মুজিবনগরে গুডনেইবারর্স এর আয়োজনে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত

‘কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক শিক্ষক স্বল্পতা পূরণ বৈশ্বিক অপরিহার্যতা’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে মুজিবনগরে গুডনেইবারর্স বাংলাদেশ মেহেরপুর সিডিপি এর আয়োজনে বিশ্ব শিক্ষক দিবস – ২০২৩ পালিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে দিবসটি উপলক্ষে গুডনেইবারর্স এর হল রুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গুডনেইবারর্স এর সিনিয়র অফিসার (প্রোগ্রাম)এস.এম রিফাত আল মাহমুদ সঞ্চালনায় এবং গুডনেইবারর্স বাংলাদেশ মেহেরপুর সিডিপি এর ম্যানেজার বিভব দেওয়ানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্হিত ছিলেন,মুজিবনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আলাউদ্দীন।

বিশেষে অতিথি হিসাবে উপস্হিত ছিলেন,মুজিবনগর উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার হাসনাইন জাহিদ।উপস্হিত থেকে বক্তব্য রাখেন, গোপালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম,আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিবপুর এর প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম।

আলোচনা সভায় বক্তারা,বিশ্ব শিক্ষক দিবস মর্যাদার সাথে উদযাপন করা।শিক্ষক দিবসের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।পেশার গুরুত্ব, মৌলিকতা ও মহানুভবতা, শিক্ষকদের মধ্যে ইতিবাচক উদ্দীপনা সৃষ্টি করা,দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য, শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষকদের ভূমিকা, মানুষ তৈরির কারিগর হিসেবে একজন আদর্শ শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য এবং প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষকদের আরো বেশি আধুনিক করতে বিশেষ ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপনের আলোচনা সভায় গুডনেইবারর্স এর ৭ টি পার্টনার স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ আংশগ্রহন করেন।




চলে এলো অ্যান্ড্রয়েড ফোরটিন

উপযুক্ত পিক্সেল স্মার্টফোনে অ্যান্ড্রয়েড ফোরটিন আপডেট আসা শুরু করেছে। চলতি নতুন আপডেটে এক্সেসিবিলিটি ও সিকিউরিটিতে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত ইউনিক জেনারেটিভ এআই ফিচার যেমন লাইভ ওয়ালপেপারের মতো ফিচার যুক্ত হয়েছে।

গুগল ২০২৩ ইভেন্টে সম্প্রতি পিক্সেলের নতুন স্মার্টফোন পিক্সেল ৮ উন্মুক্ত হয়েছে। ওই ফোনে অ্যান্ড্রয়েড ১৪ রয়েছে। এছাড়া কিছু বাছাই পিক্সেল ফোনেও নতুন আপডেট দেওয়া হবে।

অ্যান্ড্রয়েড ফোরটিনের জন্য বাছাইকৃত ডিভাইস হলো: পিক্সেল ফোরএ, পিক্সেল ৫, পিক্সেল ৫এ, পিক্সেল ৬, পিক্সেল ৭ প্রো, পিক্সেল ৬এ, পিক্সেল ৭, পিক্সেল ৭এ, পিক্সেল সেভেন এবং পিক্সেল ফোল্ড।




বিশ্বকাপ আয়োজনে সোদি আরবকে সমর্থন বাংলাদেশের

এশিয়ান দেশ সৌদি আরব বিশ্বকাপ আয়োজনে অনেকটা সময় ধরেই আগ্রহ প্রকাশ করছিল। তবে ২০৩৪ সালে এই সুযোগ পাচ্ছে সৌদি আরব। ২০৩০ বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য নিয়ম বেঁধে দেওয়াই বিড থেকে সরে আসে তারা। ফিফা সভাপতির দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী, বিশ্বকাপের শততম বছরে আয়োজক হবে মোট ছয়টি দেশ।

নিয়ম অনুযায়ী, ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলে হবে। সুযোগ পেয়েই তাই আবেদন করতে দেরি করেনি সৌদি আরব। কাতারের পর মধ্যপ্রাচের দেশ হিসেবে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের আয়োজন করতে চায় তারা। আর এরই মাঝে আশপাশ থেকে সমর্থন পেতেও শুরু করেছে।

বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপ ফুটবল ফেডারেশন সৌদি আরবের ২০৩৪ সালের বিডের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনে সৌদি আরব ফুটবল ফেডারেশনের বিডে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। একইভাবে বিবৃতির মাধ্যমে সমর্থন ব্যক্ত করেছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ মালদ্বীপ।’

সূত্র: ইত্তেফাক




জীবননগর উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা

জীবননগরে চিকিৎসার মান উন্নয়নের লক্ষে উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার সময় জীবননগরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হলরুমে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কমকতা ডাঃ সেলিমা আক্তারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা -২আসনের সংসদ সদস্য হাজী আলী আজগার টগর।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মোঃ হাফিজুর রহমান,জীবননগর উপজেলা নিবাহী অফিসার হাসিনা মমতাজ,জীবননগর পৌর সভার মেয়র মোঃ রফিকুল ইসলাম, জীবননগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম মোতুজা, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আঃসালাম ঈশা,জীবননগর থানার ওসি এস,এম,জাবিদ হোসেন,উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার জাকির উদ্দিন মোড়ল,বীর মুক্তিযোদ্ধা দলিল উদ্দিন দলু,সাংবাদিক এম,আর বাবু,জাহিদ বাবু, কাজী শামসুর রহমান, মিঠুন মাহমুদ প্রমুখ।



মেহেরপুরের আমঝুপিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ হারালেন গৃহবধু

মেহেরপুরের আমঝুপি গ্রামের শেখ পাড়ায় নিজ বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিলকিস বেগম (৫২) নামের এক গৃহবধুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার সময় আমঝুপির শেখ পাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিলকিস বেগম অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মনিরুল ইসলামের স্ত্রী।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় বিলকিস বেগম নিজ বাড়ির ধানের গুদামঘরের দরজা খুলতে যেয়ে বিদ্যুতায়িত হন। বিলকিস বেগম এক পুত্র ও দুই কন্যার জননী। তার এক কন্যা কিছুদিন আগে অসুস্থতাজনিত কারেণ মারা গেছেন।

মেহেরপুর সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।




মেহেরপুরে নাশকতা মামলায় কারাগারে বিএনপির ৬ নেতা-কর্মী

নাশকতার মামলায় মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলুসহ ৬ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

গতকাল বুধবার দুপুরে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ দালতের বিচারক মো: শহিদুল্লাহ তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আসামীরা হলেন গাংনী উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলূ, জেলা ওলামা দলের সভাপতি ইনামুল হক, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাজমুল হক, গাংনী পৌর যুবদলের সহ সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি, গাংনীর ২নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি সুরেলী আলভী ও বিএনপি নেতা বিজয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা জুবাইদা রহমানকে একটি মামলায় দণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে গত ২ আগস্ট গাংনীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি।

আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে ওই বিক্ষোভ মিছিল গাংনী শহরের প্রধান সড়ক প্রদিক্ষণ করে। এ মিছিল থেকে নাকশকতা সৃষ্টির অভিযোগে গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ মামলায় আসাদুজ্জামান বাবলুকে প্রধান আসামি করে বিএনপির ৮ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত আরও ২৫/৩০ জনকে আসামি করা হয়।

ওই মামলায় উচ্চাদালত থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছিলেন আসামিরা। জামিনের মেয়াদ শেষে বুধবার দুপুরে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ।

মামলায় আসামিপক্ষের কৌশলী ছিল অ্যাডভোকেট মারুফ আহমেদ বিজন ও কামরুল ইসলাম।




প্রতিমন্ত্রীকে কটুক্তি, মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের একাংশের বর্ধিত সভা

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন ‘যারা দলের শৃঙ্খলা বিরোধী কাজ করে দলকে ছোট করেছে তাদের বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে। একটি বড় দলে নেতাদের মধ্যে বিভেদ থাকতে পারে, সেটা দলীয় ফোরামে প্রকাশ করার জন্য আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। গতকাল যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা দল বিরোধী কাজ করেছে উপরন্তু আরও ঘোষণা দিচ্ছে ভবিষ্যতে আবারো করবে। ‘

