ঝিনাইদহে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে হানিট্যাপ চক্র

ঝিনাইদহে কথিত প্রেমের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সক্রিয় হানিট্র্যাপ চক্র। স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া বিয়ের কাবিননামা বানিয়ে ব্লাকমেইল করে কয়েকজন যুবকের কাছ থেকেও চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।

আইনজীবী সহকারি (মোহরার), পুলিশ সদস্যসহ চক্রটিতে জড়িয়ে পড়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। তবে চক্রটির মূলহোতা আসমা খাতুন সাথী নামের এক নারী।

তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভুয়া কাবিননামা বানিয়ে, ভুয়া কলরেকর্ড ফাঁসের হুমকি দিয়ে ও মামলার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা।

মঙ্গলবার ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ভিকটিমরা। এসময় হানিট্যাপ চক্রের মূলহোতা আসমা খাতুন সাথীর শ^শুর কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রতারক চক্রের মূলহোতা আসমা খাতুন সাথী দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মানুষকে ফাঁদে ফেলে থানায় ভুয়া অভিযোগ দিয়ে প্রতারণা করে আসছে। ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, অর্থ লেনদেনের মতো ভুয়া অভিযোগ দিয়ে একাধিক মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। পুলিশ ও আদালতের মোহরারকে দিয়ে মামলার ভয়-ভীতি ও গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে বহু মানুষকে হয়রানি করেছেন।

গুলশান আরা ও মর্জিনা খাতুন নামের দুই ভিকটিম অভিযোগ করেন, বারবার নিজের ঠিকানা পাল্টে, স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে আসমা খাতুন সাথীর নেতৃত্বে চক্রটি বহু পরিবারকে জিম্মি করে রেখেছে। মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে সহজ-সরল মানুষকে ফাঁদে ফেলে প্রতিনিয়ত তারা টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। আদালতের মোহরার ও কতিপয় অসাদু পুলিশ সদস্যদের নাম ভাঙিয়ে ওই নারী বেপরোয়া মামলাবাজি করে চলেছে।

ভিকটিমরা জানান, সাথী ও তার চক্রের ফাঁদে পড়ে তিনটি সংসার ভেঙে গেছে। অনেক পুরুষ মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নারীরা মামলার ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছে না। এ পর্যন্ত ঠিকানা বদল করে প্রতারক আসমা খাতুন সাথী খুলনা ও ঝিনাইদহের আদালতে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ভুয়া অভিযোগে ৮টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলার বিচারকার্য শুরুর আগেই চক্রটি কথিত বিবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভয়-ভীতি দেখান। এক পর্যায়ে সহজ সরল মানুষগুলো চক্রের ফাঁদে পড়ে লাখ লাখ টাকা দিয়ে মামলা থেকে রেহায় পাওয়ার চেষ্টা করে আসছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আসমা খাতুন সাথীর সাথে কথা বলতে তার ফোনে কল দেওয়া হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।




হ্যাকারদের দৌরাত্ম্যে বেকায়দায় কোটচাঁদপুরের ভাতাভোগীরা

বিকাশ ও নগদ হ্যাকারদের দৌরাত্ম্যে বেকায়দায় কোটচাঁদপুরের ভাতাভোগীরা। ফোন করে পিন নম্বর চাওয়ায় ভাতার টাকা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।

জানা যায়, কোটচাঁদপুর উপজেলায় ১৩ হাজার ৫৫৫ জন ভাতাভোগী রয়েছেন। তিন মাস পর পর মোবাইলে তাদেরকে দেওয়া হয় ভাতার টাকা। আর এ টাকা দেওয়ার সময় হলেই সক্রিয় হয়ে ওঠেন বিকাশ ও নগদ হ্যাকাররা। ফোন করে ভাতাভোগীদের কাছে চান পিন নম্বর। না দিলে ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে তাদের।

এদের একজন কোটচাঁদপুর তালসার গ্রামের আব্দুল সাত্তার। তিনি বলেন, আমার মা আমেনা খাতুন। উনার নতুন করে বিধবা ভাতার কার্ড হয়েছে। সোমবার রাতে হঠাৎ করে ফোন আসে ০৯৬৩৮৯৭০৬৮৮ নম্বর থেকে। বলেন, “আমি সমাজসেবা অফিস থেকে বলছি। আপনার মোবাইলের পিন নম্বরটা দিন। আপনার মায়ের টাকা এসেছে, পিন দিলে টাকা পাবেন।”

