ফেসবুক স্ট্যাটাসে বহিষ্কার আ’লীগ নেতা যা বললেন

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চুক্তিগুলো নিয়ে ফেসবুকে লেখা পোস্ট করায় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে ডা. শেখ বাহারুল আলমকে। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি  বলেন, পুরোটাই সভাপতির একতরফা কাজ। অভিযোগ আনতে হলে সভাপতির বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনতে হয়। কারণ উনি দলের গঠনতন্ত্র নিয়মনীতি কিছুই মানেন না’।
এর আগে বুধবার রাতে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় ডা. শেখ বাহারুল আলমকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সাথে তাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার কেন করা হবে না এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্তকে প্রতিহিংসার প্রতিফলন বলে দাবি করেছেন প্রবীন এ আওয়ামী লীগ নেতা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে  তিনি বলেন, ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনতে হলে অবশ্যই অভিযুক্ত সদস্য বা নেতাকে নোটিশ দিতে হয়। কী বক্তব্যে গঠনতন্ত্রের কোন ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে, তা তাকে জানাতে হয়। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। প্রয়োজন হলে তার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হয়। এর কোনোটাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করেননি। নির্ধারিত কোনো সভাও ছিল না।
তিনি বলেন, ওইদিন যে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সে সভা পূর্বনির্ধারিত কোন সভাও ছিল না। সভায় আমার বিষয়টি নিয়ে কোনো এজেন্ডাও ছিল না। অন্য একটি বিষয়ে সভা চলছিল। সেখানে থেকে নেতাকর্মীদের ডেকে এনে অগঠনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুরোটাই সভাপতির একতরফা কাজ। অভিযোগ আনতে হলে সভাপতির বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনতে হয়। কারণ উনি দলের গঠনতন্ত্র নিয়মনীতি কিছুই মানেন না’।
তার স্ট্যাটাসটি হুবহু যুগান্তরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘ভারত – বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বলা হলেও বাস্তবে একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত – বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ ও অধিকার চরম উপেক্ষিত
দুর্বল অবস্থানে থেকে বন্ধু-প্রতিম শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে -ফলাফল শক্তিধরের পক্ষেই আসে। বাংলাদেশ- ভারত উভয়-পক্ষীয় সমঝোতা স্মারক নাম দেওয়া হলেও বাস্তবে একপক্ষীয় সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয় দুর্বল রাষ্ট্রকে।
ভারত বাংলাদেশ থেকে তার সকল স্বার্থই আদায় করে নিয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে এখনও ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি।
১) দীর্ঘদিনের আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন এবারের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় স্থান পায়নি ।
২) ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু না বললেও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্ হুংকার দিয়েছে নাগরিক পঞ্জীতে বাদ পড়া জনগণকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হবে। তারপরেও এবারের সমঝোতা চুক্তিতে ‘অভ্যন্তরীণ’ অজুহাতে বিষয়টি স্থান পায়নি।
৩) বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থী মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবসনের বিষয়ে ভারত কিছু বলে নি ।
৪) তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চুপ থাকলেও বাংলাদেশ অংশের ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরা রাজ্যের পানীয় জল হিসাবে প্রতিদিন ১.৮২ কিউসেক টেনে নেবে ভারত । এ বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে।
৫) বাংলাদেশের জনগণের তরল গ্যাসের চাহিদা পূরণের ঘাটতি থাকলেও ভারতে তরল গ্যাস রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং যৌথভাবে সে প্রকল্প উদ্বোধনও হয়েছে।
৬) চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারত কীভাবে ব্যবহার করবে, তা নির্ধারিত হলেও বাংলাদেশের জন্য ব্যবহারযোগ্য ভারতের কোনও বন্দর সেই তালিকায় ছিল না।
অমানবিক আচরণের শিকার হয়েও বাংলাদেশ পানি ও গ্যাস সরবরাহ দিয়ে মানবিকতার প্রদর্শন করেছে। বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ ও অধিকার উপেক্ষিত রেখে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষ হয়েছে।
শক্তিধর প্রতিবেশীর আধিপত্যের চাপ এতোই তীব্র যে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বজায় থাকবে কিনা আশংকা হয়। কারণ ভারতের চাপিয়ে দেওয়া সব সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে মেনে নিতে হচ্ছে।’
-নিজস্ব প্রতিনিধি