মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ২

মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের দরবেশপুরে লাটা হাম্বা উল্টে দুই জন আহত হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে মেহেরপুরের দরবেশপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার মোমিনপুর গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে রানা এবং গাংনী উপজেলার দীঘলকান্দি গ্রামের বাসিন্দা শামীম।

এসময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মেহেরপুর-২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠান।

স্থানীয়রা জানায়, চুয়াডাঙ্গার দিক থেকে দ্রুত গতিতে মেহেরপুরে আসছিলো দুটো লাটা হাম্বার। সে সময় এটি লাটা হাম্বারের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুরাতন দরবেশপুর যাত্রী ছাউনির সামনে ছিটকে পড়ে যায়। এ সময় লাটা হাম্বারে থাকা দুই জন ব্যাক্তি আহত হয়। আমরা তাদেরকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।




প্রতিপক্ষের হামলায় ঝিনাইদহে ইউপি সদস্য খুন, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মীনগ্রামে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের আধিপত্য বিস্তারের জেরে হাবিবুর রহমান রিপন (৪৫) নামের এক ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা।

আজ সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে আবাইপুর-মীনগ্রামের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রিপন আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক।

স্থানীয়রা জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আবাইপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালামের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। আবুল কালাম স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাই এর অনুসারী এবং হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম দুলালের ছোট ভাই। আবুল কালাম আজাদ শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকায় তার ছেলে রিপন তার দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলো। দুলাল বিশ্বাসের পোস্টার ছেড়াকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার হেলালের সমর্থকদের সাথে ইউপি সদস্য রিপনের সমর্থকদের মারামারি হয়।

এ ঘটনায় পুলিশ উভয় পক্ষের ৪ জনকে আটক করে। গতকাল রোববার রাতে ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান রিপন শৈলকুপা থানা থেকে মারামারির ঘটনা মিমাংসা করে ফিরছিলো। পথে মিনগ্রমের মাঠের মধ্যে এলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা হেলালের সমর্থকরা তাদের গতিরোধ করে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত ও যখম করে। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত সাড়ে ৩ টার দিকে তিনি মারা যায়। এদিকে মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম রাজু আহমেদ বলেন, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।




দামুড়হুদায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে টিকটক: কিশোর আটক

দামুড়হুদায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে টিকটক করার অভিযোগে এক কিশোরকে (১৫) আটক করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়। দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন সোমবার তাকে আদালতে প্রেরন করা হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বাংলাদেশি ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ছবি সঙ্গে পুজার নাচের একটি ভিডিও টিকটকে আপলোড করে গ্রামের এক কিশোর। বিষয়টি রবিবার সকালে স্থানীয়দের মাঝে জানাজানি হলে গোবিন্দহুদা গ্রামে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর গ্রামের লোকজন একত্র হতে থাকেন। খবর পেয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকসানা মিতা, জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আলমগীর কবির, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। গ্রামবাসী অভিযুক্তকে বিচারের দাবি জানালে প্রশাসন আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন একপাশে মিজানুর রহমান আজহারির ছবি ও আরেকপাশে পুজার নাচের দৃশ্য দিয়ে নিজের টিকটক আইডিতে আপলোড দেয় কিশোর। এতে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গ্রামবাসী একত্র হতে শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে রাতেই ইউএনও, সহকারী পুলিশ সুপার, ওসি ঘটনাস্থলে যায়। অভিযুক্তকে আইনের আওতায় এনে বিচারের আশ্বাদ দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে আটক করেছে।

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবির বলেন, ঐ ছেলে একটি টিকটক ভিডিও ছেরেছে। এটার বিষয়ে এলাকায় একটু সমস্যা হলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌছে অভিযুক্ত কিশোরকে আটক করে রাতেই হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ডিসি, এসপির সঙ্গে কথা বলেছি। আজ সোমবার তাকে বিগ্গ আদালতে প্রেরন করা হবে।




রপ্তানিতে সফল হচ্ছে বাংলাদেশের অপ্রচলিত বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ

দেশের রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার সৃষ্টির চেষ্টা সফল হচ্ছে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবির কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছন। সম্প্রতি বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানান, আমেরিকা ও ইউরোপে যখন আমাদের অর্ডার যখন কমছে, তখন থেকে আমরা নতুন বাজার সৃষ্টির চিন্তা করি। সেই চিন্তা থেকেই জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো খুঁজে বের করেছি। সেখানে আমাদের রপ্তানি বেশ ভালো হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতেও রপ্তানি পণ্যের বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ চলছে জোরেসোরে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি ৮ শতাংশ কমে যায়। তারপরও দেশটিতে সর্বোচ্চ ৭৯৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এরমধ্যে তৈরি পোশাকই ছিল ৬৯৫ কোটি ডলার, যা কিনা বাংলাদেশে মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৮ শতাংশের কাছাকাছি। পাশাপাশি করোনা ও যুদ্ধের কারণে ইউরোপের বাজারে আমাদের রপ্তানি অনেক কমে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত অর্থবছর ১ হাজার ৪২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির মধ্যে তৈরি পোশাকই ছিল ৮৬ শতাংশ, যা পরিমাণে ৯০১ কোটি ডলার। এ ছাড়া ৩১ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের ২১ শতাংশ এবং হোম টেক্সটাইলের ১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।

