আলমডাঙ্গার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হেরোইনসহ গাংনীতে গ্রেফতার

আলমডাঙ্গা এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ৭ টি মাদক মামলার আসামি সুইট মোল্ল্যা (৫০) এবার ৫ গ্রাম হেরোইনসহ গাংনী থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।

গ্রেফতার সুইট মোল্ল্যা চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী গ্রামের শানে মোল্ল্যার ছেলে।

তার নামে মাদক কারবারির অভিযোগে আলমডাঙ্গা ও গাংনী থানায় ৭ টি মামলা রয়েছে। সে এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।
গাংনীর ভবানীপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে গতকাল সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে কাজিপুর মধ্যপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে ৫ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করেন।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আব্দুর রাজ্জাক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভবানীপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, একজন মাদক ব্যবসায়ী মাদক নিয়ে যাচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্ত্বিতে কাজিপুর মধ্যপাড়া এলাকায় পুলিশের একটি টিম অপেক্ষা করছিলো। সুইট মোল্ল্যা আসার সাথে সাথে তাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। সে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে ৫ গ্রাম হেরোইন জব্দ করা হয়।

হেরোইন উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত সুইট মোল্ল্যাকে আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আদালতের মাধ্যমে মেহেরপুর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।




মেহেরপুরে দিন দিন ভয়ঙ্কর হচ্ছে ডেঙ্গু

মেহেরপুরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবরও আসছে প্রতিদিন। আক্রান্তদের তালিকায় রয়েছে শিশু-বয়োজ্যেষ্ঠরাসহ সব বয়সীরা।

গত ২৪ ঘন্টায় মেহেরপুরে ৯জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে মেহেরপুর ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শনাক্ত হয়েছে। মুজিবনগরে ১ ও গাংনীতে ২ জন। আক্রান্তরা সকলেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তবে ঈদের পর থেকে এ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানিয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও নিজ নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড থেকে জানা গেছে,গতকাল সোমবার ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। যদিও এখানে বেড রয়েছে ১০টি। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে আরও ৫ টি সিট ডেঙ্গু রোগীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিকে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন ১২ জন এবং গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন ৪ জন রোগী।

মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের ৬ তারিখ থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত মেহেরপুরে মোট ৩৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী মেহেরপুরে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে মেহেরপুর ২৪০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৩৮ জন। এদের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২২২ জন রোগী, উন্নত চিকিৎসার জন্য ২ জনকে রেফার্ড করা হয়েছে। গতকালকে ভর্তি রয়েছে ১৫ জন রোগী। এদিকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত আক্রান্ত ভর্তি হয়েছিল মাত্র ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। আগস্ট মাসে ভর্তি হন ৫৩ জন রোগী।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল সোমবার পর্যন্ত মোট ভর্তি হন ৭০ জন। গতকাল ভর্তি রয়েছেন ৪ জন রোগী।
মেহেরপুর জেলাতে চলতি বছরের জুন মাসে প্রথম রোগী সনাক্ত হয়। জুলাই মাসে এসে তা বেড়ে যায়।

চলতি মাসের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারিভাবেই ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ শ জন। কিন্তু অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী প্রাইভোট ক্লিনিক ও নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার সংখ্যা সরকারি হিসেবের দ্বিগুন বলে জানান হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা। যা বর্তমানে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র জানিয়েছেন গ্রামের চেয়ে শহরের রোগী সংখ্যা বেশি।

মেহেরপুর ও গাংনী পৌরবাসির অভিযোগ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পৌরসভার দায়িত্বশীলদের গা-ছাড়া ভাবের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ প্রকোপ কমাতে পৌরসভাসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

মেহেরপুর শহরের হালদারপাড়ার বাসিন্দা নাইমউদ্দিন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে খুব আতঙ্কে আছি। চারপাশে অনেকের আক্রান্ত ও মৃত্যুর কথা শুনছি। অন্যান্য বারের চেয়ে ডেঙ্গু এই প্রকোপ এবার বেশি। কয়েক মাস হয়ে গেলেও এখনো কমছে না!

