যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষ করে দেশে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট (বিজি-২০৮) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল আওয়ামী লীগ। তবে তাতে সম্মতি দেননি প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী তাতে রাজি হননি।

জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে সংবর্ধনা না নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজধানীবাসী। তারা বলছেন, এমনিতেই ঢাকায় যানজটের মধ্যে চলাচল করতে হয়। এরপর কোন সমাবেশ বা সংবর্ধনা থাকলে সেইদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয়্ এমন পরিস্থিতিতে সরকারপ্রধান বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ায় তারা খুশি। বৃষ্টি এবং কর্মদিবস হওয়ার পরেও বুধবার ঢাকার রাস্তা তুলনামূলক ফাঁকা ছিলো। মিরপুর থেকে মতিঝিল অফিস করেন সাকিলা জাহান। তিনি আজকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে পারেন ভেবে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। বিজয় স্মরণির সিগন্যালে অপেক্ষমান অবস্থায় তিনি বলেন, ‘আমার খুব ভালো লেগেছে শেখ হাসিনা এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। আমরা সাধারণত এমন নজির কম দেখতে পাই। তার জনগণ রাস্তায় কষ্ট পাক এটা তিনি চাইবেন না এটাই স্বাভাবিক।’

বেলা ১২টা থেকে একটা ঢাকা বিভিন্ন রাস্তায় চলাচল করে দেখো গেছে অন্যদিনের থেকে রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক ছিলো। ঢাকায় বিভিন্ন রাস্তা যদি না আটকানো হয় তাহলে জনমনে কিছু স্বস্তি থাকে উল্লেখ করে বাসচালক রবিউল বলেন, আজকে ফাঁকা আছে রাস্তা। পথে তেমন কোথাও অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে ঢাকায় এতো হয়রানি হওয়ার কথা না।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকালে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রীর অর্জন অনেক। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন ছাড়াও ৬ টি আন্তর্জাতিক ফোরামে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেকগুলো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বিভিন্ন ফোরামে কথা বলেন বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে। শুধু বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার নেতা নয়, গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্বের আসনে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কমিউনিটি ক্লিনিকের বিশ্বস্বীকৃতি অর্জন এবং এ মডেলকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বিষয়ে ‘শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ অফ কমিউনিটি ক্লিনিক’ বিষয়ক হাইলেভেল সভায় প্রধানমন্ত্রীর ভূঁয়সী প্রশংসা করেন বিশ্বনেতারা। বিশ্বের নারী নেতাদের সংগঠন ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় জাতিসংঘ মহাসচিব পদে নারী নেতৃত্ব দেখার আকাঙক্ষা সাড়া ফেলে। জলবায়ু ন্যায্যতা বিষয়ক সভায় প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল সাউথকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা জানান। উল্লেখ্য জাতিসংঘের জলবায় সম্মেলনগুলোতে এলডিসি’র নেতৃত্ব দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবারে বিবিএনজে চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী। যোগ দেন ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ বিষয়ক সম্মেলনে। উজরা জেয়ার সাথে সাক্ষাতে রোহিঙ্গাদের জন্য ১২০ মিলিয়ন ডলার সহযোগিতার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনেরও আয়োজন করে বাংলাদেশ। ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সম্মেলনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর বাইরে গণমাধ্যমে এবং সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই সফরে ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক (ডিজি) টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসিসের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হু মহাপরিচালক সকলের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।

১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ইউএনজিএ’র ৭৮তম অধিবেশনের সাইডলাইনে ‘শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ অফ কমিউনিটি ক্লিনিক : ইনোভেটিভ এপ্রোচ এচিভিং ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ ইনক্লুসিভ অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি’ শীর্ষক উচ্চ-স্তরের সাইড-ইভেন্টের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বলেন, কমিউনিটি ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের চাবিকাঠি। একই দিনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে, তিমুর-লেস্তের রাষ্ট্রপতি ড. হোসে রামোস হোর্তা ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করন। এদিন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ওপর জোর দেন এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও অপ্রসারণে বাংলাদেশের অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

দিনশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে মহামারী প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া (পিপিপিআর) বিষয়ে ৭৮তম ইউএনজিএ উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরে মহামারী প্রতিরোধের অংশ হিসেবে একটি বৈশ্বিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। একই দিনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রতিনিধিরুমে ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমাদের কর্মকান্ডকে অংশগ্রহণ থেকে নেতৃত্বে উন্নীত করতে হবে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাবো।”

একই দিনে ইসিওএসওসি চেম্বারে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা প্রদান: ত্বরান্বিত উচ্চাকাক্ষা এবং অভিযোজন ও সবার জন্য প্রাথমিক সতর্কবার্তা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা শীর্ষ সম্মেলনের উচ্চ স্তরের বিষয়ভিত্তিক অধিবেশনে বক্তৃতা করেন তিনি। বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আসন্ন সংকট এড়াতে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা আশা করি বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং আসন্ন সংকট এড়াতে তাদের ন্যায্য অংশীদারীত্বের বিষয়ে সৎ থাকবে।”

