টরন্টোতে শেষ হলো দক্ষিণ এশীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

টরন্টো যেন এক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সিটি! জমজমাট টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টভ্যালের পর গতকাল ২২ অক্টোবর শেষ হলো দক্ষিণ এশীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩ (আইএফএফএসএ)।

টরন্টোস্থ মিসিসিসাগার সিভিক সেন্টারে গত ১২ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় এই চলচ্চিত্র উৎসব। চোখ ধাঁধানো গালা নাইট এবং রেড কার্পেট রিসেপশনে অংশ নেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালক, প্রযোজকসহ শত শত দর্শক।

এবার ১১ দিনব্যাপী ১২তম উৎসবের তালিকায় রয়েছে ১৩টি বাংলা সিনেমা। উৎসবের ৪র্থ দিনে গত ১৫ অক্টোবর দিনব্যাপী তিনটি বাংলা সিনেমা দেখানো হলো সিনেপ্লেক্স সিনেমার স্কারবোরোর এগলিন্টন টাউন সেন্টারে। প্রদর্শিত হলো- ইন্দ্রাসিস আচারিয়ার ‘নীহারিকা’; নুহাশ হুমায়নের প্রথম চলচ্চিত্র ‘পেটকাটা ষ’ এবং ফুয়াদ চৌধুরী পরিচালিত ‘মেঘনা কন্যা’।

‘পেটকাটা ষ’ চার খন্ড ভৌতিক, বিজ্ঞান, বাস্তব, অবাস্তব, কাব্যিক, এনজিও এবং নামকরণ থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে এলোমেলো ভাবনার ছবি। আর ‘মেঘনা কন্যা’ সামাজিক, বাণিজ্যিক ছবি। এতে নারীপাচারের চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। যা দালাল ফজলুল রহমান বাবুর ভাষ্য- এটা নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা!

নির্মাতা ফুয়াদ চৌধুরীর মতে, নারী পাচারের মতো একটি কঠিন বিষয়ের সঙ্গে গ্রামীণ পটভূমিতে বলা সিনেমাটির গল্পে রয়েছে দর্শকের জন্য পর্যাপ্ত বিনোদন।

উৎসবের অন্যতম কর্মকর্তা এবং প্রযোজক আনোয়ার আজাদ ইত্তেফাককে জানান, আগামী ২২ অক্টোবর শেষ দিনে প্রদর্শিত ১২০টি ছবি থেকে সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী, সেরা শর্ট ফিল্ম, সেরা ফিচার ফিল্মসহ অন্যান্য ক্যাটাগিরিতে পুরস্কার ঘোষণা প্রদান করা হয়।

উৎসবটি কানাডায় একটি আন্তর্জাতিক আইকন এবং দক্ষিণ এশীয় চলচ্চিত্রের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।




মোবাইলে সেরা ৭ ক্রিকেট গেম

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশে উত্তেজনার হাওয়া বইছে। একদিকে ক্রিকেটপ্রেমীরা যখন মাঠের প্রতিটি বাউন্ডারি, প্রতিটি উইকেট ও অধিনায়কের কৌশল পরিবর্তন দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন অন্যদিকে ডিজিটাল মাঠের ক্রিকেটও তাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করছে। আজকের লেখায় আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েডের সেরা ৭ মোবাইল ক্রিকেট গেম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ থ্রি (ডব্লিউসিসি থ্রি)
ডব্লিউসিসি থ্রিতে ক্রিকেটের বাস্তব অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। অভিনব কন্ট্রোলের কারণে গেমটি খুব সহজেই খেলা যায়। পাশাপাশি এতে রয়েছে পেশাদারি ধারাভাষ্য। এতে মালটিপ্লেয়ার গেমিং সুবিধা থাকায় বন্ধুদের বা অন্য দেশের গেমারদেরও চ্যালেঞ্জ করা যায়।

ডব্লিউসিসি রাইভালস
ডব্লিউসিসি রাইভালস অনেকটা রিয়েল ক্রিকেট টুয়েন্টির মতোই অভিজ্ঞতা দেয়। এখনো খুব বেশি মানুষ এই গেমটি সম্পর্কে না জানলেও দ্রুত এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট ব্যাটল টু
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য সেরা ক্রিকেট গেমের তালিকায় ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট ব্যাটল টু বারবার উঠে আসে। এটি বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কোনো ঝামেলা ছাড়াই খেলা যায়।