ইপিবি বলছে রপ্তানির এই নির্ভরতা কমানোর জন্যে এক দশকের বেশি সময় ধরে অপ্রচলিত বা নতুন বাজার সৃষ্টির বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেয়া হচ্ছে নগদ সহায়তাও। এতে মোট পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ, যুক্তরাজ্য ও কানাডার বাইরে অন্যান্য দেশ থেকে রপ্তানি ১৫ শতাংশের ঘরে। গত অর্থবছর নতুন দেশগুলোতে ৬৩৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘অপ্রচলিত বাজার সৃষ্টির ফলে করোনা এবং পরবর্তী সময়ে অনেক দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বরং তাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ তাদের অনুসরণ করেছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রচলিত বাজার বলতে বোঝে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে । পাশাপাশি জাপান অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকোর বাজারকে বলা হচ্ছে অপ্রচলিত বাজার।

অপ্রচলিত বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ আরও কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি জানান, ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক খাতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দশ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার এসেছে। তার মানে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। এজন্য পথনকশা বা রোডম্যাপ তৈরির কাজ এখন চলছে।

বিজিএমইএ নেতার বক্তব্যের সত্যতা মেলে ইপিবির প্রতিবেদনেও। তারা বলছে ২০২৩ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারে ৮.৩৭ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা ২০২২ অর্থবছরের ৬.৩৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩১.৩৮% বেশি। তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের মোট ১৭.৮২% এসেছে অপ্রচলিত বাজার থেকে। আবার ২০২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত থেকে মোট আয় ৪৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার। যা ২০২২ অর্থবছরের ৪২.৬১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০.২৭% বেশি।
এদিকে তৈরি পোশাক রপ্তানির ‘বিলিয়ন ডলার ক্লাব’ অপ্রচলিত বা নতুন বাজারের তিন দেশ এসেছে। এবছর মধ্য জুলাইয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রথমবারের মতো নতুন বাজার হিসেবে পরিচিত তিন দেশ অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নতুন বাজারের শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে জাপানে ১৬০ কোটি ডলার, অস্ট্রেলিয়ায় ১১৬ কোটি ডলার, ভারতে ১০১ কোটি ডলার, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫৪ কোটি ডলার ও রাশিয়ায় ৪৩ কোটি ডলার পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানান, সম্প্রতি নতুন বাজার হিসাবে, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে করে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথমে আমলে আনা হচ্ছে ওই সব দেশের বাজারে কী ধরনের পোশাকের চাহিদা বেশি। কোন মৌসুমে কী ধরনের পোশাকের কদর রয়েছে। তাদের ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে বাজার সম্প্রসারণে বাংলাদেশি পণ্যের একক মেলা এবং প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের নতুন বাজার সৃষ্টির তালিকায় রয়েছে, লাতিন আমেরিকা। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্যতম বড় পোশাক প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, ‘লাতিন আমেরিকা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের জন্য একটি বড় বাজার। এর কারণ বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা তাদের ফ্যাশন ও স্টাইলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য সরবরাহ করতে পারে।‘ আর উর্মি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০১৫ সাল থেকে চিলিতে শূন্য শুল্ক সুবিধা ভোগ করছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, লাতিন আমেরিকায় ২৫টির বেশি দেশের ৬৬ কোটি ভোক্তার বাজারে ৩৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা ভালো করছেন। ঢাকায় কয়েকটি দেশের দূতাবাস খোলা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং চিলি বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ায় লাতিন আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানি ২০ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়ে ৬২১.২৭ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ৫১৫.৫০ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ১০৭.৭৫ মিলিয়ন ডলার।




দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে, ১৩ দিনে এসেছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা

বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে কিছুটা গতি ফিরেছে। অক্টোবর মাসে প্রথম ১৩ দিনে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৭৮ কোটি ১২ লাখ ডলার। রেমিটেন্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১১০ টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে অক্টোবরের ১৩ দিনে ৮ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা এসেছে; প্রতিদিন এসেছে ৬৬১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি অক্টোবর মাসে প্রথম ১৩ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ৭৮ কোটি ১২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি। মাসের বাকি ১৮ দিনে এই হারে আসলে মাস শেষে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক দাঁড়াবে ১৮৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার।

সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ (১.৩৬ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। একক মাসের হিসাবে সেপ্টেম্বর মাসের রেমিটেন্স ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২০ সালের এপ্রিলে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ (১.০৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর পর গত সাড়ে তিন বছরে সেপ্টেম্বরের মত এত কম রেমিটেন্স দেশে আসেনি।

২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। কমতে শুরু করে রেমিটেন্স। সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে। এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬৯৪ কোটি টাকা।গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।

রেমিটেন্সে গতি ফেরায় গত সপ্তাহে রিজার্ভ কমেনি; বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ সামান্য বেড়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। আগের সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার।




কোটচাঁদপুর শিশু নিলয় ফাউন্ডেশনের মতবিনিময় সভা

কিশোরী ক্লাব থেকে যা শিখেছেন,সেটি আপনাদের বাড়ি,গ্রাম,সমাজ তথা দেশে ছড়িয়ে দিবেন। কিশোরী কর্মসুচীর আওতায় উপস্থিত কিশোরীদের উদ্যেশে এ মন্তব্য করেন,পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. এম খাইরুল হোসেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার এনডিসি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন,শিশু নিলয় ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাছিমা বেগম। সঞ্চালনায় ছিলেন, শিশু নিলয় ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক আসিফ আহসান খান।

আজ সোমবার দুপুরে পিকেএসএফের প্রতিনিধি দল প্রথমে কোটচাঁদপুরের বাগডাঙ্গা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত প্রবীন কর্মসুচীর আওতায় পরিচালিত প্রবীন কেন্দ্রটি। খোঁজ খবর নেন ওই কেন্দ্রের প্রবীনদের। শোনেন তাদের সমস্যা, সফলতার গল্প।

এরপর ওই প্রতিনিধি দলটি যান,এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদে। যোগ দেন কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে করা আলোচনা সভায়।
যা অনুষ্ঠিত হয় বিকাল ৪ টায়। এ সময় তারা খোঁজ খবর নেন ক্লাবের সদস্যদের। এরপর উপভোগ করেন,কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা।




তৈরি পোশাক: লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকা হতে পারে বড় বাজার

ইউরোপ, আমেরিকায় যখন তৈরি পোশাক শিল্পের বাজার নানামুখি বাধার মুখে পড়ছে, ঠিক তখন আশার আলো দেখা যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দেশে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীন, জামান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, লাতিন আমেরিকার মেক্সিকো, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের নতুন বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। এটা দেশের পোশাক শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় এবং দারুণ আশার খবর। নতুন এই বাজারগুলোতে বলা হয়ে থাকে অপ্রচলিত বাজার। এর কারণ এসব বাজারে ইউরোপ, আমেরিকা বা কানাডার মত ব্যাপকহারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়না। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের নতুন বাজারে অবশ্যই জোরালো ও তৎপরতা চালাতে হবে। যাতে করে নতুন এসব বাজার বাংলাদেশের পোশাকের দখলে আসে। নিশ্চয়ই তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এবং সরকার নিয়ে ভাবছে। যদি তৈরি পোশাকের নতুন বাজার সৃষ্টি করা যায় এবং যেসব দেশে ইতিমধ্যে নতুন করে বাজার সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোকে ধরে রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রচলিত বাজার অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর উপর অতি নির্ভরতা কমিয়ে আনা যাবে।

বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। এই অবস্থায় কোনো কোনো বিশেষ দেশের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নতুন বাজার খুঁজে বের করা দেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাতের জন্য জরুরি বলে মনে করেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক খাতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দশ হাজার কোটি ডলার। আর রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি)তথ্য অনুযায়ি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারে ৮দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা ২০২২ অর্থবছরের ৬দশমিক৩৭ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ৩১.৩৮% বেশি। এটি আশার কথা। তবে তৈরি পোশাক রপ্তারিন যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে পৌঁছাতে হলে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। সেজন্যই নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করা এবং সেগুলোকে ধরে রাখার জন্য কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। আশার কথা হচ্ছে, এই যে অপ্রচলিত নতুন বাজার, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের মোট ১৭.৮২% এসেছে কিন্তু সেই বাজার থেকে। অপ্রচলিত বাজার তৈরি পোশাক শিল্প থেকে একশ বিলিয়ন ডলার অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রার কথা বিজিএমইএ বলছে, সেটা অর্জন করতে হলে অবশ্যই একটা রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এছাড়া লক্ষ্যে পৌঁছা খুবই কঠিন কাজ হবে। যতদূর জানি বিজিএমইএ সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর কোন বিকল্পও নেই। কারণ ইউরোপ, অ্যামেরিকা বা ব্রিটেনে আমাদের তৈরি পোশাকের অর্ডার কমছে। তাই নতুন বাজার খুঁজে বের করা ও নতুন বাজারের চিন্তা করাটা খুবই জরুরি। সেই চিন্তা থেকেই মূলত জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো খুঁজে বের করেছেন বিজিএমইএ নেতারা। এসব দেশে এখন তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে এবং সেটা খুবই ইতিবাচক।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ি, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারে ৮দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ছিলো ৬দশমিক৩৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে ২০২৩ অর্থবছরে ৩১দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের মোট ১৭ দশমিক ৮২শতাংশ এসেছে অপ্রচলিত বাজার থেকে। আবার ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত থেকে মোট আয় হয়েছিল ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। আগের ছিলো অর্থবছরে এই আয় ছিলো ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ১০দশমিক ২৭শতাংশ বেশি।
আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য আশার কথা হচ্ছে, অপ্রচলিত বা নতুন বাজারের তিন দেশ অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ভারতে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।এই তিনটি দেশেই নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নতুন বাজারের শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে জাপানে ১৬০ কোটি ডলার, অস্ট্রেলিয়ায় ১১৬ কোটি ডলার, ভারতে ১০১ কোটি ডলার, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫৪ কোটি ডলার ও রাশিয়ায় ৪৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। সব মিলিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ১৮ শতাংশের গন্তব্যই হচ্ছে এখন নতুন বাজার।

এই যে বাজার সৃষ্টি হলো এটিকে ধরে রাখতে অবশ্যই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদেরকে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে পণ্যেল মান নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই যেন নতুন সৃষ্টি হওয়া বাজার থেকে পণ্যের গুণগত মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন না উঠে। মনে রাখতে হবে, নতুন এই বাজার ঠিকটাক মতো ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যতে এই বাজারই হবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য ‘সোনার ডিম’ পাড়া হাঁসের মতো। সুতরাং এই বাজার ধরে রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ত্ব দিতে হবে। যদি কোনো কারণে কোয়ালিটি নিশ্চিতে কোনো রকম ত্রুটি ধরা পড়ে তাহলে নতুন বাজারের ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিবে।
একই সঙ্গে এই বাজার ধরে রাখার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকাকেও টার্গেট করে এগুতে হবে। প্রতিযোগিতার বাজারে নতুন গন্তব্য খোঁজার কোনো বিকল্প নেই। সামনে নানা ধরণের চ্যালেঞ্জ আসবে। একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধ গোটা বিশ্বকে টালমাটাল করে দিচ্ছে। ইউরোপের অনেক দেশই আজ অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে। আমেরিকাতেও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থায় ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা কানাডার মুখাপেক্ষি না থেকে সামনের দিনগুলোতে কিভাবে আরও নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করা যায় বিশেষ করে আফ্রিকা ও মধ্যপাচ্যের দেশগুলোতে সে লক্ষ্যে জোরালোভাবে কাজ করতে হবে। শুধু বিজিএমইএ নয়, সেসব দেশে বাংলাদেশের যে দূতাবাস আছে সেগুলোকেও কাজে লাগাতে হবে। মনে রাখতে হবে, বর্তমান সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সব সময় উদার ও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

এখন বিজিএমইএ- কে আফিক্রা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারগুলো যাচাইবাছাই করে সে সব বাজারে কী ধরনের পোশাকের চাহিদা বেশি, কোন মৌসুমে কী ধরনের পোশাকের চাহিদা এগুলো মাথায় রেখে বাজার সৃষ্টিতে মনোযোগি হতে হবে। তাহলেই আগামীতে এসব অপ্রচলিত বাজারের রপ্তানি আরও বাড়বে নিঃসন্দেহে।

আমরা যদি লাতিন আমেরিকার দিকে তাকাই তাহলে সেখানেও বাংলাদেশি তৈরি পোশাক শিল্পের বাজার সৃষ্টির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে মেক্সিকো, ব্রাজিলের মতো দেশ আমাদের তৈরি পোশাক নিচ্ছে। এই দুই দেশের পাশাপাশি লাতিনের অন্যদশেগুলোতেও তৎপরতা চালানো যেতে পারে নতুন বাজার সৃষ্টির। আমাদের ব্যবসায়ীরাও বলছেন, লাতিন আমেরিকা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের জন্য একটি বড় বাজার। এর কারণ বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা তাদের ফ্যাশন ও স্টাইলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য সরবরাহ করতে পারে। এটা খুবই ইতিবাচক খবর। তাই ব্যবসায়ী ও সরকার উভয়েই যদি শক্ত হাতে লাতিনের এই বাজারকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন তাহলে লাতিনের দেশগুলো বাংলাদেশের বড় ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে আমার মনে হয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৬২১দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলারের। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ৫১৫দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ১০৭দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার। লাতিন আমেরিকায় ২৫টির বেশি দেশের ৬৬ কোটি ভোক্তার বাজারকে দখলে নিতে পারলে বাংলাদেশের রপ্তানি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীদের আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না। এ জন্য অবশ্য সরকারকেও আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। লাতিনের যেসব দেশের সঙ্গে এখনও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেনি সেগুরোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সেইসব দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে যেমন খুলতে হবে, তেমনি সেই সব দেশেও বাংলাদেশের দূতাবাস বা মিশন খুলে বাংলাদেশের ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।