একই দিনে জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপাক্ষিক বুথে মা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য অংশীদারিত্বের (পিএমএনসিএইচ) চেয়ার হেলেন ক্লার্কের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকট থেকে উদ্ভূত সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ’ বিষয়ে এসডিজি-৩ সহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ (এসডিজি) বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

২১ সেপ্টেম্বর, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি)’ বিষয়ক ইউএনজিএ উচ্চ-স্তরের বৈঠকে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বৈঠকে উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন।

একই দিনে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ‘তারা কি আমাদের ভুলে গেছে?’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক ইভেন্ট আয়োজন করে। ইভেন্টটি সঞ্চালনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে উদ্ভূত এই (রোহিঙ্গা) সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরো বহুগুণ বাড়াতে হবে, সব বিকল্পের মধ্যে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনই সবচেয়ে কার্যকর।’

২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ জাতিসংঘ সদর দফতরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে মানবজাতির কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সকলকে একযোগে কাজ করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান।

২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক মেট্রাপলিটন আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে ইনশাআল্লাহ। শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, বিএনপি কী আসলেই নির্বাচন চায়? তাদের নেতা কে? তারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোট পায়নি এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেনি। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন। পরে লন্ডনে বাংলাদেশিদের নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষন দেন প্রধানমন্ত্রী




প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজ্ঞান ও গবেষণা দর্শন

বিজ্ঞান ও গবেষণার মাধ্যমে রাষ্ট্রের উন্নয়ন আজকের দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা রাষ্ট্রের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান ও গবেষণা সম্পৃক্ত চিন্তাগুলো এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে আনা যেতে পারে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে চিন্তাগুলো বহুমাত্রিক। যেমন জলবায়ু বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর গবেষণা নির্ভর নিজস্ব একটা ধারণা গড়ে উঠেছে। ধারণাটি নিঃসন্দেহে বহুমাত্রিক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু উপাদান চিহ্নিত করেছেন, এগুলো হচ্ছে খাদ্য, পানি ও অভিবাসন। জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটলে এই উপাদানগুলোও প্রভাবিত হয় ও এগুলোর পরিবর্তন মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। যদি খাদ্যের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয় তবে দেখা যায় , জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যের মান—এই দুটি মৌলিক উপাদানের উপর নেতিবাচক প্রভাব পরে। এর ফলে মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত নিরাপদ ও সুপেয় পানির অভাব দেখা দেয়, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় মানুষ বাস্তচ্যুত হতে বাধ্য হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে সমাজ ও অর্থনীতির ওপর, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই উপাদানটি এক ধরণের মানবিক সংকটের জন্ম দিচ্ছে। এগুলোর প্রভাবে সম্পদের ওপর চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনীতির ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু শস্যব্যবস্থা, পানির যথাযথ ব্যবহার ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পানি ব্যবস্থাপনায় একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের ধারণা প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান ও গবেষণা দর্শনেরই প্রতিফলন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তাঁর এই চিন্তাধারাকে কেবল তত্ত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং উদ্ভাবনমুখী নীতিমালা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে সেগুলো মোকাবেলায় বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছেন। অভিযোজন নীতির অংশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প থেকে শুরু করে বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করায় বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অনেক বেশি প্রস্তুত। জলবায়ু অভিযোজন কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রদূত ও অভিযোজন নীতির স্বপক্ষের একজন বলিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে শেখ হাসিনা অন্যদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, যা তাঁর বিজ্ঞানমনস্ক মনোভাবেরই প্রতিফলন |

বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী চিন্তাসম্পন্ন সরকারপ্রধান হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘গ্লোবাল ইনোভেশন এক্সচেঞ্জ’ (জিআইই) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘মোস্ট ইনোভেটিভ পলিটিশিয়ান’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি সামগ্রিক উদ্ভাবনের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে গবেষণামূলক কার্যক্রম করে থাকে ও সারা পৃথিবীর উদ্ভাবনমুখী ভাবনা ও সৃজনশীল আইডিয়াগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো ম্যাগাজিনে প্রকাশ করে। গবেষণার তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে তারা বলছেন, ‘বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। তাঁরা রুটিনমাফিক কাজ করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এমন কোনো সরকারপ্রধান দেখা যাচ্ছে না, যাঁদের উদ্ভাবনী চিন্তা রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রভাব রেখেছে।’

