১৬ বছর পর গাংনীর রাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিল 

দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে রাইপুর ইউনিয়নের কেএবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মোট ৪৫৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রবিউল ইসলাম, হাফিজুর রহমান ও হাসিবুল ইসলাম। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন খলিলুর রহমান ও জাফর আলী।

কাউন্সিল শুরুর আগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন।

আয়োজক কমিটির সদস্য আব্দুল আওয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়েজ মোহাম্মদ, সদস্য আলমগীর খান সাতু, আমিরুল ইসলাম, কাজী মিজান মেনন, গাংনী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল হক, জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, আখেরুজ্জামান, আলফাজ উদ্দিন কালু, গাংনী পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ইনসারুল হক ইনসু এবং জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কাউছার আলী।

জনসভা পরিচালনা করেন জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দাল হক।

সমাবেশ ও ভোটগ্রহণ ঘিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচনের এমন উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা।

আগামীকাল সোমবার গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন বলেন, “দেশব্যাপী তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে গাংনী উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর ইউনিটে দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব ইউনিটের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এর লক্ষ্যে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাউন্সিল আয়োজন কমিটি গঠন করা হয়েছে।”




সোস্যাল মিডিয়া, ভিউ ও তরুণ প্রজন্ম

প্রত্যেক মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি হলো অন্যের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য ও আকর্ষণীয় করে তোলা। অতীতে মানুষ নিজের মেধা, বুদ্ধি, আচার-আচরণ ও ব্যক্তিত্ব না দর্শনগত উপস্থাপনার মাধ্যমে অন্যের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করত। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত পন্থাকে ব্যবহার করছে। এসব পন্থার মধ্যে অন্যতম হলো মোবাইল অ্যাপস টিকটক, ফেসবুক রিলস, ইন্সটাগ্রাম। এই সব অ্যাপসের মাধ্যমে ১৫ সেকেন্ড, ৩০ সেকেন্ড যেকোনো ভিডিও তৈরি করা যায় এবং যা খুব সহজেই তা অন্য কোনো সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা যায়। আবার অন্য কারো তৈরি করা কোনো গান বা অভিনয়ের মধ্যে ঠোঁট মিলিয়ে নিজের অভিনয়শৈলী প্রকাশ করা যায় টিকটকের মাধ্যমে।

টিকটক একটি মোবাইল এ্যাপস হলেও এর নেতিবাচক প্রভাব তরুণ প্রজন্মকে বিশেষ করে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে বাস্তব থেকে। এদের মধ্যে উগ্রতা, অশালীনতা, অশ্লীলতা, কল্পনাপ্রবণতার মতো বিভিন্ন জটিল মানসিক রোগ তৈরি করছে। অতিরিক্ত টিকটকের ব্যবহারের ফলে মানসিক ভারসাম্যহীনতা, বাস্তবতার প্রতিবিমুখতা, মনস্তাত্ত্বিক অবক্ষয় ও চারিত্রিক অবনতির মতো ভয়ানক জটিল মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে।

টিকটক অ্যাপসের ব্যবহারের কারণে এমন কিছু নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে ভিডিও আপলোডকারীকে জীবনের ইতি টানতে হয়েছে। প্রায়শই পত্রিকার বদৌলতে জানা যায়, টিকটক ভিডিও বানাতে যেয়ে ট্রেনে নিচে কাটা পড়ে কিশোরের মৃত্যু বা ভিডিও বানাতে যেয়ে ট্রেনে উপর থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু। প্রাইমারী স্কুলে পড়া ছাত্রী ভিডিও বানাতে গিয়ে মৃত্যু। এমন খবর হরহামেশাই শোনা যায়। বস্তুত শিশু-কিশোর, তরুণ কিংবা বৃদ্ধ কেউই বাদ পড়ছে না টিকটক আসক্তি থেকে। শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এসব ভিডিও তৈরি কিংবা উপভোগ করতে গিয়ে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়কে হারিয়ে ফেলছে নিজের অজান্তেই। যে সময়ে তাদের সিলেবাস শেষ করার কথা, সে সময়টাতে তারা টিকটক নামের এই অপ্রয়োজনীয় এবং সময় অপচয়কারী প্লাটফর্মে নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে।

টিকটক নতুন মিডিয়া। তরুণ সমাজ এর সঙ্গে কতটুকু কীভাবে যুক্ত সেই বিষয়গুলো দেখার আছে। পাশাপাশি এর ইতিবাচক দিকও তো আছে। আমাদের যারা নীতিনির্ধারক অনেক সময় তাদেরও বোঝাপড়ায় ঘাটতি থাকে। তারা ক্রিটিক্যালভাবেই বিষয়টা দেখে। টিকটকের সবাই মনে করে, বখাটেরাই এটা ব্যবহার করে। এটা কোন ভদ্র মানুষের কাজ না। টিকটককে যে ধরনের কনটেন্টের মধ্যে ফ্রেমিং করা হয়, টিকটক কিন্তু সেই ধরনের কনটেন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। সেখানে কিন্তু ভালো কনটেন্টও থাকতে পারে। অনেকে ভালো কনটেন্টও বানাচ্ছে। সেটা মজার হতে পারে, শিক্ষামূলক হতে পারে, বিনোদনমূলক হতে পারে। সেই সুস্থ্য বিষয়টা এখানে অনেক ক্ষেত্রেই মিসিং হয়ে যায়। খারাপের দিকেই মানুষের আগ্রহ বেশি।

টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, ফেসবুক, ইউটিউব সব জায়গায় এই শর্ট ভিডিও কনটেন্টের ছড়াছড়ি। বিনোদন নেওয়ার বাহানায় রিলসে ঢুঁ মারার স্বভাবও হয়ে গেছে ব্যবহারকারীদের। অথচ কয়েক সেকেন্ডের এই রিলসগুলোই কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে, মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে অজান্তে, বিষণ্নতা উপহার দিচ্ছে, মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে যাচ্ছে। কীভাবে করছে এসব ক্ষতি হচ্ছে হচ্ছে ?
সামাজিক মাধ্যমের স্ক্রলিং ক্যাফেইনের নেশার মতো। অফুরন্ত কনটেন্ট ডোপামিনের ফিডব্যাক লুপ সৃষ্টি করে। যা থেকে মনোযোগ সরানো একেবারেই সহজ নয়। এভাবে শুধু সময়ই অতিবাহিত হয় না, বরং কাজের ক্ষমতাও চলে যেতে থাকে আঙুলের স্পর্শের সঙ্গে সঙ্গে।

রিলস আকারের ছোট ভিডিওগুলো একেতো সংক্ষিপ্ত, চটকদার, তেমনি আবার বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রেও চমৎকার। র‌্যাপিড ফায়ার ফরম্যাটের রিলসগুলো কোনোকিছু মনেই রাখতে দেয় না। কয়েকটি ভিডিও দেখার পর কোন ভিডিওর পর কোনটি মনে থাকা দুষ্কর। কয়েকটি মনে পড়লেও অধিকাংশই স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়। কারণ রিলস প্যাসিভ ভিউকে উৎসাহিত করে, যেখানে কোনো ভিডিও স্থায়ী প্রভাব ফেলে না। রিলস স্বল্পমেয়াদী স্মৃতির মতো ক্ষণস্থায়ী। আর অস্থায়ীত্ব ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় ভীষণভাবে। উদ্দেশ্য ছাড়া স্ক্রল করতে থাকলে জ্ঞানীয় ক্ষমতা ও মনোযোগ দুর্বল করে দেবে ব্যাপক হারে। চলমান ডিজিটাল বিপ্লবকালে নৈতিক উদ্বেগ নিয়ে সমালোচনা করতে গেলেও রিলসের প্রভাব অবহেলা করা যাবে না। রিলসের রোলারকোস্টার মানসিক সুস্থতার ওপরও প্রভাব ফেলছে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামেও রয়েছে রিলস, ইউটিউবে শর্টস। আলাদা নাম হলেও জিনিস কিন্তু একই। কনটেন্টগুলো হয় খুবই আকর্ষণীয়। এই শর্ট ভিডিও গুলো , আস্তে আস্তে মানুষকে আবেগশূন্য করে দিচ্ছে, কারও মৃত্যুর খবরে এখন আমাদের কষ্টের স্থায়িত্বকাল মাত্র ৩ সেকেন্ড, কোনো দুর্ঘটনার খবর আর আমাদের শরীরকে অসার করে দেয় না, মনে কষ্ট নিয়ে আঙুলের ইশারায় ফোনস্ক্রিন স্ক্রল করে নিচে নেমে কোনো কৌতুকপূর্ণ রিলে পরমুহূর্তেই আমাদের ঠোঁট প্রসারিত হয়, চোখে আনন্দের ছাপ পরিলক্ষিত হয়, আমরা পরিণত হই আবেগহীন, যন্ত্রমানবে…

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন বহু মানুষের উপার্জনের একটা ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আর এই উপার্জন করতে লাইক, ভিউ বেশি লাগে। বেশি ভিউ বা লাইক পেতে দ্রুত জনপ্রিয় হয় এমন সব কনটেন্ট তৈরি করছে তরুণেরা। পাশাপাশি নিজেকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে জাহির করার একটা চেষ্টা আছে। এই কাজ করতে গিয়ে তারা এমন সব কনটেন্ট তৈরি করছে যা বাংলাদেশে আইনে অপরাধ।

সস্তা জনপ্রিয়তা সমাজে নতুন করে দেখা দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া আসার পরই এটা বেশি করে দেখা যাচ্ছে। যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট তৈরি করে তারা বেশি লাইক বেশি ভিউ মাথায় রাখে। এটার দুটো দিক আছে। একটা সরাসরি অর্থনৈতিক দিক, আরেকটি হল সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে জাহির করা। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করা। অর্থনৈতিক দিকটা হল, কারও পেজে যদি অনেক লাইক বা কনটেন্টে অনেক ভিউ হয় সেটা ফেসবুক বা ইউটিউবে বা অন্য কোন মিডিয়ায় তাহলে সেটা মনিটাইজ করা সম্ভব। সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করাও সম্ভব। এই অপশনটার কারণে মানুষ এখন বেশি ভিউ, বেশি লাইকের পিছনে ছুটছে। এই বিষয়গুলো সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবহারকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এখানে যতটা না অর্থনৈতিক তার চেয়ে বেশি মনস্তাত্ত্বিক। কারণ তারা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে জাহির করতে চান।

