
ছয়টি উপজেলা ও ৬ টি পৌরসভা নিয়ে ঝিনাইদহ জেলায় চারটি সংসদীয় আসন গঠিত। এর আসন গুলো হলো- ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা), ঝিনাইদহ-২ (সদর- হরিণাকুণ্ডু), ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) ও ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ- সদর আংশিক)।
জেলা নির্বাচন অফিসের প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী ঝিনাইদহের ৪টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৭৮জন। ভোট কক্ষ-৩হাজার ৫২৪টি ও ভোট কেন্দ্র-৫৯৮টি। আজ তুলে ধরবো ঝিনাইদহ-৪।
ঝিনাইদহ -৪ (সদরের আংশিক ও কালীগঞ্জ)
কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি এবং ঝিনাইদহ সদরের ফুরসন্ধি, নলডাঙ্গা, ঘোড়শাল ও মহারাজপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-৪। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৪ হাজার ০৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৭২ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৩২৯ জন। এ আসনে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৬ জন। ভোট কেন্দ্র ১২১টি।
জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আসন কালীগঞ্জ। এই আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের জন্য যোগায়োগ ও তদবীর শুরু করেছেন। দলীয় কর্মসূচির পালনেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটের মাঠের হিসেবনিকেশ কষছেন। নিজ নিজ প্রভাব ও অবস্থান জানান দিতে চলছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের শোডাউন। এমনকি সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমর্থকরা একাধিকবার সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন।
এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। এ আসনে বিএনপির তৃণমূলে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছেন তিনি। পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। তবে এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম। তিনিও ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জোরেসোরে। স্থানীয় একটি গ্রুপের মাঝে তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা, বিগত সরকারের আমলে তিনি অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই আসনে অপর সম্ভাব্য প্রর্থী ঝিনাইদহ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব এডভোকেট আকিদুল ইসলাম। তিনি এলাকায় ক্লিন ইমেজের লোক বলে পরিচিত। এই আসনে বিএনপির আরও একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী রয়েছেন তিনি হলেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মরহুম এম শহীদুজ্জামান বেল্টুর স্ত্রী মুরশিদা জামান।এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে চলছে চতুর মুখী লড়াই। এখন দেখা যাক কার হাতে তুলে দেয় ধানের শীষ প্রতিক।
নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার নায়েবে আমীর, প্রবীণ রাজনীতিবিদ মাওলানা আবু তালিব। জামায়াতে ইসলাম তাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। ইতো পূর্বে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী ছিলেন। তিনি নিয়মিত নির্বাচনী মতবিনিময় সভা, কর্মী সমাবেশ ও কৌশলগত পরামর্শে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এছাড়াও এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একক প্রার্থী মুফতী আহম্মেদ আব্দুল জলিল ভোটারদের দৃষ্টি আর্কষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টি (ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ) সমর্থিত জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপতি হারুন অর রশীদ পার্থী হতে পারেন।
এই আসনে ভোটের মাঠে লড়বেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি প্রভাষক সাখাওয়াত হোসেন। তিনি জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়ায় জেলার তরুণ প্রজন্মের পরিচিত মুখ। তিনি তরুণ ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
ভোটারদের ভাবনা:
উপজেলার রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি সর্বসাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ,জুলাই বিপ্লব পরবর্তি নতুন প্রেক্ষাপটে ঝিনাইদহের চারটি সংসদীয় আসনের ভোটারদের মধ্যে মানসিক ব্যাপক পরিবর্তন দেখা গেছে। সাধারণ ভোটারদের কথা, বিগত দুই যুগে দেশে বারবার ভোট হয়েছে, সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও মানবিক সমাজের তেমন উন্নতি ঘটেনি। ভোটারদের ভাবনা, এবার ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দেশকে নতুন করে সাজানোর সুযোগ এসেছে। পেশীশক্তির ব্যবহার রোধ, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধ, সামাজিক বিশৃঙ্খলা নিরসনে আসন্ন নির্বাচনে নিরব ভোট বিপ্লবের ইঙ্গিত সাধারণ ভোটারদের। তারা বলছেন, সামাজিক কারণে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সামনে চুপচাপ থাকলেও ভোটের দিন নিরবে পছন্দের যোগ্য, মেধাবী, সৎ ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকেই তারা বেছে নিবেন।
ভোটাররা আগামী নির্বাচনে দল-মতের উর্ধ্বে উঠে ক্লিন ইমেজের সৎ, যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীদের ভোট দিতে চান। তারা বলছেন, পেশিশক্তি প্রদর্শনকারী, ভয়ভীতি দেখানো, টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ ও অসৎ প্রভাবশালী প্রার্থীদের তারা ভোটের মাধ্যমেই জবাব দিবেন। বিগত সময়ে এই আসনটি বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিযোগীতা হয়ে আসছে। এবার যেহেতু আওয়ামী লীগ মাঠে নাই সেকারণে বিএনপি জনসর্মথনে একটু এগিয়ে থাকলেও দলীয় কোন্দলে নিজেরা বিপর্যস্ত। এই অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচনে জামায়াত বা বিকল্প কোন প্রার্থীর ভাল করার সম্ভাবনা থাকবে।