জিআইই তাদের বিশ্লেষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিনটি উদ্যোগকে অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ ও ইনোভেটিভ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা অন্য দেশগুলো অনুসরণ করে তাদের দেশে সেগুলো বাস্তবায়নে অনুপ্রাণিত হয়েছে। সংস্থাটি ‘কমিউনিটি ক্লিনিক-এর ধারণাটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে ইনোভেটিভ আইডিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিতীয় উদ্ভাবনী চিন্তার বাস্তবায়ন বলা হচ্ছে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’, যার মাধ্যমে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা যেমন পূরণ হয়েছে, তেমনই কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেদের আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র দুটো উপাদান মানুষের জীবনে পরিবর্তন ঘটিয়ে যে নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে, তা অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণায় নতুন নতুন চিন্তা যুক্ত করতে পারে। তাঁর তৃতীয় উদ্ভাবনী চিন্তার নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ। হতদরিদ্র, অর্ধশিক্ষিত মানুষের হাতে তথ্য-প্রযুক্তি পৌঁছে দিয়ে কার্যত শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদানে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে বদলে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাকে এগিয়ে নিতে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্যে ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।’ ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরে ডিজিটাল সংযোগের ধারণা প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী চিন্তারই একটি অংশ, যেখানে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান ক্রিয়াশীল থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশের মৌলিক ধারণা ও এর উপাদানগুলো নিয়ে প্রযুক্তিগত নির্ভর গবেষণা, অর্থনীতি সংক্রান্ত গবেষণা, সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সমন্বিত গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আবার এই উপাদানগুলো একটি অন্যটির পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে, যা ইন্টিগ্রেটেড রিসার্চের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

অমর্ত্য সেন ও রিচার্ড এইচ থেলার মানবিক অর্থনীতির কথা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট অর্থনীতির কথা বলেছেন, যেখানে মানবিক বিষয়গুলোর উন্নয়নের সাথে সাথে মানবিক প্রগতির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর সাথে, গবেষণা ও প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনীতিকে যুক্ত করে মানুষ, সমাজ ও সরকারের যোগসূত্র গড়ে তোলা হয়েছে। স্মার্ট অর্থনীতি প্রধানমন্ত্রীর মৌলিক দর্শন থেকে উৎসারিত উদ্ভাবনী চিন্তারই প্রতিফলন, যা অর্থনীতি ছাড়াও এর সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত। মূলত প্রধানমন্ত্রী তাঁর গবেষণা লব্ধ উন্নয়নের ধারণাকে এমনভাবে গড়ে তুলেছেন, যেখানে গবেষণাও এগিয়ে যাবে, দেশের উন্নয়নও এগিয়ে যাবে। আর এগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়ন। কারণ প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে পিছিয়ে পড়তে হবে।

বিজ্ঞান ও গবেষণা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “গবেষণার মাধ্যমেই আমরা ব্যয় কমাতে এবং উৎপাদনের উৎকর্ষতা বাড়াতে পারি এবং বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াতে পারি। আমি আশা করি নতুন নতুন পন্য সৃষ্টি এবং আমাদের রপ্তানি যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে বিশেষভাবে আপনারা দৃষ্টি দেবেন।” দেশকে পরনির্ভরশীল না রেখে কিভাবে নিজেদের আহরিত সম্পদকে গবেষণার মাধ্যমে ব্যবহার করে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়, সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিজের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। গবেষণার মাধ্যমে দেশীয় উপাদানে তৈরি রপ্তানিমুখী শিল্প গড়ে তোলা ও আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়গুলো সেই পরিকল্পনারই অবিচ্ছেদ্য অংশ | মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞান ও গবেষণা কেবল বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রচেষ্টায় সফল হতে পারেনা, যদি না সেখানে গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে গবেষণামনস্ক নেতৃত্ব গড়ে উঠে | আমরা সৌভাগ্যবান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কর্মপরিকল্পনাগুলো গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেমন নিজের উদ্ভাবনী ধারণাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, তেমনই বিজ্ঞানী ও গবেষকদের উদ্ভাবন ও গবেষণায় নিজেদের এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী দেশের সকলকে নিজ নিজ জায়গা থেকে উদ্ভাবন চর্চা ও সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের বিজ্ঞানমনস্ক জাতি হিসেবে গড়ে তোলার সাহস যুগাচ্ছেন | সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরও তত পরিবর্তন ঘটছে | এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনা বলেছেন, “প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং নতুন থিওরি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এসে গেছে। এরফলে আমাদের লোকবল হয়তো কম লাগবে। কিন্তু প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে এবং সেজন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার আমরা সম্পূর্ণ সেদিকে যেতে চাই না। আমরা শ্রমঘন শিল্পও করতে চাই। কারণ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে হবে। এই দু’টি মিলিয়ে আমাদের দেশকে কীভাবে আমরা এগিয়ে নিতে পারি সেই চিন্তাই সবার মাথার মধ্যে থাকতে হবে।” এই কথাগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নিজের গবেষণালব্ধ ফলাফলের সমন্বয় ঘটেছে। প্রযুক্তি এগিয়ে গেলে অটোমেশনের কারণে মানুষের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসবে | কিন্তু এখন আমরা জনসংখ্যাকে সমস্যা হিসেবে বলছিনা, বরং জন্যসংখ্যাকে জনসম্পদ বলছি। উন্নত বিশ্বে অটোমেশনের প্রয়োগ বেড়ে যাওয়ায় সেখানে বেকারত্ব ক্রমাগত বাড়ছে | বেকারত্বের কারণে হতাশা বাড়ছে, এর সাথে সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে শ্রমঘন শিল্পের কথা বলছেন, যেটি প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়টিকে নিশ্চিত করবে।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আইটি পার্ক, হাইটেক সিটি, হাইটেক পার্ক, সফ্টওয়ার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর, ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর মতো প্রযুক্তি নির্ভর ও কর্মসংস্থানমুখী বিভিন্ন সেক্টর গড়ে উঠেছে। এগুলোতেও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর গবেষণা দর্শন থেকে বুঝেছেন, শিল্পকারখানাগুলো এগিয়ে নিতে সেগুলোর প্রত্যেকটিতে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশন থাকতে হবে। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথেও শিল্পকারখানাগুলোর গবেষণা সম্পৃক্ত যোগাযোগ থাকতে হবে। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে শিল্পকারখানার উৎপাদিত পণ্যের উৎকর্ষতা না ঘটলে শিল্পকারখানাগুলো পিছিয়ে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন | শিক্ষকদের গবেষণায় প্রেরণা জোগাচ্ছেন, উন্নত ও আধুনিক ল্যাবরেটরি ফ্যাসিলিটি গড়ে দিচ্ছেন। ছাত্রদেরও গবেষণায় অনুপ্রাণিত করছেন। গবেষণাকে এগিয়ে নিতে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ে তোলা হচ্ছে। উন্মোচিত হচ্ছে বিজ্ঞান ও গবেষণার নতুন নতুন দ্বার ও সম্ভাবনা | গবেষণায় চ্যালেঞ্জ আছে, চ্যালেঞ্জ থাকবেই, তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজেদের সামর্থ্য ও শক্তিতে পদ্মা সেতু তৈরি করার বিজয়, আমাদের মনোবল জাগ্রত করেছে। এখন গর্ব করে বলা যায়, আমরাও পারি |

