মেহেরপুরে উন্নয়নের ওয়াকওয়ে; ভৈরব পাড়ে চাপা কান্না

মেহেরপুর ভৈরব নদ পুন:খনন ২য় পর্যায়ের প্রকল্পের আওতায় ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত জমির মালিকদের চাপাকান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সৌন্দর্য বর্ধণের লক্ষে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সহগলপুর থেকে সদর উপজেলা হয়ে মুজিবনগরের কিছু অংশ পর্যন্তÍ ভৈরব নদের দুই পাশে ১৬.৮ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যে কাজটি পেয়েছে কুষ্টিয়ার সৈকত এন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজটি দেখভাল করছেন মেহেরপুরের আর আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাহিনুরজামান পোলেনসহ চারজনের একটি গ্রুপ।

গতকাল সোমবার ভৈরব নদের ওয়াকওয়ের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা নিয়ে নদের তীরবর্তি মানুষের চাপা কান্না। না পারছে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে, না পারছে জমি হারানোর ব্যথা সইতে। যাদবপুর গ্রামের প্রায় ২০ থেকে ২৫ জনের মালিকানা জমি ওয়াকওয়ের জন্য হারাতে হচ্ছে। তারা কোথাও কোন সদুত্তর পাচ্ছেন না।

অপরদিকে, ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে দেখা গেছে, গাথুনিতে লোকাল বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। যা ফিলিংয়ের কাজে ব্যবহার করার কথা। ১:৪ অনুপাতে সিমেন্ট ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও স্থানীয়রা জানান, ১:১০ ভাগেও সিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে না। ফলে নির্মাণকাজ স্থায়ী হবে না বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গাংনী উপজেলার সহগলপুর থেকে সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া পর্যন্ত যে অংশে ওয়াকওয়ে করা হয়েছে তানিয়েও স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। ওয়াকওয়ে কোন লেভেল করা হয়নি। উন্নয়নের নামে শুধু সরকারের টাকা নষ্ট হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের ভয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। বলেও কিছু হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

যাদবপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, তিনি ২০১৩ সালে ১৮ কাঠা জমি কিনেছেন। যা সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত আছে। ওই জমিতে বিভিন্ন ফলের বাগান ছিলো। ওয়াকওয়ে করার জন্য আমার বাগান কেটে জমি নিয়ে নেওয়া হয়েছে। জমি নেওয়ার আগে কোন ধরণের নোটিশও দেওয়া হয়নি। কিছু বলতে গেলে পোলেন মাস্তান বাজে ভাষায় গালিগালাজ করে এবং হুমকি দেয়।

একই গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, তার ১একর ১৩ শতকসহ ৭ ভাইয়ের ৩ একর ৩২ শতক জমি ওয়াকওয়ের জন্য নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওয়াকওয়ের কাজ শুরুর আগে জেলা প্রশাসকের কাছে কাজ বন্ধ রাখার জন্য আবেদন করেও কোন ফল পাননি বলে অভিযোগ করেন।
তিনি আরো বলেন, ভৈরবের উপর দিয়ে রাস্তা করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কাজ করার আগে জরিপ করলো না কেন। পরে একদিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, ইউএনও, এসি ল্যাণ্ড এসে ঠিকাদারদের বললেন ওয়াকওয়েটা একটু নিচ দিয়ে করতে, কিন্তু ঠিকাদাররা কথা না শুনে উপরদিয়ে করে আমাদের জমি দখল করে নিয়েছে। কিছু বলতে গেলে ঠিকাদার পোলেনসহ তার লোকজন তেড়ে তেড়ে মারতে আসে।

মেহেরপুরে উন্নয়নের ওয়াকওয়ে; ভৈরব পাড়ে চাপা কান্নামেহেরপুর শহরে ঘাটপাড়ার রাফিউল ইসলাম বলেন, তাদের সাড়ে তিন বিঘা জমির মধ্যে প্রায় এক বিঘা জমি ওয়াকওয়ের জন্য নিয়ে নেওয়া হয়েছে। পৌর এলাকার জমি অনেক টাকা দিয়ে আমাদের বাপ-দাদারা কিনেছেন। এখন সেই জমি উন্নয়নের নামে ওয়াকওয়ের জন্য দিয়ে দিতে হচ্ছে। এভাবে অনেকের জমি এতে চলে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থরা পৌর মেয়রের কাছে আবেদন করলে মেয়রের হস্তক্ষেপে শহরের অংশে কাজ বন্ধ রয়েছে।

গাংনী উপজেলার সহগলপুর গ্রামের নাসিম আহমেদ বলেন, ওয়াকওয়ে খুব বাজেভাবে কাজ করা হয়েছে। রাস্তার কোন লেভেল করা হয়নি। ফলে খুব দ্রুত ওই রাস্তা নষ্ট হয়ে যাবে। উন্নয়নের নামে সরকারের টাকা নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই হয়নি।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন ওয়াকওয়ের কোন কাজ চলছে বলে স্বীকার করতে চাচ্ছিলেন না। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের কথা বললে তিনি জানান, মামনু, পোলেনসহ কয়েকজন দেখা শুনা করছেন। অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনে কথা না সরাসরি দেখা করে কথা জানাবেন বলে জানান।

মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান প্রধান বলেন, পানি আইন ২০১৩ অনুযায়ী নদের কিনারা থেকে ১০ মিটার (৩৩ ফুট) পর্যন্ত জমি নদের অর্থাৎ খাস খতিয়ান হয়ে যাবে। ওই জমি অন্য যে কারো নামে, এমনি যে কোন রেকর্ড থাকলেও সেটি নদী বা নদের মালিকানায় আসবে। তবে ভৈরব নদের পাড়ে যেগুলো এমন আছে সেগুলো এতদিনে সংশোধন হওয়া দরকার ছিলো।

ওয়াকওয়ে নির্মানের বিষয়ে তিনি বলেন, সিডিউল অনুযায়ী যে মানের নির্মাণসামগ্রী এবং যেভাবে নির্মান করার কথা বলা হয়েছে সেভাবেই কাজ দেখে নেওয়া হবে। এর ব্যত্যয় মেনে নেওয়া হবে না।




মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের প্রেস ব্রিফিং

মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পে গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন, সম্প্রীতি অনুষ্ঠিত আমদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন, মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি, আসন্ন রমজান উপলক্ষে বাজার স্থিতিশীল রাখা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়।

সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়।

ডিসি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষনার অংশ হিসেবে মেহেরপুর জেলায় সর্বমোট ১১৭টি গৃহ ( মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৬১টি , গাংনী উপজেলায় ৪৭টি ও মুজিবনগর উপজেলায় ৯টি ) হস্তান্তর করা হচ্ছে। ৪টি পর্যায়ে মেহেরপুর জেলায় এখনও পর্যন্ত নির্মিত গৃহের সংখ্যা সর্বমোট ৩৯৯টি ( মেহেরপুর সদর উপজেলায় ১৯২টি , গাংনী উপজেলায় ১৬৫টি ও মুজিবনগর উপজেলায় ৪২টি )।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ওবায়দুল্লাহ, মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস, মেহেরপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আব্দুল্লাহ আল বাকী, ।

সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তোজাম্মেল আযম, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব চান্দু, মেহেরপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফারুক হোসেন, বাসসের সাংবাদিক দিলরুবা খাতুন, দৈনিক ভোরের কাগজ সাংবাদিক মর্তুজা ফারুক রূপকসহ মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবের বিভিন্ন সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।




মুজিবনগরে ৩ দিনের কৃষি মেলা শেষ এক দিনেই!

টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির আয়োজনে,১৮ ই মার্চ শনিবার মুজিবনগরে আম্রকাননে ৩ দিনব্যাপী কৃষক সমাবেশ ও কৃষি মেলার উদ্বোধন করা হয়। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর ১ আসনের সাংসদ ফরহাদ হোসেন প্রধান অতিথি থেকে মেলার উদ্বোধন করেন ।

উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয় ১৮ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত মেলা ও কন্দাল ফসল প্রদর্শনী করা হবে।বিভিন্ন সংবাদ পত্র,অনলাইন পোর্টালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রকাশিত সংবাদে ৩ দিন মেলা হবে সে তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া ব্যানারেও সে তথ্য দেওয়া ছিল। কিন্তু ১৮ মার্চ উদ্বোধনের পর আমন্ত্রিত অতিথি বৃন্দ চলে যাওয়ার সাথে সাথে মেলার স্টলসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেই উপজেলা কৃষি বিভাগ।
কি কারণে বন্ধ হলো এমন কথা জানতে চাইলে মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ এবং মুজিবনগর কৃষি বিভাগ থেকে তেমন কোন সদুত্তর দিতে পারিনি। কৃষি বিভাগের দাবি উর্ধতন কতৃপক্ষের আদেশেই মেলা বন্ধ করা হয়ছে।
কোন ঘোষনা ছাড়াই হটাৎ মেলা বন্ধ হওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকার কৃষকরা। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে সরকার সে উদ্দেশ্য সফল হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।

মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান, মানিকনগর, ভবেরপাড়ার বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, উদ্বোধনের দিন শুনলাম তিনদিন থাকবে। কিন্তু গত রবিবার সকালে মেলা স্থলে গিয়ে কোন কিছুই দেখা যায়নি। কন্দাল ফসলের চাষ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের বর্ধিত জনগোষ্টির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পুষ্টিমান উন্নয়ন করা। প্রকল্প এলাকায় কন্দাল ফসলের আবাদ বাড়ানো, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত আলু, মিষ্টি আলু, গুলকচু, মুখীকচু, লতিকচু, কাসাভা ও গাছ আলুর প্রমানিতজাতগুলো সম্প্রসারণ করা। এছাড়াও সুবিধাবঞ্চিত ও সিডর-আক্রান্ত এলাকায় প্রশিক্ষন, উদ্বুদ্বকরণ, প্রদর্শনী কার্যক্রমরে মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টি করা। উন্নত জাতের মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, বীজ সংরক্ষন ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বিদেশে কন্দাল ফসল রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা এই প্রবল্পের উদ্দেশ্য। কিন্তু মুজিবনগরের আম্রকাননে কৃষিমেলার হটাৎবন্ধ হওয়ায় এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য সফল হবে কিনা এমন প্রশ্ন অনেকের।

কন্দাল ফসল চাষের উপযোগী মাটি, জলবায়ু ও চাষের চাহিদার ওপর ভিত্তিতে দেশের আট বিভাগের ৬০ জেলার ১৫০ টি উপজেলাকে এই প্রকল্পের এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে। তার মধ্যে মুজিবনগর একটি।

মেহেরপুর কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ি এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৬ কোটি ৩১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ৯শ ৮১ ব্যাচ কর্মকর্তা-কর্মচারি, কৃষক, স্টেকহোল্ডার প্রশিক্ষন দেয়া, ২ হাজার ৮৪৪টি কৃষক মাঠ দিবস, ৪৫০ ব্যাচ উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ এবং ৩০০টি কৃষিমেলার আয়োজন করার কথা। আগামী ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার এবং মুজিবনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকা কৃষি অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, সবার সাথে আলোচনা করা হয়েছে যেহেতু প্রতিমন্ত্রী মহোদয় থাকবেন বড় প্রোগ্রাম খরচ অনেক বেশি তাই একদিনে শেষ করা হয়েছে।
মেলা বন্ধের জন্য প্রকল্প পরিচালকের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। অথচ মেলায় ডেকোরেশনকারী ডেকোরেটরের মালিক শাহিন আলী বলেন, আমার সাথে কৃষি অফিসারের একদিনের চুক্তি ছিল। তাই উদ্বোধনের দিনই সব ভেঙে ফেলা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি অফিসের এক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, উর্ধতন কতৃপক্ষের নিদের্শেই মেলা বন্ধ করা হয়েছে।

কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মোখলেছুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, মেলা তো তিনদিন হওয়ার কথা। সময়ের আগের মেলা বন্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তারপরও আমি উপজেলা কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলে বিষয়টি দেখছি।




আধুনিক কৃষিতে গতি পেয়েছে অর্থনীতি

ঝড়, জলোচ্ছাস বন্যা, শীত, খরা, তাপদাহসহ জলবায়ূ পরিবর্তণের ধাক্কা সামলিয়ে কৃষি বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এসেছে বিস্ময়কর সাফল্য ও অভাবনীয় পরিবর্তণ। একসময় বলা হতো দুধে-ভাতে বাঙালি কিম্বা মাছে ভাতে বাঙালি। এখন দুধে-ভাতে কিম্বা মাছে-ভাতে বাঙালি সীমিত নয়। পুষ্টিতে বাঙালি হিসেবে এদেশে বিশ^ দরবারে প্রশংসিত হচ্ছে ও পরিচিত লাভ করেছে। মেহেরপুরের কৃষিও পরিবর্তণ হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে মেহেরপুরের কৃষক।

মেহেরপুর কৃষিনির্ভর জেলা। যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা চিরন্তন গ্রামীণ কৃষি এবং কৃষিনির্ভর জীবন ও সংস্কৃতি বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে । গত দেড়যুগে অলাভবান সব আবাদই হারিয়ে গেছে। যেসব আবাদ হচ্ছে সেগুলো বানিজ্যিক ভিত্তিতে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা রবিশষ্য এখন পারিবারিক প্রয়োজনে সখের বশে কেউ কেউ আবাদ করে। জেলায় রবীশষ্য চাষের জমিতে খেসারী, যব, তিসি, ছোলা, ভুরু, শেয়ালল্যাজা, কদু ইত্যাদি চাষ একেবারেই বিলুপ্ত। বানিজ্যিক ভিত্তিতে এখন সমতল জমিতে আবাদ হচ্ছে ড্রাগন, কমলা লেবু, নেওয়া আতা, গ্যান্ডারী, আম, পেঁপে, কলা ইত্যাদি। খাল বিলে চাষ হচ্ছে মাছের।ফলে ডোবা নালাতে আর দেশি জাতের মাছ উৎপাদন হচ্ছে না। যেসব জমিতে আউশ ও রবীশষ্য চাষ হতো সেসব জমিতে এখন জেনেটিক বীজে ইরি আউশ আমন ধান চাষ হচ্ছে। প্রকৃতিও বদলে গেছে।

একযুগ আগেও এই সময় খাল বিল পানিতে ডুবে থাকতো। এখন প্রকৃতি বিপর্যয় কারণে খাল বিলের তলদেশে রবীশষ্য চাষ হয়। মেহেরপুরের গাংনীর ষোলটাকা ও মেহেরপুর সদরের ঝাউবাড়িয়া গ্রামে কৃষি চাষ ছেড়ে মাছচাষ বেড়েছে। ওই গ্রামদুটিতে প্রায় ১৫শ পুকুরে মাছের চাষ হয়। প্রতিবছরই সেখানে মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন করা হচ্ছে। অনেকে বাড়ি সংলগ্ন পুকুর খনন করেছে। কৃষির এমন পরিবর্তনে গত দেড়যুগে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে চরমে। মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে কেন্দ্র করে প্রান্তিক জনপদের গ্রামে গ্রামে সম্প্রসারিত হয়েছে বাণিজ্যিক কৃষি। গ্রামবাংলার ঘর-গৃহস্থালি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পারিবারিকভাবে হাঁস-মুরগি পালনের সংস্কৃতি। আর পুকুরে পানির ওপরে মুরগি এবং পানিতে চলছে মাছ চাষ।

গ্রামবাংলায় যেখানে সিংহভাগ পরিবারে ছিলো হালচাষের গরু। হাল বিক্রি করেই চলতো অনেক পরিবারের জীবন মান। দুইযুগ আগেও গ্রামীণ ও শহুরে জোতদার পরিবারে ছিলো রাখাল, কৃষান। এখন কোন পরিবারে মেলেনা হালের গরু। রাখাল কৃষাণ এখন ইতিহাসের পাতায়। মূলত অর্থনেতিক কারণে দ্রুত বদলে গেছে গ্রামীণ কৃষি। শিক্ষিত বেকার ও প্রবাস ফেরৎ যুবক সম্প্রদায় ধানী জমিতে সমন্বিত মাছচাষ, মুরগি, গবাদিপশুর খামার, এবং ফল চাষের প্রকল্প চালু করছে। প্রতিটি গ্রামের মাঠেই হাজার হাজার হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে আম, লিচু, কলা, মাল্টা, কুল, পেয়ারা ইত্যাদির বাগান। লাভজনক হবার কারণে সমতল ধানি জমিতে পুকুরও করছেন অনেকেই। মৌসুমী ফল চাষ এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে কি পরিমাণ চাষের জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার সঠিক তথ্য কৃষি বিভাগের হাতে নেই।

