কবে শেষ হবে শান্তদের ‘শিক্ষা সফর’
প্রতিটি সিরিজে কিংবা টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার পরে বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি তুলে আনা হয়। ভক্তরা সেটিকে শিক্ষা সফর অভিধা দিয়েছেন। কিন্তু এই শিক্ষা গ্রহণের পর তার বাস্তবায়ন আর দেখা যায় না। ব্যাটিং ব্যর্থতার পরে সফলতার শিক্ষাটাই টাইগার বাহিনী নিয়ে আসছে বারবার। তবু সফল হতে পারছেন না নাজমুল হোসেন শান্তরা।
প্রতিটি ম্যাচেই বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার চিত্র এখন স্বাভাবিক প্রেক্ষাপটে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বাজে ফিল্ডিংয়ের অভিজ্ঞতা। তবে সবকিছু থেকে শিক্ষা গ্রহণকেও আসল ও প্রকৃত কাজ মনে করা হয় দলের পক্ষ থেকে। আজ বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হায়দরবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ কী জেতার উদ্দেশ্যে নামবে, নাকি শিক্ষা গ্রহণের জন্য, সেটি অনেকটাই পরিষ্কার ফিল্ডিং কোচ নিক পোথাসের কথায়।
গতকাল নিক পোথাস বলেছেন, ‘বিশ্বের সেরা দলের বিপক্ষে খেলতে গেলে অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিনই শিক্ষা নিতে হবে। যখনই শিক্ষা নেওয়া বন্ধ করে দেবেন, তখনই সমস্যায় পড়তে হবে। সুতরাং এটা কোনো ইস্যু হতে পারে না।’ বাংলাদেশকে নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা খুব সহজেই নির্ধারণ করে ফেলেন, ভালো ব্যাটিংয়ের পরে জয়-পরাজয়ের হিসাব। কিন্তু আমরা বিষয়টিকে এত সহজে দেখি না। আমরা সেই ভারতের বিপক্ষে খেলছি যারা বিশ্বের সেরা দল। আমরা প্রকৃতপক্ষে কী পাচ্ছি দলটির বিপক্ষে খেলে, সেটি যদি ভাবি তাহলে বলতে হবে, অনেক দেশ ভারতে এসে খেলে এটা তাদের বাজে পছন্দ। এখানে শিক্ষণীয় ব্যাপরটি দিয়ে পরিমাপ করতে হবে। আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছি, কীভাবে আমরা এগিয়ে আসতে পারি।’
পোথাস বলেছেন, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফি রয়েছে, অন্যান্য টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রয়েছে সেগুলো নিয়ে চিন্তা করছি। বাংলাদেশের কয়েক জন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রয়েছে, তাদের শেষ সময়কে কীভাবে কাজে লাগাতে পারি সেটি নিয়ে ভাবছি। আমরা সবসময় জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে নামি। কিন্তু বাস্তবতা বুঝতে হবে। আমরা খুবই ভাগ্যবান যে, আমরা ভারতে সফর করতে পেরেছি। এখান থেকে অনেক কিছুই শিখতে পেরেছি। আর সেই শিক্ষাটা প্রকৃত শিক্ষা, এখান থেকে অনুশীলনে আমরা অনেক কিছু কাজে লাগাতে পারব।’