সম্প্রতি ভাইরাল খ্যাত ক্রিম আপা বা কিরিম আপার বেশ কিছু ভিডিও টিকটিক বা ফেসবুকে আসছে। কখনো কড়া রাসায়নিকে মেয়ের চুল রং করে দিচ্ছেন। কখনো মাথার চুল ন্যাড়া করে দিচ্ছেন। কান ফুটো করার বন্দুকের মতো যন্ত্র দিয়ে কান ফুটো করে দিচ্ছেন। কানে ভারী কানের দুল পরিয়ে কড়া মেকআপ করাচ্ছেন। বাজে গালি দিচ্ছেন, মেয়ের মুখের সামনে থেকে খাবার কেড়ে নিচ্ছেন, মেয়ের মুখে কুলি ফেলাসহ, ধমক দেওয়া, ঘুমন্ত মেয়েকে ঠেসে খাওয়ানো, চড় মারাসহ নানা কাজ করে যাচ্ছেন ক্যামেরার সামনে। শুধু মাত্র ভিউ পাওয়ার আশায় একজন মা এমন নির্দয়মূলক কাজ করে যাচ্ছেন।

আবার উদ্যোক্তার কথা না বললেই না। রোবাইত ফাতিমা তনি ফেসবুকে পণ্য নিয়ে লাইভে এসে অশালীন ভাষায় গালাগালি করে। কখনো আবার লাইভেই সালোয়ার পরে দেখাচ্ছেন। বয়সের অসামঞ্জস্য স্বামীকে লাইভে এনে সুগার ড্যাডি খ্যাতি দিয়ে দর্শকের মন মাতিয়ে ভিউ বাড়াচ্ছে। কখনও আবার মায়া কান্না করে পণ্য বিক্রি করছেন।

তবে একটু ভালো করে খেয়াল করলে বোঝা যায় এরা মানসিকভাবে অসুস্থ। ভিডিওর কমেন্ট বক্স ভরে বাজে কমেন্টে। এদের কাছে একটাই মুখ্য বিষয় হল ভাইরাল হলেই ভিউ। এই ভিউ কনসেপ্ট প্রজন্মকে আকৃষ্ট করে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে ।
এখন প্রশ্ন হতে পারে সোসাল মিডিয়ার কারণে কী তরুণরা অপরাধমূলক কাজে উৎসাহিত হচ্ছে?

সোশ্যাল মিডিয়া হল বিজনেস মডারেট সামাজিক নেটওয়ার্ক। প্রথমে বিষয়টা এমনই ছিল। উৎসাহিত করার বিষয়ে সরাসরি তাদের দায়ী করতে পারবেন না। ওরা চায় যে কোনো প্রকারে মানুষ এটাতে যুক্ত থাকবে। যত ব্যবহারকারী বাড়বে তত তাদের লাভ। সেজন্য তারা সিস্টেমটাকে সেভাবে সেট করে। যে কনটেন্টগুলো মানুষ বেশি দেখে সেগুলোকে তারা সামনে এনে দেয়। পরোক্ষভাবে দায়ী হলেও সরাসরি বলা যাবে না। এখানে ব্যক্তির দায় যেমন আছে, তেমনি সমাজের অপরাপর মানুষেরও দায় আছে। একটা খারাপ ভিডিও এত ভাইরাল হবে কেন? এখানে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে শিক্ষারও একটা দিক আছে। ঠিকমতো বোঝার একটা বিষয় আছে। চটকদার কিছু হলেই আমরা সেটাতে ক্লিক করি। এখানে ব্যবহারকারী হিসেবেও আমাদের একটা দায়িত্ব আছে এবং বোঝার ব্যাপার আছে। আমি কিন্তু একটা জিনিস দেখলাম আর সেটা শেষ হয়ে গেল, তেমন না। এখানে আমারও কিন্তু দায় আছে।

আমরা যখন কৈশোর পেরিয়েছি তখন পর্ণ বা পর্ণগ্রাফি শব্দ শুনলেই আড়ষ্ট হয়ে যেতাম। কিন্তু এখন এই বিষয় নিয়ে নেই কোনো আড়ষ্টতা, নেই সহজাত লজ্জা। বরং ছোট বাচ্চাদের থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে পর্ণগ্রাফিতে আসক্তির মাত্রা ভয়াবহ আকারে বেড়ে চলেছে। এর কারণ হলো ইন্টারনেটে এসব ভিডিও বা অডিওর সহজলভ্যতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন ব্লগ, রিলস, টিকটক ভিডিওর উসকানিমূলক প্রচারণা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যের আনন্দময় মুহূর্ত উপভোগ করতে করতে নিজের অবস্থার সঙ্গে অহেতুক তুলনা করছি আমরা। কোনো ট্রেন্ড দেখলে তা অনুকরণ করার প্রতিযোগিতা নেমে পড়ছি? অথচ কারোর জীবনই মসৃণ নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সকলে ইতিবাচকতা তুলে ধরে। মুদ্রার বিপরীত দিকের চিত্র কখনো দেখা যায় না রিলসে। এতে করে অসন্তুষ্টি ও বিষণ্নতা জাপটে ধরছে।
তবে টিকটক রিলসের মাধ্যমে একাকিত্ব কাটানোর উপায়, ব্যবসার বিজ্ঞাপন, পণ্যের প্রচার, সচেতনতামূলক তথ্য পাওয়া যায় তা মানতে হবে। তবে এটির বিনিময়ে ইনফ্লুয়েন্সার, ভøগারদের কনটেন্ট আমাদের থেকে যে প্রতিদান নিচ্ছে তা বিস্তর বটে। আদান-প্রদানের এই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার আগেই বাস্তবতা প্রাধান্য দিয়ে চলতে হবে। যতটুকু সম্ভব কাজে ব্যস্ত থেকে রিলসের আসক্তি এড়িয়ে চলতে হবে। মনে রাখবেন, সুন্দর মেকি জীবন নয়, অসুন্দর বাস্তবতাই আমাদের সঙ্গী। বর্তমান সময়ে আমাদের আপন সমাজের কেমনতর অবয়ব তা সচেতন সামাজিক মাত্রেরই জানা। তথাপি নানাবিধ অপরিহার্য ব্যস্ততা হেতু আপন স্বার্থেই আপন চেহারা অবলোকন করে নেওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়।




ফেসবুকের নীল দুনিয়ায় গ্রন্থাগার হারিয়ে যাচ্ছে

১৮৫০ সালে যুক্তরাজ্যে পাবলিক লাইব্রেরি এ্যাক্ট পাশ হয়। যদিও সেই আইন পাশ করতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অভিজাত ও রক্ষণশীল সদস্যগনের অনেকে শিক্ষা ও সচেতনতা তৈরীর কাজে রাজকোষের অর্থ ব্যয়ের বিপক্ষে ছিলেন। তারপরেও আইনটি পাশ হয়ে যায়। ওই আইন পাশের পর ১৮৫৪ সালে এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় ৫টি গণগ্রন্থাগার। এগুলো হলো যশোর, বগুড়া, রংপুর, বরিশাল ও হুগলি পাবলিক লাইব্রেরি। যেসময় এসব লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা হয় সেসময়ও কলকাতা বিশ^বিদ্যালয় গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার অধিকার পায়নি।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে দ্য ব্রিটিশ ওয়ার্কম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় যে, ইংল্যান্ডের কুম্ব্রিয়া অঞ্চলের আটটি গ্রামে একটি ভ্রাম্যমান গ্রন্থাগার ক্রিয়াশীল অবস্থায় রয়েছে। জর্জমুর নামক একজন সমাজসেবী ব্যবসায়ী ভালো ভালো সাহিত্যকর্মকে গ্রামীণ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এই প্রকল্পর সৃষ্টি করেন। আমাদের দেশে বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব। অধ্যাপনা করেছেন তিনি ১৯৬২ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত ত্রিশ বছর ধরে। তিনি অনুভব করেছেন যে, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজন আলোকিত মানুষ। ১৯৭৮ সালে তিনি বিশ^সাহিত্য কেন্দ্র ও ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন।

২৩ বছর বয়সের আসাদের বাড়ি জামালপুর জেলার সরিষা বাড়িতে। পড়াশোনার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এলাকায় বই পড়ার অভ্যাস গড়াতে ২০১৮ সালে ২০টি বই নিয়ে একটি পাঠাগার চালু করেন। তার পাঠাগারে দুই হাজারের বেশী বই এখন। আসাদ আশপাশের গ্রামগুলোর যুবকদের বই পড়ার অভ্যাস গড়াতে নিজে সাইকেল চালিয়ে বড়ি বাড়ি গিয়ে বই দিয়ে আসেন। আগের দেয়া বই নিয়ে আসেন। এলাকার কতশত জন এখন তার পাঠাগারে বসে জ্ঞান অর্জন করছে। পাঠাগারটির একটি ফেসবুক গ্রুফ আছে। সেখানে আছে বইয়ের তালিকা। গ্রুপের সদস্যরা গ্রুপে লেখকের ও বইয়ের নাম জানালেই আসাদ সাইকেল চালিয়ে বই পৌছে দেন। দিনমজুর বাবার সবচেয়ে ছোট ছেলে আসাদ এই পাঠাগার নির্মাণ করে আকাশ হয়ে গেছেন। কেউ তাকে আর ছুঁতে পারেনা।

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে পলান সরকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি টানেন। কিন্তু বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন। পলান সরকারের নানা ময়েন উদ্দিন সরকার স্থানীয় ছোট জমিদার ছিলেন। নানার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে ৪০ বিঘা সম্পত্তির মালিক হন। পলান সরকার রাজশাহী জেলার ২০ টি গ্রামজুড়ে গড়ে তুলেছেন অভিনব শিক্ষা আন্দোলন। নিজের টাকায় বই কিনে তিনি পড়তে দেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষদের। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাঁধে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে একেকদিন যেতেন একেক গ্রামে। বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দেন। এলাকাবাসীর কাছে তিনি পরিচিত ‘বইওয়ালা দাদুভাই’ হিসেবে। ২০০৯ সালে রাজশাহী জেলা পরিষদ তার বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১১ সালে সামাজসেবায় অবদানের জন্য রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক লাভ করেন। ২০১৯ সালের ১ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পলান সরকারও আকাশ হয়ে গেছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আসাদ, পলানের মতো মানুষের জন্ম হয়েছে। তাদের অনেকেই আকাশ হতে পেরেছেন। আমরা তাদের স্মরণ করিনা।