শচীন সাগা ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন
ক্রিকেটের অন্যতম সেরা কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই গেমের নাম রাখা হয়েছে ‘শচীন সাগা ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন’। গেমারদের অভিজ্ঞতাকে ভিন্ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে এই গেমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই গেমটি মোবাইল গেমারদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

রিয়েল ক্রিকেট টুয়েন্টি
মোবাইল ক্রিকেট গেমারদের কাছে রিয়েল ক্রিকেট টুয়েন্টি বেশ পরিচিত একটি নাম। এটি অ্যান্ড্রয়েডের সেরা ক্রিকেট গেমের অন্যতম। রিয়েল ক্রিকেট টুয়েন্টি খেলার সময় ক্রিকেট মাঠে উপস্থিত থেকে রান করার বা উইকেট নেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করেছেন গেমাররা।

স্টিক ক্রিকেট সুপার লিগ
বাস্তব উপস্থাপনা থেকে কিছুটা ভিন্ন ভিজ্যুয়ালের অভিজ্ঞতা দিতে পারে স্টিক ক্রিকেট সুপার লিগ। মোবাইল ডিভাইসের সেরা ক্রিকেট গেমের তালিকায় এটির নাম প্রায়ই শোনা যায়। বিশেষ ক্রিকেট হিসেবে এই গেম থেকে অনেকে বিনোদন পেতে পারেন।

এই গেমটিতে বাস্তবসম্মত গ্রাফিক্সের বদলে কিছুটা কার্টুনের মতো গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এতে আকর্ষণ গেমটির কমে যায়নি এক বিন্দুও। মোবাইল প্ল্যাটফর্মে বারবার অন্যতম সেরা ক্রিকেট গেমের তালিকায় স্টিক ক্রিকেটের বিভিন্ন সংস্করণ স্থান পেয়ে এসেছে।

ক্রিকেট লিগ
অ্যান্ড্রয়েডের সেরা ক্রিকেট গেমের তালিকায় ক্রিকেট লিগ এক কঠিন প্রতিযোগী। এই গেমে একাধিক গেমপ্লে অপশন রয়েছে, যা অন্য কিছু গেমে পাওয়া যায় না।

একসময় মোবাইল ক্রিকেট গেম শুধুমাত্র অবসর কাটানোর উপায় হিসেবে ধরা হতো। তবে বর্তমানে যেসব মোবাইল গেম পাওয়া যায়, সেগুলো অনেকাংশেই লাইভ ম্যাচের উত্তেজনা, কৌশল ও রোমাঞ্চের প্রতিফলন ঘটানোর অত্যাধুনিক প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই অনেকের কাছে মোবাইল ক্রিকেট গেম বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিশ্বকাপের বাকি রয়েছে আরও প্রায় এক মাস। বাংলাদেশের খেলা রয়েছে ছয়টি। সব মিলিয়ে বলা যায়, বাকি দিনগুলোতে মাঠের খেলার পাশাপাশি ডিজিটাল স্ক্রিনেও ক্রিকেট খেলা উপভোগে আগ্রহী হবেন গেমার ও মোবাইল ব্যবহারকারীরা।

সূত্র: ইত্তেফাক




আজ শোকাবহ রোভার দিবস

বাংলাদেশের রোভার স্কাউট সদস্যদের কাছে একটি শোকাবহ দিন । ১৯৯৭ সালের ২৩ শে অক্টোবর দিনটি ছিলো রোভার লিডার এবং রোভার স্কাউটস সদস্যদের সবার কাছে একটি স্বপ্নের দিন । সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানে ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত ৯ম এশিয়া প্যাসিফিক ও ৭ম বাংলাদেশ রোভার মুট এ অংশগ্রহন করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল মেহেরপুর জেলা রোভার । জেলা রোভার থেকে ৪ টি টিমে ৩৬ জন সদস্য রোভার মুটে অংশগ্রহনের জন্য মেহেরপুর জেলার রোভাররা আনন্দের প্রহর গুনতেছিল আর সেই সাথে রোমাঞ্চকর এক অধ্যায়ের আগমনের বার্তা অনুভব করছিলো। অবশেষে এসে গেল ১৯৯৭ সালের ২৩ শে অক্টোবরের সেই আকাঙ্ক্ষিত দিনটি।