এখন দরকার সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান ও গবেষণা দর্শনেও সেই সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতিফলন ঘটেছে। সেটি এগিয়ে নেবার দায়িত্ব আমাদের সকলের। দেশ আমাকে কি দিলো সেটি বড় কথা নয়, দেশকে আমরা কি দিলাম সেটাই বড় কথা। বঙ্গবন্ধুর কথায়, মহাঅর্জনের জন্য দরকার মহত্যাগ | সেই মহত্যাগ হোক আমাদের অমিত শক্তি |

লেখক: কলামিস্ট ও লেখক, অধ্যাপক, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর।




ঝিনাইদহে বাস ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নজরুল ইসলাম (৩৫) নামের এক পিকআপ চালক নিহত হয়েছে।

বুধবার (৪ অক্টোবর) সকালে কালীগঞ্জ-যশোর মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার আমতলা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নজরুল ইসলাম শরিয়তপুর সদর উপজেলা কেয়ারপুর গ্রামের সিরাজুল হক খানের ছেলে।

কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শেখ মামুনুর রশিদ জানান, সকালে কালীগঞ্জ থেকে ফুলঝরি সোহাগ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস যশোর যাচ্ছিলো। পথে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পিকআপ ভ্যানের চালক নজরুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সেখান থেকে নজরুলকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বারোবাজার হাইওয়ে থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম জানান, দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসটি আটক করা হয়েছে। তবে চালক পলাতক রয়েছে।




ঢাকায় নিয়োগ দেবে আড়ং

আড়ং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ‘সিনিয়র ম্যানেজার/অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল (কোয়ালিটি কট্রোল) ম্যানেজার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।

যোগ্যতা

প্রার্থীকে স্নাতক/বিএসসি (অ্যাপারেল/টেক্সটাইল) পাস হতে হবে। নারী ও পুরুষ প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।

কর্মস্থল

ঢাকা।

আবেদন প্রক্রিয়া

আগ্রহী প্রার্থীরা career.aarong@brac.net আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের সময়সীমা

১৫ অক্টোবর ২০২৩

সূত্র : বিডিজবস




ইউটিউবের অফিসিয়াল পেজে প্রথম বাংলাদেশি রাফসান

জনপ্রিয় ইউটিউবার ইফতেখার রাফসান ফুড ভ্লগিং দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ট্রাভেল ভ্লগিং, মডেলিংয়েও এখন তিনি বেশ পরিচিত। ইতিমধ্যে ‘রাফসান দ্য ছোটভাই’ নামেই তাকে চেনে সবাই। সম্প্রতি রাফসানের ইউটিউবের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দুটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে। ওই পোস্টে বলা হয়েছে, দ্য ছোটভাই বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গা থেকে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন।

এছাড়া মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে ওই পোস্টটিই নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন রাফসান। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইউটিউবের ফিডে স্থান পেয়েছেন।