বাংলাদেশে মানবাধিকার চর্চা এবং ইইউ’র তথাকথিত মানবাধিকার শিক্ষা

নিজ ঘর না সামলে আজকাল পশ্চিমার যেভাবে আমাদের রাজনীতি, বিচার ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার ইস্যুতে একের পর এক হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছে এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের নিজ দেশের কিছু মানুষ এবং সুবিধাভোগী চক্র বিদেশি শক্তিগুলোকে এ ধরণের সুযোগ করে দিচ্ছেন। আজ কথা বলছি তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর অন্যতম কর্তাব্যক্তি আদিলুর রহমানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একটি বিচারিক আদালত কর্তৃক শাস্তি এবং এ বিষয় নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)-র পার্লামেন্টে পাশকৃত প্রস্তাব, যেখানে তারা আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মজার বিষয় হচ্ছে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন খোদ ইইউ পার্লামেন্ট সদস্য ম্যাক্সিমিলিয়ন ক্রাহ। সুযোগ পেলেই পশ্চিমারা আমাদের মাননাধিকার শেখাতে আসে এবং এটিকে আমাদের সাহায্যের বিনিময়ে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

তাদের এই তথাকথিত মানবাধিকার চর্চার বিষয়টি কতটুকু স্ববিরোধী এর সর্বসাম্প্রতিক উদাহারণ হচ্ছে ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যকার চলমান সংঘাতে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী (সেই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থনে) কর্তৃক গাজা উপত্যকায় জাতিগত ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত বিষয়ে কোন কথা ইইউ-র কাছ থেকে এখন পর্যন্ত শুনিনি। প্রকারান্তরে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের গতিবিধি দিয়েই কিন্তু তাদের মানসিকতাকে যাচাই করতে পারছি। সেই সাথে দশকের পর দশক ধরে চলমান ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতে পশ্চিমারা সরাসরি ইসরাইলের পক্ষ্যেই তাদের অবস্থান ব্যক্ত করে আসছে।

বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক সাধিত তাণ্ডবে সরকারের তরফ থেকে যে ভূমিকা নেয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে সরকার ভুলটি কোথায় করেছে, সেই প্রশ্নে না গিয়ে গুজব সৃষ্টিকারী কিছু ব্যক্তির পক্ষ্যে সরাসরি অবস্থান নিয়ে তারা আসলে আমাদের দেশকে নিয়ে কি ভাবছে এবং কোন পর্যায়ে টেনে নামাতে চাইছে- বিষয়টি কিন্তু গভীর উদ্বেগের। আমরা যদি পাল্টা আমাদের দিক থেকে তাদের উল্টো জিজ্ঞেস করি, পশ্চিমা কোন দেশের স্বাভাবিক কর্মকান্ডে যদি কোন অপশক্তি সাধারণ জনগণের অধিকারের বিপরীতে কাজ করে তাহলে সেদেশ বা দেশগুলোর সরকার কি করে থাকে? আমরা এরকম অনেক দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্যসহ অনেক ইউরোপীয় দেশে তাদের ভাষায় বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী হামলার বিপরীতে বন্দুক যুদ্ধের মাধ্যমে কখনও হামলাকারীদের পাকরাও আবার কখনও হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়। কিছুদিন আগেও ফ্রান্সে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্তৃক কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক হত্যা নিয়ে ব্যাপক বিদ্রোহ হয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘু মুসলিম এবং কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে বিদ্রুপাত্মক মন্তব্যের জবাবে কি আমরা কখনো ইইউর মানবাধিকার কমিশনকে সচেতনভাবে কোন ভূমিকা নিতে দেখেছি? দেখিনি।