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মখলেছুর বলেন, মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গত ৬ জুন থেকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা পাওয়া শুরু করেছি। এরপর থেকে ১৫ শয্যা বিশিষ্ট ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করেছি। আজ পর্যন্ত ১৫ জন ডেঙ্গু রোগ ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে কোন জটিলতা সৃষ্টি হয়নি। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের এই হাসপাতালে আছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেকেই জেলার বাইরে থেকে আসা। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।




মেহেরপুরে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকার তালিকা চেয়ে জেলা প্রশাসনের চিঠি

এই প্রথমবারের মত মেহেরপুর জেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টালের তালিকা চেয়ে দুই প্রেস ক্লাবকে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার দেবাংশু বিশ্বাস সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও মেহেরপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতিকে দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে গত ২৭ জুলাই বিভাগীয় আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক মেহেরপুর জেলায় কতটি নিবন্ধনকৃত ও অনিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকায় রয়েছে তা জানা আব্যশক। সে মোতাবেক চিঠি প্রাপ্তির স্বল্প সময়ের মধ্যে দুই ক্লাবের সভাপতিকে তালিকা প্রদানের কথা বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মেহেরপুর জেলায় মেহেরপুর প্রতিদিন (meherpurpratidin.com) একমাত্র অনলাইন পত্রিকা হিসেবে চলতি বছরের ১১ মে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনভুক্ত হয়েছে। যার নিবন্ধন নম্বর ৪৯ (আঞ্চলিক)। এছাড়া অন্যগুলো নিবন্ধন পেয়েছে বলে জানা নেই।




শেষ পৃষ্ঠা




তৃতীয় পৃষ্ঠা




দ্বিতীয় পৃষ্ঠা




প্রথম পৃষ্ঠা




ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন বেশি বিএনপি-জামায়াত আমলেই

“বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট, তোমরা একজন একজন করে এসো, নইলে ও মরে যাবে।” ১৩ শব্দের বাক্যে একজন মায়ের আকুতি কী আমরা ভুলে গেছি। সন্তানের উপর কোতোটা বরবর নির্যাতন হলে একজন মা এভাবে আকুতে জানাতে পারে? কিন্তু মায়ের চোখের জল আর গগন বিদারী আহাজারীতেও নরপিশাচদের এতোটুকু মন গলেনি।

পূর্ণিমা রাণী শীলের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপড়ায়। ২০০১ সালে পূর্ণিমার বয়স মাত্র তেরো বছর। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সে। গ্রামের ৮-১০টি কিশোরীর মতো উচ্ছল চঞ্চল প্রাণে বেড়ে উঠছিল। কিন্তু ১৩ বছর বয়সে, ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর তার জীবনে নেমে আসে কালো অন্ধকার। তছনছ করে দেয় তার তারুণ্যে ভরা জীবনকে। সেই রাতে পূর্ণিমার বাড়িতে হামলা চালায় বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীরা। এরপর পূর্ণিমা আর তার মা’কে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির পাশের একটি ক্ষেতে। পনেরো থেকে বিশজন বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার ধর্ষণ করে কিশোরী পূর্ণিমাকে। মায়ের সামনেই মেয়ের ছোট্ট শরীরটার ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল নরপিশাচের দল। কান্না করতে করতে পশুগুলোর কাছে মিনতি করছিলেন মা। বলছিলেন, “বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট তোমরা একজন একজন করে এসো, নইলে ও মরে যাবে।”

ছবি রানীর বাড়ি বাগেরহাটের রামপালে। ২০০২ সালের ২১ শে আগস্ট তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট বাহিনীর নেতাকর্মীদের গণধর্ষণের শিকার হন তিনি। বাসস্ট্যন্ড থেকে ছবি রানীর কাপড় খুলে ফেলে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারবাহিনী। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপি অফিসে। এরপর পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করা হয়। নরপিশাচরা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, ছবি রানীর গোপন অঙ্গে মরিচের গুড়া, বালি আর কাচের গুড়া ঢুকিয়ে নির্যাতন করে।

২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর ভোলা জেলার চরফ্যাসন উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীরা ২০০ হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করে। সবচেয়ে ছোট ভিকটিমের বয়স ছিল 8 বছর আর সবচেয়ে বড়টির বয়স ছিল ৭০ বছর। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সারাদেশে এমন কয়েকশ’ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। চক্ষুলজ্জা আর প্রাণের ভয়ে অনেক তা প্রকাশ্যে আসেনি। তাদের সবার অপরাধ ছিল, তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং তারা বঙ্গবন্ধুর নৌকার সমর্থক।