রাফসান দ্য ছোটভাই ফেসবুক পোস্টে বলেন, আমি কী স্বপ্ন দেখছি? ইউটিউব তাদের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রামে আমাকে নিয়ে পোস্ট করেছে! ইউটিউবের অফিসিয়াল ফিডে প্রথম বাংলাদেশি! আলহামদুলিল্লাহ।

পোস্টে তিনি আরও বলেন, যখন আমি ভিডিও বানানো শুরু করি, তখন থেকেই আমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছিলাম এবং এই পর্যায়ের স্বীকৃতি পেতে চেয়েছি! ছবির ক্যাপশনটিই আমার লক্ষ্য।

এসময় রাফসান আরও লেখেন, একজন ছোট মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য আপনাদের প্রত্যেককে অনেক অনেক ধন্যবাদ।




গাংনীতে দুই সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

এক শিফটের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কর্মস্থলে হাজির থাকা নিয়ম শিক্ষকদের। কিন্তু এ নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রুহিনা খাতুন ও শাম্মীয়ারা দীপ্তি। শুধু নিয়মমত উপস্থিতিই না, ক্লাস না নেওয়া ও শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ক্ষমতা দেখিয়ে নিজের মত চাকরি করছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে তারা এসকল অনিয়ম করলেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেন না কেউ।

সহকারি শিক্ষক রুহিনা খাতুনের স্বামী পাবনা জেলার ঈশ্বরদি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন এবং শাম্মীয়ারা দীপ্তি বিদ্যালয়ের পাশেই একজন গ্রাম্য চিকিৎসকের স্ত্রী। দুজনই স্বামী ও আত্মীয় স্বজনদের ক্ষমতা দেখিয়ে মাসের পর মাস এ অনিয়ম করে চলেছেন।

বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গত রবিবার দুপুরে দিকে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান এ প্রতিবেদক। টিফিন টাইম শেষ করে স্কুলের পুরাতন ভবনের নিচতলায় তৃতীয় ও চতৃর্থ শ্রেণীর ক্লাস নিচ্ছেন দুই শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকসহ আরো ৪ জন শিক্ষক বসে গল্প করছেন । অথচ নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৫ম শ্রেণীর নির্ধারিত শিক্ষক ছুটিতে থাকায় ক্লাস হচ্ছে না। ৫ম শ্রেণীতে ১৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ওই দিন চারজন অনুপস্থিত ছিলো। শ্রেণী কক্ষ থেকে বের হয়ে আসার সময় শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিবেদককে উদ্দেশ্যে করে বলে স্যার আপনার সাথে কথা আছে। তাদের কথা শুনতে গিয়ে তারা দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ বলতে থাকে অবলিলায়। শিক্ষার্থীরা জানায়, শাম্মীয়ারা ম্যাডাম মাসে কয়েকদিন ক্লাস নেন। ঠিকমত বোঝাননা। কিছু বলতে গেলে শিক্ষার্থীদের অভিশাপ দেন আর বলেন, আমার ছেলের পা ধুয়ে পানি খাওয়া দরকার তোদের। অভিযোগের এক পর্যায়ে তারা সমাজ ম্যাডাম রুহিনা খাতুনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দেন। তিনিও মাসে কয়েকদিন ক্লাস নেন। এসে টেবিলের বেঞ্চের উপর পা তুলে বসে থাকেন। কোন কোনদিন টেবিলে ঘুমিয়ে নেন। বেশির ভাগ দিন স্কুলেও আসেননা বলে অভিযোগ তাদের।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে নিচে নামতেই দেখা যায় টিফিনের পরে আড়াইটার সময় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করছেন সহকারী শিক্ষক শাম্মিআরা দীপ্তি। অথচ টিফিন সময় শেষ হয়েছে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে। জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আজকে একটু দেরি হয়ে গেছে বলে চুপ করে থাকেন। কিন্তু অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে ও শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলা জানা গেলো তিনি প্রায়ই দেরি করে আসেন। এমনকি মাঝে মাঝে টিফিনের পর আসেন না।

অভিযুক্ত ওই দুই শিক্ষককে নিয়ে একই অভিযোগ করে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও। তারা জানায়, রহিনা খাতুন ম্যাডাম মাঝে মাঝে তার বোনকে নিয়ে আসেন ক্লাসে। বোনের সাথে মোবাইলে গেম খেলেন। পড়া নিয়ে কিছু বলতে গেলেও ধমক দেন।

অভিযুক্ত রহিনা খাতুনের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ঠিক না। আমি ঠিকমত ক্লাস নিয়ে থাকি। মাঝে মাঝে ছোট বোনকে নিয়ে আসি ঠিক, তবে গেম খেলিনা।

তবে প্রধান শিক্ষক মোছা: নুরুন্নাহার খাতুন অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন, আমি কিছু বললেও আমার কথা কেউ শোনে না। কোন শিক্ষক ছুটিতে থাকলে আমি ক্লাস নিলে সেই ক্লাস হয়, অন্য কোন শিক্ষক ক্লাস নেননা।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম খান বলেন, সহকারি শিক্ষক রুহিনা খাতুন ও শাম্মীয়ারা দীপ্তির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা আমিও কিছুটা জানি। গত মাসের মাসিক মিটিংয়ে এ নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