বাংলাদেশ দল নিয়ে ফিল্ডিং কোচ বলেছেন, ‘খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত দক্ষতায় নজর দিতে হবে। একটি ব্যাপার মানতেই হবে, ফিল্ডিংয়ের দিক থেকে আমরা দারুণ ছিলাম। কারণটা হচ্ছে, ফিল্ডিংয়ে প্রতিপক্ষের কোনো প্রভাব নেই, পুরোটাই আমাদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে এখানে খেলোয়াড়দের অনেক কৃতিত্ব দিতে হবে ফিল্ডিংয়ের ব্যাপারে। এর এসেছি, যেটাও আগে কখনো ঘটেনি। গতদিন কী ঘটেছে এবং আজকে কী ঘটেছে, তা দেখার ব্যাপারে অনেকেই পারদর্শী। কিন্তু গত ১২ মাসে কী ঘটেছে তা মনে করতে পারছি না। গত ১২ মাসে অনেক উন্নতি হয়েছে। এখানে কোনো ম্যাজিক বুলেট নেই। আমরা যা দেখতে পারছি তা হচ্ছে এখানে গত ১২ মাসে অনেক উন্নতি হয়েছে। ফলে সেটা মেনে নিয়ে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত।’
বাউন্ডারি তুলে নেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘একটি কঠিন বাস্তবতা নিয়ে বলি, একজন খেলোয়াড় যদি ৯৫-১০০ কেজি ওজনের হয় আর আরেকজন যদি হয় ৬৫ কেজি হয়, তাহলে একজন তো বেশি দূরে বল পাঠাবেই। অবশ্যই এখানে কৌশল রয়েছে টাইমিং রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত এটি নিয়ে কাজও করে যাচ্ছি। আইপিএলের দিকেও তাকাতে হবে। আইপিএল পৃথিবীর সেরা টুর্নামেন্ট। খেলোয়াড়দের দক্ষতা মিলিয়ে দেখলে দারুণ টুর্নামেন্ট। আইপিএল খেলোয়াড়দের তৈরি করে দেয় আন্তর্জাতিক মঞ্চের জন্য। ফলে এখানে আপনি পুরো ভিন্ন দুটি জিনিসের তুলনা করছেন যে ভারতের কয়টি ছক্কা এবং আমাদের কয়টি ছক্কা। এটা অনেকটা এমন হয়ে গেল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কয়টি ছক্কা মেরেছে আর আমরা কয়টি মেরেছি। তারা অনেক শক্তিশালী ক্রিকেটার। আমরা অন্য বিষয় নিয়ে উন্নতি করছি। কিন্তু জেনেটিকস নিয়ে তো আর লড়াই করতে পারব না।’
বাইরে ব্যাটিং-বোলিংয়ে যদি তাকান, একটি কাজ ভারত সব সময় করবেই, তা হচ্ছে তারা অনেক চাপে ফেলবে। কারণটা হচ্ছে তাদের দক্ষতা। শিক্ষাটা হচ্ছে, কীভাবে লম্বা সময় ধরে চাপটা সামাল দেওয়া যায়। কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পরিবর্তন আসতে থাকবে। ভারতে খেলতে পারাটা সম্মানের ব্যাপার। যখন বিশ্বের সেরা দলের বিপক্ষে খেলা হয়, তখন বুঝতে সাহায্য করে কোথায় উন্নতি প্রয়োজন।’ সফলতার প্রসঙ্গ নিক পোথাস বলেছেন, ‘আমার মনে হয় আমরা দ্রুত ভুলে যাচ্ছি। পাকিস্তান থেকে মাত্রই সিরিজ জিতে আসলাম, যেটা আগে আমরা কখনো করে দেখাতে পারিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সেরা আটে খেলেছে, যেটা আগে কখনো ঘটেনি। নিউজিল্যান্ড সফর থেকে আমরা এসেছি সেখানে ১টি করে ম্যাচ জিতে।
ব্যাটিং ব্যর্থতা বিষয়ে নিক পোথাস মনে করেন, ‘আমরা দারুণ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে খেলছি। দুই দলের পার্থক্য দেখলে বোঝা যাবে। টপ অর্ডারে ইমন ২ ম্যাচ খেলেছে। হ্যাঁ, দলে অভিজ্ঞরাও রয়েছে। ব্যাটিংয়ের কথা ধরলে আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যাটিং করতে পারিনি। অবশ্যই ১৭০-১৮০ রান করতে পারতাম। তারা ২২০-২৩০ করুক বা যাই করুক, সেটা বোলিংয়ের ব্যাপার। সেটা আমি মেনে নিচ্ছি। আমাদের আরও বেশি রান করা দরকার ছিল। দারুণ উইকেট ছিল। ভারতও অনেক ভালো বল করেছে। আমরাও ম্যাচের অনেক সময়ে অনেক সুযোগ নিতে পারিনি।’