
যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ত্রয়োদশ নির্বাচন নিয়ে মানুষের মঝে বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ২০২৬ সালেরঝিনাইদহ ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে সম্ভাব্য সময় ঘোষণা দিয়েছেন। এলক্ষে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রস্তুতি নিতে রাতদিন মাঠে কাজ করে যাচ্ছে।
গত ৩নভেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে ২৩৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। সেই তালিকায় ঝিনাইদহ জেলার মাত্র ১টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বাকী ৩টি অসনের প্রার্থীর নাম চুড়ান্ত না করায় বিএনপির মধ্যে বিষন্নতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ঝিনাইদহ-২ আসনে বিএনপির মধ্যে এই বিষন্নতা বেশি দানা বেধেছে। অনেকে মনে করছেন হাসিনা সরকারের পতনের সময় যুগপথ আন্দোলনের শরিক বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে এই আসনটি ছেড়ে দিতে পারে। আবার বিএনপি তৃনমূল নেতা কর্মীরা মনে করেণ ঝিনাইদহ-২ আসনটি জেলার রাজনীতিতে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, ফলে নমিনেশন যদি অন্য দলকে দেয়া হয় তাহলে জেলার রাজনীতিতে বিএনপির উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ঝিনাইদহ সদরের ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা একাধিক থাকলেও কেন্দ্র কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। মনোনয়ন দৌড়ে এ আসন থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ প্রচার প্রচারনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে, তাছাড়া ড্যাব নেতা সাবেক এমপি মসিউর রহমানে ছেলে ডা: মো: ইব্রাহীম রহমান (বাবু)’র প্রচারণাও লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া এই আসনে আরও মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে আছেন জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও বর্তমান জেলা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এস এম মশিউর রহমান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাভলু। এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান জোটের প্রার্থী হবে বলে জোর আলোচনায় রয়েছে। তাছাড়াও জাতীয় নাগরিক পাটি’র (এনসিপি) তারেক রেজা এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। অন্য দিকে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী দলটির জেলা আমির অধ্যাপক আলী আজম মোহাম্মদ আবু বকর নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে দলের নেতা কর্মীরা প্রত্যাশা করে। এদিকে জাতীয় পাটির প্রার্থী হিসেবে জেলা জাতীয় পাটির সভাপতি মেজর (অব:) মাহফুজুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় পাটি একটি নির্বাচনমূখী অবাধ গণতাতিন্ত্রক রাজনৈতিক দল। দেশে অংশগ্রহন মূলক নির্বাচন অনুষ্টিত হলে জাতীয় পাটি অবশ্যই অংশ গ্রহন করবে এবং আমাকে দল থেকে মনোনয়ন দিলে আমি ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে নির্বাচন করবো।
তাছাড়া বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হচ্ছেন জেলা সভাপতি ডা. মমতাজুল ইসলাম। এছাড়া দ্বাদশ সংসদের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি মো: নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বছরাধিকাল ধরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচিত সহসভাপতি হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন বলে সমালোচনাও রয়েছে। বর্তমানে তিনি বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকেন।
এ প্রসঙ্গে টেলিফোনে জানতে চাইলে বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, মূলত মহুল সাহেব নামমাত্র সহসভাপতি থাকলেও দলের কার্যক্রমে তিনি কখনো সক্রিয় ছিলেন না। ওনার সামাজিক কার্যক্রমে সুনাম আছে এ কথা সত্য, একটা ভালো ভাবমর্যাদাও আছে, এসব কারণেই তাকে সহসভাপতি করা হয়েছিল; তবে নামমাত্র সহসভাপতির পদ থাকলেও তিনি সেভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ধারণ করেননি এবং সাংগঠনিক কোনো কাজে অংশগ্রহণ করেননি। জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথেও তার ছিল বিরাট দূরত্ব। এসব কারণেই মহুল সাহেবের সাথে আওয়ামী লীগের একটা রাজনৈতিক টানাপড়েন সব সময়ই ছিল।
এছাড়া ২০২২ সালের পৌরসভার নির্বাচনে মহুল সাহেব নৌকার বিপক্ষে মেয়র পদে ওনার ছোট ভাইকে দাঁড় করান, যা দলের কেউই মেনে নিতে পারেনি। ওনার ভাই পৌরসভার স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় নির্বাচনের আগে ওনাদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়, ওনার যে ভাই প্রার্থী ছিলেন তার প্রচারণা কলে তিনি এবং তার আরেক ভাই আক্রমণের শিকার হয়ে মারাত্মকভাবে জখম হলে মহুল সাহেব ২০২২ সালের জুন মাসে দল থেকে পদত্যাগ করেন। এরপরে তিনি ২০২৪ সালে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করেণ।
আওয়ামী লীগের নানা সমালোচিত কর্মকান্ডের বিরোধীতার কারণে তাকে সবাই একজন ভালো মানুষ হিসেবে জানে। তাছাড়া তার পরিচালিত জাহেদী ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন দাতব্য কর্মকান্ড পরিচালনা করায় সবাই তাকে দানশীল হিসেবে জানেন, আওয়ামী লীগের একজন হিসেবে তিনি কখনো বিবেচনায় ছিলেন না। তিনি হয়তো ওই বিবেচনায় পরিচিত হতেও চাননি। এসব কারণেই আগামী নির্বাচনে মহুল সাহেব নির্বাচনে আসলে জনগণের সাড়া পাবেন বলে বিশ্বাস করেণ।
এবিষয়ে নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল বলেন, ভোট গণতান্ত্রিক অধিকার রাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ছাড়া সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারে, জনগণ যাকে বেছে নিবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন।
তিনি আরও বলেন আমি অনেক আগেই আওয়ামী লীগ ছেড়েছি। ২০২২সালে যখন আমার ভাই স্বতন্ত্র মেয়র নির্বাচন করে তখন আওয়ামী যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের ছেলেরা আমার বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর করে এবং প্রচার প্রচারণায় বাধা দেয় তাছাড়া প্রচারণার সময় আমার দুই ভাইসহ আমার ভায়ের কর্মী অনুসারীদের উপরে আক্রমন করে মারাত্মক ভাবে জখম করে, তারপর আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে নিজেকে ইস্তফা দিয়। পরে ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বহু হামলা মামলার মধ্যে জনগণের ভালবাসায় ভোটে জয়লাভ করি। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এই সরকারের কাম্য তাই আশাকরি নির্বাচন অংশগ্রহন মূলক এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হবে।