গাংনী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নাসির উদ্দিন বলেন, সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের কর্মকর্তাকে নিয়ে বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৩৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন প্রধানশিক্ষক সহ ৮ জন। কিন্তু এত কম শিক্ষার্থীদের জন্য ৮ জন শিক্ষক থাকলেও বিদ্যালয়টি ঠিকমত ক্লাস হচ্ছে না।




ছুটির দিনে কী করবেন? জানাবে মেটা এআই

মেটা তার মেসেঞ্জার পরিষেবায় ব্যবহার করার জন্য চ্যাটবট নিয়ে আসছে। এই চ্যাটবট হবে ‘ব্যক্তিত্বসম্পন্ন’। ছুটির দিনে কী করবেন? কী রান্না করবেন? বিশেষজ্ঞ হিসেবে এমন পরামর্শও দেবে এই চ্যাটবট। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মেটা’র এক ইভেন্টে জুকারবার্গ বলেছিলেন, ‘এআইয়ের জন্য একটি আশ্চর্যজনক বছর! চ্যাটবটগুলো এখনও ‘সীমাবদ্ধতার সাথে’ কাজ করছে।’

প্রতিষ্ঠানটি তার চ্যাটবটকে ‘মেটা এআই’ বলে পরিচিত করছে। যা মেসেজিংয়ে ব্যবহার করা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবহারকারীরা ‘মেটা এআই’-এর কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারবেন।

জুকারবার্গ বলেছেন, ‘এটি কেবল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আসবে না। এটি বিনোদনের অনুষঙ্গ হবে।’

মেটা জানিয়েছে, এনএফএল তারকা টম ব্র্যাডি ‘ব্রু’ নামে একটি এআই চরিত্রে অভিনয় করবেন। ক্রীড়া বিতার্কিক এবং ইউটিউব তারকা মিস্টার বিস্ট ‘জাচ’ চরিত্রে অভিনয় করবেন। জুকারবার্গ বলেছেন, ‘বটগুলো কী উত্তর দিতে পারে সে সম্পর্কে এখনও ‘অনেক সীমাবদ্ধতা’ রয়েছে।’

খুব শিগগিরই এই চ্যাটবট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিকভাবে চালু হবে। এদিকে মেটাভার্স নিয়েও কাজ করছেন মার্ক জুকারবার্গ। একটি ভার্চুয়াল বিশ্ব তৈরিতে এখন পর্যন্ত কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন তিনি। মেটা ইতোমধ্যেই তার নতুন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট-কোয়েস্ট ৩ ঘোষণা করেছে। আগামী ইভেন্টে এ নিয়ে আরও বিস্তারিত প্রকাশ করবে।




দুই রানের জয়ে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে কোয়ার্টার ফাইনালে মালয়েশিয়াকে দুই রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার (৪ অক্টোবর) চীনের জিজিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ।

প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১১৬ রান সংগ্রহ করে সাইফ হাসানের দল। জবাবে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১১৪ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় মালয়েশিয়া।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চরম ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দলীয় ৩ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর সাইফ হাসান ও আফিফ হোসেন মিলে শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।

তবে দলীয় ৪১ রানে ১৪ বলে ২৩ রান করে আউট হন আফিফ। তার বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন শাহাদত হোসেন। সাইফের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি গড়েন তিনি।

এরপর ক্রিজে আসা জাকের আলিকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস শেষ করে আসেন সাইফ। জাকের ১৪ বলে ১৪ ও সাইফ ৫২ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন। মালয়েশিয়ার পক্ষে বিজয় পাভনদিপ সিং নেন ২টি উইকেট।

১১৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটান ভালো করতে পারেনি মালয়েশিয়া। দলীয় ৩৮ রানের মধ্যে চার ব্যাটারকে হারায় তারা। এরপরও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে মালয়েশিয়া।

দলের পক্ষে একাই লড়াই করেন ভিরান্দিপ সিং। ৩৯ বলে ৫২ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ১১৪ রান করে মালয়েশিয়া। ফলে ২ রানের জয়ে শেষ চারে পা রাখে টাইগাররা।

সূত্র: ইত্তেফাক




মেহেরপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযানে দুই ব্যবসায়ীর জরিমানা

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মেহেরপুর জেলা কার্যালয়ের পরিচালিত এক অভিযানে ২টি প্রতিষ্ঠানের মালিকে ২২ হাজার টাকা জরিমানা করা সহ জব্দকৃত মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নকল কসমেটিকস পণ্য জনসম্মুখে ধ্বংস করা হয়েছে।

বুধবার (৪ অক্টোবর) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মেহেরপুর জেলা কার্যালয় কর্তৃক সদর উপজেলার আমঝুপি ও চাঁদবিলে কসমেটিকসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রতিষ্ঠানে তদারকিতে অভিযান পরিচালিত হয়।