ক্রমাগত জমির হাত বদল হয়ে পেশাজীবী, ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাওয়া, প্রধান ফসল ধানের পরিবর্তে ফলের বাগান বৃদ্ধি পাওয়া, ফসলি জমিতে শিল্প কারখানাসহ ইটভাটা গড়ে ওঠার কারণে জেলার কৃষি ক্ষেত্রে সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়ার আশংকা উড়িয়ে দিচ্ছে কৃষি কর্মকর্তারা।

গাংনীর ষোলটাকা গ্রামের দেলবার হোসেন জানান- তিনি গ্রামে ৮টি পুকুরে মাছের চাষ করেন। প্রতিটি পুকুর প্রায় এক একর করে। প্রতিদিন মাছের খাবার লাগে ৫০ হাজার টাকার। প্রতিটি পুকুরে বছরে গড়ে ৭০ লাখ টাকার মাছ উৎপাদন হয়। মাছের খাবারের জন্য তিনি একটি মিল স্থাপন করেছেন।

মেহেরপুর জেলা শহরে প্রাচিন একটি পাড়া। বেড়পাড়া নামে পরিচিত বিশাল এই পাড়ায় শতাধিক পরিবারের বাস। ৭০ দশক পর্যন্ত তিনটি পরিবার ছাড়া কোন পরিবারের স্কুলমুখি ছেলে মেয়ে ছিলোনা। এখন সিংহভাগ পরিবারের ছেলে মেয়ে স্কুলমুখি। সবগুলো পরিবারেই ছিল দেশি হাঁস-মুরগি, হালের বলদ। ব্লাকবেঙ্গল ছাগল পালন ছিলো প্রতিটি পরিবারে। কৃষিচাষের সাথে জড়িত ছিলো এসব পরিবারগুলো। গত আড়ায় যুগের ব্যবধানে বর্তমানে আমন ধান চাষ করে এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া মুশকিল। একমাত্র হালের বলদ টিকে আছে দেলবার হোসেনের (দেল) বাড়িতে। আরসব বাড়ি থেকে বিদায় হয়েছে হালের গরু। এখন বানিজ্যিক ভিত্তিতে পরিবারগুলো দুটি একটি করে গবাদিপশু পালন আর মাঠের জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কলা, আমড়া, আম, পেয়ারা, বনজ গাছ এবং সমন্বিত মাছ-মুরগি চাষ নিয়ে আছে। গৃহপালিত হাঁস-মুরগিও উচ্ছেদ হয়ে গেছে প্রায় সব পরিবার থেকে। দেল হোসেন জানান- আগে তিনি নিজের জমির চাষ আর হাল বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে হাল চাষ চাহিদা হারিয়েছে। গরু-মহিষ দিয়ে ধান চাষ এবং মাড়াইয়ের কাজ হতো। সেটাও বন্ধ। এখন জমি চাষ এবং ধান মাড়াইয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে যন্ত্র প্রযুক্তি। বিয়ে সাদিতে গরুর গাড়ি ছিলো যাতায়াতের পরিবহন। এখন প্রাইভেট কার। তাই হালের গরু উঠে গেলেও দেল নিজের জমি চাষের জন্য এখনও গরু পালন করেন।

পাড়ার মরহুম কালু মণ্ডল, মরহুম ফজলুর রহমানের গোয়াল ভরা গরু ছিলো। পারিবারিক দুধের চাহিদা মেটাতে ছিলো গাভি গরু । ছিলো রাখাল ও কৃষান। তাদের বাড়ির পাশে নিজেদের এবং পাড়ার মানুষের জমির ফসল মাড়ার জন্য খোলা ছিলো। জমি থেকে ধান কেটে এনে আঁটি বেঁধে ওই খোলাতে সাজিয়ে রাখা হতো। পরে হতো ধান ও রবীশষ্য মাড়াইয়ের কাজ। পাড়ার বাড়ি থেকে গরুর দল জুড়ে মলন মাগা হতো। ভর দুপুরে এই ফসল মাড়ায়কালে খোলার আশপাশে কেউবা গুড়ের তিলের খাজা, খুরমা, জিলেপি ইত্যাদি তৈরী করে এনে বসে থাকতেন। ধান, গম, মসুর, ছোলা ইতাদির বিনিময় হতো ওইসব মিষ্টান্নর সাথে। শীতের সময় ফজরের আজান থেকে উঠানের পাশে টিনের তৈরি বিশাল কড়াইয়ে হতো ধান সিদ্ধ করার কাজ। সিদ্ধ সেই ধান শুকিয়ে বাড়ির ঢেঁকিতে ছেটে চাল সংরক্ষণ করা হতো। এখন উঠান, ফসল মাড়ায়ের খোলা, গোয়াল ঘর নেই। ধানের জমি যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাতে আর কোনো আমন ধান চাষ নেই। চলে গেছে ইরিচাষ আর ফলবান বাগানের অধীনে। একসময় যারা জোতদার ছিলেন। বাড়িতে রাখাল কৃষান রেখে চাষাবাদ করতেন। তাদের শতকরা ৯০ ভাগ এখন জমি বর্গা দিয়েছেন। ভূমিহীন পরিবারগুলো এখন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বর্গাচাষী হয়েছেন।

কৃষক বছরের পর বছর ধানের দাম পাচ্ছে না। দাম না পেয়ে জমিতে ফলজাতীয় বাগান করছেন। এখানে কোনও ঝুঁকি নেই। যেমন আমের মুকুল আসার আগেই বাগান বিক্রি করে নগদ টাকা পাওয়া যায়। সার বিষ পানিসহ সকল পরিচর্যা যিনি বাগান চুক্তিতে কেনেন তার দায়িত্বে থাকে। ফলে বাগান নিয়ে বাড়তি কোনও ভেজাল করতে হয় না।

জেলায় সরকারি হিসেব মতে ১৪,৬২০০ পরিবার জেলার মোট কৃষক। ১,৫৫,৪৬৬ হেক্টর ফসলী জমি। জেলার খাদ্যচাহিদা আছে ১,৩৯,৮৫৩ মেট্রিক টন। উৎপাদিত হয় ২,৬৬,৬৯২ মেট্রিক টন। ১২৬৮৩৯ মেট্রিকটন উদ্বৃত্ত খাদ্য জাতীয় খাদ্যভান্ডারে অবদান রাখছে। এ তথ্যের বাইরে জেলায় কি পরিমাণ জমিতে গত একযুগে ফলের বাগান, ইটভাটা, পুকুর খনন, ইমারত নির্মাণ হয়েছে সে তথ্য নেই জেলা কৃষিবিভাগের কাছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন- কৃষক এখন অনেক সচেতন। কোন চাষে লাভবান হবে ভাবনা থেকেই চাষ পরিবর্তন করছে। তবে মেহেরপুর জেলার মাটি দেশের অন্যজেলার থেকে আলাদা। এই জেলার মাটিতে সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। ফলের চাষ বৃদ্ধি পাওয়াতে জেলার চাহিদা মিটিয়েও জেলার বাইরে বাজারজাত করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।

মেহেরপুরের উর্বর জমি, আমাদের অবারিত প্রাকৃতিক সম্পদ, আমাদের পরিশ্রমী মানুষ, আমাদের গবেষণা সম্প্রসারণ কাজে সম্প্রসারণ কাজে সমন্বয় করলে মেহেরপুরের কৃষি জাতীয় খাদ্যভান্ডারে আরও অবদান রাখতে পারবে।