৪ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যায় মেহেরপুর পৌর কমিউনিটি সেন্টার হল রুমে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন।

৩ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দিতে জেলা আওয়ামী লীগের একাংশ সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করে। সেই মত বিনিময় সভায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের অপরাংশের আায়েজনে জেলা আওয়ামী লীগের এই বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে(ভার্চুয়ালি) বিশেষ বর্ধিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মেহেরপর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস,সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক, যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট ইব্রাহিম শাহিন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বোরহান উদ্দীন আহম্মেদ চুন্নু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম,মহজনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু, শ্যামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতিন,বাগোয়ান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল সালাম বাঁধন, মুজিবনগর উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদিকা তাসলিমা খাতুন প্রমূখ।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘যারা দল বিরোধী কর্মকাণ্ড করছেন এবং দলবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন তাদের সকল বক্তব্য রেকোর্ডেড। এগুলোসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় যে খবর এসেছে সেগুলোও দলের নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। গতকাল সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বক্তব্য দিয়েছেন কাউন্সিলে মাত্র একটি ভোট পেয়েছিলেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। আমরা যদি একটু খোঁজ নেই তবে দেখতে পাবো তার শিক্ষা দীক্ষা এবং রাজনৈতিক জ্ঞান কতটুকু। আগামী নির্বাচনে আমরা মেহেরপুরে দুইটি আসন থেকেই নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করব।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মেহেরপুর জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলীর সভাপতিত্বে ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম পেরেশানের সঞ্চালনায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভাতে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটির সদস্য এম এ এস ইমন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জেমস স্বপন মল্লিক, মেহেরপুর পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন, মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কামরুল হাসান চাদু, সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর আল মামুন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা, যুবলীগের সদস্য সাজেদুল ইসলাম সাজু প্রমুখ। সে সময় তারা জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবীতে একাট্টা হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন।




খালেদা জিয়ার ‘শর্তহীন’ বিদেশ যাত্রা কেন চায় বিএনপি?

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দুই মাস ধরে হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রায়ই তাকে সিসিইউতে নেওয়া হচ্ছে। তারা মনে করছেন, দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা দিলে তিনি সেরে উঠতে পারেন। যদিও আইনত তার এখন বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। যদি যেতেই হয় তাহলে আদালতের মাধ্যমে তাকে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু সেই অনুমতি চাইতে হলে আগে কারাগারে ফিরতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে তিনি একটি সুবিধা নিয়েই সাজাপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও নিজ বাসায় অবস্থান করছেন।

এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যে সরকারের কোনও শর্ত মেনে বিদেশে যেতে নেতাদের রাজি হতে বারণ করে দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন। প্রশ্ন হলো, কেন তিনি শর্ত ছাড়া যেতে চান। বিএনপিইবা কেন বা কোন যুক্তিতে তাদের চেয়ারপারসেনকে বিনাশর্তে বিদেশে নিতে চান। শুরু থেকেই বিএনপির আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলে দেওয়া আছে, সরকার চাইলে তাকে মুক্তি দিতে পারে। বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে পারে।

যদি ধরেও নিই সরকার চাইলে পাঠাতে পারবে। কেনো পাঠাবে? বিএনপি কি সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে পেরেছে? বিএনপি কি খালেদা জিয়ার শারিরীক পরিস্থিতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলাপে বসতে চেয়েছে? আদালতের বাইরে নির্বাহী আদেশে সরকার প্রধান প্রথম দফা খালেদা জিয়াকে নিজ বাসভবনে যেতে অনুমতি দিয়েছিলো। দ্বিতীয় দফাও সেভাবে কিছু করার সুযোগ সরকার কেনো নিবে? আদালতের বাইরে একাধিকবার এই পদ্ধতি অবলম্বন অন্য কারাবন্দিদের মানবাধিকার নিশ্চিত করে কি? বিএনপি নিশ্চয় একবারের জন্যও সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন না।