একইভাবে ওই নম্বর থেকে ফোন করা হয় তালসার গ্রামের আকিমুল ইসলাম সাজুর কাছে। তিনি বলেন, “রাত তখন ৯টা বাজে। ওই নম্বর থেকে ফোন করে বলেন, আপনি কি ওয়াদুদ ভুইয়া বলছেন? আমি সমাজসেবা অফিস থেকে বলছি। আপনার নামে টাকা এসেছে। পিন নম্বর দিলে টাকা দিতাম আপনাদের।”

এভাবেই একাধিক ভাতাভোগীর কাছে ফোন করে পিন নম্বর চাইছেন হ্যাকাররা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বশির আহম্মেদ। তিনি বলেন, “এ উপজেলায় মোট ১৩ হাজার ৫৫৫ জন ভাতাভোগী রয়েছেন। যার মধ্যে বয়স্ক ভাতা পান ৬ হাজার ২০৬ জন, বিধবা ২ হাজার ৯৭০ জন, প্রতিবন্ধী ৪ হাজার ৩৭৯ জন। যাদেরকে আমরা তিন মাস পর পর ভাতার টাকা দিয়ে থাকি। আর এ টাকা দেওয়ার সময় হলেই হ্যাকাররা সক্রিয় হয়ে ওঠেন।”

তিনি বলেন, “আজ সকাল থেকে ৭-৮ জন ভাতাভোগীর অভিযোগে জানতে পেরেছি, হ্যাকাররা টাকা নিতে তাদের কাছে পিন নম্বর চায়। তারা পিন নম্বর না দিয়ে অফিসে এসেছেন।”

কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর বলেন, “এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো জিডি বা অভিযোগ হয়নি। তবে এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে প্রায় সময় ভুক্তভোগীরা আসেন। এসব নিয়ে এর আগে অনেক জিডিও আছে থানায়।”




গাংনীতে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ইভটিজিং: যুবকের ১৫ দিন জেল

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের দায়ে আল-আমিন হোসেন (২৭) নামের এক যুবককে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মঙ্গলবার (২০ মে) বিকালে গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন এ আদালত পরিচালনা করেন। দণ্ডিত আল-আমিন হোসেন গাংনী উপজেলার বামুন্দি গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আল-আমিন হোসেন একই গ্রামের এক তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে নিয়মিত রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করতেন এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতেন। বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে এলে তারা আল-আমিনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাকে হাজির করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৫০৯ ধারায় তাকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদ্দাম হোসেন বলেন, “শিশুদের নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের অবস্থান জিরো টলারেন্স। কেউ এ ধরনের অপরাধ করলে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।”

এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় তারা সাধুবাদ জানিয়েছেন।




মেহেরপুরে গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

মেহেরপুর সদর উপজেলায় গ্রাম আদালত বিষয়ক দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. খায়রুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোজবাহ উদ্দীন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অ.দা.) নাসিমা খাতুন, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আনিসুর রহমান এবং গ্রাম আদালত প্রকল্প (৩য় পর্যায়) এর জেলা ম্যানেজার আসাদুজ্জামান।

কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন গ্রাম আদালত প্রকল্প (৩য় পর্যায়) এর উপজেলা সমন্বয়কারী আলমগীর কবির।

প্রশিক্ষণে ০১ নম্বর কুতুবপুর ও ০৬ নম্বর শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। এতে গ্রাম আদালতের গঠন, এখতিয়ার (ধারা ৬), ক্ষমতা (ধারা ৭), ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার বিচারযোগ্যতা (ধারা ৩), আদালত গঠনের আবেদন, সমন জারি, শুনানি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ক্ষতিপূরণ ও জরিমানা আদায়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

এছাড়াও ভিডিও প্রদর্শনীর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে বাস্তবধর্মী ধারণা প্রদান করা হয়।

আয়োজকদের আশা, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে আরও সচেতন ও দক্ষ হয়ে উঠবেন।




মেহেরপুরে ফ্রেণ্ডস ওয়াটারের জরিমানা, পড়শী বন্ধ

মেহেরপুরে দুটি পানির কারখানায় অভিযান চালিয়ে ফ্রেণ্ডস ওয়াটারের ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং পড়শীকে সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষনা দিয়েছে ভোক্তা অধিকার।

মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মেহেরপুরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসান এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে শহরের হোটেল বাজার এলাকার ফ্রেন্ডস ওয়াটার কারখানায় বিভিন্ন অনিয়ম পাওয়ায় কারখানার স্বত্বাধিকারী রিয়াজ মাহমুদকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অন্যদিকে, পড়শী ওয়াটার কারখানার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় সেটিকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সহকারী পরিচালক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়,এই দুটি কারখানা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পানি উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। এরপরই জেলা পর্যায়ে একটি টিম গঠন করে অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, কৃষি বিবরণ কর্মকর্তা রিয়াজ মাহমুদ এবং জেলা পুলিশের একটি টিম উপস্থিত ছিলেন।




আমঝুপিতে সরকারি বই বিক্রির প্রতিবাদ ও মউকের নির্বাহীকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন

মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপির বেসরকারি সংগঠন মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) এর বিরুদ্ধে সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ ও ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রতিষ্ঠান প্রধানের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে আমঝুপির ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও সুশীল সমাজ।

আজ মঙ্গলবার (২০ই মে) সকালে আমঝুপি বাজারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে সদর উপজেলার শিক্ষক কমিটির সভাপতি ফয়জুল কবির, আমঝুপি আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মারুফ আহমেদ, সহকারী প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি আঃ রাজ্জাক, ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি ফজলে রাব্বী, অভিভাবক এর পক্ষে তারিখ, আশিক, নাহিদ , নাছিমসহ স্থানীয় শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তৃণমূল মডেল একাডেমী ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্পের নতুন বই নিয়মবহির্ভূত ভাবে বিক্রয়, মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) শিক্ষা প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন।

বক্তারা বলেন, মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) যে বিচার করে তার কোন অধিকার তাদের নেই। বিচারের নামে তারা অর্থ আত্মসাৎ করে। তার কোন আইনি বৈধতা আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তারা মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) এর নির্বাহী প্রধানকে অতিসত্বর গ্রেপ্তারের দাবি জানান, তা না হলে আগামীতে বৃহৎ পরিসরে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।




জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুহাট

আসন্ন কোরবানিকে সামনে রেখে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুহাটে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় শুরু হয়েছে। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই হাটটি মেহেরপুর জেলার ঐতিহ্য বহন করে আসছে।

এই পশুহাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা গরুর দড়ি ধরে আছেন ক্রেতার আশায়, আবার ক্রেতারাও কোরবানির জন্য খুঁজছেন নিজেদের পছন্দমতো গরু, ছাগল ও ভেড়া। জেলার চাহিদা পূরণ করে কোরবানির পশু রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। এই সময় পশু বিক্রির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন খামারি ও নিজ বাড়িতে পশু পালনকারীরা।

কৃষকের বাড়িতে একটি-দুটি করে লালন-পালন হলেও খামারে রয়েছে অনেক গরু, ছাগল ও ভেড়া। অনেক কৃষক শখের বসে পারিবারিকভাবে মহিষ পালন করেন।

গাংনীতে বেশ কয়েকটি ছাগল ও ভেড়ার বাণিজ্যিক খামার থাকলেও পারিবারিক খামারেও ছাগল ও ভেড়া বেশি পালিত হচ্ছে। বসতবাড়িতে দু-একটি গরু পালন করা এখন অনেক পরিবারের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা বছর গরু পালনের পর এখন এসেছে বিক্রির সময়। গরু বিক্রির টাকায় মিটবে পরিবারের আর্থিক চাহিদা। বাড়তি অর্থ দিয়ে আবারও গরু কেনা হবে। এভাবেই চলে গরু পালনকারী পরিবারগুলোর চক্র।

গরু খামারি উপজেলার ষোলটাকা গ্রামের শাজাহান আলী বলেন, “শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি খামার করে, তাহলে বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি তারা স্বাবলম্বী হতে পারবে। সন্তানের মতো পরম আদর-যত্ন ও মমতায় গরুকে লালন-পালন করা হয়। খামারের গরুকে বিচালি, ঘাস, ভুট্টা, খৈলসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়। কোনো প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। নিজেরাই খৈল উৎপাদন করি, সেই খৈল খাওয়ানো হয়। খৈল থেকে প্রাপ্ত তেল দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গরু বিক্রি হয়েছে, ঈদের আগেই বাকিগুলো বিক্রির আশা করছি। চাহিদা আর ভালো দাম পেলে লাভবান হবো বলে আশা করছি।”