ধাতুসুধায় লালনপাঠ

মূলকথা
ঋষিমতে শব্দ পরাশক্তি বিশেষ। মানবিক বিভিন্ন চেতনা বর্ণকে আশ্রয় করে শব্দে রূপান্তরিত হয়। তাই শব্দ ও চেতনা একে অপরের পরিপূরক। কারও শব্দসংস্কৃতি থেকে তার চেতনা পরিমাপ করা যেতে পারে। শব্দ সংস্কৃত হয় তার অখণ্ড রূপ থেকে; আবার এই অখণ্ডতা বা সম্পূর্ণতা নির্মিত হয় মূলানুগ হলে। গোটা ভাব বা বস্তুকে যা দিয়ে ধরে রাখা যায় সেটাই তার মূল বা ধাতু। দেহ নানাপ্রকার প্রাণরস ধারণ করে টিকে থাকে, সেগুলোই দেহের ধাতু। ঠিক তেমনই শব্দ একটি ভাব বা চেতনার কাঠামো যা ধাতুকে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকে। শব্দের গোটা ছবি দেখতে হলে ধাতুবিচার খুবই জরুরি। ধাতু বা মূলের বাইরে থেকে শব্দকে দেখা অনেকটা কুয়াশার ভেতর কিছু অস্পষ্ট দেখার মতো।

এই দৃষ্টিভঙ্গিতে শব্দার্থবোধ অনমনীয়, ভঙ্গুর, সঙ্কীর্ণ, অবৈজ্ঞানিক ও অসম্পূর্ণ হতে বাধ্য। যেমন দেহ ও শরীরÑএই দুটো শব্দ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। আমরা প্রায়শ দেহকে শরীর আবার শরীরকে দেহের সঙ্গে সমার্থক করে একাকার করে ফেলি। স্থূল বা প্রতীকী অর্থে তা সঠিক বটে। তবে মূল বা ধাতুবিচাওে দেহ কিন্তু শরীর নয়, শরীরও দেহ নয়। দেহ শব্দকাঠামোর ভেতরে দিহ্ ধাতু উপস্থিত। এর অর্থ বৃদ্ধি, প্রসারণ; জীবসত্তা ভ্রƒণাবস্থা থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ততক্ষণ সেটা দেহ নামধারী।

জৈবিক নিয়মে এই বাড়ন্তভাব আবার উল্টোদিকে ধায় অর্থাৎ ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকে; কায়াসত্তার এই ক্ষয়ে-যাওয়া-দশার নাম শরীর। শৃ বা শর ধাতুযোগে শরীর শব্দটি সাধিত। এর অর্থ হিংসা, বধ, পীড়ন। দেহের সীমানা পেরিয়ে জীবসত্তা শরীরের চৌহদ্দিতে ঢুকলে শর দ্বারা আক্রান্ত হয়। শরের একটি অর্থ তীর। তীরের কাজ বিদ্ধ করা। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা, অবসাদ, ক্লান্তি ইত্যাদির নাম মানসিক শর। উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র, কর্কট (ক্যান্সার), বাত প্রভৃতি হল কায়িক শর। অসংখ্য নমুনা থেকে মাত্র দুটো নমুনার ধাতুবিচার করে দেখা গেল শব্দ নিছক শব্দ নয়, এর পরিধি অনেক বিস্তৃত ও তলগামী।

লালন সাঁইজির পদাবলী বাংলা তথা বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে একটি বিরাট সম্পদ। তাঁর পদ বিভিন্ন সাধক ও সারস্বত সমাজ মূল্যায়ন করেছেন। এই অধম তাঁর পদগুলো ধাতুবিচারে দর্শন করার সযত্ন প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। “ইটিমোলজি” (শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্ণায়ক শাস্ত্র) আমার একটি সর্বাত্মক অনুসন্ধানের বিষয়। দীর্ঘ প্রায় দু-দশক এই সন্ধানক্ষেত্রে চষে বেড়াচ্ছি। এতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাষার শব্দের আন্তরিক ঐশ্বর্য আমার চোখে পড়ছে। দশকজোড়ের অভিজ্ঞতায় এই বিশ্বাস জন্মেছে মূলবিচারে শব্দের স্বরূপ যেভাবে উন্মোচিত হয় অন্য কোনো উপায়ে তার রূপ সেভাবে ফোটে না।

এ প্রসঙ্গে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করা যেতে পারে। শাস্ত্রালোচনায় অনেক সময় তিনি তাঁর ভক্তদেরকে বিশেষ বিশেষ শব্দের তাৎপর্য বোঝাতেন মূল বা ধাতুবিচার করে। মরমী সাধক লালন ফকিরের পদও মরমী যা মর্ম (ধাতু) থেকে অনুভব করতে হয়। লোকপ্রিয় কথা লোকজ সুরে পরিবেশিত হয় বলে সাধারণ লোক সরফের কথা ও সুরের চটকে মুগ্ধ হন। ভেতরের বার্তা তাদের কাছে হয় ভাসাভাসা থাকে নতুবা একেবারেই বোধগম্য হয় না। তাই এই পদ অনেক সময় সম্পদ না হয়ে বিপদ তৈরি করে।

এই সম্পন্নপদকে কৌতূহলী পাঠকের দরবারে পদস্থ করতে আমি ধাতুসুধার আশ্রয় নিয়েছি যা “ধাতুসুধায় লালনপাঠ” শিরোনামে উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে। এতে তাঁর পদাবলীর প্রত্যেকটি চরণ ও পারিভাষিক শব্দাবলী মূল থেকে অর্থাৎ ধাতুবিচারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

           ১। ‘বলি মা তোর চরণ ধরে’

আর আমারে মারিস নে মা
বলি মা তোর চরণ ধরে ননী চুরি আর করব না।।

ননীর জন্যে আজ আমারে মারলি গো মা বেঁধে ধরে
দয়া নাই মা তোর অন্তরে স্বল্পেতে গেলো জানা।।

পরে মারে পরের ছেলে কেঁদে যেয়ে মাকে বলে
মা জননী নিঠুর হলে কে বোঝে শিশুর বেদনা।।

ছেড়ে দে মা হাতের বাঁধন যে দিকে যায় দুই নয়ন
পরের মাকে ডাকব এখন লালন তোর গৃহে আর থাকব না।।

‘আর আমারে মারিস নে মা
বলি মা তোর চরণ ধরে
ননী চুরি আর করব না।’
পদাবলীতে বর্ণিত শব্দমালা থেকে প্রথমে মা শব্দটি নিয়ে আলোচনা করা যাক। এখানে ‘মা’-কে মায়াবা প্রকৃতিস্বরূপ বিবেচনা করে এগোলে বাণীর অর্থ দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। আমরা জানি সংসারে মায়ার কারণে জীব মোহগ্রস্ত থাকে। মলিনতা তাকে ঘিরে ধরে; তার নবরূপে উত্তরণের সম্ভাবনা রুদ্ধ হয়। পুরুষÑপ্রকৃতির নিত্যলীলায় প্রকৃতি বা মায়ার যে লীলা তাকেই মায়ার মার হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়। মায়ার উপদ্রব বা অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়ার আকুতি সাঁইজির বয়ানে এভাবে উঠে এসেছেÑ ‘আর আমারে মারিস নে মা।’ এবার ‘ননী চুরি’র বিষয়টি দেখা যাক। ননী চুরি থেকে ননী শব্দটির মর্ম উদ্ধার করি। নবনীত>নবনীঅ>ননীÑ মূলত ননী শব্দটি নবনীত থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে ননীতে এসেছে। নবনীত অর্থাৎ নূতন অবস্থায় উন্নীত হওয়া; দুধের ভেতর থেকে জল নিষ্কাশন করলে তা ননী পর্যায়ে পৌঁছোয়। এটা দুধের একটি নতুন সত্তায় উত্তরণ ঘটা। ঠিক একইভাবে জাগতিক বন্ধনে আবদ্ধ জীব জলমেশানো দুধের মতো ভেজাল বা দূষিত। এই মায়ার পাশ কাটিয়ে জীব মুক্ত হতে সমর্থ হলে তার উত্তরণ ঘটে; আর এটি একটি নূতন বা নবরূপে উন্নীত হওয়া যাকে সাঁইজি ননী হওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