২০০১ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকেই সনাতন ধর্মালম্বীদের উপর হামলা শুরু হয়, যা চলে পরবর্তী পাঁচ বছর। বাগেরহাট, বরিশাল, ভোলা, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, ফেনী, গাজীপুর, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, মুন্সিগঞ্জ, নাটোর, পিরোজপুর, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ জেলায় হিন্দুদের উপর পরিকল্পিত হামলা হয়। দ্বীপ জেলা ভোলায় প্রায় দুই মাস ধরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবারের উপর নির্যাতন চলে। যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ থাকায় প্রশাসনের লোকজন এমনকি সংবাদকর্মীরাও নির্যাতনের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। সেসময় সারাদেশে বাড়িঘর লুটপাট, বাড়ি থেকে উচ্ছেদের মতো অজস্র ঘটনা ঘটে। এসবের অধিকাংশই পুলিশের নথিভুক্ত হয়নি। ভুক্তভুগীরা ভয়ে কোন অভিযোগ পর্যন্ত করেননি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব বলছে, ১৯৯৬, ২০০১ বা তার আগের প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক পরের বছরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টা বেশি। শুধু ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যায় ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর। ১৯৯৬ এর নির্বাচনের বছরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২১৪টি, পরের বছরে ৫৫৪টি । ২০০১ সালে ধর্ষণের ঘটনা ৫৬৬টি হলেও পরের বছরে তা দাঁড়ায় ১ হাজার ৯১টিতে। ২০১৪ সালে নির্বাচনের বছরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৫৪৫টি, পরের বছরে এ সংখ্যা ছিল ৬৯০। ২০১৮ সালে নির্বাচনের বছরে ধর্ষণের ঘটনা ৫৫৬টি, পরের বছরে তা দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৭টিতে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করে। হাইকোর্ট এক আদেশে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন। এক বছরের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল সরকারকে ৫ খণ্ডের ১ হাজার ১০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। প্রতিবেদনে দোষীদের চিহ্নিত করা এবং নির্যাতন প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে এই প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে আরেকটি রিট দায়ের করলে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক প্রতিবেদন ২০২২ সালের ১ এপ্রিল গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

তদন্ত কমিশনের ওই প্রতিবেদনে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় ঢাকায় ২৭৬টি, চট্টগ্রামে ৪৯৭টি, সিলেটে ১৭টি, খুলনায় ৪৭৮টি, রাজশাহীতে ১৭০টি এবং বরিশালে সর্বাধিক ২ হাজার ২২৭টি ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯২টি হত্যা, ১৮৪টি ধর্ষণ-সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনারও উল্লেখ আছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বারবার ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কেন নিযাতনের শিকার হন? বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগ। নির্বাচনের মাঠে এই ১০ ভাগ ভোটারই জয় পারাজয়ে অনেক বড় একটা ভূমিকা পালন করে। সংখ্যালঘু ভোটারদেরকে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। যদিও গবেষণায় দেখা যায়, সংখ্যালঘু ভোটাররা সব সময় যে একটা দলের পক্ষে ভোট দিয়েছে বা আনুগত্য প্রকাশ করেছে বিষয়টি এমন নয়। বাংলাদেশের বিভক্ত রাজনীতিতে সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটও বিভক্ত হয়ে পরে এবং কোন দলের প্রতি তাদের সমর্থনও প্রত্যাহার করে। সুতরাং সংখ্যালঘু ভোটার মানেই আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক এই বাস্তবতা সত্য নয়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের প্রথম হামলার শিকার হন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে আওয়ামী নেতৃত্ব মুছে ফেলা এবং যুদ্ধপরাধীদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে পাকিস্থানের পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশ থেকে সনাতন ধর্বলম্বীদের সমূলে উৎখাতের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে জামায়াত-বিএনপি জোট। তাই প্রতিবার নির্বাচনে তারা হারলে বা জিতলেও সবচেয়ে বড় আক্রোশ মিটিয়েছে হিন্দুদের নির্যাতন, ধর্ষণ আর দেশ থেকে থেকে বিতাড়িত করে।

তবে এখন আর ভয় পাওয়ার সময় নেই। রুখে দিতে হবে নরপশুদের। আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজেদের দাঁড়াতে হবে। কারণ এই দেশটি সবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিজেদের সংখ্যালঘু মনে না করে, মনে করবেন আপনারা এই দেশেরই নাগরিক। সমান নাগরিক অধিকার আপনারা ভোগ কখনো নিজেদের মনে হীনম্মন্যতা নিয়ে আসবেন না।’

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।




কুষ্টিয়ার মিরপুরে পোকা দমনে জনপ্রিয় হচ্ছে আলোক ফাঁদ

কুষ্টিয়ার মিরপুরে কৃষি ফসলে ক্ষতিকর পোকা নিধনের জন্য আলোক ফাঁদের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সব শ্রেণীর কৃষকের কাছে। ফলে ফসল উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যয় এবং বিষমুক্ত ফসলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি উভয়ই কমছে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার চিথলিয়া ও বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের খাড়ারা ব্লকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়।