খামারি বালিয়াঘাট গ্রামের মোশাররফ হোসেন বলেন, “সরকার যদি খামারিদের বিনা সুদে ঋণ দেয়, তাহলে বেকার যুবকরা এ পেশায় এগিয়ে আসবে। আমার খামারে সারা বছর গরু লালন-পালন করা হয়। এবারও বেশ কিছু গরু আছে, যেগুলোর দেখভাল করে পুরো পরিবার। আমরা ন্যায্য মূল্যে লাভের আশা করছি।”

খামারি তেরাইল গ্রামের হেলাল উদ্দিন বলেন, “পারিবারিক খামারে গরু পালন করেছি। কোরবানির জন্য পশুগুলো বিক্রি করে দেব। এখন খুব ব্যস্ত সময় পার করছি কোরবানির পশু নিয়ে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সহযোগিতা করছে পশু পালনে। গো-খাদ্যের দাম বেশি এবং তীব্র গরমে পশু পালন করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।”

বামন্দী পশুহাটে গরু কিনতে আসা জিয়া হোসেন বলেন, “দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম। ছুটিতে বাড়ি এসেছি পরিবারের সঙ্গে ঈদ করব বলে। হাটে এসে দেখি গরু ও ছাগলের দাম অনেক বেশি। তারপরও কিনব। আজ হাটে পছন্দ না হলে আগামী হাটে আসব।”
আরেক ক্রেতা বলেন, “কোরবানির জন্য গরু কিনতে এসেছি। পছন্দ হয়েছে, তবে দাম অনেক বেশি। তারপরও কিনেছি। অনেকে এখনও পশু কেনার আগে দেখাদেখি করছে।”

ছাগল ব্যবসায়ী লালচাঁদ বলেন, “বামন্দী বাজারে বড় ছাগলের খুব চাহিদা। বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছাগল কিনে আনছি। গ্রামের লোকজন প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছাগল পালন করে এবং কোরবানির সময় সামনে রেখে বিক্রি করে দেয়। এবার ছাগলের দাম অনেক বেশি।”

গরু ব্যবসায়ী জোরপুকুর গ্রামের জামরুল বলেন, “এবার গরুর বাজারদর ভালো রয়েছে। হাটে পর্যাপ্ত গরু উঠেছে এবং গরুর চাহিদাও অনেক। আশেপাশে বামন্দীর মতো বড় হাট আর নেই। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আসেন এই হাটে।”

বামন্দী পশুহাটের ইজারাদার, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল বলেন, “বামন্দী পশুহাট মেহেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি হাট। প্রায় দুই শত বছরের পুরনো এই হাট জেলার গর্ব। সপ্তাহে দু’দিন, সোমবার ও শুক্রবার, হাট বসে। কেউ যাতে প্রতারণার শিকার না হয়, সেজন্য আমরা সবসময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। এ বিষয়ে প্রশাসনও তৎপর রয়েছে। কোরবানিকে সামনে রেখে সব ধরনের পশুর বেচাকেনা শুরু হয়েছে।”

মেহেরপুর গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১,৪০,৮৩৮টি। এর মধ্যে গরু ৪১,৫৭৮টি, ছাগল ৯৬,৮৪৫টি, মহিষ ৩৮৫টি এবং ভেড়া ২,০৩০টি। উপজেলায় কোরবানির চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪২ হাজার পশুর।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, “গাংনী উপজেলায় যে কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে, তা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অর্থাৎ, চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি পশুর যোগান রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় সবচেয়ে বড় পশুহাট হচ্ছে বামন্দী। সপ্তাহে দুই দিন, শুক্রবার ও সোমবার, এই হাট বসে। হাটে কোনো পশু অসুস্থ হয়ে গেলে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমাদের মেডিকেল টিম সেখানে মোতায়েন রয়েছে।”

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, “ঈদকে সামনে রেখে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য বামন্দী পশুহাটে পর্যাপ্ত পুলিশ, প্রশাসনের নজরদারি, জাল নোট সনাক্তকরণ মেশিনসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”