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক এবং মেহেরপুর পুলিশ লাইনের একটি টিমের সহযোগিতায় এ অভিযান পরিচালনা করেন মেহেরপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সজল আহম্মেদ।

এসময় আমঝুপি বাজারে মেসার্স হালিমা স্টোর নামক একটি কসমেটিকসের দোকানে মেয়াদ উত্তীর্ণ কসমেটিকস সহ আমদানিকারকের স্টিকার বিহীন অবৈধ কসমেটিকস পাওয়া যায়। পুর্বে সতর্ক করার পরও মেয়াদ উত্তীর্ণ ও অবৈধ কসমেটিকস বিক্রয়ের অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির মালিক শিহাব উদ্দিনকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৭ ও ৫১ ধারায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এবং অপর একটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাই ভাই কসমেটিকসকে শিশুদের নকল জনসন এন্ড জনসন তেল এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ও অবৈধ কসমেটিকস বিক্রয়ের অপরাধে মালিক আহসান হাবিবকে ৪১ ও ৫১ ধারায় ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এসময় জব্দকৃত মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নকল ভেজাল কসমেটিকস পণ্যগুলো জনসম্মুখে নষ্ট করা হয় এবং সবাইকে ভোক্তা অধিকার বিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করা সহ সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।




শেখ হাসিনায় আস্থা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ইস্যু। বলা হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকারের প্রশ্নে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ রক্ষা করেনি। পাশাপাশি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদও দাবি আদায়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে কেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে হৈ চৈ? গেল ১৫ বছরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা কিছুই কী নিশ্চিত হয়নি? সনাতন ধর্মালম্বীরা কী সত্যিই ভালো নেই? ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০৮ সালের মতো দলে দলে দেশান্তরি হচ্ছে? সংসদে কী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধি নেই?

দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকারের প্রশ্নে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ রক্ষা করেনি—এমন অভিযোগ তুলেছেন সংখ্যালঘু নেতারা। অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতিও ছিল আওয়ামী লীগের ইশতেহারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। এপ্রসঙ্গে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের বক্তব্যে বলা হয়েছে, অবজ্ঞা, অবহেলা ও সংখ্যালঘুদের নাগরিক হিসেবে গণ্য না করার মানসিকতা থেকে এসব দাবি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। সেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল- একটি জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করে সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা। এছাড়া প্রতিশ্রুতি ছিল – অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা; বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন এবং সমতলের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন। এসব দাবি বহু দিন থেকে করে আসছিল বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা।

বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য করা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছেন অনেকে। এসব দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনও করছে কয়েকটি সংগঠন। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আড়াই লাখ মানুষের স্বাক্ষরসংবলিত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়েছে। এছাড়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১২ এপ্রিল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ১৯ ফেব্রুয়ারি এবং আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে ১৭ জুলাই বৈঠক করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও তার নেতৃত্বে সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর ঐক্যমোর্চার নেতারা। পাশাপাশি সরকারকে চাপ দিতে আগামী ৪ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

আওয়ামী লীগ সরকার কী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কী কিছুই বাস্তবায়ন করেনি? আসুন পরিসংখ্যান দেখা যাক, বর্তমান সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য কী করেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য দীর্ঘ ৬০ বছরের পুরানো সমস্যা মিটিয়ে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরকে দেড় বিঘা জমি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি মালিকানা দেওয়ার ক্ষেত্রে হেবা আইনের নিয়মমাফিক নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে সম্পত্তি হস্তান্তর করার সমান সুযোগ দেওয়া হয়েছে। হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রি আইন; শত্রু সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন করা হয়েছে। মন্দির সংস্কার, মন্দিরভিত্তিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করছে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট। খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এবং সালের বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট একই ভাবে কাজ করছে।

আগে সংসদে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন মাত্র দুজন। এখন সংসদে সদস্য ২৩ জন। বিগত সরকারের সময়ে শুধু নামের কারণে অনেক যোগ্য ব্যক্তিকেও চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়নি, নিয়োগ হলেও পদোন্নতি হয়নি। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে অংশীদারত্ব ও প্রতিনিধিত্ব গত ১৪ বছরে এ ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। আগের চেয়ে প্রশাসনে সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য কেউ ছিলেন না, এখন হচ্ছেন। বর্তমান সরকারের সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে প্রধান বিচারপতি হয়েছেন।