বই হচ্ছে জ্ঞানের ভান্ডার তাই প্রতিটি লাইব্রেরি, স্কুলে গ্রন্থাগার হচ্ছে জ্ঞান ভান্ডারের একটি স্থান বা উৎস। তাইতো লাগোস হোপ দেশে দেশে ঘুরছে বই নিয়ে। যেমন আমাদের দেশে ঘোরে গাড়ি ভর্তি বই নিয়ে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি। ১৯৭০ সাল থেকে জার্মাণ ভিত্তিক জিবিএ শিপ থরে থরে সাজানো বই নিয়ে বিশ^ব্যাপি বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে ১৯৭০ সালে দুটি জাহাজভর্তি বই নিয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ান। এপর্যন্ত ১৫১ দেশ ভ্রমন করেছে। অথচ আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরিগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

স্কুল লাইব্রেরি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে জ্ঞান আহরণের জন্য নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু গ্রন্থাগারগুলো মুখো হন না শিক্ষার্থীরা। গ্রাম, শহর ও পাড়া মহল্লার লাইব্রেরিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বশেষ ঐতিহ্যবাহী মেহেরপুর পাবলিক লাইব্রেরি কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে বন্ধ। একমাত্র সরকারি গ্রন্থাগারটিতেও চলছে পাঠক খরা।

মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে ঢিলছোড়া দুরত্বে সরকারি বিশাল গ্রন্থাগারে তাকে তাকে সাজানো দেশ-বিদেশের বই। ঝকঝকে তকতকে উন্নতমানের কাঠের চেয়ার-টেবিল আর টাইলস করা মেঝে। অতি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও আধুনিকতার ছোঁয়া থাকার পরও পাঠকশূন্য গ্রন্থাগার। পাঠক খরায় ভৌতিক পরিবেশ গ্রন্থাগারটিতে। এমন অবস্থা দেখা গেছে মেহেরপুরে সরকারি গণগ্রন্থাগারে।

১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ড. শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কের সামনে একটি ভাড়া ভবনে সরকারি গণগ্রন্থাগারটির যাত্রা শুরু। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে ওয়াবদা সড়কে এডভোকেট আফরোজা বেগমের বাড়ির নিচতলায় ভাড়া বাড়িতে ছিলো কুড়ি বছর। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে সরকারি কলেজ থেকে ঢিলছোড়া দুরত্বে নিজস্ব ভবনে গ্রন্থাগারটির উদ্বোধন হয়। প্রথম দিকে সেখানে অনেক পাঠক ছিলো। তবে ক্রমে পাঠকশূন্য হয়ে যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থাগারটির। পাঠক ফেরাতেও নেই কোনো উদ্যোগ। অথচ গ্রন্থাগারটিতে পাঠকদের জন্য ৩৭ হাজার ৫০৫টি বই রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ধর্মীয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই। অভিধানসহ ইংরেজি ভাষারও বেশ কিছু বই এখানে রয়েছে। এছাড়া গ্রন্থাগারে প্রতিদিন ৫টি বাংলা, ২টি ইংরেজি দৈনিক ও বেশ কয়েকটি ম্যাগাজিন রাখা হয়। এখানে এক সঙ্গে ৩০ জন পাঠকের নিরিবিলি পরিবেশে বসে বই পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়। সেখানে শিশুদের জন্য পৃথক পাঠচক্র ব্যবস্থা আছে। শহরের একপ্রান্তে হবার কারণেই এখানে পাঠক কমে গেছে।

জেলা শহরে আছে সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি পাবলিক লাইব্রেরি (গ্রন্থাগার) আছে, কিন্তু প্রাণহীন। নেই পাঠকের কোলাহল। আলমারিতে বন্দি বই, হয়তো খোলাই হয় না বহুদিন। কোথাও বইয়ের কিছু সংগ্রহ আছে, তবে তাকে লাইব্রেরি বলা চলে না। কোথাও কোথাও লাইব্রেরিয়ান থাকলেও অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে বইগুলো, যেন অনেকটাই অভিভাবকহীন। এমনচিত্র মেহেরপুরের সরকারি-বেসরকারি লাইব্রেরি ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। মানুষকে আলোকিত করতে শতবছর আগে ১৯২২ সালে এক দানশীল শহরের বুকে ৯৭ শতাংশ জমি দান করে তাঁদের স্বর্গীয় বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘যোগেন্দ্র নাথ ঘোষ মেমোরিয়াল লাইব্রেরী’। ১৯৩৯ সালে তদানীন্তন এসডিও এবং পদাধিকার বলে সভাপতি এ. আর. রহমান এই লাইব্রেরিটি সম্প্রসারণ করেন এবং নতুন নামকরণ করা হয় মেহেরপুর পাবলিক ক্লাব। স্বাধীনতা উত্তরকালে বেশ কয়েক বছর ক্লাবটি বন্ধ থাকে। ৮০র দশকে ফের লাইব্রেরিটি চালু হলেও ২০০০ খ্রিস্টাব্দকালীন সময় থেকে রাজনীতি, কমিটির মধ্যে অভ্যন্তরীন বিরোধসহ নানামুখি কারণে পাঠক খরা দেখা দেয়। কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে জেলার সবচেয়ে বয়স্ক এই গ্রন্থাগার ‘মেহেরপুর পাবলিক লাইব্রেরি’ আর খোলা হচ্ছেনা। লাইব্রেরিটি তালাবদ্ধ। প্রতিষ্ঠানটির লাইব্রেরিয়ান খন্দকার সামসুজ্জোহা সোহাগ একটি মামলায় পলাতক আছে। সাবেক এক লাইব্রেরিয়ানের বয়ানে- একটা সময় লাইব্রেরি নিয়ে কোন রাজনীতি ছিল না। এখন রাজনীতি জায়গা করেছে লাইব্রেরিতে।

মেহেরপুর জেলা শহরে আলেয়া কামেল মাদ্রসা লাইব্রেরি কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, সেটি মূলত লাইব্রেরি নয়, কক্ষের এককোণে আলমারিতে কিছু বই রাখা। শিক্ষার্থীরা বলছে, সেটিই নাকি তাদের লাইব্রেরি। শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার সম্পর্কে তেমন ধারণাই নেই।

মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় দাঁড়িয়ে রয়েছে ভবনকে বুকে নিয়ে। সেই ভবনে কাগজ কলমে ২৯শ বইয়ে ভরা গ্রন্থাগার। তিনবছর আগে পাওয়া বই এখনও প্যাকেট বন্দি হয়ে। গ্রন্থাগারে এসএসসি পরীক্ষার কাগজপত্রসহ, স্কুলের পুরাতন খাতা ও অন্যান্য সামগ্রিতে ভরা। অনেকটা স্টোর রুম হিসেবেই ব্যবহার হচ্ছে গ্রন্থাগারটি। করোনাকালীন সময় থেকে কোনদিন গ্রন্থাগার খোলা হয়নি। বইগুলো রয়েছে দুরাবস্থায়। দির্ঘবছর লাইব্রেরিয়ান পদটি শূন্য। বিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষক মোসস্তাফিজুর রহমান ও ইংরেজি শিক্ষক বাসাদ আলী মর্নিং ও ডে শিপটে লাইব্রেরিয়ানের দায়ীত্বে আছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিমুখো হন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, স্কুলের গ্রন্থাগার নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আছে। প্রতিবছর ভর্তির সময় তাদের কাছ থেকে লাইব্রেরি ফি নেয়া হয়। কিন্তু তাদের বই নিতে হলে আবেদন করে বই নিতে হয়। তাছাড়া প্রতিদিনই গ্রন্থাগার বন্ধ থাকে। দশম শ্রেনির এক শিক্ষার্থী জানান- বই পড়ার মাধ্যমে, তারা নিজেদেরকে নতুন জিনিস, নতুন তথ্য, সমস্যার সমাধান করার নতুন উপায় অর্জনের মাধ্যমগুলো খুঁজে পায়। কিন্তু কোনদিন লাইব্রেরি খোলা হয় না। বেশ কয়েখজন শিক্ষার্থী জানান- গ্রন্থাগার নিয়ে কথা বললে স্যারেরা পরে বকা দেবেন। শিক্ষার্থীরা স্বীকার করেন গ্রন্থাকার কোনদিনই খোলা থাকেনা।

মর্নিং শিফটের লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্বে থাকা ধর্ম শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে সরেজমিনে গ্রন্থাগারে গিয়ে বই প্রদানের রেজিস্ট্রারে গত তিন বছরে কোন শিক্ষার্থীর নামে বই ইস্যু করা দেখা যায়নি। দেখা যায় বইয়ের আলমারির পাশে এসএসমি পরীক্ষার বস্থাবন্দি খাতা, স্কুলের পুরাতন রেজিস্টারসহ অন্যান্য সামগ্রিতে ভরা। একটি চৌকিও দেখা যায়। ওই চৌকিতে কম্পিউটারের পিন্টারসহ বিভিন্ন সামগ্রি। মোস্তাফিজুর জানান- পাঠ্যভাস কর্মসূচির ৪৮৪টি মিলে মোট বই রয়েছে ২৮৮৪টি। এই করোনাকালীন সময় থেকে কোন ছাত্র গ্রন্থাগারমুখো হয়নি। নাম প্রকাশে একজন শিক্ষক জানান- সপ্তাহে একদিন ভ্রাম্যমান বই লাইব্রেরি আসে স্কুলে। কোন শিক্ষার্থী ওই ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি থেকেও বই পড়েনা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শরিফুল ইসলাম জানান- আমরা নিয়মিতভাবে লাইব্রেরি ব্যবহার করার জন্য আমাদের ছাত্র/ছাত্রীদের অনুপ্রাণিত করি। শিক্ষকদের প্রতি রাস্ট্রিয় নির্দেশ রয়েছে কোন শিক্ষার্থীর সাথে উচ্চস্বরেও কথা বলা যাবেনা। ফলে শিক্ষার্থীদের শাসনের মধ্যে আনা যায় না। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যভাস গড়ে তোলাসহ শিক্ষকদের অনেক নির্দেশই উপেক্ষিত থেকে যায়।

মেহেরপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর আবদুল্লাহ আল আমিনের বয়ানে, শিক্ষিত মধ্যবিত্তের ড্রয়িংরুমে আর বই রাখার আলমারি শোভা পায় না। লাইব্রেরির চেয়ারে বসে বই পড়ার দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে। মানুষের অবসর সময় ঢুকে গেছে ফেসবুকের নীল দুনিয়ায়, টুইটারের কলরবে ইনস্টাগ্রাম নামক অনলাইনে। আমাদের মনের মগজ দখল করে নিয়েছে নতুন নতুন ডিভাইস।

আমাদের দেশের লাইব্রেরিগুলো বন্ধ হবার আরেকটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্ক এলিয়েট জাকার বার্গের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এই মাধ্যমটি এখন বিশে^র কোটি কোটি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে নীল দুনিয়া মাধ্যমগুলো।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, সভাপতি মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাব ও যুগান্তর প্রতিনিধি