হরিণাকুন্ডুতে দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে আহত শতাধীক

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে অন্তত শতাধীক লোক আহত হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার চরপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠে নামে বাংলাদেশ সোনাবাহিনী।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শনিবার বিকেলে হরিণাকুন্ডুর চরপাড়া বাজারে মাছ কেনাবেচা নিয়ে চরপাড়া ও শৈলকুপা উপজেলার মাইলমারি গ্রামের লোকজনের মাধ্যে বাক-বিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়।

এছাড়া রোববার সকালে পার্শবর্তী পোড়াহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাইলমারি গ্রামের দুই ছাত্রকে মারধর করে চরপাড়া গ্রামের ৩ বহিরাগত ছাত্র। এরই জের ধরে দুই গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ৩ ঘন্টার বেশি সময় ধরে চলা এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত শতাধীক লোক আহত হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের উদ্ধার করে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

হরিণাকুন্ডু থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ রউফ খান জানান, ঘটনার বিষয় শুনার পর চরপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারায় পরবর্তীতে হরিনাকুন্ডু থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সহ আমি নিজেই ঘটনাস্থানে যায়।

পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীনির সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।




শৈলকুপায় মহাসড়কের উপরে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মহাসড়কের উপরে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে সড়ক বিভাগ।

সোমবার (১৯ মে) সকালে শৈলকুপা উপজেলা আসাননগর এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ অভিযান চালানো হয়।

সড়ক বিভাগ জানায়, মহাসড়কের আসাননগরে মহাসড়কের জায়গা দখল করে পাকা স্থাপনা তৈরী করেছিলো স্থানীয় বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম। বারবার জানানোর পরও তিনি স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করেন নি। যে কারণে সোমবার শৈলকুপার এসিল্যান্ড সিরাজুস সালেহীন’র নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। গুড়িয়ে দেওয়া হয় পাকা স্থাপনা।

সেসময় ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আহসান-উল-কবীর, সার্ভেয়ার সোহেল রানাসহ শৈলকুপা থানার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সহকারী প্রকৌশলী আহসান-উল-কবীর বলেন, মহাসড়কের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। মহাসড়কের আশেপাশে যেকোনো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। বারবার সতর্ক করার পরও নির্মাণ কাজ বন্ধ না করায় আজকের এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মহাসড়কের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে ভবিষ্যতেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চলবে। আমরা সকলকে অনুরোধ করছি, মহাসড়কের জায়গা দখল করে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করবেন না।




ঝিনাইদহে আম জনতা দলের আহ্বায়ক কমিটির আত্মপ্রকাশ

ঝিনাইদহে আম জনতা দলের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় দলটির জেলা আহ্বায়ক কমিটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ৭ মে ঝিনাইদহ জেলা আম জনতা দলের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় দলটির কেন্দ্রীয় সংসদ।

সোমবার (১৯ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এ পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন দলটির জেলা কমিটির উপদেষ্ঠা সাবেক অধ্যক্ষ মো. সায়েদুর রহমান, জেলা আম জনতার দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সদস্য সচিব মো. সৈকত হোসেন।

এর আগে গত ৭ মে আম জনতা দলের ঝিনাইদহ জেলার ১৯৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদনে দেয় দলটির কেন্দ্রীয় সংসদ। কেন্দ্রীয় আম জনতার দলের সভাপতি মিয়া মসিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী ৬ মাসের জন্য এ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন, জাহান লিমন, মুসকান রুবাইয়া মীরা, মইনুল হোসেন, রেজাউল ইসলাম, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, তুহিন আলম, মহিদুল ইসলাম, আল মামুন, নাজমুল হাসান জীম, উজ্জল হোসেন, কাশেম আলী, আশাদুল বিশ্বাস প্রমুখ।

সভায় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি আসিফ ইকবাল কাজল, সাবেক সভাপতি এম রায়হান, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লিটন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম জোয়ার্দার বাবলু, মাহমুদ হাসান টিপু সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আম জনতা দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী যেকোন অবস্থান ও আন্দোলনের সঙ্গে আম জনতা দল একসঙ্গে কাজ করবে। সার্বভৌমত রক্ষা, সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও বেকারত্ব নিরসনের লক্ষ্যে আমাদের দল কাজ করে যাবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ গ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক সংগঠন ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আমরা দেশের জন্য কাজ করতে চাই।