
মেহেরপুরের গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের শূন্য দুটি পদে অধিদপ্তর থেকে চারজনকে যোগদান করায় সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা।
বর্তমানে চারজন শিক্ষকই প্রতিযোগী হয়ে ক্লাস নিচ্ছেন বিদ্যালয়টিতে। কেউ বলছেন অনলাইনে আবেদন করে যোগদানপত্র পেয়েছেন আবার কেউ বলছেন সরাসরি অফলাইনে যোগাযোগ করে আদেশপত্র নিয়েছেন। চার শিক্ষকই হয়ে উঠেছেন বিদ্যালয়ে একে অপরের প্রতিযোগী প্রতিদ্বন্দ্বী।
যোগদানকৃত শিক্ষকরা সকলেই বৈধতা দাবি করলেও বিদ্যালয়ে দুটি শূন্য পদে যোগদান করবেন মাত্র দুইজন শিক্ষক।
এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়টিতে একদিকে যেমন লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে, অন্যদিকে বদলির জটিলতায় বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক। দাপ্তরিক আদেশে তিনি সকলেরই যোগদানপত্র নিয়েছেন। তবে প্রতিযোগিতায় চারজনই থাকতে চান একই বিদ্যালয়ে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রথমে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই সঠিক পন্থায় যোগদান করেছেন, বাকিরা যারা বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন তাদের নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন অবসরে যান গত ১৫ নভেম্বর ২০২৪ এবং ফেরদৌসী আরা অবসরে যান ২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে। অবসরজনিত কারণে শূন্য দুটি পদে যোগদান করতে অনলাইনে আবেদন করেন আকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুমাইয়া নাসরিন, ষানঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিউলি খাতুন, ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লিলুফা ইয়াসমিন, বড়গাংনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিউলি খাতুনসহ মোট ৩১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে আকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুমাইয়া নাসরিন (স্বারক নং-১২০(২১) ও শিউলি খাতুনকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি আদেশে গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেন এবং সেখানে যোগদানের নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক সুমাইয়া নাসরিন ১৬-০২-২০২৫ তারিখে গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ০১ নম্বর শূন্য পদে যোগদান করেন। অপর একটি আদেশে শিউলি খাতুন যোগদান করলেও তথ্য গোপনের অভিযোগে শিউলি খাতুনকে স্থগিত করা হয়।
ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লিলুফা ইয়াসমিন প্রথমে অনলাইনে আবেদন করেন। পরে তার বদলির আদেশ না পেয়ে তিনি অফলাইনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে যোগদানপত্র নিয়ে আসেন। অপর শিক্ষিকা শিউলি খাতুনকেও দেওয়া হয় উক্ত পদে নিয়োগ। তবে একে একে চার শিক্ষিকাকে যোগদানপত্র দেওয়া হয়েছে। এতে মহা বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
বদলি হয়ে আসা আকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুমাইয়া নাসরিন জানান, আমি অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে নিয়মনীতি ও সকল শর্ত পূরণ সাপেক্ষে গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। কিন্তু অজানা এক ক্ষমতার বলে আমাকে আগের স্থলে যেতে বলা হচ্ছে। আমি যেহেতু সর্বপ্রথম এখানে অনলাইনে যোগদান করেছি, সেহেতু আমি এখানেই থাকতে চাই। আমাকে এখান থেকে সরানোর জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাপ সৃষ্টি করছেন। শুধু তাই নয়, আমার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ভুল তথ্য সরবরাহ করেছেন।
ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লিলুফা ইয়াসমিন বলেন, আমি গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি যোগদান করতে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করি। সে আবেদন ত্রুটির কারণে বাতিল হয়ে যায়। পরে অফলাইনে (সরাসরি) যোগাযোগের মাধ্যমে আদেশ নিয়ে আসি। অফলাইনে যোগাযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার একটি মাধ্যম আছে, যা বলা যাবে না, বুঝে নিতে হবে?
সদ্য বদলি হয়ে আসা শিক্ষিকা শিউলি খাতুন বলেন, আমি ষানঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬ বছর চাকরি করেছি। বয়স ও দূরত্বের বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে অধিদপ্তর থেকে গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের আদেশ দিয়েছেন। এখানে যোগদানপত্র দিয়ে যোগদান করেছি। এখন শুনছি এখানে চারজনকে একই পদে বদলি করা হয়েছে। তবে এটি উপজেলা ও জেলা কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে এমন বিড়ম্বনা হয়েছে বলেও জানান ওই শিক্ষিকারা।
শিক্ষিকারা জানান, অধিদপ্তর যোগদান করাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু পদ শূন্য করে রাখা হয়েছে। যার ফলে একাধিক পদে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে জেলা শিক্ষা অফিসারের অতি চতুরতার কারণেও মেহেরপুরের বিভিন্ন স্কুলে এমন ঘটনা ঘটে বলেও অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে।
গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান কাজল বলেন, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে দুটি শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসারকে জানালে কয়েকদিন পর শাম্মিয়ারা দিপ্তিকে ডেপুটেশনে দেন। কয়েকদিন পর অনলাইনের আবেদনের ভিত্তিতে ১৬-০২-২০২৫ তারিখে যোগদান করেন সুমাইয়া নাসরিন। তিনি প্রতিদিনই স্কুল করছেন। তার কিছুদিন পর লিলুফা ম্যাডাম অধিদপ্তর থেকে ডেপুটেশনে আসেন। পরে তিনি অফলাইনে যোগাযোগ করে বদলির আদেশ নিয়ে আসেন। এভাবে মোট চারজনকে অধিদপ্তর এখানে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এদের মধ্যে একজন জেলা ট্রান্সফার্ড আছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিনকে জানতে চাইলে বিষয়টি কিছুই জানেন না বলে এড়িয়ে যান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এটা দাপ্তরিক বিষয়। এখানে মন্তব্য করার কিছু নেই।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নুর মোহাম্মদ সামসুদ্দিন বলেন, অনলাইনে যিনি আগে আদেশ পেয়েছেন, তিনিই বৈধ। সরাসরি বা অফলাইনে বদলির কোনো সুযোগ নেই।