বর্তমান সংবাদমাধ্যম ও মেহেরপুর প্রতিদিনের সম্ভাবনা

বর্তমান সময়ে ঝুঁকির কেন্দ্রে অবস্থান করছে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম। জুলিয়ান এসাঞ্জ থেকে জামাল খাশোগি, মিয়ানমারের সাংবাদিক ওয়া লোন এবং কিয়াও সোউ থেকে সাগর- রুনি। যারা নিজেদেরকে মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে রেখে অনন্য সাংবাদিকতার নজির সৃষ্টি করেছিলেন। বর্তমান যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্টাইনে দায়িত্বশীল সাংবাদিক নিধনের ভয়াবহতা বিশ্বকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে।

গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের এই মাধ্যমটি নিয়ে বিস্তর সমালোচনা রয়েছে। পরতে পরতে যেমন রয়েছে হলুদ সাংবাদিকতার ঘেরাটোপ, কর্পোরেট আগ্রাসনে বিপন্ন হয়ে পড়ার উদাহরণ। তেমনই রয়েছে ইতিবাচক দৃষ্টান্তও। দেশি -বিদেশি সংবাদযোদ্ধাদের নির্ভীক দায়িত্বশীলতার কারণে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থন সহজ হয়েছিল। আবার একাত্তর পরবর্তী সময়ে সংবাদমাধ্যমগুলো বস্তুনিষ্ঠতার পরিসর সৃষ্টি করতে না পারাই বিভিন্ন আকৃতির ফ্যাসিবাদেরও উত্থান হয়েছে।

গণমাধ্যমের দায়িত্ব কেবল বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে সক্ষম হওয়া নয় বরং পাঠকের মনে ইতিবাচকতাকে সংক্রমিত করা, জনগণকে সজাগ করে তোলা। বিশেষভাবে অনাধুনিক ও চিন্তাগতভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোতে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম দুটি মোটা দাগে বিভক্ত। একভাগের কাজ হলো ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলের হয়ে ক্ষমতামুখি গতিস্রোত তৈরি করা। অন্যভাগে ক্ষমতার পক্ষে অবস্থান করে সুবিধা গ্রহণ আর ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার নির্লজ্জ প্রবাহ তৈরি। যার ফলে এখানে নজিরবিহীন দুর্নীতির রেকর্ড তৈরি হয়েছে। কেবলমাত্র সংবাদমাধ্যমের নির্লিপ্ততায় অনেক মন্ত্রী এমপিসহ কর্মকর্তা কর্মচারীরা লাগামহীন দুর্নীতির সুযোগ পেয়েছে। আল-জাজিরার অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত না হলে হয়তো জানাই যেতোনা জেনারেল আজিজ ও তার ভাইদের কীর্তি কিংবা সাবেক ভূমিমন্ত্রীর লন্ডনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ৩৬০ টা বাড়ি সহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অগাধ সম্পদের ফিরিস্তি।

বিশ্বস্ত গণমাধ্যমের অভাবে সমাজ, রাষ্ট্র ও জনমত গঠনের পর‌্যায়প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। শাসকের চোখে চোখ রেখে চেতনার কোন স্ফুলিঙ্গ সংবাদমাধ্যম গুলো জ্বালতে পারেনি। বরং ক্ষেত্রবিশেষ গণতান্ত্রিক চর্চায় প্রতিকূল পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যমকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের ধারণায় যুক্ত করা সময় বিবেচনায় অনিবার‌্য। কিন্তু মানবতার পরিধির ধারণা কেবল স্বদেশে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বজনীন। সংবাদ মাধ্যমকে দেশকাল ধর্মের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম যদি গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দল বা উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রতিনিধিত্ব করে তখন তার সম্ভাবনাময় আদর্শিক জায়গাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উগ্র দেশপ্রীতিও অন্য দেশের মানবিক বিপর‌্যয়ের কারণ হতে পারে। পশ্চিমা গণমাধ্যমের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে অশান্ত করে রেখেছে দশকের পর দশক।

সম্প্রতি বাংলাদেশের ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সংবাদমাধ্যম ও অনলাইন পোর্টালে যে তর্কযুদ্ধ বা সংবাদ উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে তা দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান স্বাভাবিক সম্পর্কগুলো নষ্ট করে দিয়েছে। এজন্য গণমাধ্যমকে পেরিয়ে যেতে হয় দেশ কালের সীমা।

গণমাধ্যমের এমন দশার মধ্যে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পশ্চাদপদ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র জনপ্রিয় পত্রিকা মেহেরপুর প্রতিদিনের ভবিষ্যৎ কি? এমন প্রশ্ন স্বাভাবিক। মারাত্মকভাবে বিভাজিত এই সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে মানুষের কথা বলা, মানুষের বুকের স্পন্দন ও অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাসকে অনুবাদ করে প্রকাশ করা এ কঠিন কর্মযজ্ঞ। তার উপরে রয়েছে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মতো কঠিন বিষয়। মেহেরপুর প্রতিদিনের সপ্তম বর্ষ পেরিয়ে অষ্টম বর্ষে পদার্পণ একটি বিস্ময়। এটি টিকে আছে কেবল কয়েকজন মানুষের শ্রম ও আন্তরিক পরিচর্যার কারণে। সংবাদমাধ্যমের টিকে থাকা সহজ হয় তখনই যখন সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তা মানুষ অনুভব করতে পারে। সামাজিক অসঙ্গতি, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে যেখান ব্যক্তির একক লড়াই অসম্ভব, সেখানে সংবাদমাধ্যম সবচেয়ে কার‌্যকর ভূমিকা পালন করে।
মানুষের কন্ঠস্বর হয়ে প্রতিবাদের ভাষা জোরালো করে। সংবাদমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যেমন সহযোগিতা করে তেমনি জনগণকেও তার দায় সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। যে কাজটি মেহেরপুর প্রতিদিন সাবলীলতার সাথে করে চলেছে। আর তার টিকে থাকার কারণও সেটি। মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রয়োজনে নয় বরং সকলের প্রয়োজনেই এর বেঁচে থাকা জরুরি। এই উপলব্ধি মানুষের মধ্যে দ্রুত জাগরিত হোক।
মেহেরপুর প্রতিদিনের জন্য শুভকামনা।

লেখক: শিক্ষক , কবি ও উপস্থাপক।




শুভেচ্ছা-ভালবাসায় সিক্ত ‘মেহেরপুর প্রতিদিন’

প্রতিষ্ঠার ৮ম বছরে পদার্পণ উপলক্ষে মেহেরপুর প্রতিদিনকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন শুভাকাক্সক্ষীরা। তাঁরা বলেছেন, সত্য তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে মেহেরপুর প্রতিদিন এখন জন-জীবনের অংশ। ৭ বছর ধরে পাঠক মেহেরপুর প্রতিদিন ওপর আস্থা রেখেছেন, এটাই সংবাদমাধ্যমটির বড় অর্জন।

রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, ক্রীড়াসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্টজনদের উপস্থিতি মিলনমেলায় পরিণত হয় অনুষ্ঠানস্থল। আগত অতিথিরা শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, জনমানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণেই পত্রিকাটি সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মেহেরপুর প্রতিদিন কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার মাধ্যমে পত্রিকাটি সাফল্যের এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে-এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

৭ বছর পেরিয়ে গতকাল শনিবার ৮ বছর পদার্পনে মেহেরপুর শহরের মল্লিকপাড়া মেহেরপুর প্রতিদিনের কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মেহেরপুর প্রতিদিনকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, কবি সাহিত্যিক, পাঠক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। অনেকে ই-মেইল ও হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁরা ফুল, কেক ও মিষ্টি নিয়ে এসে শুভেচ্ছা জানান।

মেহেরপুর প্রতিদিনের সম্পাদক ইয়াদুল মোমিনের সভাপতিত্বে ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহবুব চান্দুর সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা জানাতে মেহেরপুর ১ আসনের সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুন বলেন, মেহেরপুর প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে প্রধান অবস্থান ধরে রেখেছে। বর্তমানের কঠিন অবস্থার মধ্যেও সত্যের জায়গায় রয়েছে। মানুষ কোনো ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ওপর নির্ভর করে। তিনি বলেন, এই বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়টি মেহেরপুর প্রতিদিনের ৮ বছরের সবচেয়ে বড় অর্জন।

জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাঠক হিসেবে মনে করি, দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতা মেহেরপুর প্রতিদিনে হয়।’ তিনি বলেন, ‘মেহেরপুর প্রতিদিন গুণমান ও গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়াবে, সেই প্রত্যাশা করি।’

মেহেরপুর প্রতিদিন নিজের জীবনধারার অংশ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান। তিনি বলেন, মেহেরপুর প্রতিদিন পুরো পরিবারের পত্রিকা। এই এলাকার মানুষের কাছে বিশ্বস্ত গণমাধ্যম। পত্রিকাটি দীর্ঘ ৮ বছরে সাংবাদিকতাকে অনন্য স্থানে নিয়ে গেছে।
সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে পাঠক মেহেরপুর প্রতিদিনের ওপর নির্ভর করে।

মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল্লাহ আল আমিন ধুমকেতু বলেন, মেহেরপুর প্রতিদিন ৭ বছরে অতিক্রম করেছে। এই সাত বছরে মেহেরপুর প্রতিদিন কোন ক্ষমতার কাছে, কোন কর্পোরেটের কাছে নত হয়নি। বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতায় পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছে। আগামীতে তারা ধারা অব্যাহত রাখবে।

সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক ড. গাজী রহমান বলেন, সংবাদপত্র বলতে যা বোঝায়, তা ধারণ করে মেহেরপুর প্রতিদিন। মেহেরপুর প্রতিদিনে পাঠকপ্রিয়তা ও আস্থার জায়গা ধরে রাখতে হবে।

জেলা আইনজীবী সমিতি মেহেরপুর সভাপতি মারুফ বিজন বলেন, গণতন্ত্রের তিনটি প্রধান স্তম্ভের কথা বলা হয়। কিন্তু গণতন্ত্র কখনোই তার চতুর্থ স্তম্ভ ছাড়া চলতে পারে না। আর সেই চতুর্থ স্তম্ভই হলো স্বাধীন সংবাদপত্র। স্বাধীন সংবাদপত্র মানেই হলো স্বাধীন দেশে জনগণের অধিকারের কথা বলা। মেহেরপুর প্রতিদিন মেহেরপুরের ১০ লক্ষ মানুষের সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিয়েছে। আমি আশাকরি মেহেরপুর প্রতিদিনের সম্পাদকসহ সংশ্লিস্টরা তাদের সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে জনগণের অধিকারের কথা তুলে ধরবে।

