গাংনীতে সড়কে প্রাণ হারালেন প্রতিবন্ধী নারী

মেহেরপুরের গাংনীতে গরু বোঝাই দ্রুতগামি স্যালোইঞ্জিন চালিত লাটাহাম্বার চাকায় শাড়ি আটকিয়ে প্রাণ হারালেন নিছারন নেছা (৫৫) নামের এক মানসিক প্রতিবন্ধী।

শনিবার (২৭ জুলাই) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলার চোখতোলা মাঠ নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিছারন নেছা উপজেলার কাষ্টদহ গ্রামের আব্দুল মোতালেবের মেয়ে। ঘটনার পরপরই লাটাহাম্বার চালক ও গরুর মালিকরা গরু নিয়ে পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, মানসিক প্রতিবন্ধী নিছারন নেছা চোখতোলা হতে জোড়পুকুরিয়ার দিকে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন। গরু বোঝাই লাটাহাম্বারটি বামন্দী থেকে গাংনীর দিকে আসছিলো। দ্রুত গতির লাটাহাম্বারটি ঢালাই রাস্তা থেকে নতুন নির্মিত রাস্তায় নামার সময় স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই নারীর উপর উঠে যায়। এসময় চাকার সাথে শাড়ি আটকিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এর পরপরই পালিয়ে যায় লাটাহাম্বার চালক ও গাড়িতে থাকা গরু ব্যবসায়ীরা।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: তাজুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে।




পানি সংকটে পাট জাগ দিতে না পারায় কুষ্টিয়ায় কমছে পাটের আবাদ

চলতি বছর কুষ্টিয়ায় পাটের আবাদ কমেছে ৯০ হাজার বিঘা জমিতে। ন্যায্য দাম না পাওয়ার পাশাপাশি পাট জাগ দেওয়ার খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়া এবং আশানুরূপ ফলনা না হওয়া, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় আবাদ কমেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, এবার অধিকাংশ কৃষক ধান চাষ করেছেন।

তবে পাট অধিদপ্তরের দাবি, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় কমেছে পাটের আবাদ। আর কৃষি বিভাগ বলছে, পাট চাষে আগ্রহী করার জন্য কৃষকদের প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুবিধা ও বিকল্প পদ্ধতিতে পাট পঁচানোর পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে চাষিদের।

জেলা পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় চলতি বছরে পাট চাষ হয়েছে ৮৬ হাজার একর জমিতে। অথচ পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার একর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৯ হাজার (৯০ হাজার বিঘা) একর জমিতে পাটের আবাদ কমেছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ একর। আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ১৫ একর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৪ লাখ বেল পাট।

চাষিদের দাবি, পাটের ফলন ভালো হলেও চাষিরা নানা সমস্যায় ভোগেন। আগের বছরগুলোতে অনাবৃষ্টির কারণে পুকুর, খাল-বিল ও নালাগুলোতে পানি ছিল না। যে কারণে কৃষকরা পাট জাগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় সমস্যায় পড়েছিলেন। পানির ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে পুকুর ভাড়া করে সেখানে পানি দিয়ে পাট জাগ দিয়েছেন। তাতে খরচ আরও বেড়ে যায়।
অনেকেই জমিতেই বাঁধ তৈরি করে পানি জমিয়ে কাদামাটি দিয়ে পাট জাগ দিয়েছেন। এতে পাটের মান নষ্ট হওয়ায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কৃষক। খাল-বিল সংস্কার করে পানি প্রবাহ ঠিক রাখলে পাট পচানো সম্ভব। এর ফলে পাটের আবাদ বৃদ্ধি পেতে পারে।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা গ্রামের কৃষক আবু হোসেন আলী বলেন, আমি নিয়মিত পাট চাষ করতাম। পাট চাষে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। পাট পচানো পানি আর শ্রমিকের অভাব থাকা সত্বেও পাঠ চাষ করতাম। এতো কিছুর পরেও ন্যায্যমূল্য পাইনি।

একই উপজেলার কাতলামারি গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ঠিকমতো পানি পাওয়া যায় না পাট পচানোর জন্য। প্রচণ্ড রোদ ও গরমের কারণে মাঠেই পাট নষ্ট হয়েছে। অনেকেরই জমিতে পাট বের হয়নি। তাই এবার পাটের আবাদ কম হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া গ্রামের কৃষক মনছের আলী বলেন, পাট চাষ করলে বিপদে পড়তে হয়। পাট বিক্রি করে এখন খরচও উঠে না। আর পাট জাগ দেওয়ার পানি নেই খাল-বিলে। এজন্য পাটের আবাদ কমছে। অনেক কৃষকই এখন পাটের বদলে অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছেন।