রোভার মুটে অংশগ্রহনকারীরা বাড়ী থেকে বিদায় নিয়ে জমায়েত হয় মেহেরপুর সরকারি কলেজ চত্বরে। আনন্দঘন পরিবেশে মুটে অংশগ্রহনকারী চারটি দল মেহেরপুর সরকারি কলেজ রোভার দল, মুজিবনগর সরকারি কলেজ রোভার দল, মেহেরুল্লা মুক্ত রোভার দল, ও মুন্সি জমিরউদ্দীন মুক্ত রোভার দল উপস্থিত হলো। ১৯৯৭ সালের ২২শে অক্টোবর রাত ৯.০০ টার সময় চারটি দলের মোট আটজন করে রোভার এবং একজন রোভার নেতা সহ সবাই রিজার্ভ করা একটি মিনিবাস মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ফেরীঘাটে দীর্ঘসময় যানজটে আটকে থাকার পর গাড়িটি ঘাট পার হয় তখনও রোভার সদস্যের কেউ ঘুমায়নি সারারাত আনন্দ উল্লাস করে সময় পার করছিলো। কেউ ভাবতে ও পারেনি তাদের জন্য সামনে কি ভয়াবহ এক ট্য্যজিডি অপেক্ষা করছে।

ফেরী পার হওয়ায় পর সবার চোখে তখন ঘুমের ভাব এসেছিল সেই সময় আর কোন যানজট ছিল না। ড্রাইভার গাড়ির গতি বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় মেহেরপুর সরকারি কলেজের শরীরচর্চা শিক্ষক হাজী রমজান আলী ড্রাইভারকে গাড়ি ধীরে চালানোর জন্য অনুরোধ করার পরও তিনি র্কণপাত করেননি। ২৩ শে অক্টোবর ভোরে রোভারদের বহনকারী গাড়িটি ধামরাই এর জয়পুর নামক স্থানে পৌছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন রোভার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা সমগ্র বাংলাদেশের রোভারদের জন্য শোকাবহ হয়ে ওঠে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তৎকালীন মেহেরপুর সরকারি কলেজের শরীর চর্চা শিক্ষক ও রোভার লিডার রমজান আলী, মুজিবনগর কলেজের রোভার ইউনিট লিডার আনোয়ার স্যারসহ অনেকেই আহত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুতর আহত হয় মেহেরপুর সরকারি কলেজের রোভার ফারুক হোসেন। ঘটনাস্থলে নিহত হন রোভার মোঃ মাসুম হোসেন, রোভার মোঃ মনিরুল ইসলাম, রোভার মাহফুজুর রহমান মাহফুজ, রোভার জাভেদ ওসমান, পিএস ও রোভার এস এম আমিনুল ইসলাম।

লাক্কাতুরা ক্যাম্পে যখন এ খবর পৌছায় তখন সেখানে নেমে আসে শোকের ছায়া। ২৩ তারিখ সেখানে শোক পালন করা হয়। বাংলাদেশের রোভার স্কাউটস ইতিহাসে এই দিনটি চিরদিন স্বরণীয় হয়ে থাকবে। সবচেয়ে বেশী আহত হয় ফারুক হোসেন তখন মেহেরপুর সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং রোভার দলের একজন সক্রিয় সদস্য। সেদিন সম্পর্কে ফারুক বলেন, ২৩ শে অক্টোবর ভোর হবার কিছুক্ষণ আগে আমি ঘুমিয়ে যায়, যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন আমি হাসপাতালের বেডে যা পরবর্তীতে জানতে পারি ।

প্রথমে আমি কিছুই মনে করতে পারছিলাম না। পরে জানতে পারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমি দীর্ঘ ৭৫ দিন অচেতন অবস্থায় ছিলাম। আমার যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন আমার অবস্থা সদ্য ভুমিষ্ট শিশুর মতো। আমার নিজে থেকে কোন কাজ করার ক্ষমতা ছিলো না। ওঠা, বসা, খাওয়া, কথা বলা, লেখার কোন ক্ষমতা ছিলোনা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘ তিনমাস আমি বিছানায় কাটিয়েছি। আমার সবচেয়ে বেশী আঘাত লেগেছিল মাথাসহ বামপাশে। কানসহ অর্ধেক জায়গায় কোন চামড়া ছিলনা ।

পায়ের উরু থেকে চামড়া নিয়ে পরে সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়। আমি যতদিন বেচে থাকবো ততদিন আমাকে এই স্মৃতি মনে থাকবে। সেই সময় তৎকালীন মাননীয় রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ আমাকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন। তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বৃটেন সফররত তিনি সেখান থেকে শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন এবং নিয়মিত খোঁজ খবর নিতেন ।