জাগতিক মায়া ষড়রিপুর জালে জীবকে আটকে রাখতে চায়; কেউ কেউ এই জাল ছিন্ন করে বের হওয়ার চেষ্টা করে। আর ঠিক তখনই মায়া সংহার-মূর্তি ধারণ করে মারমুখী হয়ে ওঠে। তবে এখানে ‘ননী চুরি আর করব না’ কিন্তু মায়ার সঙ্গে আপোষকামিতা নয়। ভাবখানা এমন যেন তোমাকে ভজনা বা আরাধনা করেই সাধনের গোপন কর্মটি সম্পন্ন করব। এ প্রসঙ্গে সাধক রামকৃষ্ণের অতুল্য উপমার উল্লেখ করা যেতে পারে। তাঁর মতে লক্ষ্মণÑসীতাÑরাম একই পথে চলছে অথচ লক্ষ্মণ রামকে দেখতে পাচ্ছে না সীতার কারণে। মায়ারূপী সীতা মাঝখানে থাকায় জীবরূপী লক্ষ্মণ পরম রামকে দর্শন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। মায়াবেড়ি ভেঙে বের হওয়ার শাস্তি সাঁইজির বাণীতে এভাবে ধরা পড়েছেÑ ‘ননীর জন্যে আজ আমারে মারলি গো মা বেঁধে ধরে।’
এর পরের চরণ দুটিÑ
‘দয়া নাই মা তোর অন্তরে
স্বল্পেতে গেল জানা।’
মায়া তোর ভেতর দয়া নেইÑএ কথাটিকে সাঁইজি বলেছেনÑ ‘দয়া নাই মা তোর অন্তরে।’ বস্তুত দয়া ও মায়া একসঙ্গে থাকতে পারেনা; কারণ এরা একে অন্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। সর্বভূতে উপকার সাধনের নাম দয়া অর্থাৎ এটি একটি সার্বজনীন করণ ও সাধন, পক্ষান্তরে মায়া একান্তই মমতার সমার্থক যা শুধু নিজের ক্ষুদ্র গণ্ডিতেই তার চলনকে সীমিত রাখে। আর এই দয়া ও মায়ার ফারাক জানা যায় ফারুক হলে, যা আবার সূক্ষ্মজ্ঞান বা বোধি নির্দেশক। এই সূক্ষ্মতার হিসেব নিকেশকে সাঁইজি বললেনÑ ‘স্বল্পেতে গেল জানা।’

‘পরে মারে পরেরছেলে
কেঁদে যেয়ে মাকে বলে।’
এখানে ‘পর’ ও ‘ছেলে’ শব্দদ্বয়ের ভেদ উন্মোচন হওয়া আবশ্যক। ‘পর’ এখানে ‘পরম’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। লালন সাঁইজি তাঁর একটি পদে সরাসরি ‘পর’ অর্থে ‘পরম’-কে নির্দেশ করেছেন। ‘আমার ঘরখানায় কে বিরাজ করে’-এই পদাবলীর আভোগাংশে ‘লালন বলে পর বলতে পরওয়ার’-চরণটিই তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। এই সূত্রে ‘পরের ছেলে’-বাগি¦ধির অর্থ দাঁড়ায় পরমের সন্তান। সন্তান অর্থ বিস্তার; আদি(পুরুষ) তার শক্তি নিয়ে অর্থাৎ আদ্যাশক্তিতে মহাজগতে আবির্ভূতÑএটাই মূলত পরমের সন্তান বা ছেলে।

‘মা জননী নিঠুর হলে
কে বোঝে শিশুর বেদনা।’
জননীর মধ্যে জনন বা সৃজন রয়েছে; সুতরাং ‘মা জননী’ শব্দযুগলের অর্থ মায়া সৃষ্টিকারী সত্তা; এই সত্তার অভেদ্য বলয় অত্যন্ত কঠিন বা নিষ্ঠুর। মায়ার ঘেরায় বাসকারী মূঢ়জন দয়া, কোমলতা, নবীনতা যা কিনা শিশুসত্তার গুণাবলী সে সম্পর্কে সংবেদনশীল থাকে না। আর এই অবস্থাকে সাঁইজি বাণীবদ্ধ করেছেন এভাবেÑ‘মা জননী নিঠুর হলে কে বোঝে শিশুর বেদনা।
‘ছেড়ে দে মা হাতের বাঁধন
যেদিকে যায় এই দুই নয়ন।’
উপর্যুক্ত দুটি চরণে মায়া বা মুগ্ধতার থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার মিনতি প্রকাশিত হয়েছে।
‘পরের মা কে ডাকবে এখন লালন
তোর গৃহে আর রবে না।’
পদাবলীর সর্বশেষ দুটি পঙক্তিতে পরের মা অর্থাৎ পরম মা (পরম মান) অন্য কথায় পরমপ্রকৃতিকে আশ্রয় করে সাঁইজি মায়ার গৃহ ত্যাগ করার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। জগৎসংসারের ভগ্নাংশ মান (মায়া) থেকে বেরিয়ে মহাজাগতিক পূর্ণমান (পরের মা)-এ পৌঁছানোর জন্য ননী চুরির অপরিহার্যতাই এই পদাবলীর মূল প্রতিপাদ্য।

২। সত্য বল সুপথে চল
সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন
সত্য সুপথ না চিনিলে পাবি নে মানুষের দরশন।।

খরিদদার মহাজন যেজন বাটখারাতে কম তারে কসুর করবে যম
গদিয়াল মহাজন যেজন বসে কেনে প্রেমরতন।।

পরের দ্রব্য পরের নারী হরণ করো না পারে যেতে পারবে না
যতবার করিবে হরণ ততবার হবে জনম।।

লালন ফকির আসলে মিথ্যে ঘুরে বেড়ায় তীর্থে তীর্থে
সই হলো না একমন দিতে আসলেতে তার প’লো কম।।

‘সত্য বল সুপথে চল
ওরে আমার মন
সত্য সুপথ না চিনিলে
পাবি নে মানুষের দরশন।’
উদ্ধৃত বাণীগুচ্ছের বক্তব্য বেশ সাদামাটা হলেও মানুষ শব্দটির মর্মার্থ অনুসন্ধান জরুরি। প্রতিটি ব্যক্তি মনের অধিকারী। ঐ মনের মধ্যে মানুষের উপস্থিতি টের পাওয়া যায় সত্য উচ্চারণে এবং সুপথ গমনে। অর্থাৎ সত্যই ‘বল’ মিথ্যা দুর্বল, আবার সুপথই হল ‘চল’ বিপথ অচল। ‘মানুষ’ এখানে পুরুষের সমার্থক। মহাজগতের পুরা(পূর্ণ) ও পুরু সত্তাই মূলত পুরুষ দ্যোতক। জীবাত্মক মন নিত্য চেতনায় (সত্য) বিচরণ করলে পূর্ণতার মানে উঠে আসে তখন এই মন ঐ মানুষ (পুরুষ)-কে দেখতে পায়। যা লালনভাষ্যে এভাবে ধরা দেয়Ñ
‘সত্য সুপথ না চিনিলে
পাবি নে মানুষের দরশন।’

‘খরিদদার মহাজন যেজন
বাটখারাতে কম
তাদের কসুর করবে যম;
গদিয়াল মহাজন যেজন
বসে কেনে প্রেমরতন।’
পদাবলীর এই অংশে খরিদদার মহাজন ও গদিয়াল মহাজন অর্থে দুটি পক্ষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লিখিত যুগল পক্ষের একটি অপূর্ণতা বা ঘাটতি সূচক (খরিদদার মহাজন) অন্যটি পূর্ণতাব্যঞ্জক (গদিয়াল মহাজন)। সাধারণ জীবসত্তার মান ‘একমন’-এর থেকে ঊন বা হীন তাই তা ওজনে (বাটখারা) কম। মানসম্মত (একমণ) ওজন থেকে কমতির ফলে জীবসত্তা ত্রুটিপূর্ণ (কসুর) হয়ে খণ্ডিত (যম) হয়। সোজা কথায় একমন (বাহ্যিক ওজনের একক এবং অভ্যন্তরীণ অখণ্ডতার একক) থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দরুণ অদ্বৈত থেকে দ্বৈততার দিকে যে যাত্রা তাকেই সাঁইজি ‘তাদের কসুর করবে যম’ বলে অভিহিত করেছেন। পক্ষান্তরে যেজন পূর্ণমান (গদিয়াল) অর্জন করে সেই মানুষ (পুরুষ) এর সঙ্গে অভিন্ন হয়েছেন তিনি থিতু হয়ে মনের মানুষের সঙ্গে রমণ (প্রেমরতন) করতে সক্ষম হন। প্রেমারতির এই দিকটি লক্ষ্য করে লালন গেয়ে ওঠেনÑ ‘গদিয়াল মহাজন যে জন বসে কেনে প্রেমরতন।’