মশান গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান শাহ বলেন, গতবার আমি তিন বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলাম। যে টাকা খরচ করেছিলাম সেটাও আসেনি। তাই এবার পাট চাষ করিনি।

মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ গ্রামের কৃষক সবুজ আলী বলেন, পাট পচানোর জন্য কোনো উন্মুক্ত জলাশয় না থাকায় চাষিরা এই ফসল চাষ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। খাল-বিল সংস্কার ও দখল হয়ে যাওয়া জলাশয় উন্মুক্ত ঘোষণা করলে পাট চাষ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা পাট চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ পরামর্শ দিচ্ছি। এ বছর কৃষকরা পাট চাষ কম করেছেন। আশা করছি, দাম ভালো পেলে আগামীতে পাট চাষ বৃদ্ধি পাবে।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সুফি মোঃ রফিকুজ্জামান বলেন, জেলায় চলতি বছরে পাট চাষ হয়েছে ৮৬ হাজার একর জমিতে। অথচ পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার একর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৯ হাজার (৯০ হাজার বিঘা) একর জমিতে পাটের আবাদ কমেছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ একর। আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ১৫ একর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৪ লাখ বেল পাট।

তিনি আরও বলেন, সরকার পাট চাষ ও বীজ উৎপাদনে কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে। পাটের আবাদ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দখল হয়ে যাওয়া খাল-বিল ও প্রাকৃতিক জলাশয় উদ্ধারে কাজ চলছে।

কুষ্টিয়া জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শক সোহরাব উদ্দিন বলেন, পাটের আবাদ বৃদ্ধি করতে কৃষকদের সার ও বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারণে পাটের আবাদ কমেছে। আশা করছি, আগামীতে পাটের আবাদ বৃদ্ধি পাবে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা বলেন, পাটের আবাদ কমে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাট চাষিদের পাট পচানোর সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাট চাষ বৃদ্ধিতে কৃষক পর্যায়ে প্রণোদনা বৃদ্ধি করা হবে।




গাংনীতে জমি নিয়ে সংঘর্ষ; একই পরিবারের তিনজন আহত

জমির পথ ও ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে সৎ ভাইয়ের মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষে তিন জন আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে গাংনী উপজেলার চরগোয়াল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আহতরা হলেন, চরগোয়াল গ্রামের স্কুলপাড়া এলাকার খেদালি মোল্লার সানারুল ইসলাম (৫৫) তার ভাই শাহিন আলী (৪৫) ও ভাইস্তে বানারুল ইসলামের ছেলে রাজিব হোসেন (২২)।

আহত সানারুল ইসলাম জানান, ১ বিঘা জমির ভাগাভাগি ও পথ নিয়ে কালুর ছেলে আব্দুল্লাহ ও সিরাপ আলীর সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ গ্যাঞ্জাম চলছিল। গতরাতে এ নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আব্দুল্লাহ ও সিরাপ আলীর নেতৃত্বে তাদের নারী সদস্য মঞ্জুরা, আঙ্গুরা, জেলেহার ও তাদের লোকজন আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।




গাংনীতে মশার কয়েলের আগুনে ভস্মীভূত কৃষকের গোয়ালের গরু ও ছাগল

গাংনীতে মশার কয়েল থেকে সৃষ্ট ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে আরমান আলী নামের এক কৃষকের গোয়াল ঘরে থাকা ১ টি গরু ও ৪ টি ছাগল পুড়ে ভস্মিভূত হয়েছে। একই সাথে পুড়েছে আরমান আলীর খড়ির ঘর ও রান্না ঘর। এসময় গরু ছাগল বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন গৃহকর্তা আরমান আলী। সে বর্তমানে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দিবাগত মধ্যরাতে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের উত্তরপাড়ায় এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আরমান আলী।

জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড় টার দিকে আরমান আলীর গোয়ালঘরে মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। আগুন মুহূর্তে গোয়ালঘর থেকে পাশের রান্নাঘর ও খড়ির ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় পরিবারের লোকজনের হৈ চৈ শুনে প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসেন। আগুন ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টার পাশাপাশি বামন্দী ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। খবর পেয়ে বামুন্দী ফায়ার সার্ভস ও সিভিল ডিফেন্সের পানি বাহী গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও ততক্ষনে আরমান আলীর গোয়াল ঘরে থাকা ১টি গরু ও চারটি ছাগল পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। এছাড়া ছাগল ও গরু পুড়ে ভস্মিভূতের পাশাপাশি বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য কাওছার আলী অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, এবিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