বাংলাদেশ রোভার অঞ্চলের সম্মানিত স্যাররা সবসময় আমার সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে আমার পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। আমি আল্লাহর অশেষ রহমতে সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে লেখাপড়া সম্পন্ন করেছি। তিনি আরও বলেন, স্কাউটস আমার প্রাণ, আমার বাঁচার অনু প্রেরণা। ফারুক হোসেন বর্তমানে মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন । তিনি ২০১৮ সালে জেলার শ্রেষ্ট শিক্ষক নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে তিনি সরকারিভাবে ভিয়েতনাম সফর করেন।

তিনি বর্তমানে কাব শাখাতে সিএএলটি সম্পন্নকারী। তিনি বর্তমানে উপজেলা কাব লিডারের দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন চেষ্টা ও ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছু জয় করা যায় তার বড় প্রমাণ আমি নিজেই। আল্লাহু আমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছেন। মর্মান্তিক সেই দিনটিকে স্বরণ রেখে বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার অঞ্চলের একটি প্রতিনিধি দল ২০১৮ সালের ২৩ শে অক্টোবর মেহেরপুর জেলার শহীদ রোভারদের স্মতিসৌধে পুস্পমাল্য অর্পন করেন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে শরীক হন। রোভার অঞ্চলের পক্ষ থেকে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং শুভেচ্ছা উপহার এবং প্রাইজবন্ড প্রদান করেন ১৯৯৭ সাল থেকে মেহেরপুর জেলা রোভার প্রতিবছর এই দিনটি পালন করে আসছে। সেই থেকে জেলা রোভারের দাবী ছিল এই দিনটি রোভার অঞ্চল থেকে পালন করার।

দীর্ঘদিনের দাবীর সাথে একমত হয়ে রোভার অঞ্চলের তৎকালীন সম্পাদক প্রফেসর এ কে এম সেলিম এবং রোভার অঞ্চলের যুগ্ম সম্পাদক প্রফেসর ডঃ কে এম এ এম সোহেলের নেতৃত্বে প্রতিবছর রোভার অঞ্চল এই দিনটিকে তাদের কর্মসূচী হিসেবে পালন করে আসছে যা মেহেরপুর জেলা রোভারের জন্য অত্যান্ত গর্বের বিষয়। স্বাধীনতার পুন্যভুমি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সেই মুজিবনগর তথা মেহেরপুরের জন্য এটাও একটি বড় পাওয়া। ৫ জন শহীদ রোভারের জন্য মেহেরপুরের নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলে নির্মিত হয়েছে শহীদ রোভার স্মতিসৌধ। তাদের কবরগুলো আছে মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে।




গাংনীর ২২ টি পুজা মন্ডপ পরিদর্শনে শাহিদুজ্জামান শিপু

গাংনী উপজেলার বিভিন্ন ২২ টি পূজামন্ডব পরিদর্শন করেন ছাত্রনেতা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহীদুজ্জামান শিপু।

গতকাল রবিবার বেলা ১১ টার দিকে চিৎলা নিত্যান্দপুর পূজা মন্দির থেকে পরিদর্শন শুরু করেন ছাত্রনেতা শিপু। এসময় প্রতিটি পুজা মন্ডপে আর্থিক সহায়তা করেন।

গাংনী উপজেলার পূজামন্ডব পরিদর্শন কালে উপস্থিত ছিলেন পৌর আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আলাল উদ্দিন রিন্টু, পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহিবুল ইসলাম, কাথুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনি, গাংনী ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জুবায়ের হোসেন উজ্জ্বলসহ নেতা কর্মীরা।

এসময় শাহিদুজ্জামান শিপু বলেন,অসমপ্রদায়িক বাংলাদেশ সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা দরকার। বিএনপি জামাত মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব বাদিয়ে মানুষের মাঝে দুরুক্ত সৃষ্টি করে। তারা ধর্মের দোহায় দিয়ে ফ্যাসাদ করে। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে সকল মানুষ তাদের স্নস্ব ধর্ম পালন করতে পারে। আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আনতে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।
২২ টি পুজা মন্ডপে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন শাহিদুজ্জামান শিপু। এবং প্রত্যেক মন্ডপের ঢাকী বাদকদের ১ হাজার টাকা করে বকশিশ প্রদান করেন।

উপজেলার কুচুইখালী পূজামন্ডব, কসবা পূজামন্ডব, হাড়িয়াদহ পূজামন্ডব, চাঁনপুর পূজামন্ডব, রায়পুর পূজামন্ডব, আমতৈল পূজামন্ডব, ভোলাডাঙ্গা পূজামন্ডব, শিমুলতলা পূজামন্ডব, বাউট পূজামন্ডব, বামুন্দী পূজামন্ডব, ভোমরদাহ পূজামন্ডব পরিদর্শন পরিদর্শন করেন নেতা কর্মীদের নিয়ে।




