ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার অধিকাংশ এলাকাই আজ নাগরিক দুর্ভোগের প্রতীক। পৌর এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অকার্যকারিতা এবং সড়কবাতির অপ্রতুলতায় নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে।
বৃষ্টি হলে রাস্তাগুলো যেন রূপ নেয় কাদা-পানিতে ভরা ফাঁদে। সড়কজুড়ে খানাখন্দে চলাচল হয়ে পড়ে কষ্টসাধ্য। সন্ধ্যা নামতেই ডুবে যায় ঘোর অন্ধকারে, অধিকাংশ সড়কে জ্বলে না সড়কবাতি। পৌরসভার সামনের সড়কেও নিয়মিত যানজট লেগে থাকে, যা প্রশাসনের উদাসীনতার জীবন্ত প্রমাণ।
নাগরিকরা নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করলেও সেবার দেখা মিলছে না। ভাঙাচোরা রাস্তা, নষ্ট ড্রেন, অপ্রতুল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সব মিলিয়ে পৌরসভার অবস্থা করুণ। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবতা ও প্রয়োজনের প্রতিফলন ঘটায় না। তারা বলছেন, সেবার নামে যেন চলছে প্রহসন।
এ নিয়ে নাগরিক সমাজের ক্ষোভ প্রবল। সচেতন মহলের দাবি, কোটচাঁদপুর পৌরসভা যেন বর্তমানে নাগরিক ভোগান্তির এক প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলর না থাকায় সেবার মান আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। যারা বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ।
স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর সড়ক সংস্কার হয়নি। অনেক স্থানে বিদ্যুৎ থাকলেও সড়কবাতি নেই। রাত হলেই গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা, পানি নিষ্কাশন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা—সবখানেই চরম অব্যবস্থা বিরাজ করছে।
যেখানে এটি একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা, সেখানে নাগরিক সেবার মান যেন তৃতীয় শ্রেণির। অনেকেই বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদের সেবাও এর চেয়ে ভালো। একদিকে নাগরিক অধিকার ও কর পরিশোধ, অন্যদিকে প্রশাসনের চূড়ান্ত দায়হীনতা—এই বৈপরীত্যে প্রশ্ন উঠছে, এই পৌরসভা কি শুধুই কর আদায়ের একটি যন্ত্র?
প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের বসবাস এই পৌরসভায়। কিন্তু তাদের অধিকাংশই প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার মুখোমুখি। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, খানাখন্দে ভরা সড়ক বর্ষা মৌসুমে হয়ে ওঠে মৃত্যুফাঁদ।
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক রেজাউল করিম বলেন, “প্রতিদিন রাস্তায় চলতে গিয়ে পায়ে কাদা লাগে, কেউ কেউ পড়ে গিয়ে আহত হন। কর দেই, কিন্তু সেবা কোথায়? পৌরসভার লোকজন শুধু কর তুলতেই ব্যস্ত, কিন্তু কাজের সময় তাদের পাওয়া যায় না।”
ঈশী খোন্দকার জানান, “সরকারি কলেজ ও খোন্দকার পাড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এক সপ্তাহ ধরে সড়কবাতি জ্বলছে না। কাউন্সিলর ও পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তাহলে আমরা কী সেবা পাচ্ছি?”
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি আল-মামুন বলেন, “নামমাত্র উন্নয়নের অভিনয় দিয়ে জনগণকে বেশি দিন বোকা বানানো যাবে না। সময় এসেছে টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার।”
এ বিষয়ে পৌরসভার সরকারি প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, “সড়কের বাতি ইতোমধ্যে কিছু স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। নতুন করে আবার টেন্ডার হয়েছে। আমি সদ্য জয়েন করেছি, পুরো শহর এখনো দেখা হয়নি। পুরাতন ড্রেনগুলো সংস্কার করলে পানি নিষ্কাশনের কিছুটা উন্নতি হবে। নতুন ড্রেন করতে হলে সময় লাগবে। বরাদ্দ সীমিত হলেও কাজ চলমান রয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক কাজী আনিসুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।