আরমান আলী বলেন, গরু ও ছাগলকে মশা থেকে সুরক্ষা দিতে গোয়াল ঘরে কয়েল ও নুন্দি জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল। মশার কয়েল থেকে সৃষ্ট হয়েছে আগুনের সূত্রপাত। আগুন লাগার সাথে সাথে পরিবারের সদস্যরা পানি ছেটানোর পাশাপাশি পাড়ার লোকজনকে ডাকি। তারাও ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সব চেষ্টায় ব্যার্থ। আগুনে পুড়ে আমার সবকিছু শেষ হয়েছে।




মেহেরপুর বিএনপি-জামায়াতের তিন নেতা গ্রেফতার

পুলিশের দায়ের করা বিস্ফোরক ও নাশকতার মামলায় গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ বিএনপি ও জামায়াতের তিন নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, গাংনী উপজেলার ধর্মচাকি গ্রামের মৃতু বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেমের ছেলে ও সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু (৫৮), সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের মৃত আতাহার আলীর ছেলে স্থানীয় বিএনপি নেতা আসাদুল ইসলাম(৫০) ও মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালি গ্রামের আবু জাফরের ছেলে জামায়াত রোকন জিনারুল ইসলাম (৪৩)।

গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলুকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে গাংনী উপজেলা শহরের চৌগাছা গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আজ শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে কুতুবপুর গ্রামে তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি নেতা আসাদুল ইসলামকে ও ভোররাতের দিকে সুজিবনগর উপজেলার মোনাখালি গ্রামে নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জামায়াত রোকন জিনারুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশের পৃথক টিম।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: তাজুল ইসলাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কনি মিয়া ও মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জ্বল দত্ত এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসাদুজ্জামান বাবলুকে গাংনী থানার পুলিশের দায়ের করা নাশকতা মামলা নং ২০, তারিখ

১২/১১/২৩ ইং, বিএনপি নেতা আসাদুল ইসলামকে বিস্ফোরক আইনে ২০২৩ সালে সদর থানা পুলিশের দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলা নং ৩১ ও জামায়াত নেতা জিনারুল ইসলামকে ২০২৩ সালে পুলিশের দায়ের করা নাশকতা ও বিস্ফোরক আইন মামলা নং ১৯ গ্রেফতার দেখিয়ে আজ শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

গাংনী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম, সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কেএম রেজাউল হক ও মুজিবনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেন।

এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুন এই গণগ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারের যুলুম নির্যাতনের অংশ হিসেবে বিএনপির নেতা কর্মীদের গণগ্রেফতার চালাচ্ছে সরকার। অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তি দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনার পর মেহেরপুরে গত কয়েকদিনে বিএনপি জামায়াতের অন্তত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।




দর্শনা সীমান্তপথে ফিরে গেলেন কলকাতার ২৮ সদস্যের সাংস্কৃতিক দল

বাংলাদেশের কুমিল্লা, ব্রাক্ষনবাড়িয়া, ইলিশের জেলা চাদপুর,গাজিপুর, ঢাকা ও কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমীতে সংগীত নৃত্য, কবিতাবৃতি ও একক অভিনয় করে মাতিয়ে গেলেন জি বাংলা ক্ষ্যাত কলকাতার ২৮ সদস্যের একটি সাংস্কৃতিক দল।

গতকাল বুধবার ভোরে সাংস্কৃতিক দলটি রিজার্ভ গাড়িতে করে দর্শনায় এসে পৌছিলে দর্শনা বাউল পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের লোকসংগীত শিল্পী ধীরু বাউল তাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ও জয়নগর চেকপোস্টে নিয়ে যান। ভারতের প্রখ্যাত প্রভাবশালি কলকাতার বিশ্ববংগ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি ডঃ রাধাকান্ত সরকার জানান বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রোগ্রাস করার জন্য চলতি মাসের ১০ জুলাই কলকাতা থেকে রিজার্ভ শ্যামলী পরিবহন যোগে পেট্রাপোল-বেনাপোল হয়ে ঢাকায় আসা হয়েছিল।

বাংলাদেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরে প্রগ্রাম করতে করতে দেশের পরিস্থিত অনুকুলে না থাকায় চলে যেতে হল। ডঃ রাধাকান্ত সরকার জানালেন ২৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ভারতের প্রখ্যাত বাউল শিল্পী সনজিত মন্ডল, জি বাংলার প্রতিযোগীয় অংশ নেয়া নৃত্য শিল্পী অনিমা কৈরালা, বিভাস মন্ডল, আরতি বসাক, বিন্দাসুধা ধর, ফিল্মের ও “আমি কলকাতার রসগোল্লা” ক্ষ্যাত গানের শিল্পী বিরালা মাইতি, কলকাতার সৃষ্টি গংগা সাগর ড্যান্স একাডেমীর নৃত্য শিল্পী, কবি চিত্তরন্জন বসু সহ বেশ নামকরা শিল্পীরা এসেছিল। দেশের সার্বিক অবস্হার কারনে এবং প্রগ্রাম থাকা সত্বেও বিদায় নিতে হচ্ছে।ইমিগ্রেমন ও কাস্টমসের কার্যক্রম শেষে ঐদিন সকাল ১০ টার দিকে প্রতিনিধি দলটি ভারতের উদ্দেশ্যে দর্শনা সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করেন।




মুজিবনগরে নেপিয়ারে স্বাবলম্বী কৃষক

মেহেরপুরের মুজিবনগরে নেপিয়ার ঘাস চাষ করে গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত ঘাস বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক চাষি ও খামারি। চাষ সহজ হওয়ায় এবং একবার রোপণে অনেক দিন ঘাস পাওয়ায় উপজেলার অনেক কৃষক এবং খামারি এখন ঝুঁকছেন নেপিয়ার চাষের দিকে। প্রতিটি উপজেলাতেই এখন কম-বেশি এই ঘাসের চাষ হচ্ছে। অনেকে আবার নেপিয়ার বিক্রিকে পেশা হিসেবে নিয়ে সচ্ছলতা অর্জন করেছেন। খড়ের (বিচালি) দাম বেশি হওয়ায় বেশির ভাগ গরুর খামারিরা বর্তমানে নেপিয়ার ঘাস দিয়ে গবাদিপশুর খাদ্যের চাহিদা পূরণ করছেন। অধিক পুষ্টিগুণ থাকায় এই ঘাস পশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মাংস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই সুস্থ-সবল পশু পালনে সবুজ ঘাস হিসেবে নেপিয়ারে গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। নেপিয়ার ঘাস দেখতে আখের মতো। ৪ থেকে ১০ ফুট বা তার চেয়েও বেশি লম্বা হয়। দ্রুত বাড়ে, সহজে জন্মে, খরাসহিষ্ণু, পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য এই ঘাস।

মানিকনগর গ্রামের নেপিয়ার ঘাস চাষি ইয়াসিন মোল্লা জানান, প্রথমে তিনি নিজের গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য ১০ কাঠা জমিতে নেপিয়ার লাগান। অতিরিক্ত ঘাস বিক্রি করা শুরু করলে তাঁর চাষের খরচ উঠে আসে। বিষয়টি লাভ জনক মনে হওয়ায় তিনি নিজের জমিসহ লিজ নেওয়া ৫ বিঘা জমিতে আবার নেপিয়ারের চাষ করেন। ঘাস বিক্রি করে সে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করাই তাঁর পেশা। ইয়াসিন মোল্লার মতো এলাকার অনেকেই এখন এই ঘাস বিক্রিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

নেপিয়ার ঘাসের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্ষার শুরুতে ঘাসের শিকড় বা চারা রোপণ করতে হয়। রোপণের আগে প্রতি একর জমিতে দেড় থেকে দুই টন গোবর সার মিশিয়ে দিতে পারলে ভালো হয়। গোবর সার না দিলে পরিমাণ মত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতিটি সারির মাঝে দূরত্ব রাখতে হয় দুই-তিন ফুট। প্রতিটি চারার মাঝে দূরত্ব থাকবে দেড় ফুট করে। চারা বা শিকড় লাগানোর পর যদি রোদ হলে বা মাটিতে রস কম থাকলে সেচের প্রয়োজন হয়। সাধারণত প্রতি একর জমিতে সাত থেকে আট হাজার চারা বা শিকড়ের দরকার হয়। ভালো ফলন ও বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সার এবং পানি দিতে হয়। প্রথমবার ঘাস কাটার পর বিঘাপ্রতি ২০ কেজি ইউরিয়া ও ১০ কেজি পটাশ সার দিলে এই ঘাস দ্রুত বাড়ে।
রতনপুর গ্রামের গরুর খামারি মাইকেল টুইস মন্ডল বলেন, ‘বর্তমানে খড়ের দাম অনেক বেশি। কিন্তু কিনতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে না। দানাদার খাদ্যের দামও বাড়ছে। এসব কারণে খড়ের বিকল্প হিসেবে নিজের ১ বিঘা জমিতে নেপিয়ার চাষ করে অল্প পরিমাণ বিচালির সঙ্গে মিশিয়ে গবাদিপশুকে খাওয়াচ্ছি।’

মুজিবনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, ‘থাইল্যান্ড থেকে এই ঘাস আমাদের দেশে এসেছে। এর উৎপাদন খরচ কম। অন্যান্য ঘাসের তুলনায় বেশ পুষ্টিকর। একবার রোপণ করলে ৪ থেকে ৫ বছর ফলন পাওয়া যায়। তাই উপজেলার কৃষক ও খামারিরা নিজেরাই এই ঘাস উৎপাদনে ঝুঁকেছেন। অন্যান্য ফসলের চেয়ে এখন ঘাস চাষে লাভ বেশি হচ্ছে। নেপিয়ার ঘাস চাষে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস কৃষক ও খামারিদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে।




মেহেরপুরে পাট চাষিদের সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে না

মেহেরপুরে চলতি মৌসুমে পাট চাষ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা সমস্যায় উৎপাদন বিপর্যয়ের শঙ্কা ন্যায্যমুল্য না পাওয়া পোকার আক্রমণসহ বিভিন্ন সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে কৃষকদের। পাট চাষে মৌসুমের শুরুতে দেশব্যাপী চলা দাবদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে তুলনামূলক ভাবে পাট বেড়েছে কম, আর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ছোট ছোট পাট গাছেই ধরেছে ফুল ও ফল। বৃষ্টি না হওয়ায় সেই সঙ্গে মরছে গাছও। এর মাঝে বেড়ে ওঠা পাটে শেষ সময়ে এসে দেখা দিয়েছে পানির সমস্যা। অনাবৃষ্টির কারনে খাল, বিল ও পুকুর ডোবাই পানি না থাকায় পাট পঁচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। স্যালোমেশিনে পানি দিয়ে পাট পঁচানো হলেও পাটের দাম না পাওয়ায় খরচের অর্ধেক টাকাও উঠছেনা চাষিদের।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আষাঢ়ের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে চাষিদের জমি থেকে পাট কেটে জাগ দেয়ার কথা। সেই জমিতে আবার আউশ ধানের চারা রোপন করা হয়। অথচ খাল বিল ও কাজলা নদীতে পানি না থাকায় পাট পঁচানো সম্ভব হচ্চেনা। পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। জমি থেকে পাট কাটতে না পারায় ধানের আবাদও করতে পারছেননা চাষিরা। ফলে ধানের আবাদ থেকে পিছিয়ে পড়ছেন অনেকেই। আবার অনে কৃষক চাষ করে শেষ পাট গাছে তিড়িং পোকার আক্রমণের সাথে যোগ হয়েছে জমি থেকে ওঠে আসা লবণাক্ততা। যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দুর্বল হয়ে মরে যাচ্ছে পাট গাছ। আর বাকি গুলোতে তিড়িং পোকার আক্রমনে পাতা শুন্য হয়ে যাচ্ছে গাছ। যেখানে প্রতিটি পাট গাছ বেড়ে ওঠে ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতায়। সেখানে অনাবৃষ্টির কারনে পাট সেভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি। ৪ থকে ৫ ফুট হওয়ার সময় পাট গাছ মরে যাচ্ছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী কৃষকরা।

কৃষকরা বলছেন, পোকার আক্রমণ ও আবাদি জমিতে লবণাক্ততা থেকে রক্ষা পেতে কৃষি বিভাগের পরমর্শ নির্দেশনা মানার পরও মিলছে না কোন সমাধান। ফলে এবছরেও অনেকটাই নিশ্চিত দাম ও ফলন বিপর্যয়ের কারনে পড়তে হবে লোকশানে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুরের তিনটি উপজেলায় ১৬ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এতে জেলায় এবছর ২লক্ষ ৪০ হাজার ৬৩৬ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আগামও রোপনকৃত সব পাটই প্রায় মেচিওউর হয়ে গেছে তারপরও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে এমনটি ঘটছে। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের পাট চাষি হাবিবুর রহমান ও আব্দুল আলিম বলেন,এবছর পাট চাষ করে বিপদে পড়ে গেছি। শুরুর দিকে ছিলো প্রচন্ড রোদ সাথে ছিলোনা উপর বৃষ্টি। যার ফলে পাট উচ্চতায় এমনিতেই দেড় দুই ফিট কমে গেছে। সেচের জন্যও গুনতে হয়েছে বাড়তি খরচ। আর এখন শুরু হয়েছে তিড়িং পোকার আক্রমন ও পাটের জমিতে লবন ওঠে আসা। যে কারনে পাটের উৎপাদন তিন ভাগের এক ভাগই কমে যাবে।