এসময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপ সহকারী কর্মকর্তা নিহারুল ইসলাম একযোগে উপজেলার ৪০ টি ব্লকে আলোক ফাঁদ স্থাপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

এছাড়াও বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের খাড়ারা ব্লকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আনিসুর রহমান, উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা মাহিরুল ইসলাম, উপ সহকারী ময়নুল ইসলাম রাজীব, শাহানাজ সুলতানাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষি ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকা শনাক্ত এবং নিধনের লক্ষে আলোক ফাঁদ ব্যবহার শুরু হয়।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে প্রচারণার জন্য প্রথমে কৃষি অফিস কর্তৃক আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়। পরে তা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এখন প্রতিদিনই কোন না কোন মাঠে কৃষকরা নিজেরাই আলোক ফাঁদ স্থাপন শুরু করেছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, ফসলি জমির ধারে দুই থেকে তিন ফিট উপরে একটি ডিটারজেন্ট পাউডার মেশানো পানির গামলার উপরে একটি বাল্ব জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আলো দেখে পোকারা উড়ে গিয়ে ওই পানিতে পড়ে মারা যায়। ফলে ক্ষতিকর পোকার সংখ্যা কমতে থাকে। আর ওই ফসলের জমিতে চরম ক্ষতিকর মাজরা, বিপিএইচ ও পাতামোড়ানো পোকাসহ অন্য কোন পোকা আছে কিনা তা জরিপ করা হয়। যদি ক্ষতিকর পোকা থাকে তা দমনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

কেউপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক ফারুখ আহমেদ, লিটন আহমেদ চুনিয়াপাড়া গ্রামের জিন্নাহ মিয়া বলেন, আলোক ফাঁদের মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকা নিধন পদ্ধতিটা খুবই দারুন। শুধু ফসল নয়, বাড়িতেও বিরক্তিকর পোকা নিধনে আলোক ফাঁদ ব্যবহার উপকারে আসে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবীদ ড. হায়াত মাহমুদ জানান, আলোকফাঁদ হলো কোনো কিছু আটকানোর একটা যন্ত্র। এই যন্ত্রে নানা রকমের কৌশল অবলম্বন করে শিকার ধরা বা আটকানোর ব্যবস্থা করা হয়। বেশ কিছু পোকা আছে যারা আলোতে আকৃষ্ট হয়। তাই আলোক ব্যবহার করে আলো-আকর্ষী এসব পোকা আটকানোর বা আকৃষ্ট করে মেরে ফেলার জন্য যে ফাঁদ তৈরি করা হয় তাকেই আলোক ফাঁদ বলে। কৃষকের উপকারের জন্য আমরা আলোক ফাঁদ এর ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। এর ফলে ফসলের ক্ষতিকর পোকা শনাক্ত করার ক্ষেত্রে খুব ভালো একটি পদ্ধতি। তাই কৃষকদের আলোক ফাঁদ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।




দামুড়হুদায় গাঁজা গাছসহ আটক ১

দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ কর্তৃক মাদক বিরোধী অভিযানে ১টি গাঁজা গাছসহ একজনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল রবিবার রাত ১১টার দিকে নতিপোতা ইউনিয়নের মইষাগাড়ী মাঠ থেকে।

থানা সূত্রে জানা যায়, দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে এস আই শাহাবুল আলম সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় অত্র এলাকায় মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন।

এসময় গতকাল রবিবার আনুমানিক রাত ১১ টার দিকে অত্র থানাধীন নতিপোতা গ্রামস্থ মইষাগাড়ী মাঠে আসামী ফিত্তাজের ভোগদখলীয় সিম ক্ষেতের মধ্য উদ্ধারকৃত গাঁজা গাছ পরিচর্যা করাকালে ১১ ফুট লম্বা ও ১২ কেজি একটি গাঁজার গাছ সহ ফিত্তাজ শেখ (৪৫) কে হাতেনাতে আটক করে। আসামী ফিত্তাজ শেখ নতিপোতা গ্রামের মোঃ চান্দালীর ছেলে।

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবীর আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,আটককৃত আসামীর বিরুদ্ধে দামুড়হুদা মডেল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নিয়মিত মামলা রুজু করা পূর্বক আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দামুড়হুদা মডেল থানা এলাকায় কোন প্রকার মাদকদ্রব্য কারবারি থাকবে না। জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় মাদক বিরোধী অভিযান চলমান থাকবে।