আলমডাঙ্গায় দুর্গা পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে ডিসি-এসপি

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা ও পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল-মামুন।

গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৭ টায় আলমডাঙ্গা স্টেশনপাড়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির ও রাত সাড়ে ৮ টায় রথতলা শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দিরে অনুষ্ঠিত দুর্গাপূজার মন্ডপ পরিদর্শন করেন। এসময় স্টেশনপাড়া দুর্গা মণ্ডপে অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, সারাদেশের ন্যায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় সাড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ সম্প্রীতির বাংলাদেশ।বাংলাদেশে অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে শারদীয় দুর্গা উৎসব পালিত হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যান্য উপজেলার ন্যায় আলমডাঙ্গাতেও অত্যন্ত চমৎকার ভাবে দুর্গা পূজা উদযাপিত হচ্ছে। এটা দেখে আমাদের খুবই ভালো লাগলো। সকল অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার, দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজেদের ধর্ম পালন করছে। আমরা আশা করি আগামীতে আপনাদের এই আনন্দ-উৎসবে আমরা আবারও যোগ দিতে পারব। আলমডাঙ্গা পুজা মন্দির পরিদর্শন করে দেখলাম, এখানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভাল। এছাড়া হিন্দু মুসলিম সকল ধর্মের লোক এক সাথে ধর্মীয় উৎসব পালন করছেন। উপজেলার সকল পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা , পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল-মামুন, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসআই) ডিডি ইয়াছিন সোহাইল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল হামিদ রেজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিমউদ্দীন আল-আজাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সার্কেল আনিসুজ্জামান লালন, পুনক সভানেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রেজওয়ানা নাহিদ, পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু।

পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহেল কাফি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক, আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) একরামুল হুসাইন, ওসি (অপারেশন) ফরিদুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল কুমার বিশ্বাস।

এছাড়া স্টেশনপাড়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দিরের সভাপতি জয় কুমার বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক দেবদাস কুমার ব্যাধ, সহ-সভাপতি ঘন শ্যাম, সাংগঠনিক সম্পাদক তাপস কুমার ব্যাধ, রাম কুমার কর্মকার, শিবু কুমার ব্যাধ। এদিকে, রথতলা শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দিরের সভাপতি বিদ্যুৎ কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক অসিম কুমার সাহা, সাংবাদিক প্রশান্ত বিশ্বাস, সমির কুমার সাহা, পরিমল কুমার ঘোষ, অপু কুমার সাহা,বিশ্বজিৎ সাধু খাঁ প্রমূখ।




আলমডাঙ্গায় ভ্যান চোরকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

আলমডাঙ্গার উপজেলার বিনেতপুর গ্রামে এক ভ্যান চোরকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী।

গতকাল রোববার বিকেল ৪ টায় উপজেলার ডাউকি ইউনিয়নের বিনেতপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আটককৃতরা হলেন- কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার কাকিলাদহ গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৩৫)। সে আন্তঃজেলার চোরচক্রের সদস্য।

স্থানীয়রা জানান, বিনেতপুর গ্রামের মৃত কাবিল উদ্দিনের ছেলে উজ্জল হোসেন। তিনি পেশায় একজন মোটর চালিত পাখিভ্যান চালক। রোববার বিকেলে সে ভ্যান চালিয়ে বসত বাড়ির সামনে রেখে বাড়িতে প্রবেশ করে। ওত পেতে থাকা চোরচক্রের সদস্য কাকিলাদহ গ্রামের সাদ্দাম কৌশলে পাখিভ্যান চুরি করে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। এসময় এলাকাবাসী চুরির অভিযোগে সাদ্দামকে গাছে বেধে মারপিট করে।

পুলিশ জানায়, পুলিশের জরুরী সেবা ৯৯৯-এ ফোনে এক ভ্যান চোরকে আটকিয়ে গাছে বেধে মারপিট করছে এলাকাবাসী। এমন খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে চোরচক্রের ওই সদস্যকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে হারদি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পুলিশ হেফাজতে নেয়।
আলমডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সঞ্জিত কুমার জানান, চুরির ঘটনায় সাদ্দামকে আটক করা হয়েছে। রবিবার রাতেই চুরি মামলার প্রস্তুতি চলছিল।




দর্শনা কেরুজে পিট পদ্ধতিতে আখ চাষের শুভ উদ্ধোধন

চিনি উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল আখ। সেই আখ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে দর্শনা কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ রিং পিট পদ্ধতিতে আখ চাষের উদ্যাগ গ্রহণ করেছেন।