নওয়াপাড়া গ্রামের পাট চাষি সাহাবুদ্দিন বলেন, এবার পাট চাষে খরচ বেশি হয়েছে। বিপরীতে পাটের অবস্থা তুলনামূলক খারাপ। তারপরও অধিক পরিচর্যার কারনে মাঠে থাকা পাট কোন মতে টিকে আছে। কম সময়ের মধ্যে পাট কাটা শুরু হয়ে যাবে। পানির অভাবে পাট কাটতে পারছিনা। এবছর ধলার বিল ও কাজলা নদীতেও পানি নেই। তাই পাট জমিতেই পড়ে আছে। এসময় মাটির নিচ থেকে লবণ বের হয়ে জমির অর্ধেক পাট মরে লাল হয়ে শুকাতে শুরু করেছে। সেচ দেয়া বলেন আর কিটনাশক প্রয়োগ করা। কত কিছুই না করলাম, তাতে কোন লাভ হয়নি। মধ্যে থেকে খরচ করাটাই লোকসান। গত বছরেও দাম না পেয়ে পাটের আবাদে লোকসান করেছি, এবার পাট চাষে করে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

মাইলমারি গ্রামের পাট চাষি আকবার আলী জানান, এমনিতেই বৃষ্টির অভাবে এবার পাট বুনতে একটু দেরি হয়েছে। তারপরে বেড়েছে কম। আর শেষ সময় পাটক্ষেতগুলোতে হানা দিয়েছে তিড়িং পোকায়। পাটের ডগা-কাণ্ড ও পাতা কেটে ফেলেছে পোকাগুলো। যার ফলে মাঠে এ পাট এখনো এক মাস থাকলেও কোন লাভ হবে না। মণ প্রতি ১০ থেকে ১২ কেজি করে ফলণ কমে যাবে। তারপর বতর্মান বাজারে আবার পাটের দাম কম। যেখানে এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করে ফসল ঘরে তুলতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। সেখানে সমুলে পাট পাওয়া যাবে ১০ থেকে ১২ মণ। আমাদের অঞ্চলে পাটের দাম নেই। বর্তমানে প্রতিবেল কাচাঁ পাট বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা বেল। এতে উৎপাদনের অর্ধেক টাকাও উঠছেনা। যার ফলে এবছরেও পাট চাষে লোকশানে পড়তে হবে। পাট নিয়ে এমন হতাশার গল্প শোনান, ধলা গ্রামের ইদ্রিস আলী, সামসুল আলম, হান্নান আলীও মেছের মন্ডল। তারা জানান এমনটি চলতে থাকলে আর আগামীতে পাট চাষ করবেন না।

পাট ব্যাবসায়ী মহিবুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১৯”শ থেকে ২ হাজার টাকা পযর্ন্ত। তাছাড়া বিশ্ব বাজারে পাটের চাহিদা কম থাকাই স্থানীয় বাজারে চাহিদা কমে গেছে পাটের। আমাদের জেলায় অধিকাংশ পাট ব্যাবসায়ীর গোডাউনেই রয়েছে পুরানো পাট। তার উপর আবার যদি নতুন পাট বাজারে আসে। এমনিতেই পাটের বতর্মান বাজারদর আরো কিছুটা কমে যাবে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, বর্তমানে জেলায় যে সকল জমিতে পাট কেটে আউশ ধানের আবাদ করা হয় সেসকল অধিকাংশ পাট প্রায় মেচিউর হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে পাট কাটা ও জাগ দেয়া শুরু হয়ে গেছে। এ শেষ সময়টিতে মাটির নিচ থেকে লবণাক্ততা বের হওয়ার কারনে অনেক জমির পাট মারা যাচ্ছে। আবার তিড়িং পোকায় পাটের পাতা ও ডোগা কাটছে। এ থেকে পাটকে রক্ষার জন্য জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া এখন বৃষ্টির সময়, পর্যাপ্ত বৃষ্টি পাত হলে তিড়িং পোকার আক্রমণ ও লবণাক্ততার কারনে পাট মরে যাওয়ার হাত থেকে কৃষকরা রক্ষা পাবে। এছাড়াও পাটের জমিতেই একটি অংশে গর্ত করে সেখঅনে পাট পঁচনের ব্যবস্থা করতে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।