৪০১ ধারার ক্ষমতাবলেই নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে ২০২০ সালের মার্চে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে বাড়িতে থাকার অনুমতি দেয় সরকার। নতুন আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী জানান, একই আবেদন বারবার নিষ্পত্তির সুযোগ নেই। এটি একবারই নিষ্পত্তি হয়। ফলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হলে পুনরায় জেলে গিয়ে আদালতে আবেদন করতে হবে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ফৌজদারি কার্যধারার ৪০১ এর একটি উপধারা অনুযায়ী দুটি শর্তে তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার যে অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো সে আদেশও তারা বাতিল করবেন না জানিয়েছেন। ফলে সরকারের যে নির্বাহী আদেশে মিসেস জিয়া শর্তসাপেক্ষে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন সেই আদেশ বাতিল না করলে তার আপাতত জেলেও ফেরত যাওয়ার সুযোগ নেই। এখন সরকার কোন জায়গা থেকে বিনাশর্তে তাকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করবে?

একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিনাশর্তে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিলে কী ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে? তিনি চিকিৎসা শেষ করে ফিরবেন তার নিশ্চয়তা থাকে না। এর আগেও এমন বহু নজির আছে যারা অপরাধ করে দেশত্যাগ করেছেন এবং তাদের আর ফেরানো সম্ভব হয়নি। সরকারের সাথে আলাপকালে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কথা উত্থাপিত হলে বিএনপি থেকে জানানো হয় জার্মানিতে যেতে চান তারা। সেখানে ইনটেনশনটা পরিস্কার হয়। তারা এমন জায়গায় যাওয়ার নিশ্চয়তা চান যাদের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি বাংলাদেশের নেই।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীর অবস্থান প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হলেও তাদের ফেরত আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েও কোন উপায় বের করা যায়নি। নূর চৌধুরী কানাডায়, রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে, শরিফুল হক ডালিম স্পেনে এবং মোসলেম উদ্দিন জার্মানিতে আছেন বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। আর খুনি খন্দকার আবদুর রশীদ ও আবদুল মাজেদ কোথায় আছেন সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায় না।

খালেদা জিয়ার সন্তান তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছে। এরপর তার বিরুদ্ধে করা মামলায় সাজা হলে তাকে ফেরানোর কথা ওঠে। কিন্তু লন্ডন থেকে তাকে ফেরানোর কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরানো নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, তারেক যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। মিউচুয়াল লিগ্যাল এসিসটেন্স বা এক্সটাডিশন নিয়ে আমাদের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি।

এতগুলো উদাহরণ যখন সামনে আছে তখন বিনা শর্তে কেনো খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে চান বিএনপি নেতারা তা স্পষ্ট হয়ে যায়। তারা যদি তার মঙ্গল কামনা করতেন তাহলে অবশ্যই যে দেশেই চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো সেখানে নিতে চাইতেন। সেখানে চিকিৎসা করানোর সুযোগ পাওয়াটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য হতো। তারা শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে রাজনীতি করে এসেছে। সেখানে সরকারকে বিপদে ফেলার ইনটেনশন যতোটা ছিলো, খালেদা জিয়াকে সারিয়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা ততটো ছিলো কিনা সে প্রশ্ন করা এখন সময়ের দাবি।




যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষ করে দেশে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট (বিজি-২০৮) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল আওয়ামী লীগ। তবে তাতে সম্মতি দেননি প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী তাতে রাজি হননি।

জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে সংবর্ধনা না নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজধানীবাসী। তারা বলছেন, এমনিতেই ঢাকায় যানজটের মধ্যে চলাচল করতে হয়। এরপর কোন সমাবেশ বা সংবর্ধনা থাকলে সেইদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয়্ এমন পরিস্থিতিতে সরকারপ্রধান বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ায় তারা খুশি। বৃষ্টি এবং কর্মদিবস হওয়ার পরেও বুধবার ঢাকার রাস্তা তুলনামূলক ফাঁকা ছিলো। মিরপুর থেকে মতিঝিল অফিস করেন সাকিলা জাহান। তিনি আজকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে পারেন ভেবে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। বিজয় স্মরণির সিগন্যালে অপেক্ষমান অবস্থায় তিনি বলেন, ‘আমার খুব ভালো লেগেছে শেখ হাসিনা এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। আমরা সাধারণত এমন নজির কম দেখতে পাই। তার জনগণ রাস্তায় কষ্ট পাক এটা তিনি চাইবেন না এটাই স্বাভাবিক।’