ব্যবসায়ী নেতা আনোয়ারুল হক কালু বলেন, সমাজের যে কোনো অসঙ্গতি যথাযথভাবে পাঠকদের সামনে তুলে ধরে মেহেরপুর প্রতিদিন।

শুভেচ্ছা জানাতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলমগীর খান সাতু, যুগ্ম আহবায়ক সহকারী অধ্যাপক ফয়েজ মহাম্মদ, মুজিবনগর উপজেলা সমবায় অফিসার মাহবুবুল হক মন্টু, অ্যাড নজরুল ইসলাম, অ্যাড, মিজানুর রহমান, মেহেরপুর চেম্বার অফ কমার্সের নির্বাহী সদস্য আনোয়ারুল হক কালু, কোষাধক্ষ্য মোহাম্মদ ফোরকান আলী, মেহেরপুর ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য মোহাম্মদ কামাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক সাইদুর রহমান সাঈদ, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জিয়ারুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান, ব্যবসায়ী আজিরুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও লেখক নুরুল আহমেদ, সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহিদুল ইসলাম, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এমদাদুল হক, শিক্ষক জিয়াউর রহমান, ইমাম সাইফুল ইসলাম, কাথুলী ইউনিয়নের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম অল্ডাম।

এ সময় মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বার্তা সম্পাদক জুলফিকার আলী কানন, দর্শনা প্রতিনিধি আহসান হাবীব মামুন, দর্শনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আওয়াল হোসেন, দর্শনা প্রতিনিধি ফরহাদ হোসেন, দামুড়হুদা প্রতিনিধি রাকিবুল ইসলাম এবং আইটি বিশেষজ্ঞ মুন্ত্রী জাহাঙ্গীর জিন্নাত হিরক, গাংনী প্রতিনিধি আকতারুজ্জামান, মুজিবনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শেরখান, মুজিবনগর প্রতিনিধি সানোয়ার হোসেন ডালিম, স্টাফ রিপোর্টার পলাশ আহমেদ, স্টাফ রিপোর্টার সাকিব হাসান রুদ্র, ডি এম মোকিদ, ডেস্ক ইনচার্জ মোঃ রাফি হাসান, ইয়াসির ইউসুফ ইমন প্রমুখ।




মেহেরপুর প্রতিদিনের ইতিবৃত্ত…

দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জনপ্রিয় একটি পত্রিকার নাম মেহেরপুর প্রতিদিন। জন্ম ২০১৮ সালের ঐতিহাসিক ২৬ মার্চ। সাত বছর পেরিয়ে অষ্টম বর্ষে পা রাখলো। পত্রিকাটি চলচিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

সভ্যতার বিকাশে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। সংবাদপত্রের মূল উদ্দেশ্য হলো জনসাধারণকে সমাজের বিভিন্ন বিষয় অবহিত করা। স্থানীয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর সংবাদ প্রকাশ করা অন্যতম বিষয়। এছাড়া বিনোদন খেলাধুলা শিক্ষা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়েও প্রতিদিনের বিশেষ আয়োজন থাকে সংবাদপত্রে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী একটি ছোট্ট জেলার নাম মেহেরপুর। অবিভক্ত ভারতবর্ষের মহকুমা শহর এটি। এই জনপদে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার ইতিহাস নিয়ে আছে মিশ্র জনশ্রুতি। শিল্প সাহিত্য নিয়ে কাজ করেছেন স্বনামধন্য লেখক, কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিকগণ। কৃষিভিত্তিক এই জনপদে শিল্প কলকারখানা তৈরি হয়নি । পত্রিকা ছাপার জন্য একটি প্রিন্টং মেশিন (ছাপাখানা) এখনো পর্যন্ত নেই। বিজ্ঞাপন নামক যে খাদ্যের মাধ্যমে গণমাধ্যম বেঁচে থাকে সেটা জোগান দেয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান মেহেরপুরে গড়ে ওঠেনি। সেকারণে নিকট অতীতের বেশ কিছু পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। সাপ্তাহিক পরিচয় দৈনিক আজম, পাক্ষিক পশ্চিমাঞ্চল, সাপ্তাহিক মুজিবনগর, দৈনিক মেহেরপুর এর মত পত্রিকাগুলো বেশিদিন টিকে থাকতে পারিনি। এরই মধ্যে মেহেরপুর প্রতিদিন পত্রিকার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দেখলাম খুবই সচেতনভাবে। যদিও বেড়ে ওঠা দুই ধরনের, একটি কাঠামোগত অপরটি যোগ্য হয়ে। সাত বছরের মধ্যে তেমন কোন দুর্যোগ দুর্বিপাক ছাড়া নিরবচ্ছিন্নভাবে পাঠকদের হাতে পত্রিকাটি তুলে দিতে সক্ষম হয়েছে কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে সংবাদ পরিবেশনে সত্যনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ, তথ্য নির্ভর এবং বিশ্বাসযোগ্যতার কতটা প্রমাণ দিতে পেরেছে সেটা পাঠকদের বিচার্য বিষয়।

এতগুলো প্রতিকূল বাস্তবতা থাকা সত্ত্বেও মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রকাশক এম. এ. এস ইমন এর পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সত্যিই একটা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ও সাহসিকতার পরিচয় বহন করে।

পত্রিকার নামকরণের ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়। কারণ মেহেরপুর প্রতিদিন ইতোমধ্যেই একটি বৃহত্তর অঞ্চলে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অনুসন্ধানী সংবাদ পরিবেশন পত্রিকাটিকে একটি বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এখানে উল্লেখ করতেই হয়, বছর দুয়েক আগে পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখে মেহেরপুর আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে স্যুয়োমটো জারি করেছে কয়েকটি। যেগুলো পরবর্তীতে নিয়মিত মামলায় পরিনত হয়। আদালতের নজরে আসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা উপকার পেয়েছেন অনেকেই।
মেহেরপুর প্রতিদিনের অনলাইন পোর্টালটিও তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত। এটি ছাড়া মেহেরপুরে একটি অনলাইন পোর্টালও নিবন্ধিত নয়। তাৎক্ষণিক সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে মেহেরপুরসহ কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ এবং চুয়াডাঙ্গায় একঝাঁক তরুণ সংবাদকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংবাদের গুরুত্ব বিবেচনায় লাইভ প্রচার হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের ভিডিও কনটেন্টেকেও ইদানীং গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

টক-শো মেহেরপুর প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচির একটি। ‘মুক্ত কথা’, ‘সংবাদ বিশ্লেষণ’ অনুষ্ঠান দুটির বয়স প্রায় ছয় বছর। সাম্প্রতিক সময়ে ‘প্রগতি’ ও ‘সাতকাহন’ নামে আরো দুটি অনুষ্ঠান সংযোজিত হয়েছে। প্রগতি’র সঞ্চালক আইটি বিশেষজ্ঞ মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত এবং সাতকাহন সঞ্চালনা করেন শিক্ষক কবি হাসান রুদ্র। পত্রিকা কার্যালয়ে একটি সাউন্ড প্রুফ স্টুডিও আছে। সেখান থেকে অতিথিদের উপস্থিতিতে লাইভ এবং জুমের মাধ্যমেও অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়ে থাকে। সমসাময়িক বিষয়, রাজনীতি, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প সংস্কৃতি, ক্রিড়া,ব্যবসা-বানিজ্য উদ্যোক্তা, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম, অ্যাডভেঞ্চার সহ নানা বিষয় নিয়ে অতিথিরা আলোচনা করে থাকেন। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার অতিথির সাথে এই আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। রাজনীতিবিদ, লেখক, কৃষক, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ যেমন অতিথি হিসেবে কথা বলেছেন তমনি অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা নিয়ে স্টুডিওতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশের একমাত্র দুইবারের এভারেস্ট বিজয়ী মাউন্টেনার এম এ মুহিত।

মেহেরপুর প্রতিদিন এর সম্পাদকীয় নীতি নিয়ে কিছু কথা বলতেই হয়। রাষ্ট্র কাঠামোতে যদি স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব থেকে থাকে তাহলে সংবাদপত্রের যথাযথ ভূমিকা পালন করা খুবই কঠিন। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় প্রতিনিয়ত। এমপি-মন্ত্রী মেয়র-চেয়ারম্যান ডিসি-পুলিশ প্রশাসন সরকারি দলের নেতাদের লাল চোখ দেখতে হয়। বিগত দশ বছরে মেহেরপুরের মন্ত্রী দদুলের নির্লজ্জ প্রভাবকে উপেক্ষা করে মেহেরপুর প্রতিদিন যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে তা পত্রিকার পাঠক ও সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। সম্পাদক ইয়াদুল মোমিনের নেতৃত্বে গঠিত সম্পাদকীয় বোর্ড সকল প্রকার অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। সক্ষমতার আরেকটি অন্যতম কারণ পত্রিকার প্রকাশক এম.এ.এস ইমন যিনি স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রশ্নে সম্পাদকীয় নীতিতে কোনপ্রকার হস্তক্ষেপ করেননি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে প্রতিষ্ঠান যেমন মামলার আসামী হয়েছে ঠিক তেমনি সেই মামলায় বিজয়ী হয়ে মেহেরপুর আদালতে বাদীর বিরুদ্ধে মানহানীর মানিস্যুট মামলা করেছে কর্তৃপক্ষ। যা এখনো চলমান আছে। আরেকটি সংবাদকে কেন্দ্র করে বাদী হিসেবে খুলনা সাইবার সিকিউরিটি ট্রাইব্যুনালে সাতজনকে আসামী করে মামলা চলমান। ঢাকা সিএমএম আদালত গতবছর আরেকটি মামলা ডিসচার্জ করে দিলে মেহেরপুর প্রতিদিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ঐ মামলার বাদীর বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা ও হয়রানি করার জন্য মেহেরপুর আদালতে মানহানী মানিসুটের আরেকটি মামলা দায়ের করেন। সেটিও চলমান আছে। এভাবেই মামলা, হুমকি-ধামকি মোকাবিলা করে দিন-মাস-বছর পাড়ি দিয়ে মেহেরপুর প্রতিদিনের অষ্টম বর্ষে পদার্পণ।