মেহেরপুরে কৃষিতে বিশেষ অবদানে উদ্যোক্তাদের সম্মাননা প্রদান

মেহেরপুরে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ খাতে বিশেষ অবদান রাখায় জেলার বিভিন্ন গ্রামের ছয় জন কৃষি উদ্যোক্তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির প্রধান কার্যালয়ে বর্ণাঢ্য অয়োজনের মধ্যদিয়ে কৃষি উদ্যোক্তাদের সম্মানা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বে-সরকারি সংস্থা পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি (পিএসকেএস)।

সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলান নির্বাহী অফিসার (ই্উএনও) প্রীতম সাহা।

বিশষ অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: সাদ্দাম হোসেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: ইমরান হোসেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাক্তার আরিফূল ইসলাম।

সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো: রমজান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মুহা: মোশাররফ হোসেন, পরিচালক মো: কামরুজ্জামান, উপ-পরিচালক (ঋণ কার্যকর্ম) কামরুল আলম, সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ) সাইফুল ইসলামসহ বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাবৃন্দ।

কৃষি উদ্যোক্তা সম্মাননা অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় জেলার কৃষিতে উন্নয়ন ও কৃষকদের ভুমিকা নিয়ে প্রসংশনীয় বক্তব্য রাখেন অতিথিবৃন্দরা। বক্তব্য শেষে ছয় জন কৃষি উদ্যোক্তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন।

সমন্বিত কৃষি ইউনিটভুক্ত কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ খাতের কর্ম তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনটি খাতের কৃতিত্বপূর্ণ অবদান এবং সাফল্যের স্বীকৃতি প্রদানে অর্থিক সহায়তা করে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।

পিএসকেএস আয়োজিত সম্মাননা প্রাপ্ত উদ্যোক্তারা হলেন-উন্নত জাতের পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সম্মাননা পেয়েছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের কৃষক হাসানুর জামান,অরচার্ড উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় গাংনী উপজেলার যুগিন্দা গ্রামের সাহিবুল ইসলাম, পুষ্টি সংবেদনশীল মলা মাপছের ব্রুড ব্যাংক গাড়াডোব গ্রামের রোজিনা খাতুন, ফেভারমুক্ত পাঙ্গাস মাছ ছাষে ষোলটাকা গ্রামের নাজেরা খাতুন,পাঠা মোটাজাত করনে রামনগর গ্রামের শাহিদা খাতুন, বিশষ অবাসন নিশ্চিতকরে আধা বানিজ্যিক ভাবে দেশী মুরগি পালনে বিশেষ ভুমিকা রাখায় তেরাইল গ্রামের সেলিনা খাতুনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অলোচনায় উল্লেখ করা হয়, পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সবর্দা কাজ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় মৎস্য খাতে ৮২৩টি, কৃষিখাতে ৩৩৮টি, প্রাণি সম্পদ খাতে ৪৮৫টি, মোট ১হাজার ৪৪৬টি প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রদর্শনি বাস্তবায়ন করে। ১০৯জনকে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ৮৩টি খামার দিবস ১১২টি পরামর্শ সভা করা হয়। এছাড়াও কৃষি মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ খাতে ২ হাজার ৭২৫ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মদক্ষ করে তোলা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ভিভিন্ন এলাকার শতাধিক কৃষক ও কৃষানীরা উপস্থিত ছিলেন।




মেহেরপুরে মাচা পদ্ধতিতে চিচিংগা চাষ, ফলন ও দামে খুশি চাষিরা

মেহেরপুরে মাচা পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের চিচিংগা চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। চিচিংগা চাষে উপযুক্ত মাটি, এবং অনুকুল আবহাওয়ায় বাম্পার ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি হিসেবে চাহিদা থাকায় নিজ জেলার চাহিদা পুরুন করেও রপ্তানি করা হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। দাম ভাল পেয়ে খুশি চাষিরা। বৃষ্টিপাত বেশি হলে আরও বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব বলছেন কৃষকরা, সবজিখ্যাত মেহেরপুর জেলায় আরও নতুন নতুন সবজি আবাদে চাষিদের উদ্বুদ্ধকরনসহ নানা ভাবে সহায়তা করা হচ্ছে বলছেন কৃষি বিভাগ।