বেলা ১২টা থেকে একটা ঢাকা বিভিন্ন রাস্তায় চলাচল করে দেখো গেছে অন্যদিনের থেকে রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক ছিলো। ঢাকায় বিভিন্ন রাস্তা যদি না আটকানো হয় তাহলে জনমনে কিছু স্বস্তি থাকে উল্লেখ করে বাসচালক রবিউল বলেন, আজকে ফাঁকা আছে রাস্তা। পথে তেমন কোথাও অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে ঢাকায় এতো হয়রানি হওয়ার কথা না।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকালে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রীর অর্জন অনেক। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন ছাড়াও ৬ টি আন্তর্জাতিক ফোরামে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেকগুলো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বিভিন্ন ফোরামে কথা বলেন বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে। শুধু বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার নেতা নয়, গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্বের আসনে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কমিউনিটি ক্লিনিকের বিশ্বস্বীকৃতি অর্জন এবং এ মডেলকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বিষয়ে ‘শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ অফ কমিউনিটি ক্লিনিক’ বিষয়ক হাইলেভেল সভায় প্রধানমন্ত্রীর ভূঁয়সী প্রশংসা করেন বিশ্বনেতারা। বিশ্বের নারী নেতাদের সংগঠন ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় জাতিসংঘ মহাসচিব পদে নারী নেতৃত্ব দেখার আকাঙক্ষা সাড়া ফেলে। জলবায়ু ন্যায্যতা বিষয়ক সভায় প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল সাউথকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা জানান। উল্লেখ্য জাতিসংঘের জলবায় সম্মেলনগুলোতে এলডিসি’র নেতৃত্ব দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবারে বিবিএনজে চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী। যোগ দেন ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ বিষয়ক সম্মেলনে। উজরা জেয়ার সাথে সাক্ষাতে রোহিঙ্গাদের জন্য ১২০ মিলিয়ন ডলার সহযোগিতার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনেরও আয়োজন করে বাংলাদেশ। ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সম্মেলনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর বাইরে গণমাধ্যমে এবং সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই সফরে ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক (ডিজি) টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসিসের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হু মহাপরিচালক সকলের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।

১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ইউএনজিএ’র ৭৮তম অধিবেশনের সাইডলাইনে ‘শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ অফ কমিউনিটি ক্লিনিক : ইনোভেটিভ এপ্রোচ এচিভিং ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ ইনক্লুসিভ অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি’ শীর্ষক উচ্চ-স্তরের সাইড-ইভেন্টের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বলেন, কমিউনিটি ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের চাবিকাঠি। একই দিনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে, তিমুর-লেস্তের রাষ্ট্রপতি ড. হোসে রামোস হোর্তা ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করন। এদিন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ওপর জোর দেন এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও অপ্রসারণে বাংলাদেশের অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

দিনশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে মহামারী প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া (পিপিপিআর) বিষয়ে ৭৮তম ইউএনজিএ উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরে মহামারী প্রতিরোধের অংশ হিসেবে একটি বৈশ্বিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। একই দিনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রতিনিধিরুমে ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমাদের কর্মকান্ডকে অংশগ্রহণ থেকে নেতৃত্বে উন্নীত করতে হবে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাবো।”

একই দিনে ইসিওএসওসি চেম্বারে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা প্রদান: ত্বরান্বিত উচ্চাকাক্ষা এবং অভিযোজন ও সবার জন্য প্রাথমিক সতর্কবার্তা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা শীর্ষ সম্মেলনের উচ্চ স্তরের বিষয়ভিত্তিক অধিবেশনে বক্তৃতা করেন তিনি। বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আসন্ন সংকট এড়াতে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা আশা করি বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং আসন্ন সংকট এড়াতে তাদের ন্যায্য অংশীদারীত্বের বিষয়ে সৎ থাকবে।”