‘পরের দ্রব্য পরের নারী
হরণ করো না
পারে যেতে পারবে না।’
এখানে পরের দ্রব্য, পরের নারী ও পারÑএই তিনটি শব্দের মূলানুগ বিচারে মৌলিক বার্তার উন্মোচন হতে পারে। শুরুতে ‘দ্রব্য’ শব্দটির ধাতুবিচার: কোনো বস্তুকে দ্রব্যবাচক হতে গেলে তার ভেতর দ্রুতি বা গতি থাকতে হয়; বস্তু রসাত্মক হলে গতি হয় নিশ্চিত। তার মানে দ্রব্য, দ্রবণ একই ধাতুগোষ্ঠীর সদস্য। মহাজগতে যে রসের কারবার চলছে তা বিভিন্ন দ্রব্যে সন্নিবেশিত রয়েছে। প্রতিটি মানুষ এক একটি বিশাল রসের আধার। এই রসায়নের খবর পেতে হলে রস ধারণ বা সাধন অবশ্যকর্তব্য। যে রস ধারণ করলে মানুষ বীর(পুরুষ), বলবান হয় তা-ই পরম দ্রব্য (পরের দ্রব্য) প্রধান সাধনবস্তু।

এবারে পরের নারী। নারী শব্দটি ‘নর’ এর সঙ্গে ‘ঈ’ প্রত্যয়যোগে নিষ্পন্ন। নর একা চলতে পারে না তাকে কিছু ধরতে হয় যাকে আমরা নরের ধর্ম বলতে পারি। অর্থাৎ নরের ধর্মই নারী; সুতরাং পরম নরধর্মকে পরের নারী বলা যায়। যা আসলে পরমাপ্রকৃতির নামান্তর।

এখন ‘পার’-এর পালা। জগৎসংসারে এসে মানুষ নিষ্কর্মা হয়ে বসে থাকতে পারে না; কর্ম করার অর্থই হল মোহপাশে আটকে যাওয়া; তবে কি কর্মবিমুখ হতে হবে? ঠিক তা নয়Ñ সংসারসমুদ্রে কর্মের সততা অসততা বিচার করে অর্থাৎ কর্মসম্পাদনের ভেতর দিয়ে তীরে পৌঁছুতে হবে। এর নাম কর্মসমাপ্তি যা বোঝাতে সাঁইজি ‘পার’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। তাহলে ‘পরের দ্রব্য পরের নারী হরণ করো না/পারে যেতে পারবে না।’ চরণযুগলের ভাষ্য দাঁড়ায়Ñ পরম সাধন বস্তু ও পরমা প্রকৃতিকে লুণ্ঠন করে কর্মসম্পাদন অসম্ভব।
‘যতবার করিবে হরণ
ততবার হবে জনম।’
গর্ভ থেকে যোনিপথে নিঃসরণের নাম জনম। সুতরাং যতক্ষণ কর্ম অসম্পাদিত থাকবে ততক্ষণ জীব বিভিন্ন যোনিতে পরিভ্রমণ করবে।
‘লালন ফকির আসলে মিথ্যে
ঘুরে বেড়ায় তীর্থে তীর্থে।’

পদাবলীর ভণিতাংশে সাঁইজি আমজনতার দরবারে নেমে এসে ভনেÑ লালন ফকির আসলে মিথ্যে; এখানে ‘আসল’ শব্দের আসলত্ব খোঁজা যাক। আসল বা খাঁটি বস্তুটি হল ‘একমন’ (যার ব্যাখ্যা আগে দেওয়া হয়েছে)। দুটো সত্তার (জীব ও পরম) এক বা অভিন্ন হওয়াটাই হল আসল। আর এই আসলের জায়গা থেকে সাধারণের কাতারে নেমে আসা লালন মিথ্যে বা নকল। পদাবলীর অনেক ভণিতায় সাঁইজি তাঁর ভূমিকাকে সাধারণীকরণ করে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন।
‘ঘুরে বেড়ায় তীর্থে তীর্থে’

এক হতে ব্যর্থ হওয়ায় বিচ্ছিন্নতার ফলে জীবসত্তা ভ্রমের মধ্যে থাকায় তার ভ্রমণ চলছেই। এটিকেই তিনি ‘ঘুরে বেড়ায় তীর্থে তীর্থে’Ñবলে পদবদ্ধ করেছেন। তীর বা কর্মসম্পাদনে থিতু হওয়াটাই মূলত তীর্থ।
যখন ওজনের একক একমণ ও অদ্বৈতের একক একমন সই বা শুদ্ধ হয় না তখন একমণে/মনে ঘাটতি থেকে যায় যেটিকে লালন ছন্দোবদ্ধ করেছেন এভাবেÑ ‘সই হলো না একমন দিতে/আসলে তার প’লো কম।’

৩। তিন পাগলে হলো মেলা
তিন পাগলে হলো মেলা নদেয় এসে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে।।

একটা পাগলামি করে জাত দেয় সে অজাতেরে দৌড়ে গিয়ে
আবার হরি বলে পড়ছে লুটে ধুলোর মাঝে।।

একটা নারকেলের মালা তাতে জল তোলাফেলা করঙ্গ সে
পাগলের সাথে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে।।

পাগলের নামটি এমন বলিতে অধীন লালন হয় তরাসে
ও সে চৈতে নিতে অদ্বয় পাগল নাম ধরে যে।।

‘তিন পাগলে হলো মেলা নদেয় এসে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে।’
উল্লিখিত শব্দমালার তিন পাগল ও ‘নদে’ শব্দজোড়ের রহস্য উদ্ঘাটন হলে এর ভেতরের অর্থ আমাদের বোধগম্য হবে। ‘নদে’: এটিকে অনেকেই একটি স্থাননাম হিসেবে অনুবাদ করে থাকে। মধ্যযুগে শ্রীচৈতন্যসহ তিন আত্মতত্ত্ববিদের নদীয়া ভূখন্ডে যে মিলন মেলা রচিত হয়েছিল তাকে কেউ কেউ ‘তিন পাগলে হলো মেলা নদেয় এসে’-বলে অভিহিত করে থাকেন। এই অভিমত মেনে নিলে সাঁইজির পদনিহিত বার্তা একটি বিশেষ স্থান-কাল পাত্রে আবদ্ধ হয়ে যায়। একজন কালোত্তীর্ণ পুরুষের বাণী কখনও সীমিত স্থানকালে বন্দি হতে পারে না। তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী সনাতন ও শাশ্বত হওয়াই স্বাভাবিক। এই পদাবলীর অন্তিমে সাঁইজি তিন পাগলের নামগুলি সুস্পষ্ট ঘোষণা করে তাদের সার্বজনীন স্বরূপ নিশ্চিত করেছেন। সুতরাং এই নদ যে ভৌগোলিক নদীয়া নয় তা সুনিশ্চিত। এখানে প্রবাহ অর্থে ‘নদ’কে বোঝানো হয়েছে। মানবদেহে ঈড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না নাড়ির ধারা প্রবাহিত। তাদের সম্মিলিত ধারা মিলেছে কুলকুণ্ডুুলিনীতেÑএটাকে সাঁইজি ‘তিন পাগলে হলো মেলা নদেয় এসে’Ñবলে বর্ণনা করেছেন। ‘তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে’Ñ এটি হল একধরণের প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারী। ঈড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না নাড়ীত্রয়ের সাধন অসম্পূর্ণ থাকলে দেহ সংস্কার হয় না, বিকারগ্রস্ত থাকে। এই বিকৃত মানসিকতায় পরমপ্রেমে আত্মহারা পাগলের কাছে ভেড়াটা ঠিক নয়।
‘একটা পাগলামি করে
জাত দেয় সে অজাতেরে দৌড়ে গিয়ে।’
পাগলের ‘আমি’(ঝবষভ)-র মধ্যে যে ভাব তার নাম পাগলামি। লালনঘোষিত পাগলত্রয়- চৈতে, নিতেই, অদ্বয়Ñএটা মূলত উপনিষদের সৎ-চিৎ-আনন্দ বা সচ্চিদানন্দ সত্তা। চিৎস্বরূপ সত্তা চৈতে, নিতাই হল নিত্যানন্দ এবং অভেদ দ্বৈততাহীন ব্রহ্ম সত্তাই হল সাঁইজি নির্দেশিত অদ্বয়। আবার সাঁইজির এই তিন পাগল রামকৃষ্ণের ভাবসঙ্গীতে মূর্ত হয়েছে এভাবেÑ
‘বামে অদ্বৈত আর দক্ষিণে নিতাই
তার মাঝে নাচে আমার চৈতন্য গোঁসাই।’
উক্ত ভাষ্যের আলোকে এটা সুনির্ণীত যে ‘চৈতে-নিতে-অদ্বয়’ এই ত্রয়ীসত্তা একে অপরের পরিপূরক। নিত্য চেতনায় একাকার হলে মানুষের উত্তরণ অর্থাৎ দ্বিতীয় জন্ম বা দ্বিজপ্রাপ্তি ঘটে। এটাকে সাঁইজি ‘জাত দেয় সে অজাতেরে’-বলে পদায়ন করেছেন।
‘আবার হরি বলে পড়ছে
লুটে ধুলোর মাঝে।’
চৈতে, নিতে, অদ্বয়-এর যে কোন একটি আহরিত হলে মানুষ হরিদশায় পৌঁছে যায়। তখন নমঃ নমঃ ভঙ্গি তার নিত্যসঙ্গী। নিজেকে মনে হয় মহাপ্রভুর একান্ত দাস। নিবেদন তার অস্থিমজ্জায়।

