া যায়।

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের ঘটনায় অসংখ্য ভুক্তভোগী র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে অভিযোগ করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের মূলহোতা মেহেদী হাসান বিজন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন অপুর অন্যতম সহযোগী গ্রেফতারকৃত শেখ আমিনুর রহমান হিমু। সে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থান করছিল এবং মেহেদী হাসান বিজনের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক। গ্রেফতারকৃত হিমু মেহেদী হাসান বিজনের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ব্রুনাই মানবপাচার করতো।

র‌্যাব জানায়, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের কারণে ব্রুনাইয়ে সক্রিয় ভিসা দালাল চক্রের মূলহোতা মেহেদী হাসান বিজনসহ সাত জনের পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায়। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে পাসপোর্ট অধিদফতর মেহেদী হাসান বিজনসহ সাত জনের পাসপোর্ট বাতিল করে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের শিকার ভুক্তভোগীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ব্রুনাইয়ে অবস্থানকারী বাংলাদেশি দালাল মেহেদী হাসান বিজনকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করেন। মেহেদী হাসান বিজনের নামে দেশে ২০টি মামলা হয়েছে এবং বর্তমানে সে বাংলাদেশে আত্মগোপন করে আছে।

মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে পুলিশের কোনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত কিনা এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত চলছে। প্রমাণ পেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

ভুক্তভোগীরা জানান, মামলা করায় উল্টো তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। দালাল চক্রটি গেলো কয়েক বছরে, প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে, প্রায় ৫ হাজার শ্রমিককে অবৈধভাবে ব্রুনাই নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে কাজ না থাকায় অধিকাংশই দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ কেউ ব্রুনাইয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ছোট্ট দেশ ব্রুনাই এখন মানবপাচারের অন্যতম বড় রুট। সেখানে কাজ করে কয়েকটি চক্র। তার মধ্যে মেহেরপুরের মেহেদী হাসান বিজন একটি চক্রের মূল হোতা। ৫ থেকে ৭ বছর আগে শ্রমিক হিসেবে ব্রুনাই গিয়ে পিকআপ চালাতেন বিজন।

ধীরে ধীরে মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বনে যান কোটি কোটি টাকার মালিক। গত বছর কয়েকজন শ্রমিকের মামলার পর ব্রুনাই সরকার তার ভিসা বাতিল করে। কয়েকমাস জেল খাটার পর তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। বাংলাদেশ সরকারও তার পাসর্পোর্ট বাতিল করে।

দেশে ফেরত আসা শ্রমিকরা বিজন ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ২০ টি মামলা করে। অভিযোগের ভিত্তিতে এ বছরের মার্চে, চক্রের বেশ কিছু সদস্যকে গ্রেফতার করলেও কোনো এক অজানা কারণে ধরা ছোঁয়ার বাইরে মুলহোতো মেহেদী হাসান বিজন।