মেহেরপুর প্রতিদিনে কিছু উল্লেখযোগ্য আলোচিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তারমধ্যে অনলাইন জুয়া, মাদক, প্রতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তির দুর্নীতি, হোটেল আটলান্টিকা কাণ্ড অন্যতম। এছাড়া করোনা মহামারীর সময় বিশেষ বুলেটিন অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নিয়মিত ডাক্তারদের নিয়ে টক-শো করাসহ পত্রিকার পক্ষ থেকে পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস, সেনিটাইজার এবং মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

মেহেরপুর প্রতিদিন ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৩ আয়োজনটি ছিল বেশ জমজমাট। সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা চিন্তা করে যুবকদেও খেলার মাঠে ফিরে আসার আহবান জানানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার সাথে সাথেই উদ্দেশ্য পূরণ হলো। গাংনী মুজিবনগর এবং সদরে বিভিন্ন ইউনিয়ন ভিত্তিক টুর্নামেন্ট শুরু হয়ে গেল। কোনো উদ্যোগ যখন সফল হয় সেখানে ভাললাগাও থাকে অনেক। একটি কথা এখানে বলতেই হয়, মেহেরপুর প্রতিদিন ফুটবল টুর্নামেন্টটি আয়োজনে বড় বাধা ছিলো মন্ত্রী দোদুল। তৎকালীন ডিসি আজিজুল ইসলামকে খেলার অনুমতি নিতে নিষেধ করেছিলেন তিনি। কিন্ত তার কথা উপেক্ষা করে অনুমতি দিয়েছিলেন ডিসি আজিজুল ইসলাম। এছাড়াও পত্রিকার নানা উদ্যোগের বিপরীতে অবস্থান ছিলো দোদুলের। ছায়া’কেও ভয় পাওয়ার মতো সবকিছুতে না বলা স্বভাব ছিল তার। ৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের তীর্থভূমি খ্যাত মুজিবনগরকে উপলক্ষ করে এই জনপদে যে উন্নয়ন হওয়া উচিত ছিল তার কিছুই না করে অবৈধভাবে নিজের এবং পরিবারের অর্থনৈনিক উন্নতি নিয়েই ব্যস্ত ছিল। (বিষয়টি এই লেখার সাথে অপ্রাসঙ্গিক হওয়া সত্বেও লিখতে বাধ্য হলাম,,, দুঃখ প্রকাশ করছি)

মেহেরপুর প্রতিদিনের নিজস্ব একটি কার্যালয় আছে, শহরের মল্লিকপাড়ায় অবস্থিত। প্রায় দুই হাজার স্কয়ার ফিটের অফিসটিতে আছে সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দুটি কক্ষ, সাউণ্ড প্রুফ ডিজিটাল স্টুডিও, সার্কুলেশন ও নিউজ ডেস্কসহ অতিথিদের বসবার জায়গা।
পত্রিকাটির সাথে বর্তমানে যারা কাজ করছেন – অফিসে ডেস্ক ইনচার্জ সাকিব হাসান রুদ্র, নিউজ ডেস্ক পলাশ আহমেদ, তুহিন খান, ডিজাইনার লিমন হোসেন ও রাফি হাসান, অফিস সহকারী আহসান। সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন – গাংনী উপজেলায় আকতারুজ্জামান আকতার, জুলফিকার আলি কানন, কামরুল ইসলাম। মুজিবনগরে মুস্তাফিজুর রহমান শের খান ও সানোয়ার হোসেন ডালিম। আমঝুপিতে শহিদুল ইসলাম, বারাদিতে সাইফুল ইসলাম বাবু, ঝিনাইদহে- শাহানুর আলম, তাপস কুন্ড এবং অরিত্র কুন্ড। চুয়াডাঙ্গায়- সাকিব দর্শনায় মামুন ও ফরহাদ হোসেন দামুড়হুদায় রকিবুল হাসান কোটচাঁদপুরে মঈন। জীবননগরে এটিএম মাজেদুল ইসলাম মিল্টন, দামুড়হুদায় রাকিবুল হোসেন তোতা, কুষ্টিয়ায় জামাল উদ্দিন। বিগত বছরগুলোতে আরও ৩০/৩৫ জন সাংবাদিক বিভিন্ন সময়ে পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন।

আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়ে থাকে। সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক অধিকার অর্জন ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন এক সাংবাদিককে বলেছিলেন, তাকে যদি ‘সংবাদপত্রবিহীন সরকার’ এবং ‘সরাকারবিহীন সংবাদপত্র’ এ দুটোর মধ্যে একটা বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে তিনি সরকারবিহীন সংবাদপত্রকেই বেছে নেবেন।”

সংবাদপত্র নিয়ে এমন ভাবনার বিপরীতে আমাদের দেশে অনেক মালিককে দেখা যায় কালো টাকাকে সাদা করার জন্য পত্রিকাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আবার অনেক সৃজনশীল সৎ মানুষ আছেন যারা একটি পত্রিকা বের করতে ভয় পান। কালোটাকার দৌরাত্ম্যের অসম যুদ্ধে তারা হেরে যাবেন এই ভেবে এক পা আগালেও দশ পা পিছিয়ে আসেন। সংবাদপত্রের সাথে ক্ষমতাবানদের স্বার্থের দন্দ মোকাবিলা করতে হলে দরকার প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের পক্ষে থাকা। সাধারণ জনমতের কাছে যেকোনো অপশক্তি পরাস্ত হতে বাধ্য। মেহেরপুর প্রতিদিন এই শক্তিকেই ধারণ এবং সকল প্রতিকুলতাকে জয় করে জনগণের স্বার্থে চলতে থাক অবিরাম অবিরত, এটাই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রত্যাশা।

লেখক: ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মেহেরপুর প্রতিদিন




মুজিবনগরে বৃদ্ধাসহ তিন নারীকে পিটিয়ে জখমের অভিযোগ

মুজিবনগরের মহাজনপুর গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে বৃদ্ধাসহ তিন নারীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন রাহিদুল ইসলামের দুই বোন জহুরা ও ফাহিমা এবং তাদের বৃদ্ধা মা সাবিরুন নেছা। রাহিদুল ইসলাম একজন ঘোড়ার গাড়ি চালক। তিনি বিয়ে করেছেন একই গ্রামের ওমর আলীর মেয়েকে। পারিবারিক কলহের জেরে চার দিন আগে তার স্ত্রী বাপের বাড়িতে চলে যান এবং সঙ্গে করে ছাগল, আসবাবপত্রসহ গৃহস্থালির অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যান।

রাহিদুল জানান, পারিবারিক এই জটিলতা মীমাংসার উদ্দেশ্যে তার দুই বোন জহুরা ও ফাহিমা তার বাড়িতে আসেন। একপর্যায়ে শ্বশুর ওমর আলীর সঙ্গে কথাবার্তার সময় জহুরা তার ভ্যানগাড়িতে আঘাত পান। এরপর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।

অভিযোগ উঠেছে, মহাজনপুর গ্রামের ফতুর ছেলে খোকা ও তার সহযোগীরা এই আক্রমণ চালায়। এ সময় জহুরা, ফাহিমা এবং তাদের বৃদ্ধা মা সাবিরুন কেউই রেহাই পাননি। জহুরার অভিযোগ, রড, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের আঘাত করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বিকেল ৪টার দিকে, তবে আহতরা চিকিৎসার জন্য মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছান সন্ধ্যা ৭টায়। দেরির কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, খোকা ও তার লোকজন দিনের আলোতে তাদের বাইরে যেতে বাধা দেন।

রাহিদুল জানান, খোকা তার ফুফাতো ভাই এবং তাদের বসবাসের জমি রাহিদুলের বাবার দানকৃত। তাকে সেই জমি থেকে উচ্ছেদ করতেই এই হামলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে তার দাবি।

সাবিরুন নেছাকে অক্সিজেন দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক।

এ বিষয়ে মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।




মেহেরপুরের সাহিত্য ও সাংবাদিকতা পথিকৃৎ রামগোপাল -তারিক-উল ইসলাম

মেহেরপুরের সাহিত্য ও সাংবাদিকতার প্রসঙ্গ আসলে অবধারিতভাবে আসে দীনেন্দ্রকুমার রায় (১৮৬৯-১৯৪৩) ও যতীন্দ্রমোহন বাগচী ( ১৮৭৮-১৯৪৮)-এর নাম। সমসাময়িকদের নিয়ে আলোচনায় অলক্ষে থেকে যায় আরও কয়েকটি নাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রামগোপাল সান্যাল ( ১৮৫০ – ১৯২১)। তিনি একাধারে লেখক, সাংবাদিক ও শিক্ষক ছিলেন। শহর মেহেরপুর তাঁর জন্মস্থান, কৃষ্ণনগর ও কলকাতা ছিল তাঁর কর্মকেন্দ্র। মেহেরপুরের গদ্য সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ইতিহাসে তাঁকে বলা যায় পথিকৃৎ।

দীনেন্দ্রকুমার ও যতীন্দ্রমোহনের পাশাপাশি মেহেরপুর শহরে জন্মগ্রহণকারী লেখক ও বৈষ্ণব সাহিত্যের বিশেষজ্ঞ জগদীশ্বর গুপ্ত (১৮৪৬-১৮৯২), পদাবলী সংগ্রাহক, লেখক ও মাসিক ‘জ্যোৎস্না’ পত্রিকার সম্পাদক রমণীমোহন মল্লিক (১৮৬৬-১৯০৫), রাধাকা›তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী নলীনীকান্ত চট্টোপাধ্যয়-স্বামী নিগমানন্দ (১৮৮০-১৯৩৫), গাঁড়াডোবে জন্মগ্রহণকারী মুন্সী শেখ জমিরুদ্দিন (১৮৭০- ১৯৩৭), এমনকি মেহেরপুর শহরের জমিদার, লেখক দীননাথ মুখোপাধ্যায় নাম উচ্চারিত হলেও রামগোপাল থেকে গেছেন আলোচনার বাইরে। মেহেরপুরের বাড়িবাঁকায় জন্মগ্রহণকারী কবি কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী ( ১৭৯১- ১৮৪৫)-কে নিয়ে আলোচনা হয়। মেহেরপুর শহরে বসবাসকারী কবি কৃষ্ণহরি দাস ( আঠারো শতক)-কেও আনা যায় আলোচনার পাদপিঠে। দীননাথ মুখোপাধ্যায় ( উনিশ শতক)-এর বই বই ‘জমীদারী বিজ্ঞান’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৮৬৬ সালে হুগলীর বুধোদয় প্রেস থেকে। কিন্তু তিনিই যে মেহেরপুরের লেখক ও প্রভাবশালী জমিদার দীননাথ মুখোপাধ্যায়, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। মেহেরপুর শহরে জন্মগ্রহণকারী লেখক-সাংবাদিক দীনেন্দ্রকুমার রায় ছিলেন বসুমতি পত্রিকার সম্পাদক এবং করিমপুরের জামশেদপুরে জন্মগ্রহণকারী কবি-সাংবাদিক যতীন্দ্রমোহন বাগচী ছিলেন মানসী পত্রিকার সম্পাদক। মেহেরপুর শহরের বলরাম হাড়ি ( ১৮২৫-১৮৯০) সম্প্রদায়ের গানও থাকে আলোচনায়।