বাংলাদেশের বিচারিক আদালতের রায়ে যিনি দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদন্ডে দণ্ডিত হয়েছেন তার অপরাধের মাত্রাটুকু যদি আমরা বিবেচনা করে দেখি তাহলেই বুঝতে পারব পশ্চিমা ইইউ কর্তৃক এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া কতটা অশোভন। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের সময় তারা যে ধরণের নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল, এতে করে পুরো ঢাকা প্রায় অচল হবার অবস্থা হয়েছিল। সরকারের তরফ থেকে বারবার তাদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে সভা সমাবেশ এবং যৌক্তিক পন্থায় তাদের দাবীর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জনজীবনে আতংক সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকতে বলা হলেও তারা সেবিষয়ে কর্ণপাত করেনি। সবশেষে জনস্বার্থে পুলিশী অভিযানের মধ্য দিয়ে ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেলেও অধিকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় ব্যাপক অভিযানে ৬৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে দেখা যায়, তাদের দাবি করা অনেকেই স্ব স্ব কর্মস্থলে চাকরি করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের তালিকা চেয়ে অধিকারকে চিঠি দেয়া হলে সেই চিঠিকে গ্রাহ্য করেনি তারা। এর মধ্য দিয়ে এটাই মনে হওয়া প্রাসঙ্গিক যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণকে উস্কানী দেয়ার মাধ্যমে দেশে এবং দেশের অভ্যন্তরে তারা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করতে চেয়েছে। এর পদক্ষেপ হিসেবে মামলা এবং ১০ বছরের বেশি সময় পর রায় হলে অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান এবং পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানকে ২ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তারা যদি তাদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে তাদের দাবি অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা প্রমাণ করতে পারতেন তাহলে তো আর মামলার কোন আবশ্যকতা থাকতনা। নিছক গুজব ছড়িয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেশের কোটি কোটি মানুষকে নিয়ে তারা ছেলেখেলায় মেতে উঠেছিলেন। এর পেছনে দেশীয় অপশক্তির মদদের সাথে বিদেশী শক্তির উস্কানী সমন্বিতভাবে কাজ করেছে, যার অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। আর এটা করতে পারলে এখানে আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মত করে তারা তাদের স্বার্থকে চরিতার্থ করতে পারবে। যে বিষয়টি তাদের নিজের দেশের ক্ষেত্রেও অমার্জনীয় অপরাধের পর্যায়ে পরে, সেখানে আমাদের আদালতের রায়কে নিয়ে কটাক্ষ করা এবং বাতিলের দাবী করা এবং এটিকে মানবাধিকার পরিপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়াস একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদাকে ভুলন্ঠিত করার চেষ্টা বৈ অন্য কিছু নয়।

ইইউ-র সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া এবং আমাদের রাজনীতিতে তারাসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানাবিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে হস্তক্ষেপ করতে চাওয়ার প্রয়াস একই সূত্রে গাঁথা। একটি দেশের আদালতের রায় নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে তারা কোন ধরণের মানবাধিকারের চর্চা করতে চেয়েছেন সেটা এক বড় প্রশ্ন। তথাকথিত কিছু মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশের ১৭ কোটির অধিক মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা এবং চর্চায় কাজ করছে নাকি এর নাম নিয়ে কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে বিদেশীদের কাছে ধর্না দিচ্ছে বিষয়টি আজ সচেতন মহলের জন্য ভাবনার বিষয়।

লেখক: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।




সংলাপ কী রাজনৈতিক সমাধান দিতে পেরেছে?

রাজনীতিতে সংলাপ একটি চমৎকার শব্দ। যেকোন সংকট, সমস্যায় সংলাপের কথা হরহামেশাই শোনা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই সংলাপ বরাবরই সময়ক্ষেপণ ছাড়া অর্থবহ কোন সমাধান আনেনি। অতীত অভিজ্ঞতা তাই-ই বলে। দেশের রাজনীতি যখনই নির্বাচনমুখি হয়, তখনই সংলাপের কথা জোরোশোরে আলোচনা হয়।

২০০৬ সালে দেশ যখন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে গভীর সংকটে নিমজ্জিত তখন দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট এবং প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের মধ্যে সংলাপ নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। দেশি-বিদেশি হস্তক্ষেপে ওই সময় প্রধান দুই দলের মহাসচিব ও সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে সংলাপ শুরু হয়।

বিএনপির পক্ষে দলের তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া এবং আওয়ামী লগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল জলিলের মধ্যে সংলাপ শুরু হয়। দিনে-রাতে, সকালে-বিকালে চলতে থাকে এই সংলাপ। পুরো দেশ তাকিয়ে দুই দলের শীর্ষ দুই নেতার দিকে। সংলাপ শেষে তারা আশার কথা শুনাবেন। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংঘাত-সংঘর্ষ এড়ানো যাবে। মানুষ হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু মান্নান-জলিল সংলাপে মানুষের সেই আশার প্রতিফলন ঘটেনি। দিনের পর দিন সংলাপ করে চায়ের টেবিলে ঝড় তুললেও সংকট সমাধানে কোনো কার্যকর সমাধান বের করতে পারেনি। এর প্রধান এবং একমাত্র কারণ ছিলো দুই দলের মহাসচিব ও সাধারণ সম্পাদক যার যার সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকা।

এখানে বলে রাখা ভালো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচন করে মাত্র কয়েকদিনের জন্য সরকার গঠন করে। সেই সরকার বিরোধীদের দাবির মুখে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে। এতে বলা হয়, পর পর তিনটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। এই বিল পাসের পর বিএনপি ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।

এরপর যথারীতি ২০০১ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার কোনরকম বিতর্ক ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফুর্তভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেয়।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর সময় পার করে যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করবে ঠিক তার আগে নিজেদের পছন্দের প্রধান বিচারপতির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে নেয় জোট সরকার। তখনই শুরু হয় বিতর্ক। আওয়ামী লগিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কোনোভাবেই বিএনপির এই তৎপরতাকে মেনে নিতে পারেনি। তারা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। তীব্র আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের পছন্দের বিচারপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেনি। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শুরু হয় রাজনৈতিক সংলাপ। দেশি-বিদেশি হস্তক্ষেপে দুই দলের মহাসচিব ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে সংলাপ শুরু হলেও ইতিবাচক কোনো ফল আসেনি। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহম্মদকে প্রধান উপদেষ্টা করে তার মনোনীত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এমন পরিস্থিতি দেশে একটা অস্থিরতা তৈরি হলে ফখরুদ্দিন-মঈন ইউ আহমদের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হয়। যা ওয়ান-ইলেভেন নামে পরিচিত।

এই যে নিজের কোর্টে বল রেখে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকার সংলাপ-সংলাপ নাটক করে শেষ পর্যন্ত সবকিছুকে ভায়োলেট যখন নিজেদের রাষ্ট্রপতি দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করলেন, তখনই কার্যত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কবর রচনা হয়ে যায়।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ছেঁটে ফেলে। ফলে এই ব্যবস্থা নিয়ে আর কোনো আলোচনা বা কথা বলার সুযোগ নেই।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বার বার বলে আসছে নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। এর বাইরে তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো গত কয়েক বছর ধরেই তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সরকার তাদের সব দাবিকে আমলে নিলেও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছে।

এই অবস্থায় বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে দেশি-বিদেশিদের কুটনীতিকদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর করে গিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে তারা রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে একটা অর্থবহ সংলাপের তাগিদ দিয়েছে। অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বও সংলাপের কথা বলছেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, কোন সংলাপ নয়। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ি। এর বাইরে কোনো আলোচনা হবে না। এরমধ্যে গত দুই দিন সধরে সংলাপের বিষয়টি আবারও আলোচনা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের পর। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি যদি শর্ত ছাড়া সংলাপে বসতে চায় তাহলে হতে পারে। সরকারের অন্য মন্ত্রীরাও বলেছেন, সংলাপে বসা যায়, তবে কোনো শর্ত দিয়ে নয় আর কিভাবে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন সে বিষয়ে সংলাপ বা আলোচনা হতে পারে। এর বাইরে কোনো আলোচনা হবে না।

অপরদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপির অন্য শীর্ষ নেতারা বলছেন, তারা সসংলাপে বসতে রাজি। তবে শর্তসাপেক্ষে। বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, আমরা আলোচনার পক্ষে। কিন্তু নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ কয়েকটি এজেন্ডা ছাড়া আলোচনা অর্থবহ হবে না।
এই যখন অবস্থা তখন এটা স্পষ্ট যে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার বা তত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে যদি সংলাপ হয় সেটা হবে সত্যি সত্যিই অর্থহীন। কারণ সরকার সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো আলোচনা করবে না। আর বিএনপিও তাদের অবস্থান থেকে নড়বে না। তার মানে হচ্ছে- সংলাপ হবে শুধু লোক দেখানো এবং সময়ক্ষেপণ মাত্র। অতীত অভিজ্ঞা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

২০০৬ সালে যদি বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে আনতে প্রধান বিচারপতির বয়স না বাড়াতো এবং ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ যেমন বিনাবাক্যে নির্ধারিত সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল, সেভাবে বিএনপি-জামায়াত জোট যদিও ২০০১ এ ক্ষমতা হস্তান্তর করতো তাহলে আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

তাছাড়া, তত্ত্বাবধায় সরকার ব্যবস্থা যেহেতু উচ্চ আদালতই বাতিল করে দিয়েছে সেহেতু এই ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনারও কোনো সুযোগ নেই। এখন আলোচনা হতে পারে কিভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এবং সকল দল ও ভোটারের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করা যায় সে নিয়ে। এর বাইরে নিরপেক্ষ সরকার বা এই জাতীয় কোনো ইস্যুতে আলোচনা বা সংলাপ গুরুত্ত্বহীন এবং কথার কথা।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।