একই দিনে জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপাক্ষিক বুথে মা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য অংশীদারিত্বের (পিএমএনসিএইচ) চেয়ার হেলেন ক্লার্কের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকট থেকে উদ্ভূত সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ’ বিষয়ে এসডিজি-৩ সহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ (এসডিজি) বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

২১ সেপ্টেম্বর, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি)’ বিষয়ক ইউএনজিএ উচ্চ-স্তরের বৈঠকে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বৈঠকে উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন।

একই দিনে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ‘তারা কি আমাদের ভুলে গেছে?’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক ইভেন্ট আয়োজন করে। ইভেন্টটি সঞ্চালনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে উদ্ভূত এই (রোহিঙ্গা) সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরো বহুগুণ বাড়াতে হবে, সব বিকল্পের মধ্যে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনই সবচেয়ে কার্যকর।’

২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ জাতিসংঘ সদর দফতরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে মানবজাতির কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সকলকে একযোগে কাজ করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান।

২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক মেট্রাপলিটন আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে ইনশাআল্লাহ। শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, বিএনপি কী আসলেই নির্বাচন চায়? তাদের নেতা কে? তারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোট পায়নি এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেনি। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন। পরে লন্ডনে বাংলাদেশিদের নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষন দেন প্রধানমন্ত্রী




প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজ্ঞান ও গবেষণা দর্শন

বিজ্ঞান ও গবেষণার মাধ্যমে রাষ্ট্রের উন্নয়ন আজকের দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা রাষ্ট্রের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান ও গবেষণা সম্পৃক্ত চিন্তাগুলো এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে আনা যেতে পারে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে চিন্তাগুলো বহুমাত্রিক। যেমন জলবায়ু বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর গবেষণা নির্ভর নিজস্ব একটা ধারণা গড়ে উঠেছে। ধারণাটি নিঃসন্দেহে বহুমাত্রিক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু উপাদান চিহ্নিত করেছেন, এগুলো হচ্ছে খাদ্য, পানি ও অভিবাসন। জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটলে এই উপাদানগুলোও প্রভাবিত হয় ও এগুলোর পরিবর্তন মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। যদি খাদ্যের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয় তবে দেখা যায় , জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যের মান—এই দুটি মৌলিক উপাদানের উপর নেতিবাচক প্রভাব পরে। এর ফলে মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত নিরাপদ ও সুপেয় পানির অভাব দেখা দেয়, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় মানুষ বাস্তচ্যুত হতে বাধ্য হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে সমাজ ও অর্থনীতির ওপর, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই উপাদানটি এক ধরণের মানবিক সংকটের জন্ম দিচ্ছে। এগুলোর প্রভাবে সম্পদের ওপর চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনীতির ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু শস্যব্যবস্থা, পানির যথাযথ ব্যবহার ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পানি ব্যবস্থাপনায় একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের ধারণা প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান ও গবেষণা দর্শনেরই প্রতিফলন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তাঁর এই চিন্তাধারাকে কেবল তত্ত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং উদ্ভাবনমুখী নীতিমালা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে সেগুলো মোকাবেলায় বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছেন। অভিযোজন নীতির অংশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প থেকে শুরু করে বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করায় বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অনেক বেশি প্রস্তুত। জলবায়ু অভিযোজন কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রদূত ও অভিযোজন নীতির স্বপক্ষের একজন বলিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে শেখ হাসিনা অন্যদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, যা তাঁর বিজ্ঞানমনস্ক মনোভাবেরই প্রতিফলন |

বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী চিন্তাসম্পন্ন সরকারপ্রধান হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘গ্লোবাল ইনোভেশন এক্সচেঞ্জ’ (জিআইই) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘মোস্ট ইনোভেটিভ পলিটিশিয়ান’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি সামগ্রিক উদ্ভাবনের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে গবেষণামূলক কার্যক্রম করে থাকে ও সারা পৃথিবীর উদ্ভাবনমুখী ভাবনা ও সৃজনশীল আইডিয়াগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো ম্যাগাজিনে প্রকাশ করে। গবেষণার তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে তারা বলছেন, ‘বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। তাঁরা রুটিনমাফিক কাজ করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এমন কোনো সরকারপ্রধান দেখা যাচ্ছে না, যাঁদের উদ্ভাবনী চিন্তা রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রভাব রেখেছে।’

