
যদি কারো মোবাইল থেকে অনলাইন ক্যাসিনোর অ্যাপ পাওয়া যায়, সেটাই তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করবে, আদালতে সোপর্দ করবে এবং দুই বছরের কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে (বিচারের মাধ্যমে)।
এই জন্য আমি সবার মাধ্যমে জানাতে চাই, যদি কারো অনলাইন ক্যাসিনো খেলার কোনো অ্যাপ থাকে, তাহলে সেটি মুছে ফেলুন। আজ থেকে আমরা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করব।
সোমবার (২৫ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় প্রাঙ্গণে “পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ” প্রতিপাদ্যে কমিউনিটি পুলিশিং বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন পুলিশ সুপার মাকসুদা আখতার খানম।
তিনি আরও জানান, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এ অনলাইন জুয়ার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এ অধ্যাদেশের ২০ ধারায় ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। আমাদের আইন, আমাদের ধর্ম সবই জুয়াকে নিষিদ্ধ করেছে। আপনার সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজন যাতে অনলাইন জুয়ায় সম্পৃক্ত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করবেন। মোবাইলে জুয়ার অ্যাপ রাখা অপরাধ। তাই সাংবাদিক ও অভিভাবকবৃন্দের নিকট জানানো যাচ্ছে যে, এ বিষয়ে প্রচারণা চালাবেন।
তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মসহ সব ধর্মেই আত্মহত্যাকে মহাপাপ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ জেলায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। অনেকে কলহের জেরে আত্মহত্যা করে থাকেন। আমরা এখন থেকে আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীর বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ধারায় নিয়মিত মামলা রুজু করার ব্যবস্থা নেব। এক্ষেত্রে লাশের পোস্টমর্টেম না করলে নিয়মিত মামলা করা যায় না।
তিনি আরো বলেন, অনেক অভিভাবক তার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া সন্তানকে মোটরসাইকেল কিনে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে আপনি কিন্তু আপনার সন্তানকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। পারিবারিক সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। বেপরোয়া যানবাহন এবং কাগজপত্রবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে আমাদের যৌথ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ইভটিজিং, কিশোর গ্যাং এবং স্কুল পালিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁয় আড্ডা দেওয়া অল্প বয়সে গ্যাং তৈরির মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।
পরে, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের অভিযানে উদ্ধার হওয়া ১২২টি মোবাইল ফোন এবং মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ প্রকৃত মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়।
মোবাইল ফোন এবং মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণার বিষয়ে তিনি বলেন, সাইবার জগতের বিভিন্ন অপরাধ যেমন বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে টেলিগ্রাম জালিয়াতি চক্র, বিকাশ প্রতারক চক্র, অনলাইনে কেনাকাটা সংক্রান্ত প্রতারণা চক্রসহ নানা ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতির শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের নিয়মিত আইনি সেবা প্রদান করছে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের জুন-জুলাই মাসে সাইবার স্পেসে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ হওয়া সর্বমোট ৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতারণা চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন সময় বিকাশ এবং নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ভুলক্রমে এক নম্বর থেকে অন্য নম্বরে চলে যাওয়া ১ লাখ ১ হাজার ৩০০ টাকা সহ সর্বমোট ১০ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ টাকা জেলার সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকদের কাছে ফেরত দিয়েছে। সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের সকল সদস্য পেশাদারিত্বের সাথে উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোনগুলো প্রকৃত মালিকদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আজকের এই আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া মেহেরপুরের তিনটি থানায় ডায়েরিকৃত সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে জুন-জুলাই মাসে সর্বমোট ১২২টি হারানো মোবাইল সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে মেহেরপুর সদর থানার ৪১টি, গাংনী থানার ৬৪টি এবং মুজিবনগর থানার ১৭টি মোবাইল অন্তর্ভুক্ত। উদ্ধারকৃত ১০ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ টাকার মধ্যে মুজিবনগর থানার মামলায় ৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, যা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছিল।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) জামিরুল রহমান খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আব্দুল করিম, ডিবির ওসি গোপালসহ পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।