‘একটা নারকেলের মালা
তাতে জল তোলাফেলা করঙ্গ সে।’
নারকেলের মালাই হল করঙ্গ। এটি সাঁইজির একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দভেদ। মাথার খুলি, শরীরাস্থি, দেহ ইত্যাদি অর্থে শব্দটির প্রচলন আছে। করঙ্গ ও কমণ্ডলু সমার্থক। সন্ন্যাসী বা ব্রহ্মচারীর ব্যবহৃত কাঠ বা মাটি দিয়ে তৈরি জলপাত্রকে কমণ্ডলু বলে। তাহলে দেখা যাচ্ছে নারকেলের মালাÑকরঙ্গÑকমণ্ডলু একই দ্রব্যসামগ্রী। কমণ্ডলুর মধ্যে যে মুণ্ড্ আছে তার ধাতুগত অর্থ হল হর্ষ বা আমোদ। ‘নারকেলের মালাতে জল তোলাফেলার’-আগমিক অর্থ সাধক দেহের বীররসের প্রবাহ শক্তি কুলকুণ্ডলিনীর মাধ্যমে জাগিয়ে তুলে মুণ্ডু অর্থাৎ মস্তিষ্কেও সহস্রারে চালনা করে প্রসাদ লাভ করতে পারে। অন্যদিকে রসের স্খলনে অবসাদগ্রস্ত হতে পারে। তবে এ সাধনকর্মের ভেদ বুঝতে হলে চৈতে-নিতে-অদ্বয় পাগলের সঙ্গী হতে হবে। অন্যকথায় সচ্চিদানন্দ বিহার জরুরি। যাকে সাধক লালনÑ ‘পাগলের সঙ্গে যাবি/পাগল হবি বুঝবি শেষে’ অভিধায় ভূষিত করেছেন।

‘পাগলের নামটি এমন
বলিতে অধীন লালন হয় তরাসে।’
ভণিতায় যথারীতি খাস লালন আমদরবারে আত্মতত্ত্বের খবর দিতে ভয় পাচ্ছে। এই ভীত হবার কারণটি পূর্বেই আলোচিত হয়েছে।




আধুনিক মেহেরপুর

মেহেরপুর জেলা জাতীয়ভাবে বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের জীবনমান ও সংস্কৃতির পরিচয় মেহেরপুরকে ঘিরে আবর্তিত। বর্তমান সময়ের সঙ্গে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে তার যোগ আছে। আমরা দেখি, বর্তমান সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাকে সাংস্কৃতিক নগরীরূপে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মেহেরপুর তন্মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সুতিকাগার বলা যায় মেহেরপুরকে। জীবন জটিলতার আবর্তে যেন এক ফালি চাঁদ হয়ে শিক্ষার উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো হয়ে ধরা দিয়েছে আমাদের বাস্তবভূমিতে। বিশেষ করে গণমাধ্যমের ভূমিকা মেহেরপুরকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। গণমাধ্যম স্বাধীন পথ চলায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। সেই স্বাধীনতায় আমাদের কোন হস্তক্ষেপ নেই। তার ফল স্বরূপে মেহেরপুরের উন্নয়ন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে ‘মেহেরপুর প্রতিদিনে’র ভূমিকা চোখে পড়ার মতো।

মেহেরপুর, গাংনী ও মুজিবনগর এই তিন উপজেলা নিয়ে মেহেরপুর জেলা। মুজিবনগর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী। যা মেহেরপুর জেলার গর্ব, সম্মান ও অর্জন। আমরা এ জেলায় পেয়েছি আমঝুপি; নীলকররা যেখানে চাষ করতেন-যা আমাদের ঐতিহ্য। বর্তমান সরকার মেহেরপুর জেলার উন্নতিকল্পে স্থল বন্দর, রেল যোগাযোগের প্রসঙ্গটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়েছে। ইতিমধ্যে ‘মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার খসড়া অনুমোদন ও বাজেট বরাদ্দের অনুমতি পেয়েছে মেহেরপুর। সেই সঙ্গে আমঝুপিতে ‘মিনি স্টেডিয়াম’র ফলক উন্মোচন করা হয়েছে। গড়ের পুকুরের ওপর নতুন রূপে পার্কের কাজ শুরু হয়েছে। উন্নতির প্রতিরূপ হিসেবে স্কুল-কলেজে নতুন ভবন স্থাপন, নতুন মসজিদ নির্মাণ ও সংস্কারসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করণের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এক্ষেত্রে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হয় মেহেরপুর-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এমপি মহোদয়কে। এছাড়া তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হাসপাতাল নির্মান, সংস্কার ও আধুনিকীকরনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। আগামীর সম্ভাবনা আমাদের আধুনিক পথে দেখাবে এ আমাদের বিশ্বাস। মানুষের জীবন ও মানের উন্নতি সাধিত হয়েছে। অর্থ রোজগার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে সম্ভাবনার অসংখ্যা পথও। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়নকল্পে পেয়েছে অর্থ বরাদ্দ। জনমানুষের অর্থ সহায়তা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদানের ফলে স্বস্তি ফিরেছে নিম্নবিত্তের মাঝে। কৃষক তার নায্যমূল্যের পাশাপাশি শ্রমের মূল্যও পূর্বের চেয়ে অনেক গুণ বেশি পাচ্ছে। নদী খননের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের দ্বারা মানুষের আয়ের উৎস বৃদ্ধি পেয়েছে।

শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে মেহেরপুর সবসময়ই সমৃদ্ধ। মেহেরপুরের উন্নয়নের মুখপত্র বলা যেতে পারে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে। জীবনের প্রতি মুহূর্তের বোধকে কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও নাটক রচনার মাধ্যমে প্রকাশ ও মঞ্চায়ণের জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়া মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন উন্নতি সাধনে তৎপর ও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন স্তরের শিল্পীবৃন্দ জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। যা আমাদের গর্বের ও আনন্দের। মেহেরপুর লোকসংস্কৃতি ও বাউল সম্প্রদায় বাংলাদেশে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। সর্বোপরি, বলতে পারি বর্তমানে আমরা আধুনিক মেহেরপুর পেয়েছি। যা আমাদের অহংকার ও গর্বের।