মূলত অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, সেটিই শুধু বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়ের জন্য আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বেশিরভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। যেমন- তিন পার্বত্যজেলার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্য রাখা; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি, জলাধার ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা; ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও অন্য সম্প্রদায়ের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ করা।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এখন প্রধান দাবি জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা। যদিও এবিষয়ে মতামত জানতে সংগঠনটির নেতাদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের কথা মন দিয়ে শুনেছেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনাও দিয়েছেন। তখন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, অত্যন্ত হৃদ্যতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ঐক্য পরিষদের পক্ষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বিগত ১৪ বছরে দেশের যে প্রভূত উন্নয়ন ঘটেছে তার প্রশংসা করার পাশাপাশি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাসমূহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রিক জটিলতা থাকে। আর তার দুর্নাম বইতে হয় সরকারি দলকে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যে প্রতিশ্রুতি আছে, তার প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। যেমন আইনগুলো প্রণয়ন করা, কোনোটা সংসদে আছে, কোনোটা আইন মন্ত্রণালয়ে আছে, কোনোটা বিল আকারে পেশ হয়েছে, কোনোটা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পেন্ডিং (ঝুলে) আছে।

জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন না হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য কিছুই করেনি তা বলা ঠিক হবে না। কারণ জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন কীভাবে গঠন করা হবে, এর পরিধি বা কাজ কী হবে নানান বিষয় জড়িয়ে আছে। সবাই দাবি জানিয়েছে কিন্তু কেউ এর রূপরেখা দেয়নি যে কেমন হতে পারে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন। তাই সরকারকে নানা উপায় ও পথ দেখতে হচ্ছে।

ভারতে ১৯৯২ সালে ন্যাশনাল কমিশন ফর মাইনরিটিস (এনসিএম) গঠন করা হয়। এই কমিশন সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের অগ্রগতি মূল্যায়ন করে। সংবিধানে প্রদত্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করে। কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার কর্তৃক সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কার্যকর সুপারিশ করে। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে কোনো বৈষম্যের কারণে তৈরি হওয়া সমস্যা নিয়ে গবেষণা করে এই কমিশন। এছাড়া সংখ্যালঘুদের আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষাগত উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে অধ্যয়ন, গবেষণা ও বিশ্লেষণ পরিচালনা করে। এছাড়া ভারতে রয়েছে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যার অধীনে রয়েছে, সংখ্যালঘু জাতীয় কমিশন, জাতীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও অর্থ অধিদপ্তর, হজ কমিটি, মৌলানা আজাদ শিক্ষা ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল ওয়াকফ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লি., দর্গা খাজা সাহেব আজমীর, কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল, ভাষাগত সংখ্যালঘুদের কমিশনার।

পাকিস্তানেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণের জন্য আলাদা কমিশন আছে। ২০১৪ সালে পেশোয়ার গির্জায় বোমা হামলার মামলার পর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট সংখ্যালঘুদের জন্য একটি জাতীয় কাউন্সিল গঠন করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল। পরে ২০২০ সালে গঠন করা হয় পাকিস্তান ন্যাশনাল কমিশন ফর মাইনরিটিজ। তিন বছর মেয়াদের এই কমিশনে চেয়ারম্যানসহ ছয়জন সরকারি এবং ১২ জন বে-সরকারি সদস্য রয়েছে। বেসরকারি ১২ জনের মধ্যে রয়েছে ২ জন মুসলমান, ৩ জন হিন্দু, ৩ জন খ্রিস্টান, ২ জন শিখ, ১ জন পার্সি এবং ১ জন কালশা সম্প্রদায়ের। যদিও এই কমিশনের খুব বেশি ক্ষমতা নেই। কারণ এটি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন। এছাড়া সংখ্যালঘু কমিশনে দু’জন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সদস্য করায় সমালোচনাও হয়েছে।

আমাদের দেশে কীভাবে গঠন করা হবে সংখ্যালঘু কমিশন, তার ক্ষমতাই বা কী হবে, পাকিস্তানের মতো নখ-দন্তহীন সংখ্যালঘু কমিশন নাকি ভারতের মতো হবে এনিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে। সংখ্যালঘু কমিশনের ক্ষমতা-কর্মপরিধি ইত্যাদি বিষয়ে একটি রূপরেখা তুলে ধরা দরকার। এই কাজটি করতে পারে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ যে কোনো সংগঠন। পাশাপাশি তৈরি করতে হবে জনমত। এজন্য এগিয়ে আসতে হবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সব সংগঠনকে। পাশাপাশি সংসদে যারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব করেন তাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে। এছাড়া যারা দেশের মানুষের মধ্যে সাম্য চান, যারা বাংলাদেশের সম্প্রীতি চান তাদেরও সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। শুধু সরকারের গুণগান করলেই হিতৈষী হওয়া যায় না। সরকারের অঙ্গিকারগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং সেগুলো বাস্তবায়ন না হলে জনগণের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করে দেওয়া হিতৈষীদের অন্যতম কর্তব্য।

সংখ্যালঘুদের জন্য কেউ যদি আন্তরিকতার সাথে কিছু করে থাকে যেটি আওয়ামী লীগ করেছে। এজন্য এখনো দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর আস্থা রাখছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে নিজের যতটা অধিকার, ঠিক ততটাই অধিকার দেশের প্রতিটি ধর্মের মানুষের। তাই নিজেদের সংখ্যালঘু না ভেবে দেশের নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার নিয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।