গতকাল রোববার বেলা ১১ টার দিকে চিনিকলের আওতাধীন ডিহি কৃষি খামার রিং পিট পদ্ধতিতে আখ চাষ পরিদর্শণে আসেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্নসচিব মনিরুজ্জামান। এসময় তিনি বলেন, আখ একটি জনপ্রিয় অর্থকারি ফসল। এটি চিনি উৎপাদনের মূল উপাদান। কি চাহিদার তুলনায় আখ উৎপাদন অনেক কম। এর কারণেও অনেক। সঠিক পরিচর্যা বা চাষাবাদের অভাব, ফসলের বচিতর্য, বিভিন্ন মেয়াদী সবজি ফসলের আবাদ বদ্ধি, ফলের বাগান তৈরী ইত্যাদি কারণ দিন দিন আখ চাষের জমি কমে যাচ্ছে। কম জমিতে অধিক পরিমাণ আখ উৎপাদন করার জন্য দর্শনা কেরুজ চিনিকল কর্তপক্ষ রিং পিট নাম বিশেষ একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আখ চাষের উদ্যাগ গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে চিনিশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কৃষকরা যাতে আখ চাষে বিশেষ গুরুত্ব দেয় তার জন্য নানামুখি উদ্যাগ গ্রহণ করেছে কর্তপক্ষ। তারি অংশ হচ্ছে রিং পিট পদ্ধতিতে আখের চাষ।

এছাড়া কৃষকদের আখ চাষের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য বীজ, সার, কীটনাষক সহায়তা দিয়ে থাকে চিনিকল কর্তপক্ষ। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আখ চাষ করে অল্প জমিতে অধিক পরিমাণ ও ভালাে মানের আখ উৎপাদন করা যায় শিল্পম্ত্রাণালয় সেলক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। একটিই উদ্দেশ্য চিনিশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে। এদিকে গত মৌরসুমে ফুরশেদপুর কৃষি খামার অল্পকিছু জমিত রিং পিট পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলকভাবে আখ চাষ করা হয়। এ পদ্ধতিত জমিত নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে একাধিক গর্ত করা হয়।

এগুলাে প্রায় এক থেক দেড় ফুট গভীর করা হয়। এক একটি গর্তের মধ্য ১২ থেকে ১৩টি এমন দুই চােখ যুক্ত আখের টুকরা লাগানাে হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে সমপরিমাণ জমিতে সাধারণ আখ চাষের তুলনায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি পরিমাণ উৎপাদিত হয় বলে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ জানিয়েছেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন দর্শনা কেরুজ চিনিকলের সুযোগ্য ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, কেরুজ জি এম কৃষি আশরাফুল আলম ভৃইয়া,গ্যারেজ ইন্জিনিয়ার আবু সাঈদ, কেরুজ বাণিজ্যিক বিভাগের ডিহি খামারের ইনচার্জ ইমদাদুল হক।




জীবননগরে ১৬ বোতল ফেন্সিডিলসহ আটক ২

জীবননগর থানা পুলিশ মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে ১৬ বোতল ফেন্সিডিলসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে করেছে।

গতকাল রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টার সময় জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস.এম. জাবীদ হাসানের নিদেশে , জীবননগর থানার এসআই(নি:) এসএম রায়হান সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সসহ সীমান্ত ইউনিয়নে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে নতুনপাড়া গ্রামের আঃ কুদ্দুসের ছেলে মোঃ হারুন অর রশিদ (৩২),এবং গোয়ালপাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে মোঃ আবুল বাশারকে (৩০) জীবননগরে উপজেলার নতুনপাড়া গ্রামের ১নং আসামী মোঃ হারুন অর রশিদ এর বাড়ীর সামনে পাকা রাস্তার উপর থেকে মাদকদ্রব্য ১৬ বোতল ফেন্সিডিল সহ গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজু করা হয়।




চুয়াডাঙ্গায় রেলওয়ে স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান: ২৩ জনের কারাদণ্ড

চুয়াডাঙ্গায় রেলওয়ে স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিনা টিকিটে যাত্রীদের ভ্রমনের দায়ে ২৩ জনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর ভিতরে ২১ যাত্রীকে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন রেলওয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া দুজনকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির হাজতে রাখার নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক।

আজ রবিবার সকাল নয়টা থেকে বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে দুটি ট্রেনের অভিযান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ডিভিশনাল স্টেট অফিসার মো. নুরুজ্জামান।