‘মেহেরপুর প্রতিদিনে’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন মেহেরপুরের জন্য যেমন আনন্দের, তেমনি সৌন্দর্যেরও। সত্য, সুন্দর, মঙ্গল ও আনন্দদানই ‘মেহেরপুর প্রতিদিনে’র মূল লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সাফল্য ও মঙ্গল কামনা করছি।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।




এইসব অনাসৃষ্টি

আর কোন কবিতা লেখা হবে না,
আর কোন গান গাইবে না কেউ।
অঙ্গার-সোনার পার্থক্য ভুলবে না শিশুরা,
পাগলেরা পাইপয়সা হিসেব বুঝে নেবে।
কৈশোর দুলবে না লতার ঝুলনে,
কিশোরীর বেণী আর নাচবে না।

প্রতিদিন পত্রিকায় লাভক্ষতির খবর,
প্রতিদিন শোকহীন আনুষ্ঠানিক মৃত্যু।
মুর্খদের মুখে তড়বড়ে জ্ঞান,
শোষকেরা হবে শাসক তখন।
গোচারকেরাও মানুষের নেতার আসনে,
চুম্বক নীতিকথা রোজ চোরেদের ভাষণে।

শিল্পের সুকোমল শরীর বেটে
শিলনোড়া চেটে খাবে বাটপার-
পাখিদের পালক রোজ খসে পড়বে জলে,
তারপর ডুবে যাবে তারা, উড়বে না আর।
প্রতিদিন গন্ধ নতুন শরীর,
তারই নাম হয়ে যাবে প্রেম!

মাইক্রোফোনে রোজ নিয়ম করে
হুংকার দেয় হিংস্র দাতালের দল।
মনুষ্যত্ব নতজানু ধর্মের চাপাতি তলে,
ধর্মের ঘর হবে, মানুষ পথের ধুলোয়।
এইসব অনাসৃষ্টি সৃষ্টির দোরে-
ঈশ্বর, সাড়া দাও,কোথায়-কত দূরে?




বিষাদের মাশকারা

নীল নদের উগরে দেয়া সভ্যতায় পিরামিডের দুর্ভেদ্য প্রাচীর,

সেথা মমিদের দীর্ঘশ্বাসের শ্যাওলা।
বালিশের আঙিনায় ঘোর তমসা,
বিবর্ণ স্বপ্নেরা পথ হারায়।
মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, হাতছানি দেয়।
চারদিকে নামানুষের রোয়াব!!!
বিষাদের কালো মাশকারা মাখে
স্বপ্নময় দুচোখ।




শিউলি-শিহরণ

শিউলি ফুলের গন্ধ নিতেই
শিউলি কে আজ পড়লো মনে,
এইতো সেদিন আমরা দুজন
খুব খেলেছি আপন মনে!

খুব হেসেছি খুব কেঁদেছি
আলোয় ভরা জোছনা রাতে,
একটা পিঠা ভাগ করেছি
আর খেয়েছি একই সাথে !

মা বকেছে, বাবা-দাদাও
তবু যেতাম চুপটি করে,
ঠোঁট দু’টোকে তর্জনিতে
ছুঁয়ে দিতাম আদর করে!

এইতো সেদিন,খুব বেশি নয়
দু’দুটো যুগ হয়েই গেলো,
হয়নি দেখা তবুও মোদের
হয়নি বলা-শুনছো,হ্যালো!

আজ কবিতায় শিউলিমালা
গেঁথে দিলাম তোমার তরে,
শিউলি তুমি সুখেই থেকো
জোছনা হয়ে আঁধার ঘরে!




নির্ভরতার গণমাধ্যম : মেহেরপুর প্রতিদিন

কিথ রুপাট মারডককে বলা হয় নিডিয়া মোগল। বিশ্বমিডিয়াকে যিনি হাতের তালুই তুলে নাচাতে ভালবাসেন। বিশ্বে শক্তিশালী গনমাধ্যমগুলোর একচ্ছত্র মালিকানা তাঁর। ক্ষমতার উত্থান-পতনের ইতিহাসও রচিত হয় তারই ইঙ্গিতে। তাঁর এমন তৎপরতায় কোথাও তৈরি হয় মানবিক সংকট, আবার কোথাও বা বদলে যায় ক্ষমতার মানচিত্র।

মারডকের বাবাও ছিলেন একজন ধুরন্ধর মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। একবার তিনি এক নির্বাচনে বিজেতাকে কেন্দ্র করে বলেছিলেন, আমার কলম তাকে ক্ষমতায় এনেছে। এমন কথায় বিজেতা সংক্ষুদ্ধ হলে, মারডকের বাবা বলেছিলেন, এবার তাকে আমি ক্ষমতা থেকে সরাবো। মিডিয়ার এই অপতৎপরতা পৃথিবীর চেনা। তৃতীয় বিশ্বের এ পদ্ধতি অমোঘ টোটকা হিসেবে খুব কাজ দেয়। ওয়ান ইলেভেন পর্ব থেকে বাংলাদেশের মিডিয়া প্রশ্নোর্ধ উচ্চতায় থাকতে পারেনি। বরং বিপণ্ন করে তুলেছে তাদের স্বভাবিক গতিগুলো। এতে যে শুধু মিডিয়া কর্মী বা মিডিয়ার সাথে যুক্তরাই দায়ী এমনটি নয় । এদেশে বিচিন্তার রূপক হিসেবে খুব কম গণমাধ্যমেরই জন্ম হয়েছে বরং ক্ষমতালোলুপ ব্যবসায়ীরায় প্রকাশনার সাথে যুক্ত হয়ে গণমাধ্যমকে করে তুলেছে তাদের লাভের খামারবাড়ি।

গণমাধ্যমের এমন হারিয়ে ফুরিয়ে যাওয়া তেজদীপ্তহীনতার মধ্যে থেকেও এখনো একটা দুটো পত্রিকা দায়বোধের শিখা জ্বালিয়ে রেখেছে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিন তার অন্যতম। এই স্বীকৃতির একটি পোস্ট মর্টেম করা যেতে পারে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সূত্রের ভিওিতে।

প্রতিক্রিয়া হিসেবে মেহেরপুর প্রতিদিনের ভাগ্যে জুটেছে মামলা, প্রাণনাশের হুমকি ঘোষ প্রস্তাবসহ নানা হয়রানি। স্মরণ করা যেতে পারে সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেনের নিউজটি। যেটি ছিল অত্যন্ত যত্নপুষ্ট অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। যার প্রতিবেদকের নামে মামলা করা হয়। অবশ্য এ মামলায় বিজ্ঞ আদালতের পর্যবেক্ষণ এবং পত্রিকার বস্তুনিষ্ঠতা পরাজিত করে বাদী পক্ষকে।

আলোচিত হোটল আটলান্টিক কাণ্ডে জড়িত আইনজীবি, সাংবাদিক, মিডিয়া কর্মী কেউ ছাড় পাইনি। অনলাইন জোয়ার বিরুদ্ধে মেহেরপুর প্রতিদিন আপোষহীন। তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন যেমন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করেছে তেমনি একের পর এক উন্মোচন করেছে জোয়ায় জড়িত পোশাকি মানুষের মুখোশ, অসৎ দুর্নীতিবাজ ধান্দাবাজদের স্বরপ।

মেহেরপুর প্রতিদিনের দৃশ্যমান অর্জন অনেক। বেশ কিছু প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠতায় স্বপ্রনোদিত হয়ে আদালত মামলা করেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব মামলার সুফলও পেয়েছে ভুক্তভোগী জনগণ। স্বল্প সময়ের একটি গণমাধ্যমের এমন সফলতা সময় বিবেচনায় বিরল। এটি সম্ভব হয়েছে সংবাদপত্রের সৎভিত্তি আর নির্ভীকতার জন্য।

সৃজনশীলতা; সম্পাদকীয়তা, ব্যবস্থাপনা এবং সমন্বিত তৎপরতার উপর ভর করে মেহেরপুর প্রতিদিন হয়ে উঠেছে জনগণের একমাত্র নির্ভরতা; একমাত্র আশ্রয় ।