লেখক- সাংবাদিক রামগোপাল সান্যালের বিষয়ে জানা যায় অলক রায় সম্পাদিত রামগোপাল সান্যালের দুই খণ্ডে সম্পূর্ণ ‘রেমিনিসেন্স অ্যান্ড অ্যানিকডট অব আ গ্রেট ম্যান অব ইন্ডিয়া’ (১৮৯৪, ১৮৯৫)-এর সম্পাদকীয় ভ’মিকা থেকে। এতে রামগোপালের লেখক জীবনী তুলে ধরা দেয়া হয়েছে। গৌরাঙ্গগোপাল সেনগুপ্তের ‘সাংবাদিক- কেশরী হরিশচন্দ্র’ (১৯৬০) গ্রন্থে সেই তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, রামগোপাল সান্যালের জন্ম মেহেরপুর। ১৮৫০ সালের কয়েক বছর আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ঈশ্বরচন্দ্র সান্যাল। তাঁরা বাস করতেন নদীয়ার জেলা সদর কৃষ্ণনগরের গোয়াড়ি অঞ্চলে। কৃষ্ণনগরেই তাঁর লেখাপড়া। সেখান থেকেই এন্ট্রান্স ও এফ এ পাশ করেন। বিয়েও করেন কৃষ্ণনগরে। প্রখ্যাত রামতনু লাহিড়ীর ভাই শ্রীপদ লাহিড়ীর কন্যা মনমোহিনী দেবী তাঁর প্রথম স্ত্রী। মনমোহিনীর অকাল মৃত্যু হয়। এরপর রামগোপাল রাজুবালা দেবীকে বিয়ে করেন। তিনিও কিছুদিন পর মারা যান।

এরপর আর বিয়ে করেননি। সম্ভবত তাঁদের কোনো সন্তানও ছিল না। লেখাপড়া শেষে রামগোপাল স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে পেশাজীবন শুরু করেন। সেই সাথে মফস্বল সাংবাদিকতা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি কৃষ্ণনগরের এ ভি হাই ইংলিশ স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। বিখ্যাত কবি ও নাট্যকার দিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর ছাত্র ছিলেন। এ ভি হাই ইংলিশ স্কুলের পর তিনি চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মোমজোয়ানি স্কুলে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। শেষে উড়িষ্যার সম্বলপুর হাই স্কুলে যোগ দিয়ে শিক্ষকতাজীবন শেষ করেন। যৌবনে কৃষ্ণনগরে অবস্থানকালে তিনি কলকাতা থেকে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদপত্রে মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ১৮৮৩ সালের ৪মে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর অবিচারের প্রতিবাদে কৃষ্ণনগর শহরে তিনিই প্রথম প্রকাশ্য জনসভার আয়োজন করেছিলেন। বৃত্তি পরিবর্তনের অল্প দিনের মধ্যেই ১৮৯০ সাল বা তার কিছু আগে কলকাতার তালতলা অঞ্চলে একটি বাড়ি কিনে স্থায়ীভাবে কলকাতায় বসবাস এবং সেই সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সাংবাদিকতার বৃত্তি অবলম্বন করেন। প্রথম কয়েকবছর তিনি বেঙ্গলি পত্রিকার কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। তারপর ‘ইন্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক পদে যোগদান করেন। এই পত্রিকার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল এক দশক বা তারও বেশি। ১৯২১ সালে রামগোপাল সান্যাল মারা যান।

বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা রামগোপাল সান্যালের ছয়টি বইয়ের বিষয়ে খোঁজ পাওয়া যায়। এগুলো হলো- বাংলায় : ১. হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের জীবনী ( ১৮৮৭), ২. বাবু কৃষ্ণদাস পালের জীবনী ( ১৮৯০)। ইংরেজিতে:১. দ্য লাইফ অব দ্য অনারেবল ক্রিস্টোদাস পাল বাহাদুর সি.আই.ই (১৮৮৬), ২. হিস্টোরি অব দ্য সেলিব্রেটেড ক্রিমিনাল কেসেস অ্যান্ড রিজল্যুশন্স রেকর্ডেড দেয়ার অন বাই বোথ প্রভিন্সিয়াল সুপ্রিম গভর্নমেন্টস (১৮৮৮), ৩. আ জেনারেল বায়োগ্রাফি অব বেঙ্গল সেলিব্রেটিস বোথ লিভিং অ্যান্ড ডেড (১৮৮৮) ও ৪. রেমিনিসেন্স অ্যান্ড অ্যানিকডট অব আ গ্রেট ম্যান অব ইন্ডিয়া ( দুই খণ্ড Ñ ১৮৯৪, ১৮৯৫)। এসবই প্রধানত জীবনীগ্রন্থ।

এর মধ্যে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের জীবনী নিয়ে বাংলায় প্রথম লেখা কোনো বই। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮২৪-১৮৬১) ছিলেন ‘হিন্দু প্যাটিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি নীলকরদের অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে বলা হয় ভারতীয় সাংবাদিকতার জনক।

লেখক: কবি ও সিনিয়র সাংবাদিক, ঢাকা।




তারুণ্যের ভাবনায় নতুন বাংলাদেশ -ড. গাজী রহমান

পৃথিবীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচী কোনদিনই সুন্দরভাবে প্রবাহিত হয়নি। জিউসের অত্যচার থেকে মানব জাতিকে বাঁচাতে এবং আলোর পথে নিয়ে যেতে আবির্ভাব হয়েছে প্রমিথিউসের। সুদীর্ঘ কাল ভারতবর্ষের মানুষকে অত্যচার, শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। সুদীর্ঘ সময়ের ত্যাগ-সংযম ও সংগ্রাম কষ্টের মধ্য দিয়েই ব্রিটিশদের নিকট হতে মুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে। পাকিস্তানের মানুষ ব্রিটিশ মুক্ত হয়ে স্বপ্ন দেখেছিল মুক্ত-স্বাধীন জীবনের স্বপ্নে। কিন্তু পাকিস্তানিদের অত্যাচার, শাসন-শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানিদের এবং এই বৈষম্যের দীর্ঘ ২৩ বছরের অত্যাচার-বৈষম্য থেকে মুক্ত হতেই সংগ্রাম এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ প্রাণের জীবন দানের বিনিময়ে কেনা স্বাধীনতা। মানুষের যথার্থ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি এনে দিতে পারেনি। দীর্ঘ ৫৩ বছরের বিভিন্ন গোষ্ঠি ও রাজনৈতিক দলের ইস্তেহারে মানুষের মুক্তি বৃত্তাবদ্ধ হয়ে থেকেছে। মুক্তি সংগ্রামের প্রতীক ও দল হিসাবে আওয়ামীলীগ শেষের ১৫ টি বছর এই দেশের মানুষ শোষণ, শাসন ও ত্রাশসন বৈষম্যের মধ্যে ঘুরপাক খাইয়েছে। ঘুষ, গুম, খুন, দুর্নীতি, গণতন্ত্রের নামে এক দলীয় শাসন কায়েম করেছে। মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচার করে দেশকে কপদর্কহীন করেছে। ভোটবিহীন রাজনীতি ও কালচার সৃষ্টি করে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সৃষ্টি করেছে এক অসম বৈষম্য। বৈষম্যের স্বীকার এদেশের সাধারণ মানুষ ও প্রলাতারিয়েত মানুষ।

বৈষম্য আসলে কি?
বৈষম্যের অর্থ ব্যাপক-সূদুর বিস্তৃত। জাতীয় জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রেই বৈষম্য হতে পারে। বিগত দিনগুলিতে- ভোট বিহীন রাজনৈতিক দলগুলির যে অনাচার, অত্যাচারসর্বত্র সর্বক্ষেত্রে যে বৈষম্য-তা সামাজিক জীবন ব্যবস্থাপকে বিপর্যস্ত ও বিষিয়ে তুলেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাহিত্য-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, কারিগরী ও প্রযুক্তির সর্বক্ষেত্রেই বৈষম্য ও শোষণের পরাকাষ্ঠা তৈরি করেছে। এই বৈষম্যের হাত হতে বাঁচানোর জন্যই ছাত্রদের জুলাই বিপ্লব ২০২৪। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন-অসমতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, সংগ্রাম, শত শত হাজার হাজার মানুষের জীবন বিসর্জন বলিদান। নির্ভীক অকুতোভয় আন্দোলন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে রূপায়িত হয়। ৩৬ জুলাই (১৬ জুলাই) রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদ আবু সাঈদের মর্মান্তিক ও বর্বরোচিত মৃত্যু এদেশের ছাত্র-জনতা আবাল বৃদ্ধ বণিতার হৃদয়ে কাঁপন ধরাতে সক্ষম হয়। প্রতিটি মানুষ এর প্রতিবাদ করে এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন আরো বেগবান হয়। মানুষ একই ঐক্যে একই ঐক্যতানে সমর্থন জোগায়। আন্দোলনের গতির মাত্রা আরো বহুগুন বেড়ে যায়। মুক্তির স্বপ্নে লাখো লাখো মানুষ একসাথে রাস্তায় নেমে এসেছে। নতুন এক দুর্ণিবার তৃষ্ণায় রাজপথে তারা লিখেছিল কবিতা স্বপ্নের আবেগ দিয়ে বিপ্লবী অক্ষরে।

পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পনেরো বছরের বেশী শাসন আমলে শুধু কঠোর অত্যাচারীই হয়ে উঠেননি, হয়ে উঠেছিলেন নিমর্ম এক নিপীড়ক। সীমাহীন নিষ্ঠুরতার সংগে তিনি দমন করেছিলেন সব রাজনৈতিক দলকে। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে পদানত করেছিলেন। নিবর্তনমূলক আইনে ও আইন বহির্ভূত পথে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করেছিলেন। শেখ হাসিনার নিষ্ঠুরতম রূপটি দেখা গিয়েছিল এই আন্দোলনের সময়েই। তার রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী এবং কয়েকটি বাহিনীকে দিয়ে এই রাষ্ট্রের নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যাপক এক হত্যাকান্ডে তিনি লিপ্ত করেন। এই হত্যাকান্ডের প্রয়োজন ছিল অকল্পনীয়। ঠিক যেন শত্রু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক রাষ্ট্রের যুদ্ধ। রাষ্ট্র আর সরকারকে শেখ হাসিনা তার দলের পকেটে রুমালের মতো গুজে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা অসম্ভব সাহস দেখিয়ে বেঁকে বসল। তারা শুরু করেছিল সরকারি চাকরিতে অযৌক্তিক কোঠা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। কিন্তু শেখ হাসিনার হঠকারিতায় ছোট একটি গোষ্ঠীর দাবীকে জনতার আন্দোলনে রূপান্তর হওয়ার পেক্ষাপট তৈরি করে। ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বুদ্ধিদীপ্ত, কুশলী কর্মসূচি দিয়ে নানা শ্রেণী পেশার গোষ্ঠী বয়সের জনতাকে তাদের সঙ্গে একাত্মা করতে সক্ষম হয়। সবাই নির্ভয়ে বুক পেতে দাঁড়ায় সরকারের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞের সামনে। জনতা যখন একটি একাট্টা রাজনৈতিক সত্বা হয়ে সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে, কার সাধ্য তাকে ঠেকাই, বাকীটাতো ইতিহাস।

১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ এবং সবশেষে ২০২৪ সালেই এখানে দ্রষ্টব্য। এসব ইতিহাস মুহুর্তে ব্যক্তির বদলে জনতাই কর্তা শক্তি বাংলাদেশের প্রতিটি উজ্জলতম ইতিহাস পর্বে জনতা জেগে উঠেছে। তার চেয়েও বড় কথা, জনতার আন্দোলন রাষ্ট্র, সমাজ বা বৃহত্তর ব্যবস্থাকে আমুল পাল্টে দিয়েছে। আর এসব প্রথম স্ফুরণ হয় সব সময় ছাত্রদের মধ্যে আমরা দেখতে পাই। তারা হয়ে উঠেছে আন্দোলনগুলোর প্রথম চালক। ছাত্রদের হাত ধরে জনতা জেগে উঠেছে। আর তাতে পাল্টে গেছে ইতিহাস। অথচ সেসব ঘটনা নিয়ে আমরা নিছক স্মৃতি কথা ও সাধারণ ইতিহাসই লিখেছি। বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাস এবং পাল্টে যাওয়া বর্তমানের সঙ্গে মিলিয়ে সেসব ইতিহাস পর্বে ভাববস্তুর পর্যালোচনা বলতে গেলে কখনোই করিনি। আমাদের ইতিহাসের ভাববস্তু তাই বারবার হয়েছে।

প্রশ্ন হলো ছাত্ররাই কেন রাষ্ট্রের প্রবল মুহুর্তে ঘটনার কেন্দ্র হয়ে উঠে?
পৃথিবী চলিষ্ণু। প্রবীণেরা যে পৃথিবীতে বেড়ে ওঠেন, পৃথিবীর তার থেকেও এগিয়ে যেতে থাকে। জীবনের যে নতুন সম্পর্ক আর চাহিদা জেগে উঠতে থাকে, তরুণেরাই সে স্পন্দন অনুভব করে সবার আগে, পুরোনো ব্যবস্থাকে না ভেঙ্গে ফেললে সেই নতুনকে পাওয়া অসম্ভব। প্রবীণেরা পৃথিবীতে অভ্যস্ত; স্থির জীবনের প্রত্যাশী। তরুণেরা পিছুটানহীন, বেপরোয়া নিজেদের জন্য নতুন পৃথিবীকে পাওয়ার তৃষ্ণায় দুঃসাহসী। পদে পদে নিষেধের বাধা, তার উদ্দেশ্যে বলতে পারে ‘নিষেধাজ্ঞায় এখন নিষিদ্ধ’। যে আবেগে ছাত্ররা এমন কথা বলেছিল প্যারিসের আন্দোলনে।

ছাত্র-জনতার সম্পর্কও চমকপ্রদ। যে কোন ছাত্রই মা বাবার ভবিষ্যত প্রত্যাশার মূর্ত প্রতীক। মা-বাবা ও তার সন্তানের সম্পর্ক বিশুদ্ধ আবেগ আর স্বপ্নের। ছাত্র ও জনতার সম্পর্ক তারই এক বিশুদ্ধ আবেগ আর স্বপ্নের। ছাত্র আর জনতার সম্পর্ক তারই এক প্রসারিত চিত্র মাত্র। কোনো ন্যায্য দাবীতে তরুণ ছাত্ররা ঝাঁপিয়ে পড়লে তার প্রতি জনতার সস্নেহ সমর্থন দেখা যায়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আমরা যেমনটি দেখেছি।

স্বাধীনতার আগে পরে এই ছাত্রদের ভাবাদর্শ ও বিন্যাসের পরিবর্তনও দেখার মতো। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সাধারণভাবে সব ধরণের ছাত্র-ছাত্রীরাই অংশ নিয়েছিল। তবে বাম সমাজতান্ত্রিক ধারার ছাত্ররাই প্রত্যক্ষ-প্রচ্ছন্ন নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিল। স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন বা ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিল বাম গণতান্ত্রিক ধারার ছাত্ররাই। তারা সম্পৃক্তও করতে পেরেছিল জনতাকে। ১৯৯০ সালে জেনারেল এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসকের পতনের আন্দোলনে সরাসরি দেখা গেলো মূল ধারার রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোকে।

এবারের চিত্র একেবারেই আলাদা। এবারে মূলধারার ছাত্র সংগঠন সেখানে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফুর্ত। সংস্কৃতি যজ্ঞেলিপ্ত রাজনীতির অভিলাষী একদল ছাত্র এ আন্দোলনে নেপথ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাদের সফলতার পেছনে নানা কারণ ছিল। তাদের ভাষা তরুণদের আকর্ষণ করেছে। বয়ান নানা স্তর ও গোষ্ঠীর মানুষকে যুক্ত করেছে। কৌশল রাষ্ট্রের শক্তির ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

যে কোন অভ্যুত্থানে দুটি পর্ব থাকে। একটি পতনের, আরেকটি পত্তনের। প্রথমটি পুরোনোর বিদায়, পরেরটি নতুনের অভ্যুদয়। প্রথমটাই অসম্ভব কঠিন। দ্বিতীয়টি আরও কঠিন। নতুনের অভ্যুদয় কিভাবে কতটা হবে কিংবা আদৌ হবে কিনা, সেটা নির্ভর করবে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসাবে যে জনতার আবির্ভাব ঘটল, ভবিষ্যতে তা কেমন পরিপক্কতা দেখায় তার ওপর। তবে পত্তন বা গড়ে তোলার পর্বটি যে দিকেই গড়িয়ে যাক না কেন, ২০২৪ সালের এই আন্দোলন পত্তনের পর্বটি যেভাবে সফল হলো তা নিঃসন্দেহে ইতিহাসের অংশ হয়ে পড়েছে।

এরই মধ্যে অন্তবর্তী সরকার গঠিত হয়েছে এবং সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। গভীর আনন্দের কথা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস অন্তবর্তী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ড. ইউনুস আজ বিশ্বব্যাপি নন্দিত। নোবেল কমিটি তাকে শান্তি পুরস্কার প্রদানের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপি শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নের ধারায় তার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধাবনত সম্মান দেখিয়েছে। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে দেশের একজন নাগরিক হিসাবে অহংকার বোধ করি।

একটি স্থিতিশীল শৃংখলাপূর্ণ সরকার ব্যবস্থা এ মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বিলুপ্ত গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনা সময় সাপেক্ষ হলেও অভ্যন্তরীন শান্তি শৃংখলাকে এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরিচালনা করতে হবে। স্বৈরাচার পতনের অব্যাবহিত পরই এমন কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা দেখেছি, যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই আশা করি সরকারের স্বাভাবিক প্রশাসনিক তৎপরতা নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
অনতি বিলম্বে আইন শৃংখলা পুনঃ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় জীবনের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। জুলাই-আগস্টে সংঘঠিত সব হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। আধিপত্যবাদী শক্তি এই ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে হীন চক্রান্তে মেতে উঠেছে। সম্প্রসারণবাদ বারবার আমাদের মাতৃভূমিকে গ্রাস করতে চাচ্ছে। সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই হীন চক্রান্তকে নস্যাৎ করতে হবে। এর জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়াকে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

গণতন্ত্রহীনতার অথর্ব উলঙ্গ চর্চা ঘটেছে সমাজে ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সুস্থ বিকাশ না ঘটলে এই গণ-বিপ্লবের সাফল্য অর্জিত হবে না। সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করতে হবে। বর্ণিত দায়িত্বগুলো সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন স্বদিচ্ছা, পরিকল্পনা ও আন্তরিকতা।

জুলাই বিপ্লব ২০২৪ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে যে নব ধারার রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয়েছে তাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। মানুষের মূল্যায়ন করতে হবে। যে আশা ও ত্যাগ নিয়ে মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল তার বাস্তবায়ন হলেই নতুন বাংলাদেশের মানুষের সম্মান বাড়বে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে পুনঃ জাগরণ ঘটবে। ত্যাগ, স্থিতি, শান্তি, সাম্য ও সমতার ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। নতুন প্রজন্মের ইচ্ছাও সেটাই। দেশ জাতি সেই মহান ব্রত-মহান বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছে।

নতুন প্রজন্মকে অভিবাদন জানিয়ে বক্তব্য শেষ করছি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায়

“আয়রে নতুন আয় – সংগে করে নিয়ে আয়
তোর সুখ তোর হাসি গান
ফোটা নব ফুলচয় – ওঠা নব কিশলয়
নবীন বসন্ত আয় নিয়ে।”

জেগে থাকো নবীন – জেগে থাকো তরুণ
তোমাদের হাতেই হবে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ, কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক




ঝিনাইদহে করনীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা

ঝিনাইদহে বিশেষ বিদ্যালয়সমূহের স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির দাবিতে করনীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে শহরের তামান্না পার্কের মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদ।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি ইলিয়াস রাজ। প্রধান বক্তা ছিলেন মুখ্য সমন্বয়ক গাউছুল আজম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিমা খাতুন, সাংগঠনিক সম্পাদক আকুল শেখ।

সভায় বক্তারা বলেন, “দেশের হাজারো প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরকে শিক্ষার মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হলে বিশেষ বিদ্যালয়গুলোর সরকারিভাবে স্বীকৃতি এবং এমপিওভুক্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”

তারা আরও বলেন, শিক্ষকদের ন্যায্য সম্মানী, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এসব বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে। আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে তাদের দাবী মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তারা।

সভায় ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।