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন নাটোরের লালপুর থানাধীন পুরাতন ঈশ্বরদী এলাকার আমিনুল শেখের ছেলে মুকুল হোসেন, নীলফামারী জেলার মাঝপাড়া এলাকার হোসেন আলীর ছেলে আরিফ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে আলামীন, নাটোর জেলার লালপুর থানাধীন চংখপাইল এলাকার বকতারের ছেলে আশিক, ঢাকা জেলার দোহার থানাধীন বারহা দোয়ার এলাকার গফফুর আলীর ছেলে শাইন, ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ গ্রামের সানোয়ারের ছেলে আতিকুল, কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর থানাধীন উত্তর কাঠদহহ এলাকার মিনহাজ্বের ছেলে সুজন আলী, যশোর জেলার দিয়ারা এলাকার মফিজুরের ছেলে বিল্লাল, কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানাধীন ইসলামপুর এলাকার আমজাতের ছেলে মামুনী, যশোর জেলার আরএন রোডের মৃত আনারুল হকের ছেলে আমিনুর রহমান, ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে লুৎফর রহমান, খুলনা জেলার শেরেবাংলা রোডের সোনাডাঙ্গা এলাকার মৃত শেখ সাইদুল হকের ছেলে জাহিদ হোসেন, যশোর বারোবাজার এলাকার মৃত নিয়ামুল মিয়ার ছেলে কিতাব আলী, চাপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থানাধীন মুছরিভুজা গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে বাবুল আক্তার, পাবনার ঈশ্বরদী গ্রামের মৃত নান্নুর ছেলে রমজান আলী, নাটোরের পুরাতন ঈশ্বরদী গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে ইমদাদুল হক, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার উত্তর কাঠদহ এলাকার ইব্রাহিম খলিলের ছেলে শিপন, একই এলাকার নুর ইসলামের ছেলে ঝন্টু, রাজবাড়ি জেলার উদয়পুর গ্রামের চাঁনখার ছেলে মিলন, পাবনা জেলার ঈশ্বরদী গ্রামের মৃত ইয়াদ আলীর ছেলে ইউসুফ আলী ও মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার বানদেবপুর গ্রামের হিসাব আলীর ছেলে এনামুল হক।

এছাড়া দুজনকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পুলিশ হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন চুয়াডাঙ্গার গোপালের ছেলে বিষ্ণু ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কালীপুর গ্রামের নজিরখার ছেলে সোহাগ।

চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা বলেন, বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণের দায়ে ২১ যাত্রীকে ১০ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। এছাড়া দুজনকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাজতবাসের নির্দেশ দেন। সাজাপ্রাপ্তদের চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।




কমিউনিটি ক্লিনিক: স্বাস্থ্যসেবায় নীরব বিপ্লব

স্বাধীনতার আগে ও পরে স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামোগুলো ছিল মূলতঃ শহরকেন্দ্রিক। অথচ সে সময় ৮৫ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুই সর্বপ্রথম স্বাস্থ্যসেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশে মাত্র তিন বছরেই তিনি প্রতিটি থানায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন “থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চালু করেছিলেন ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের পর সেই তৃণমূল মানুষের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি উল্লেখযোগ্যভাবে গুরুত্ব পায়নি।

দীর্ঘ ২১ বছর পরে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরপরই তিনি বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন “সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা” বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন এবং “কমিউনিটি ক্লিনিক” স্থাপনের অভিনব ধারনা প্রবর্তন করেন। চিকিৎসা সেবাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। প্রতি ৬ হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে সর্বমোট ১৪ হাজার ৪৯০টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ফলশ্রুতিতে, ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা গ্রামে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধন এর মধ্য দিয়ে দেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের যাত্রা শুরু হয়। ২০০১ সালের মধ্যেই ১০ হাজার ৭২৩টি অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রায় ৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু করা হয়। এর ফলে চিকিৎসাসেবা প্রন্তিক জনগণের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে।

