
৩৩ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মেহেরপুর ইউনিটের নির্বাচন। দীর্ঘ সময় ধরে সদস্যদের সরাসরি ভোটের সুযোগ না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি কার্যত নেতৃত্বের একচেটিয়া দখলে পরিণত হয়েছিল বলে অভিযোগ সদস্যদের একটি অংশের।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৩৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট একরামুল হক হীরা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি মেয়াদেই প্রস্তাবিত কমিটিই অনুমোদিত হওয়ায় নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এতে সংগঠনের ভেতরে নতুন নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগও সীমিত থেকেছে বলে মনে করেন অনেকে।
রেড ক্রিসেন্টের জেলা ইউনিটটি মানবিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকলেও, সংগঠনটির গণতান্ত্রিক কাঠামো অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছিল বলে পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য। ভোট প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় এবার সেই স্থবিরতা কাটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ভোটের ঘোষণা আসার পর থেকেই পুরনো সদস্যদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই এটিকে ‘সংগঠনের পুনর্জাগরণের সূচনা’ হিসেবেই দেখছেন। কেউ কেউ বলছেন, এই নির্বাচন শুধু নেতৃত্ব পরিবর্তনের নয়, বরং রেড ক্রিসেন্টের প্রতি আস্থা পুনর্গঠনেরও সুযোগ তৈরি করবে।
২০০১ সালে আজীবন সদস্য হওয়া আনোয়ারুল হক কালু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সদস্য হয়েছি প্রায় ২৪ বছর আগে, কিন্তু কোনো ভোট দিতে পারিনি। প্রতিবছরই প্রস্তাবিত কমিটি গঠিত হয়েছে, সদস্যরা শুধু সমর্থনের আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছেন।
প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মী মাহবুবুল হক মন্টু বলেন, ৪০ বছর আগে সদস্য হয়েছি। ২০০১ সাল থেকে আজীবন সদস্য। একবার ব্যাপক চাপের মুখে ১৯৯২ সালে ভোট হয়েছিল, তারপর আর কার্যনির্বাহী কমিটির ভোট হয়নি।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব রেড ক্রিসেন্টের কমিটিতেও কম নয়। অতীতে আওয়ামী লীগপন্থী নেতৃত্বের প্রভাবসহ একটি গোষ্ঠী নেতৃত্ব কুক্ষিগত করে রেখেছিল। এবার ভিন্ন ধারা থেকে প্রার্থীরা এগিয়ে আসায় ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
দীর্ঘদিন সমর্থন ভোটে মেহেরপুর ইউনিটের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা অ্যাডভোকেট একরামুল হক হীরার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এই নির্বাচন স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হয়, তবে এটি ভবিষ্যতে সংগঠনের গণতান্ত্রিক চর্চাকে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।