মেহেরপুরের বিভিন্ন মাঠে প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে মাচা পদ্ধতি ব্যবহার করে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও সুস্বাদু সবজি চিচিংগা আবাদ করা হচ্ছে। স্বল্প সময় ও অল্প খরচের এ সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন অনেক কৃষক। এখন চিচিংগা তোলার ভরা মৌসুম। জেলার বিভিন্ন বাজারে এখন ভাল দামে বিক্রি হচ্ছে চিচিংগা। জেলার মানুষের তরকারি চাহিদা পুরুন করেও বিভিন্ন এলাকার পাইকার ব্যবসায়ীরা চিচিংগা ট্রাক ভর্তি করে পাঠাচ্ছেন ঢাকা, বরিশাল, সিলেট, চট্রোগ্রামসহ দেশেল বড় বড় শহরে। প্রতিকেজি চিচিংগা পাাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে এসবজির দাম ৩০ টাকা কেজি।
মেহেরপুর সদর উপজেলার, রামদাসপুর গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন এক বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল বঙ্গরেখা জাতের চিচিংগা আবাদ করেছেন। জমি প্রস্তত, বীজ, সার ,কীটনাশক ও মাচা তৈরীতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এখন এক বিঘা জমি থেকে প্রতি সপ্তায় দুদিন করে চিচিংগা পাচ্ছেন।

চাষি জামাল হোসেন জানান, প্রতি সপ্তায় অন্তত ৫ থেকে ৬মন করে চিচিংগা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিমণ চিচিংগা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় এক লক্ষ টাকার চিচিংগা বিক্রি করেছেন। তিন মাসে তিনি আরও লক্ষাধিক টাকার চিচিংগা বিক্রির আশা করছেন।

ষোলমারি গ্রামের চাষি নাহিদ আলম বলেন গেল বছর আামি এক বিঘা জমিতে চিচিংগা আবাদ করেছিলাম। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা লাভ হয়েছিল। এবারও এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। একাধঅরে তিন মাস চিচিংগা বিক্রি করতে পারবো। এবছরে সব সবজির দাম ভাল হওয়ায় চিচিংগারও চাহিদা আছে বাজারে। জমি থেকে প্রতি সপ্তায় দুদিন করে পাইকাররা চিচিংগা নিয়ে যায়। আবার স্থানীয় বাজারেও আমরা বিক্রি করি। অন্যান্য সবজির চেয়ে চিচিংগার চাহিদা এবছর অনেক বেশি,দামও ভাল।

গাংনী.কাথুলী গ্রামের চাষি আব্দুল কুদ্দুস জানান, যতদিন চাহিদা থাকে ততদিন আমরা সবজি হিসেবে চিচিংগা বিক্রি করি। শেষের দিকে চাহিদা কমে গেলে বীজের জন্য চিচিংগা রেখে দিই। বীজ বিক্রি করেও ভাল টাকা লাভ করি প্রতি বছর।

ষোলমারি গ্রামের পাইকার ব্যবসায়ী মিশকাত,মিন্টু ও রামদাসপুরের মুন্তাজ আলী জানান, আমাদের অঞ্চলে উৎপাদিত সবজির চাহিদা বাইরের জেলায় অনেক ভাল। অন্যান্য সবজির পাশাপাশি যে চিচিংগা আবাদ হয়, সে চিচিংগা দেখতে অনেক ভাল। খেতেও সুস্বাদু। আমরা প্রতিনিয়ত অন্যান্য সবজির সাথে ট্রাকভর্তি করে ঢাকা,বরিশাল, সিলেট ও চট্রোগ্রামে বিক্রি করি। এতে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন ,তাদের পাশাপাশি আমরা(ব্যবসায়ীরাও ) লাভবান হচ্ছি।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, মেহেরপুর জেলার মাটি ও আবহাওয়া সব আবাদেরই উপযোগী। কৃষরা এ মাটিতে যা ফলানোর চেষ্টা করেন তাই ফলে। কয়েক বছর যাবত জেলায় মাচা পদ্ধতি অবলম্বন করে চিচিংগা আবাদ করেছেন। এ আবাদে আজও কেউ লোকসানে পড়েনি। সকলেই লাভবান হচ্ছেন। আমরা নতুন নতুন আবাদে কৃষদদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। সেই সাথে চিচিংগাসহ বিভিন্ন সবজি আবাদে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগীতা অব্যাহত রেখেছি।