কিন্তু ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জনগণের জন্য কল্যাণকর এই সফল স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি ক্লিনিক এর কার্যক্রমটি বন্ধ করে দেয়। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ক্লিনিকগুলো। নষ্ট হয়ে যায় অনেক ভবন। ২০০১-২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকার ফলে দেশের তৃণমূল মানুষ আবারও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করে।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনরায় কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম নবোদ্যমে চালু হয়। সেই পরিত্যক্ত ও ব্যবহার অযোগ্য ভবনগুলো সংস্কার এবং নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দ্রুত বাড়তে থাকে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা। বর্তমানে ১৪ হাজার ২০০টি ক্লিনিক চালু রয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে ১৪ হাজার ৮৯০টি ক্লিনিকের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাকে আইনি কাঠামোয় ঢেলে সাজাতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ২০১৮ সালে “কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট-২০১৮” নামে আইন প্রণীত হয়। ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে একই বছর উপদেষ্টা পরিষদের বিধান রেখে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড গঠিত হয়। সভাপতি হিসেবে যার নেতৃত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের এ মহতি উদ্যোগে দেশের অসহায় দুস্থ মানুষ পুনরায় সহজে ও বিনা পয়সায় হাতের নাগালে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে।

২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটার দূরত্বে বাড়ির কাছেই সহজ ও বিনামূল্যে সেবা পাওয়ার কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গ্রামের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং পারিবারিক হাসপাতাল হয়ে উঠেছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক হতে ৭৫.৭০ কোটির অধিক ভিজিটের মাধ্যমে তৃনমূল জনগন সেবা গ্রহন করেছে। শুধুমাত্র গত জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত ক্লিনিকগুলোতে মোট ভিজিট হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত কোটিরও বেশি। ১০ কোটিরও বেশি মানুষ পেয়েছেন বিনা মূল্যের এই স্বাস্থ্যসেবা। বর্তমানে দৈনিক প্রতিটি ক্লিনিকে ৭০-৮০ জনেরও বেশি মানুষ ভিজিট করেন। গড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ মানুষ সারাদেশে প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে। মাসে দেড় কোটি এবং বছরে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নিচ্ছে, যার ৮০ শতাংশ নারী ও শিশু।

শুধু স্বাস্থ্যসেবাই নয়, কর্মক্ষেত্র তৈরিতে এ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপিদের সঙ্গে সপ্তাহে তিন দিন সেবা দিয়ে থাকেন একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী ও একজন স্বাস্থ্য সহকারী। সারাদেশের ১৪ হাজার ২২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত ১৩ হাজার ৯০০ জন সিএইচসিপি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছেন। কর্মরত সিএইচসিপিদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ নারী, যা নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচক্ষনতা ও সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তব প্রমাণ মিলেছে এবারের প্রাণঘাতী করোনা মহামারীকালে এবং দুর্যোগকালীন ঐ সময়ে অনন্য ভূমিকা রেখেছে এই কমিউনিটি ক্লিনিক। বিশ্বের বহু দেশ যেখানে অপ্রতুল ভ্যাক্সিন ও সুব্যবস্থাপনার অভাবে যথাসময়ে সবার কাছে ভ্যাক্সিন পৌঁছাতে পারেনি, বাংলাদেশ সেখানে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে এই সেবা যথাসময়ে পৌঁছে দিতে পেরেছে। সারাদেশে এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে পৌনে ৩ কোটিরও বেশি ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির চিকিৎসাসেবায় নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে যাচ্ছে এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো, যা বদলে দিয়েছে গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবার সামগ্রিক চিত্র। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান বাংলাদেশ সফরের সময় গ্রামে গিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখেছিলেন এবং এই উদ্যোগকে ‘স্বাস্থ্য খাতে’ বিপ্লব হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। এ কথা সর্বাংশে সত্য যে, এই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বকীয় উদ্ভাবনী চিন্তার ফসল যা আজ বিশ^নন্দিত। দেশ-বিদেশের এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই অভিনব ধারণা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসাবে আজ প্রমাণিত। এর ফলে দেশের তৃনমূল ও সর্বিক স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন উন্নতি সূচকে ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ আরও অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে। এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আগামীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণসহ সত্যিকার ভাবেই একটি স্বাস্থ্যকর জাতি গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সম্প্রতি, “কমিউনিটি ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা: সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি” শিরোনামের ঐতিহাসিক রেজুলেশনটি জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহীত হয়। কমিউনিটি ক্লিনিক ভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন স্বরূপ জাতিসংঘের ৭০টি সদস্য রাষ্ট্র এই রেজুলেশনটি কো-স্পন্সর করে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলো এই ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল উদ্ভাবনী এই উদ্যোগকে ব্যাপক স্বীকৃতি দিয়ে “দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ” হিসেবে আখ্যায়িত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রেজুলেশনটির সফল বাস্তবায়ন ও কমিউনিটি ক্লিনিক ভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

লেখক: প্রক্টর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।