জিআইই তাদের বিশ্লেষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিনটি উদ্যোগকে অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ ও ইনোভেটিভ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা অন্য দেশগুলো অনুসরণ করে তাদের দেশে সেগুলো বাস্তবায়নে অনুপ্রাণিত হয়েছে। সংস্থাটি ‘কমিউনিটি ক্লিনিক-এর ধারণাটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে ইনোভেটিভ আইডিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিতীয় উদ্ভাবনী চিন্তার বাস্তবায়ন বলা হচ্ছে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’, যার মাধ্যমে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা যেমন পূরণ হয়েছে, তেমনই কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেদের আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র দুটো উপাদান মানুষের জীবনে পরিবর্তন ঘটিয়ে যে নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে, তা অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণায় নতুন নতুন চিন্তা যুক্ত করতে পারে। তাঁর তৃতীয় উদ্ভাবনী চিন্তার নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ। হতদরিদ্র, অর্ধশিক্ষিত মানুষের হাতে তথ্য-প্রযুক্তি পৌঁছে দিয়ে কার্যত শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদানে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে বদলে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাকে এগিয়ে নিতে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্যে ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।’ ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরে ডিজিটাল সংযোগের ধারণা প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী চিন্তারই একটি অংশ, যেখানে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান ক্রিয়াশীল থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশের মৌলিক ধারণা ও এর উপাদানগুলো নিয়ে প্রযুক্তিগত নির্ভর গবেষণা, অর্থনীতি সংক্রান্ত গবেষণা, সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সমন্বিত গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আবার এই উপাদানগুলো একটি অন্যটির পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে, যা ইন্টিগ্রেটেড রিসার্চের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

অমর্ত্য সেন ও রিচার্ড এইচ থেলার মানবিক অর্থনীতির কথা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট অর্থনীতির কথা বলেছেন, যেখানে মানবিক বিষয়গুলোর উন্নয়নের সাথে সাথে মানবিক প্রগতির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর সাথে, গবেষণা ও প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনীতিকে যুক্ত করে মানুষ, সমাজ ও সরকারের যোগসূত্র গড়ে তোলা হয়েছে। স্মার্ট অর্থনীতি প্রধানমন্ত্রীর মৌলিক দর্শন থেকে উৎসারিত উদ্ভাবনী চিন্তারই প্রতিফলন, যা অর্থনীতি ছাড়াও এর সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত। মূলত প্রধানমন্ত্রী তাঁর গবেষণা লব্ধ উন্নয়নের ধারণাকে এমনভাবে গড়ে তুলেছেন, যেখানে গবেষণাও এগিয়ে যাবে, দেশের উন্নয়নও এগিয়ে যাবে। আর এগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়ন। কারণ প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে পিছিয়ে পড়তে হবে।

