
আলমডাঙ্গা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে শহীদ মিনার মাঠের পুনঃমাপজোক শেষে আবারও প্রমাণ মিলেছে ব্রাইট মডেল স্কুলের মালিক ও প্রভাবশালী ভূমিদস্যু জাকারিয়া হিরো প্রায় পৌনে দুই শতক শহীদ মিনারের জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। এর আগে আদালতের অ্যাডভোকেট কমিশন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাপজোক রিপোর্টের বিরুদ্ধেও তিনি না-রাজি জানান। পরে আদালতের নির্দেশে পুনরায় মাপজোক হলে একই সত্য উদঘাটিত হয়।
শহীদ মিনারের দখলকৃত পবিত্র স্থানে জাকারিয়া হিরো আরও ভয়াবহ অপকর্ম করেছেন। অভিযোগ উঠেছে— তিনি সেখানে ১২টি পায়খানার ট্যাংক নির্মাণ করেছেন। শহীদ মিনারের ভেতরে এ ধরনের নোংরা স্থাপনা নির্মাণ কেবল ভূমি দখল নয়, বরং শহীদদের স্মৃতির মর্যাদা ও পবিত্রতার চরম অবমাননা বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন শহরবাসী।
দীর্ঘদিন ধরে শহীদ মিনার মাঠকে দখল করে ভোগ করে আসছিলেন জাকারিয়া হিরো। প্রভাবশালী ফ্যাসিস্ট নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে তিনি বহুতল ভবনের রাস্তা ও অবকাঠামো শহীদ মিনারের জমিতে দাঁড় করান। এমনকি অভিযোগ রয়েছে— আওয়ামী লীগের কিছু প্রভাবশালী নেতাকে দিয়ে ব্রাইট মডেল স্কুলের নেতৃত্বে বসিয়ে তিনি দখল কার্যক্রমকে বৈধতার মোড়ক দেন।
তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ ও শহীদ মিনারের জমি রক্ষায় নতুন উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গেলে হিরোর সন্ত্রাসী বাহিনী বাধা দেয়। তিনি সেনাবাহিনী ডেকে এনে কাজও বন্ধ করান। কিন্তু সেনাবাহিনী মাঠ পরিদর্শন শেষে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাদের নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী প্রাচীর নির্মাণ করতে নির্দেশ দেয়।
এদিকে শহীদ মিনার ও ব্যায়ামাগারের জমি উদ্ধারের দাবিতে এলাকাবাসী একাধিকবার আন্দোলনে নামে এবং বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করে। হিরো পাল্টা আদালতে মামলা করে বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ব্যায়ামাগার উদ্ধার কমিটির আহ্বায়কসহ কয়েকজনকে আসামি করেন। পরে আদালতের নিযুক্ত অ্যাডভোকেট কমিশন জমি মাপজোক করে স্পষ্টভাবে জানান— ব্রাইট মডেল স্কুলের যাতায়াতের রাস্তা ও ব্যবহৃত জায়গা আসলে শহীদ মিনারের জমি।
শহরজুড়ে জাকারিয়া হিরোর বিরুদ্ধে এখন তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, শহীদ মিনারের মর্যাদা হরণ করে সেখানে ১২টি ট্যাংক বসানো দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতার প্রতি চরম অবমাননা। শহরবাসীর দাবি করেছেন, অবিলম্বে শহীদ মিনারের জমি দখলমুক্ত করে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।