পুজার আমেজে সাজুক অন্দরমহল

কাশফুল আর শিউলির সুবাস জানান দিচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজার। তাই পূজার আগে থেকেই চারদিকে ভরে উঠেছে উৎসবের আমেজে। দুর্গা পূজায় সারাদিন বাইরে ঘোরাঘুরি পরিকল্পনা থাকলেও সারাদিনের ক্লান্তি মুছতে ঘরে ফিরতে হয়ই। তাই অন্দরমহলের সুন্দর সজ্জা উৎসবের আনন্দের মাঝে মনকে প্রফুল্ল এবং নিজের ব্যক্তিত্বকে বাড়িয়ে তুলতে পারে দ্বিগুন।পূজার দিনে বাড়ির সজ্জা কেমন হবে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

১.দুর্গা পূজায় ঘরের সাজ এর অন্যতম অনুষঙ্গ হবে দেশীয় উপাদানে তৈরি নানা জিনিস ও উজ্জ্বল রং। তাই বসার ঘরের সোফা, পর্দা ও কুশনের ফেব্রিক বাছাইয়ের সময় মানানসই উজ্জ্বল রংকেই প্রাধান্য দিন। দেশীয় সাজের সাথে আধুনিকতার মিশেল চান যারা, তারা পর্দার জন্য বেছে নিতে পারেন শুভ্র সাদা রং, তাতে ঘরে আসবে স্নিগ্ধতা ও শরতের আবহ। এর সাথে উজ্জ্বল রংয়ের কুশন কাভার আর সোফাও বেশ মানিয়ে যাবে।

২.আমন্ত্রিতরা মূলত বসার ঘরেই সন্ধ্যা কাটাবেন। তাই সেই ঘরের ওপর বেশি জোর দেন।ঘরের কোণে রাখতে পারেন শো পিস বা আলোর কোন উৎস। সেন্টার টেবিলে রাখুন কোনও সুন্দর দেখতে শো-পিস। সম্ভব হলে সোফার কভার ও পর্দা বদলে ফেলুন।

৩. বেছে নিন দেশীয় মোটিফের ডিজাইন করা ফেব্রিক বা ফ্লোরাল কোনো প্রিন্ট।পূজা উপলক্ষে যদি ঘরে আরো একটু ঐতিহ্যের ছোঁয়া আনতে চান, তবে বসার ঘরের এককোণে বিছিয়ে দিতে পারেন শীতল পাটিও। আর সেইসাথে বাঁশ বা বেতের তৈরি ল্যাম্পশেড কিংবা আধুনিক পেনডেন্ট লাইট মিলিয়ে বসার ঘরটি করে তুলতে পারেন দারুণ নান্দনিক।

৪.পূজার আড্ডায় গান হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বড় ব্লু টুথ স্পিকার থাকলে তাতে মিউজিক প্লে পারেন। আর না হলে বাড়ির সাউন্ড সিস্টেমের যন্ত্রটি ওই দিনের জন্য বসার ঘরে লাগিয়ে নিতে পারেন।

৫.পূজায় ঘর সাজাতে প্রাধান্য দিন উজ্জ্বল রংগুলোকে। বিছানার চাদর, বালিশের কভার ইত্যাদিতে ব্যবহার করতে পারেন নিজের পছন্দের রংগুলো। বিছানায় যদি একরঙা চাদর থাকলে সাথে রাখতে পারেন ভিন্ন রঙের কিছু বালিশ। যাদের ঘরে পূজায় আলপনা আঁকার সুবিধা নেই রঙিন শতরঞ্জি তাদের ঘরে আলপনার অভাব দূর করবে। তবে যারা নানা রঙে রঙিন ঘর চান না, তারা দুর্গাপূজার চিরায়ত লাল-সাদা রঙে ঘর সাজাতে পারেন।

৬.পুজায় খাবার টেবিলকেও সাজিয়ে তুলুন অনেকভাবে। সুন্দর টেবিল ম্যাটের উপর সুদৃশ্য মোমবাতি রাখুন। তার পাশে বাহারি প্লেটে সাজিয়ে রাখুন খাবার। আলমারিতে থাকা সুন্দর চামচগুলো বের করে বাইরে রাখুন।

৭.দুর্গা পূজায় ঘরের সাজ এর জন্য মূলত মাথায় রাখতে হবে তিনটি বিষয়। দেশীয় ঐতিহ্য, উজ্জ্বল রং আর আলোর সমাহার। যে উপাদানগুলো আপনার ঘরে এনে দিবে দেশীয় আবহ, রং আর আলোর ছটা, সেসব দিয়েই চটজলদি সাজিয়ে ফেলুন ঘর।

সূত্র: ইত্তেফাক