বিজ্ঞান ও গবেষণা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “গবেষণার মাধ্যমেই আমরা ব্যয় কমাতে এবং উৎপাদনের উৎকর্ষতা বাড়াতে পারি এবং বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াতে পারি। আমি আশা করি নতুন নতুন পন্য সৃষ্টি এবং আমাদের রপ্তানি যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে বিশেষভাবে আপনারা দৃষ্টি দেবেন।” দেশকে পরনির্ভরশীল না রেখে কিভাবে নিজেদের আহরিত সম্পদকে গবেষণার মাধ্যমে ব্যবহার করে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়, সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিজের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। গবেষণার মাধ্যমে দেশীয় উপাদানে তৈরি রপ্তানিমুখী শিল্প গড়ে তোলা ও আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়গুলো সেই পরিকল্পনারই অবিচ্ছেদ্য অংশ | মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞান ও গবেষণা কেবল বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রচেষ্টায় সফল হতে পারেনা, যদি না সেখানে গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে গবেষণামনস্ক নেতৃত্ব গড়ে উঠে | আমরা সৌভাগ্যবান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কর্মপরিকল্পনাগুলো গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেমন নিজের উদ্ভাবনী ধারণাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, তেমনই বিজ্ঞানী ও গবেষকদের উদ্ভাবন ও গবেষণায় নিজেদের এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী দেশের সকলকে নিজ নিজ জায়গা থেকে উদ্ভাবন চর্চা ও সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের বিজ্ঞানমনস্ক জাতি হিসেবে গড়ে তোলার সাহস যুগাচ্ছেন | সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরও তত পরিবর্তন ঘটছে | এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনা বলেছেন, “প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং নতুন থিওরি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এসে গেছে। এরফলে আমাদের লোকবল হয়তো কম লাগবে। কিন্তু প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে এবং সেজন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার আমরা সম্পূর্ণ সেদিকে যেতে চাই না। আমরা শ্রমঘন শিল্পও করতে চাই। কারণ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে হবে। এই দু’টি মিলিয়ে আমাদের দেশকে কীভাবে আমরা এগিয়ে নিতে পারি সেই চিন্তাই সবার মাথার মধ্যে থাকতে হবে।” এই কথাগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নিজের গবেষণালব্ধ ফলাফলের সমন্বয় ঘটেছে। প্রযুক্তি এগিয়ে গেলে অটোমেশনের কারণে মানুষের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসবে | কিন্তু এখন আমরা জনসংখ্যাকে সমস্যা হিসেবে বলছিনা, বরং জন্যসংখ্যাকে জনসম্পদ বলছি। উন্নত বিশ্বে অটোমেশনের প্রয়োগ বেড়ে যাওয়ায় সেখানে বেকারত্ব ক্রমাগত বাড়ছে | বেকারত্বের কারণে হতাশা বাড়ছে, এর সাথে সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে শ্রমঘন শিল্পের কথা বলছেন, যেটি প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়টিকে নিশ্চিত করবে।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আইটি পার্ক, হাইটেক সিটি, হাইটেক পার্ক, সফ্টওয়ার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর, ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর মতো প্রযুক্তি নির্ভর ও কর্মসংস্থানমুখী বিভিন্ন সেক্টর গড়ে উঠেছে। এগুলোতেও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর গবেষণা দর্শন থেকে বুঝেছেন, শিল্পকারখানাগুলো এগিয়ে নিতে সেগুলোর প্রত্যেকটিতে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশন থাকতে হবে। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথেও শিল্পকারখানাগুলোর গবেষণা সম্পৃক্ত যোগাযোগ থাকতে হবে। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে শিল্পকারখানার উৎপাদিত পণ্যের উৎকর্ষতা না ঘটলে শিল্পকারখানাগুলো পিছিয়ে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন | শিক্ষকদের গবেষণায় প্রেরণা জোগাচ্ছেন, উন্নত ও আধুনিক ল্যাবরেটরি ফ্যাসিলিটি গড়ে দিচ্ছেন। ছাত্রদেরও গবেষণায় অনুপ্রাণিত করছেন। গবেষণাকে এগিয়ে নিতে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ে তোলা হচ্ছে। উন্মোচিত হচ্ছে বিজ্ঞান ও গবেষণার নতুন নতুন দ্বার ও সম্ভাবনা | গবেষণায় চ্যালেঞ্জ আছে, চ্যালেঞ্জ থাকবেই, তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজেদের সামর্থ্য ও শক্তিতে পদ্মা সেতু তৈরি করার বিজয়, আমাদের মনোবল জাগ্রত করেছে। এখন গর্ব করে বলা যায়, আমরাও পারি |

এখন দরকার সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান ও গবেষণা দর্শনেও সেই সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতিফলন ঘটেছে। সেটি এগিয়ে নেবার দায়িত্ব আমাদের সকলের। দেশ আমাকে কি দিলো সেটি বড় কথা নয়, দেশকে আমরা কি দিলাম সেটাই বড় কথা। বঙ্গবন্ধুর কথায়, মহাঅর্জনের জন্য দরকার মহত্যাগ | সেই মহত্যাগ হোক আমাদের অমিত শক্তি |

লেখক: কলামিস্ট ও লেখক, অধ্যাপক, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর।